নামাযের মাসআলা-মাসায়েল
যুগোপযোগী প্রশ্নোত্তর- প্রথম পর্ব:
এপর্বে ৬৯টি মাসআলা লিপিবদ্ধ করা হল।
নামাজের জরুরী মাসআলা:
১। প্রশ্নঃ নামাযের নিয়ত আরবীতে বলা জরুরী কি না?
উত্তরঃ- নামাযের নিয়ত আরবীতে বলা জরুরী নয়। নিজের ভাষায় নিয়ত করা ফরজ। কেননা, আরবীতে নিয়ত করতে গিয়ে অনেকে ভুল করে, আবার অনেকের তাকবীরউলা ছুটে যায়। তবে মনের নিয়তের সহিত আরবী শব্দ জড়িত হওয়া উত্তম। (ফাতাওয়া আলমগীরী ১ম খন্ড পৃঃ ৬৫, ফাতাওয়া দারুল উলুম ২য় খন্ড পৃঃ ২৪৯)।
২। প্রশ্নঃ সিজদা দেওয়ার সময় নাক-মাথা উভয় মাটিতে না লাগলে শুধু মাথা লাগলে নামায হবে কি?
উত্তরঃ সিজদার সময় নাক মাটিতে না লাগলে শুধু মাথা লাগলে নামায় || হয়ে যাবে। তবে মাকরুহ হবে তাই নাক-মাথা উভয়টি লাগানাে উত্তম। কিন্তু শুধু নাক লাগলে মাথা না লাগলে নামাজ হবে না। অবশ্য মাথা লাগাতে কোন সমস্যা থাকলে নামাজ হয়ে যাবে; অন্যথায় নয়। (বাহরুর রায়েক ১ম খন্ড পৃঃ ৩১৪)
৩। প্রশ্নঃ(ক) ফরজ নামাযের জামাতের শেষ বৈঠকে শরীক হলে তাশাহহুদ পড়তে হবে কিনা? (খ) ফরয নামাযের শুধুমাত্র এক রাকাত পেলে তাশাহহুদ
পড়তে হবে কিনা?
উত্তর: (ক) ফরয নামাযের জামাতের শেষ বৈঠকে শরীক হলে তাশাহহুদ পড়তে হবে। (খ) শুধু এক রাকাত পেলেও তাশাহহুদ পড়তে হবে। (শামী ২য় খন্ড পৃঃ ৬৫৯, আজিজুল ফাতওয়া ১ম খন্ড পৃঃ ২২৫, আলমগীরী ১ম খন্ড, পৃঃ ৯০)
৪। প্রশ্নঃ- জামাআতে ইমাম সাহেবের সাথে আমি এক রাকাআত পেলাম। এখন অবশিষ্ট নামায কিভাবে আদায় করব?
উত্তরঃ- যদি দুই রাকাআত বিশিষ্ট অর্থাৎ ফজরের নামায হয়, তাহলে ইমাম সাহেবের উভয় সালাম ফেরানাে শেষ করার পর আপনি দাঁড়িয়ে শুরু নামাযের মত প্রথমে ছানা, এরপর আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ে সূরাহ ফাতিহা পড়বেন। অতঃপর অন্য সূরাহ মিলিয়ে তারপর রুকু-সিজদা ও শেষ বৈঠক করে নামায সম্পন্ন করবেন। আর যদি তিন রাকআত বিশিষ্ট অর্থাৎ মাগরিবের নামায হয়, তাহলে উক্ত নিয়মে এক রাকআত পড়ে মধ্যে বৈঠক করে উঠে দাঁড়িয়ে আরাে এক রাকআত পড়বে । সেই রাকআতে সুরাহ ফাতিহার পর অন্য সুরাহ মিলাবেন। এভাবে যথারীতি নামায শেষ করবেন। আর যদি চার রাকআত বিশিষ্ট নামায অর্থাৎ জোহর, আসর বা ইশার নামায হয়, তাহলে ইমাম সাহেবের সালাম ফেরানাের পর। দাঁড়িয়ে উক্ত নিয়মে এক রাকআত পড়ার পর মধ্যে বৈঠক করে আরাে দুই রাকআত পড়তে হবে। সেই দুই রাকআতের প্রথম রাকআতে সূরাহ ফাতিহার পর অন্য সূরাহ মিলাতে হবে। কিন্তু শেষের রাকআতে অন্য সুরাহ মিলাতে হবে না, শুধু সূরাহ ফাতিহা পড়বেন। (ফাতাওয়া শামী, ১ম খন্ড পৃঃ ৫৯৪, ফাতাওয়া দারুল উলূম ৩য় খন্ড পৃঃ ৩৭৭ ৩য় খন্ড পৃঃ ৩৯৬)।
৫। প্রশ্নঃ নামাযে সিজদার সময় মাথার টুপি পড়ে গেলে, তা হাত দ্বারা উঠিয়ে মাথায় দিলে নামাযের কোন ক্ষতি হবে কি না?
