স্ত্রী সহবাসের দোয়া- স্ত্রী মিলনের দোয়া-সঙ্গমের দোয়া
নারী-পুরুষের মধ্যে যৌন ক্রিয়া একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যা বংশ বিস্তার ও নতুন জীবন সৃষ্টির জন্য অপরিহার্য। ইসলাম ধর্মে এই প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত পবিত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে পরিবারের পরিপূর্ণতা অর্জিত হয়। বিয়ের মাধ্যমে এই সম্পর্কের বৈধতা লাভ হয় এবং তাই এটি ইসলামে একটি মহান কাজ। এমনকি এই সম্পর্কের মধ্যে যৌন মিলনের যে কল্যাণকর দিক রয়েছে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া একটি দান হিসেবে দেখা হয়।
ইসলামি শরিয়তে সহবাসের আগে কিছু বিশেষ দোয়া পড়া জরুরি, যাতে এতে আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় এবং শয়তানের কুপ্রভাব থেকে মুক্ত থাকা যায়। এই দোয়াটি স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের মিলনকে একটি বৈধ এবং পবিত্র কাজ হিসেবে পরিণত করে। এই দোয়ার মাধ্যমে পরিবারে সম্ভাব্য সন্তানের ওপর শয়তানের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়ার আশ্বাস পাওয়া যায়। দোয়াটি হলো:
দোয়াটি:
بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়ত্বানা ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাজাক্বতানা।
অর্থ: “হে আল্লাহ! তোমার নামে আরম্ভ করছি, তুমি আমাদের নিকট থেকে শয়তানকে দূরে রাখো। আমাদের এই মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে, তা শয়তান থেকে মুক্ত থাকুক।”
ফজিলত:
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা করবে, তখন এই দোয়া পড়ো। যদি তাদের কিসমতে সন্তান আসে, তাহলে শয়তান সেই সন্তানের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।” (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, “যে ব্যক্তি সহবাসের ইচ্ছা করে, তার নিয়ত যেন এমন হয় যে সে ব্যাভিচার থেকে দূরে থাকবে, তার মন অন্য দিকে চলে যাবে না, এবং সে নেককার ও সৎ সন্তান লাভ করবে।” এই নিয়তে সহবাস করলে শুধু সওয়াবই নয়, বরং একটি সুন্দর উদ্দেশ্যও পূর্ণ হয়।
সহবাসের পূর্বের কিছু কাজ:
- স্বামী-স্ত্রী উভয়ই শুদ্ধ ও পাক-পবিত্র থাকবে।
- ‘বিসমিল্লাহ’ বলে সহবাস শুরু করা মুস্তাহাব। ভুলে গেলে, যদি বীর্যপাতের পূর্বে মনে পড়ে, তবে মনেই পড়তে হবে।
- সহবাসের আগে সুগন্ধি ব্যবহার করা, যা রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাত।
- সমস্ত দুর্গন্ধজাতীয় বিষয় পরিহার করা।
সহবাসকালীন কিছু নিষেধাজ্ঞা:
- কেবলা মুখী হয়ে সহবাস করা নিষিদ্ধ।
- সম্পূর্ণ উলঙ্গ হওয়া উচিত নয়।
- স্ত্রীর পরিপূর্ণ তৃপ্তি হওয়ার আগে বিচ্ছিন্ন না হওয়া।
- স্ত্রীর জরায়ুর দিকে তাকানো উচিত নয়।
- সহবাসের সময় স্ত্রীর সঙ্গে বেশি কথা না বলা।
- ভরা পেটে স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা উচিত নয়।
- উল্টাভাবে স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা নিষিদ্ধ।
যে সময়গুলোতে স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকা উচিত:
- স্ত্রীর হায়েজ (ঋতুস্রাব) ও নেফাস (যতঃত্র) অবস্থায় সহবাস না করা।
- চন্দ্র মাসের প্রথম ও পনেরো তারিখ রাতে সহবাস না করা।
- সফরে যাওয়ার আগে স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস না করা।
- জোহরের নামাজের পর স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস না করা।
অন্যান্য কিছু নিয়ম:
- স্বপ্নদোষ বা নাপাক অবস্থায় গোসল না করে স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস না করা।
- বীর্যপাতের সময় মনেপ্রাণে নির্দিষ্ট দোয়া পড়া, যাতে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করবে, সে শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে।
এভাবে, ইসলামি বিধান অনুসারে সহবাসে পরিপূর্ণ শুদ্ধতা, পবিত্রতা ও নিয়ত থাকতে হবে। এতে পরিবারের জন্য কল্যাণ ও সওয়াব লাভ হবে।