ভূমিকা
আজকের ছাত্র—আগামী দিনের নেতা।
যে জাতি তরুণদের আদর্শিকভাবে প্রস্তুত করে, ভবিষ্যতে সেই জাতিই নেতৃত্বে এগিয়ে যায়। ঠিক এখানেই ইসলামী ছাত্র আন্দোলন তার ভূমিকা রাখছে। তারা শুধু রাজনীতি নয়, দাওয়াহ, নৈতিকতা ও শিক্ষা—সব মিলিয়ে গড়ে তুলছে ভবিষ্যতের আদর্শ নেতৃত্ব।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন: একটি পরিচিতি
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, সংক্ষেপে ইশা ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠন।
১৯৯১ সালে যাত্রা শুরু করা এই সংগঠনটি মূলত ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী ছাত্রদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আদর্শ, দায়িত্ব ও নেতৃত্বের সমন্বয় ঘটে।
এটি কোনো গাঁধা রাজনীতি নয়—এটা একেবারে ভেতর থেকে চিন্তা, নীতিমালা ও নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ।
তরুণদের ইসলামী রাজনীতিতে যুক্ত করার পদ্ধতি
যেভাবে ছেলেরা PUBG বা TikTok থেকে এসে হুট করে হক কথা শুনে আগ্রহী হয়, ইশা ছাত্র আন্দোলন সেখানে তাদেরকে জ্ঞান, নৈতিকতা ও দায়িত্বশীলতার পথ দেখায়।
তাদের যুক্ত করার পদ্ধতিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ইসলামী সাহিত্য বিতরণ ও পাঠচক্র: চিন্তার জগতে পরিবর্তন আনার প্রথম ধাপ।
- মহানবীর (সা.) আদর্শে অনুপ্রাণিত করা: ব্যক্তি জীবনে নৈতিকতা গড়ে তোলার আহ্বান।
- দাওয়াহ কর্মসূচিতে সরাসরি সম্পৃক্তি: একদিকে ঈমানের চর্চা, অন্যদিকে নেতৃত্বের ট্রেনিং।
এইভাবে তারা শুধু বক্তৃতা নয়, বাস্তব জীবনে নেতৃত্ব দিতে শেখে।
সমসাময়িক শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশগ্রহণ
ইশা ছাত্র আন্দোলন কখনোই চার দেয়ালে আবদ্ধ থাকে না। তারা সময়ের দাবিতে রাজপথে নামে, কণ্ঠে উচ্চারণ করে ন্যায়ের কথা।
উদাহরণ:
- কোটা সংস্কার,
- সিলেবাস পরিবর্তনের মতো ইস্যুতে তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিজেদের মতামত তুলে ধরে।
- মাদক, পর্ন ও অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন চালিয়ে তারা প্রমাণ করেছে, আদর্শিক ছাত্র রাজনীতি এখনো বেঁচে আছে।
এটি কোনো ভাংচুরভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি নয়, বরং চিন্তাশীল, শালীন ও পরিশীলিত এক প্রজন্ম গড়ার প্রচেষ্টা।
রাজনৈতিক ও দাওয়াতি কার্যক্রমের সম্মিলন
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, তারা রাজনীতি ও দাওয়াতকে আলাদা করে না।
- দাওয়াতি কার্যক্রম: মসজিদে, ক্যাম্পাসে, সামাজিক মাধ্যমে ইসলামী শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়া।
- রাজনৈতিক সচেতনতা: নির্বাচনের সময় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা, দেশের সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে বিশ্লেষণমূলক আলোচনার আয়োজন।
তারা বোঝে—নীতি ছাড়া রাজনীতি মানে দিকহীন নেতৃত্ব।
আর রাজনীতি ছাড়া দাওয়াহ মানে সমাজ পরিবর্তনের বাস্তব মাধ্যম না থাকা।
নেতৃত্ব গঠনের সুনির্দিষ্ট কাঠামো
যতটা গুছানো তাদের আদর্শ, ততটাই গুছানো তাদের কাঠামো।
প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া:
- প্রাথমিক সদস্য → পূর্ণ সদস্য → দায়িত্বশীল → শাখা সভাপতি → কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব
এই ধারাবাহিকতায় একজন সাধারণ ছাত্র ধাপে ধাপে হয়ে ওঠে দক্ষ সংগঠক ও চিন্তাশীল নেতৃত্ব।
তালিম ও কর্মশালা:
নিয়মিত তালিম (আন্তরিক পাঠশালা) ও বিশেষ ক্যাম্পে নেতৃত্ব, যুক্তি, ভাষণ এবং ইসলামী ফিকহ শেখানো হয়।
Mentorship:
নতুন সদস্যদের জন্য সিনিয়র দায়িত্বশীলদের সাথে বিশেষ পরামর্শ সেশন—এক কথায় ইসলামি কোচিং ফর ফিউচার লিডারস।
সমাজ গঠনে ছাত্রদের বাস্তব ভূমিকা
ইশা ছাত্র আন্দোলনের সদস্যরা শুধু ক্যাম্পাস নয়, সমাজেও সক্রিয়।
- দুর্যোগে ত্রাণ বিতরণ
- রক্তদান কর্মসূচি
- কুরআন প্রতিযোগিতা, কুইজ, আলোচনা সভা
- ইসলামী মূল্যবোধে গড়া সামাজিক মিডিয়া প্রচারণা
এক কথায়, তারা কেবল রাজনৈতিক সংগঠন নয়, সমাজের আদর্শ রোল মডেল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
কিভাবে যুক্ত হবে একজন ছাত্র?
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হওয়া একদম সহজ, কিন্তু গম্ভীর।
ছাত্রদের জন্য সংক্ষিপ্ত গাইডলাইন:
- নিজ জেলার শাখা অফিস খুঁজুন (Facebook-এ সহজে পাওয়া যায়)।
- তালিম/সেমিনারে অংশগ্রহণ করুন।
- আদর্শে আগ্রহী হলে যোগাযোগ করুন স্থানীয় দায়িত্বশীলদের সাথে।
- আবেদনের মাধ্যমে সদস্য পদ লাভ করুন।
Pro Tip: যারা সত্যিকারের নেতৃত্ব দিতে চায়, তারা শব্দের রাজনীতি নয়—কাজের রাজনীতিকে প্রাধান্য দেয়। এই সংগঠন তার জন্য এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম।
উপসংহার
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন হলো এমন এক প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আদর্শ, নেতৃত্ব আর বাস্তবতা এক হয়ে মিশে যায়।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব যদি আদর্শিক, চিন্তাশীল ও দায়িত্ববান হতে চায়, তবে এই সংগঠন হতে পারে সেই স্বপ্নের কারখানা।
আজকের ছাত্র আন্দোলন শুধু আগামী নির্বাচনের জন্য নয়—আগামী প্রজন্মের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
প্রশ্ন একটাই—তুমি কি প্রস্তুত?