উত্তর : টুপি যদি এক হাত দ্বারা উঠিয়ে মাথায় দেয়া হয়, তাতে নামাযের ক্ষতি হবে না। কিন্তু যদি দু‘হাত দ্বারা টুপি পরিধান করা হয়, তাহলে এতে নামাযের ক্ষতি হবে। কারণ, এটা আমলে কাছীর হিসেবে পরিগণিত হবে। আর আমলে কাছীর দ্বারা নামায ভঙ্গ হয়ে যায়। (আহসানুল ফাতাওয়া, ৩য় খন্ড পৃঃ ৪২০, রদুল মুহতারা, ১ম খন্ড, পৃঃ ৫৮৪)
৬। প্রশ্ন : আমাদের এলাকায় অনেক লােককে দেখা যায় জুমার দু‘রাকাত ফরজ আদায়ের পর দল বেঁধে উঠে চলে যায়। সুন্নাতের প্রতি কোন গুরুত্ব দেয় না। তাহলে কি জুমার পরবতী সুন্নাত পড়া জরুরী নয়?
উত্তরঃ জুমার পূর্বে চার রাকাত ও পরে চার রাকাত কারাে কারাে মতে পরে ছয় রাকাত সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। রাসুলে আকরাম (সাঃ) এগুলাে নিয়মিত আদায় করেছেন, কখনাে ত্যাগ করেননি। অতএব, কেবল মাত্র দু‘রাকাত ফরজ আদায় করার পর সুন্নাতে মুআক্কাদাহ আদায় না করা মস্ত বড় গুনাহ। (মারাকিউল ফালাহ পৃঃ ২১৩, শরহে মুনইয়াতুল মুসল্লী পৃঃ ৩৮৮-৩৮৯) ৭।
৭। প্রশ্নঃ চার রাকআত বিশিষ্ট নামাযে চতুর্থ রাকআতে বসে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার পর ভুলে দাঁড়িয়ে গেলে। করণীয় কি?
উত্তরঃ- এমতাবস্থায় পরবর্তী রাকআতের সিজদা পর্যন্ত যদি মনে পড়ে তাহলে বসে যেতে হবে এবং সিজদায়ে সাহু আদায় করে সালাম ফিরাবে । অবশ্য পাঁচ রাকআত সম্পূর্ণ করলে এর সঙ্গে আর এক রাকআত মিলিয়ে নিলে চার রাকআত ফরয হিসেবে আদায় হয়ে যাবে এবং অবশিষ্ট দু‘রাকআত নফল হিসেবে গণ্য হবে। (মুনিয়্যাহ পৃঃ ১২৭)
৮। প্রশ্নঃ রুকু থেকে ভালাে করে না দাঁড়িয়ে সিজাদায় চলে গেলে নামাজ হবে কি?
