জমজমের পানি আধ্যাত্মিক এবং শারীরিক উপকারিতা, হাদিসে বর্ণিত গুণাবলী

জমজমের পানির উপকারিতা
জমজমের পানির উপকারিতা

জমজমের পানি: আধ্যাত্মিক এবং শারীরিক উপকারিতা, হাদিসে বর্ণিত গুণাবলী

জমজমের পানি: এক অমূল্য বরকতময় নেয়ামত

জমজমের পানি হল মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদানকৃত এক অমূল্য বরকতময় নেয়ামত। হজ ও ওমরার বিশেষ সময়ে এই পানি পান করার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। মুসলমানদের বিশ্বাস, জমজমের পানি শুধুমাত্র পবিত্র এবং পানীয় নয়, বরং এতে রয়েছে অসংখ্য আধ্যাত্মিক এবং শারীরিক উপকারিতা।

হাদিসে জমজমের পানির বিশেষ গুণাবলী

হাদিসে জমজমের পানির গুরুত্ব ও উপকারিতার বিষয়ে অনেকবার বর্ণনা এসেছে। এক হাদিসে হজরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন,
আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যে পান করা হবে, সেই উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে।”
(ইবনে মাজাহ)

জমজমের পানি পানের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ আদব

হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) জমজমের পানি পান করার জন্য কিছু বিশেষ আদব উল্লেখ করেছেন, যা প্রতিটি মুসলিমের জন্য অনুসরণ করা উচিত:

  1. কেবলামুখী হয়ে পান করা
  2. আল্লাহর নাম নিয়ে পান শুরু করা
  3. তিনবার বিরতি দিয়ে নিঃশ্বাস নিয়ে পান করা
  4. তৃপ্তি সহকারে পানি পান করা
  5. পান শেষে আল্লাহর প্রশংসা করা

জমজমের পানির উপকারিতা

১. নিয়ত অনুযায়ী উপকারিতা
জমজমের পানি যেকোনো ভালো উদ্দেশ্যে পান করলে সেই ইচ্ছা পূর্ণ হয়। বিশেষত, রোগমুক্তি, উপকারী জ্ঞান এবং প্রশস্ত রিজিকের জন্য পান করা অত্যন্ত ফলপ্রসূ।

২. আধ্যাত্মিক শক্তি
জমজমের পানি ঈমানদারদের জন্য আধ্যাত্মিক শক্তি যোগায়। এটি পান করলে আত্মিক প্রশান্তি এবং মানসিক স্বস্তি পাওয়া যায়।

৩. শারীরিক সুস্থতা
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, জমজমের পানিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা দেহকে সতেজ এবং রোগমুক্ত রাখে।

রোগমুক্তির জন্য দোয়া

জমজমের পানি পান করার সময় নিচের দোয়া পাঠ করা উত্তম:

اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا, وَرِزْقًا وَاسِعًا, وَشِفَاءً مِنْ كُلِّ دَاءٍ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফি, ওয়ারিজকান ওয়াসিয়া, ওয়াশিফাআন মিন কুল্লি দায়িন।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, প্রশস্ত রিজিক এবং সব রোগ থেকে আরোগ্য কামনা করছি। (দারা কুতনী, আব্দুর রাজ্জাক ও হাকেম)

জমজমের পানি: সর্বোত্তম পানি

হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন,
জমিনের বুকে জমজমের পানি সর্বোত্তম পানি।”
(তাবরানি ফিল কাবির : ১১১৬৭; সহিহুত তারগিব ওয়াত তারহিব : ১১৬১)

বরকতময় পানির গুণ

আবু জর গিফারি (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন,
নিশ্চয়ই তা বরকতময়।”
(মুসলিম, হাদিস : ২৪৭৩)

রাসুল (সা.) আরও বলেন,
এটি খাদ্যের উপাদানসমৃদ্ধ।”
(মুসলিম, হাদিস : ২৪৭৩)

জমজমের পানির শিফা

রাসুল (সা.) বলেন,
নিশ্চয়ই এটি সুখাদ্য খাবার এবং রোগের শিফা।”
(মুসলিম, হাদিস : ২৪৭৩)

জমজমের পানির উদ্দেশ্য পূর্ণ হওয়া

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন,
জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যেই পান করা হয়, তা পূর্ণ হবে।”
(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩০৬২)

এক উত্কৃষ্ট হাদিয়া: জমজমের পানি

প্রাচীন যুগ থেকে হজযাত্রীরা জমজমের পানি বহন করে নিয়ে যেতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি জমজমের পানি বহন করে নিয়ে যেতেন এবং বলতেন,
রাসুল (সা.)ও তা বহন করতেন।”
(তিরমিজি, হাদিস : ৯৬৩)

ঈদের নামাজের স্থান: মসজিদ বা ময়দান?

একটি প্রশ্ন এসেছে, বিনা ওজরে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করা ইসলামের দৃষ্টিতে কতটুকু সঠিক?

উত্তর: রাসুল (সা.) জীবদ্দশায় ঈদের নামাজ খোলা ময়দানে আদায় করতেন। অতএব, কোনো ধরনের ওজর না থাকলে খোলা ময়দানে ঈদের নামাজ আদায় করা সুন্নত। তবে, বিনা ওজরে মসজিদে ঈদের নামাজ পড়লে নামাজ সহিহ হবে, তবে এটি সুন্নতের বিরুদ্ধে হবে।
(বুখারি, হাদিস : ৯৫৬)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Scroll to Top