উত্তরঃ না, নামাজ হবে না। এমতাবস্থায় নামাজ পূনরায় পড়তে হবে। (বাহরুর রায়েক ১ম খন্ড পৃঃ ৩১৭) ৯।
৯। প্রশ্ন : যদি বিশেষ কোন কারণে ঘরে জামাআতে নামায আদায় তাহলে মহল্লার মসজিদের আজানই কি যথেষ্ট, না ঘরে মাজাআতে নামায আদায়ের জন্য পৃথকভাবে আজান দিতে হবে?
উত্তরঃ- যদি এমন স্থানে জামাআত করা হয় যেখান থেকে মহল্লার মসজিদের আজান শােনা যায়, তাহলে সেখানে জামা‘আতের জন্য মহল্লার মসজিদের আজানই যথেষ্ট। পৃথক ভাবে আজান দেয়ার প্রয়ােজন নেই তবে একামত দিতে হবে। (ফতােয়া ১খন্ড পৃ: ১৮৩, আহসানুল ফতােয়া ২য় খন্ড, পৃঃ ২৮২)
১০। প্রশ্নঃ তিন অথবা চার রাকাত বিশিষ্ট ফরয নামাযের তৃতীয় অথবা চতুর্থ রাকাআতে সূরা ফাতিহার সাথে ভুলে অন্য সূরা মিলিয়ে ফেললে। করণীয় কি হবে?
উত্তরঃ- নামায হয়ে যাবে। সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে না। (বাহরুর রায়েক ২য় খন্ড পৃঃ ১০২) ১১।
১১। প্রশ্ন : কেউ সিজদা থেকে মাথা খুব সামান্য তুলে পুনরায় দ্বিতীয় সিজদায় চলে গেলে। নামায হবে কি?
উত্তর : এমতবস্থায় দেখতে হবে, যদি মাথা এতটাই অল্প তুলে থাকে, যার || কারণে মাথা সিজদার কাছাকাছি রয়ে গিয়েছিল, তাহলে নামায হবে না। পুনরায় পড়তে হবে। আর যদি মাথা এতটুকু উঠে থাকে, যার কারণে উঠা অবস্থাটা বসার কাছাকাছি চলে গিয়েছিল তাহলে নামায হয়ে যাবে তবে ত্রুটিপূর্ণ হবে। তবে উক্ত নামাযকে দ্বিতীয়বার পড়ে নেওয়া ভাল। (দলিল || ফাঃ আলমগীরি)।
১২।প্রশ্নঃ- সিজদায়ে সাহু করতে ভুলে গেলে করণীয় কি হবে?
উত্তরঃ- এক্ষেত্রে দেখতে হবে, স্মরণ হওয়ার সময়টা যদি নামায শেষ হওয়ার সাথে সাথে হয়; যেমন-নিজ জায়গায় বসে আছে; কোনরূপ | কথাবার্তা বলেনি; নামায ভঙ্গ হওয়ার মতাে কোন কাজও করেনি তাহলে তাৎক্ষণিক সিজদা করে নিতে হবে। অন্যথায় আবার পড়া ওয়াজিব। (মাজমাউল আনহুর পৃঃ ১৫৬)
১৩। প্রশ্ন ও সিজদার স্থানে যদি কংকর, খােয়া বা এ জাতীয় কিছু থাকে, যার কারণে সিজদা দেওয়া কষ্টকর হয়, তাহলে নামায পড়া অবস্থায় সিজদা দেওয়ার মুহুর্তে এগুলাে পরিষ্কার করা যাবে কি?
উত্তরঃ- একান্তভাবে সিজদা দেওয়ার সমস্যা হলে পরিষ্কার করা যাবে; অন্যথায় নামায মাকরূহ হবে। অবশ্য এমন ক্ষেত্রে নামায শুরু করার। পূর্বেই এ ব্যাপারে লক্ষ্য রাখা উচিৎ। (হেদায়া; ১ম খন্ড পৃঃ ৯৯)
১৪। প্রশ্ন : যে সকল নামাযে সুরা ফাতিহাসহ অন্য সুরা বা তাকবীর-তাসবীহ চুপে চুপে পড়তে হয়, সে ক্ষেত্রে চুপে চুপে পড়ার নিয়ম বা ধরণ কেমন হতে হবে?
উত্তরঃ- চুপে চুপে বা নীরবে নামায পড়তে সূরা, কিরাআত এবং অন্যান্য দোয়া-কালাম পাঠে আওয়াজ অবশ্যই এতটুকু হতে হবে, নামাযী যেন নিজে তা শুনতে পায়। কি পড়ছে নামাযী যদি তা নিজেই শুনতে না পায় তাহলে নামায হবে না। (বাহরুর রায়েক ১ম খন্ড পৃঃ ৩২১)
১৫।প্রশ্নঃ- ফজর নামাযের সময় হওয়ার পর কি অন্য কোন নামায পড়া যায়? উত্তর ঃ ফজর নামাযের সময় হওয়ার পর ঐ ওয়াক্তের দুই রাকআত সুন্নাত ও দুই রাকআত ফরয ছাড়া অন্য কোন নফল পড়া মাকরূহ। তবে কাযা নামায পড়া যাবে এবং সিজদায়ে তেলাওয়াত আদায় করা যাবে। (মুনিয়্যাহ; ফঃ আঃ ৫২)।
১৬।প্রশ্নঃ- তিন চার রাকআত বিশিষ্ট নামাযে নিয়ম মাফিক দ্বিতীয় রাকআত শেষে না বসে দাঁড়িয়ে গেলে করণীয় কি হবে?
উত্তরঃ- এক্ষেত্রে লক্ষণীয়, যদি অর্ধেকের কম দাঁড়িয়ে গিয়ে থাকে তাহলে বসে পড়তে হবে এবং আত্তাহিয়্যাতু পড়ে তারপর দাড়াইতে হবে। অবশ্য এক্ষেত্রে সিজদায়ে সাহু করতে হবে না। আর যদি অর্ধেকের বেশি দাঁড়িয়ে গিয়ে থাকে অর্থাৎ নিম্নার্ধ সম্পূর্ণ সােজা হয়ে থাকে তাহলে না বসে দাঁড়িয়ে যেতে হবে এবং শেষ রাকআতে যথারীতি সিজদায়ে সাহু করতে হবে। এক্ষেত্রে সিজদায়ে সাহু করা ওয়াজিব। অবশ্য কেউ যদি সম্পূর্ণরূপে দাঁড়িয়ে পূনরায় বসে পড়ে তাহলে সিজদায়ে সাহু আদায় করতে হবে। (মাজমাউল
আহুর ১ম খন্ড পৃঃ ৯৫০)
১৭।প্রশ্নঃ চোখ বন্ধ করে নামায পড়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?
উত্তরঃ- চোখ বন্ধ করে নামায পড়া মাকরূহে তানযিহী। অবশ্য কারাে যদি চোখ বন্ধ করলে নামাযে অত্যধিক মনােযােগ বা একাগ্রতা সৃষ্টি হয় তাহলে মাকরূহ হবে না। (শরহুত তানবীর ১ম খন্ড পৃঃ ৬৭৪)
১৮। প্রশ্ন : কোন নামাযের জন্য বিশেষ কোন সূরা নির্ধারণ করে রাখা জায়েয আছে কি?
উত্তরঃ- মাকরূহ। যখন যেটা খুশি পড়ে নেবে। (হেদায়া ১ম খঃ পৃঃ ৮২)
১৯। প্রশ্ন : প্রত্যেক রাকআতে বিসমিল্লাহসহ সূরা ফাতিহা পড়ার পর অন্য সূরা পড়ার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলা কতটুকু সঙ্গত?
উত্তরঃ- সুরা ফাতিহা পড়ার পর অন্য সূরা পড়ার পূর্বে বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। (বাহরুর রায়েক ১ম খন্ড পৃঃ ৩০২)।
২০। প্রশ্ন : কেউ যদি রুকু থেকে উঠার সময় “সামিআল্লা হুলিমান হামীদাহ” পড়ে অথবা রুকু-সিজদার তাসবীহ না পড়ে অথবা শেষ বৈঠকে দরূদ শরীফ না পড়ে তাহলে নামাজ হবে কি?
উত্তরঃ- সুন্নাতের পরিপন্থি হলেও এমতবস্থায় নামায ত্রুটিপুর্ণভাবে হয়ে যাবে। (মুনিয়্যাহ পৃঃ ১৬১)
২১।প্রশ্নঃ নামায পড়া অবস্থায় আঙ্গুল ফোটানাে, ডানে-বামে তাকাননা বা নজর দেওয়া যাবে কি?
উত্তরঃ- নামায পড়া অবস্থায় আঙ্গুল ফোটানাে, ডানে-বামে তাকানাে, বাঁকা চোখে বা আড়চোখে কোন কিছু দেখা মাকরূহ। (হেদায়া পৃঃ ১০০)।
২২। প্রশ্নঃ- নামাজের মাঝে সুন্নাত তরকের কারণে কি সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয়?
উত্তরঃ- সুন্নাত তরকের কারণে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হয় না। যেমন-ছানা পড়া, রুকুসিজদার তাসবীহ পড়া, নিয়ত বাঁধার সময় কাঁধ পর্যন্ত উভয় হাত উঠানাে এবং আত্তাহিয়্যাতুর পর দুরূদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পড়া প্রভৃতি সুন্নাত ছুটে গেলেও নামায হয়ে যাবে এবং | সিজদায়ে সাহু দিতে হবে না। তবে এমনটি না করাই অধিকতর ভালাে। (বাহরুর রায়েক ২য় খন্ড পৃঃ ১০২)
২৩। প্রশ্নঃ ইমাম সাহেব কিরাত পড়া অবস্থায় মুক্তাদী পূর্ণ ছানা পড়লে নামায নষ্ট হবে কিনা বা নামাযের কোন ক্ষতি হবে কিনা?
উত্তরঃ- কোন মুসল্লি ইমাম সাহেবকে কিরাত পড়া অবস্থায় পায় আর সে নামাজ যদি জাহরী কিরাতওয়ালা হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে ছানা পড়া যাবে তবে আস্তে কিরাতওয়ালা নামাজে ছানা পড়তে হবে। (আহসানুল ফাতাওয়া ৩য় খন্ড পৃঃ ৩৮২, ফতওয়ায়ে দারুল উলুম ৩য় খন্ড পৃঃ ৩৯২)
২৪। প্রশ্নঃ একই সুরা পরপর দু‘রাকাআতে তিলাওয়াত করা কতটুকু সঙ্গত? –
উত্তরঃ- একান্ত প্রয়ােজন ছাড়া ঠিক নয়। অবশ্য পড়লে নামায হয়ে যাবে। (গুনিয়াহ)
২৫।প্রশ্নঃ- ফজরের নামাজ পড়া অবস্থায় সূর্য উঠে গেল এবং আসরের নামাজ পড়া অবস্থায় সূর্য অস্ত গেল। এমতাবস্থায় করণীয় কি?
উত্তরঃ- ফজরের নামাজ পড়া অবস্থায় সূর্য উঠে পড়লে নামাজ হবে না। সূর্য | সম্পূর্ণরূপে উদয় হওয়ার পর অর্থাৎ সূর্যের আলাে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ার পর কাযা পড়তে হবে। কিন্তু আসর নামাজ পড়া অবস্থায় যদি সূর্য অস্ত যায় তাহলে নামাজ হয়ে যাবে; কাযা পড়তে হবে না। (বেহেশতী জেওর) ।
২৬। প্রশ্নঃ নামাজ আদায় করা অবস্থায় যদি সিজদায় উভয় পা মাটি হতে উপরে উঠে যায়, তাহলে কি নামাজ ফাসেদ হয়ে যাবে?
২৭। প্রশ্নঃ তিন কিংবা চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজের প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদ পাঠ করার পর ভুলে উভয় দিকে সালাম ফিরানাের পর স্মরণ হলে বাকী রাকাতগুলাে কিভাবে পড়তে হবে?
উত্তরঃ- তিন কিংবা চার রাকাত বিশিষ্ট নামাজের প্রথম বৈঠকে সালাম ফিরানাের পর সাথে সাথে স্মরণ হলে এবং সালাম ফিরানাে ব্যতীত নামাজ ভঙ্গের অন্য কোন কারণ প্রকাশ না পেলে, দাঁড়িয়ে বাকী রাকাতগুলাে যথানিয়মে শেষ করতঃ নামাযের শেষ বৈঠকে সিজদায়ে সাহু করে নিলে নামাজ সহী হয়ে যাবে। (রাদুল মুহতার ১ম খন্ড, ফাতাওয়ায়ে-দারুল উলুম ৪র্থ খন্ড)
২৮। প্রশ্ন ও অসুস্থতার কারণে নামায বসে বসে পড়তেছিল এবং যথারীতি রুকু-সিজদাও করেছিল। এমতাবস্থায় হঠাৎ সুস্থ হয়ে উঠেছে। এখন কি বাকী নামায বসেই পড়তে হবে, না দাঁড়িয়ে?
উত্তরঃ- হ্যা, এখন বাকী নামায দাঁড়িয়েই আদায় করতে হবে। (আলমগীরী ১ম খন্ড পৃঃ ৭০)
২৯। প্রশ্ন ও প্রস্রাব-পায়খানার চাপ বা উদ্বেগ নিয়ে নামায পড়া যাবে কি?
উত্তরঃ- মাকুরূহ হবে। (নুরুল ইযাহ পৃঃ ৩৫)।
৩০।প্রশ্নঃ- অযু করার পর দৃষ্টিগােচর হয়েছে, শরীরের যে সব স্থান পােয়া অতি আবশ্যক সে সব স্থানের কোথাও সামান্য পরিমাণ শুকননা আছে। এমতাবস্থায় ঐ স্থানে ভিজা হাত বুলিয়ে দিলে হবে, নাকি পানি দিয়ে পােয়া আবশ্যক?
উত্তরঃ- না, ভিজা হাত বুলিয়ে দিলে অযু হবে না। ঐ শুকনাে স্থান পানি দিয়ে ধােয়া আবশ্যক। (বেহেশতী জেওর)
৩১।প্রশ্নঃ- নিয়্যতের প্রাক্কালে ভুলক্রমে যদি চার রাকআত বিশিষ্ট নামাজের স্থলে দুই রাকআত অথবা দুই রাকআত বিশিষ্ট নামাযের স্থলে চার রাকআত বলে ফেলে তাহলে নামাজ আদায় হবে কি?
উত্তরঃ- নামাজ আদায় হয়ে যাবে এবং নির্দিষ্ট ওয়াক্তের নির্দিষ্ট নামাজই আদায় হবে অর্থাৎ মনে মনে যে ওয়াক্তের যে কয় রাকআত নামাজ আদায়ের ধারণা বা সংকল্প ছিল তাই আদায় হয়ে যাবে। কারণ মূখে নিয়্যত বলা বা উচ্চারণের চেয়ে অন্তরের দাবিই অগ্রগণ্য এবং অধিক গ্রহণযােগ্য।
৩২। প্রশ্ন নিয়্যত বাঁধার সময় উভয়, হাত কান পর্যন্ত না উঠালে নামায হবে কি?
উত্তরঃ- নিয়্যত বাঁধার সময় উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠানাে সুন্নাত। কেউ হাত না উঠালে নামায আদায় হয়ে যাবে তবে সুন্নাতের পরিপন্থি হবে। (শরহুত-তানবীর পৃঃ ৪৯৪)।
৩৩।প্রশ্নঃ ফজরের নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে শরীক হলাম। ইমাম সাহেব উক্ত রাকাতে সূরা ফাতিহার সঙ্গে সূরা এখলাছ পড়লেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ইমাম সাহেব সালাম ফিরানাের পর আমি না পাওয়া রাকাতে সূরা ফাতেহার সঙ্গে সূরা এখলাছের পূর্ববর্তী সূরা পড়ব, নাকি পরবর্তী সূরা পড়বে?
উত্তরঃ- উক্ত অবস্থায় আপনি একা নামায পড়নেওয়ালা মুসল্লীর মত যেটা আপনার জন্য সহজ সেটাই গ্রহণ করতে পারবেন। ইমাম সাহেবের কিরাতের পূর্বের সূরা হউক কিংবা পরের সূরা হউক। তাতে নামাযে কোন প্রকারের অসুবিধা হবে না। (দুররে মুখতার, ফতােয়ায়ে দারুল উলূম ২য় খন্ড পৃঃ ২৬৭) ।
৩৪।প্রশ্নঃ- সিজদার জায়গায় বালি থাকলে নামাযরত অবস্থায় তা কুঁক দিয়ে উড়িয়ে দেয়া যায়েয হবে কিনা?
উত্তরঃ- সিজদার জায়গায় বালি থাকলে নামাযরত অবস্থায় তা ফুক দিয়ে উড়িয়ে দেয়া মাকরূহ। (দুররে মুখতার ২ম খন্ড পৃঃ ৬৪২)।
৩৫।প্রশ্নঃ আযানের সময় হয়েছে কিন্তু তখনাে মুয়াজ্জিন সাহেব আযান দেয়নি। এমতাবস্থায় যদি কোন ব্যক্তি নামায আদায় করে তাহলে তার নামায আদায় হবে কিনা?
উত্তর : হ্যাঁ, আযান শর্ত নয়, ওয়াক্ত আরম্ভ হয়ে গেলে অতঃপর নামায | আদায় করা হলে তা আদায় হয়ে যাবে। নামাযের জন্য ওয়াক্ত শর্ত, আযান শর্ত নয়। তবে আযান দেয়া সুন্নাত। এটা দেয়া হয় নামাযের ওয়াক্তের উপর অবগত করানাের জন্য। অতএব, শরীয়তে নির্ধারিত নামাযের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর নামায পড়া হলে তা আদায় হয়ে যাবে, যদিও তা আযানের পূর্বে হয়। (ফতােয়ায়ে মাহমুদিয়া ২য় খন্ড, পৃঃ ১২৮, ফতােয়ায়ে। রহিমিয়া ৩য় খন্ড পৃঃ ১৪)
৩৬। প্রশ্ন : কোন মহিলার নামায পড়া অবস্থায় তার বাচ্চা এসে যদি দুধ পান করে তাহলে নামায ঠিক থাকবে কি?
উত্তরঃ- তিনবার দুধ চুষলে দুধ বের হােক বা না হােক নামায ভেঙ্গে যাবে একবার বা দুইবার চুষলে দুধ বের হলে নামায ভাঙ্গবে নতুবা ভাঙ্গবে বাহারুল বায়িক খঃ ২ পৃঃ ১২)।
৩৭। প্রশ্নঃ- প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে, খাবারও তৈরী। এদিকে নামাযেরও যথার্থ সময় হয়েছে। এমতাবস্থায় করণীয় কি হবে?
উত্তর:- এমতাবস্থায় আগে খানাপিনা করে পরে নামায পড়তে হবে। অত্যধিক ক্ষুধা নিয়ে নামায পড়া মাকরূহ। অবশ্য সময় একান্তই কম | থাকলে আগে নামায পড়ে নিতে হবে। (নুরুল ইযাহ পৃঃ ৭১)
৩৮। প্রশ্নঃ
উত্তর:- এমতাবস্থায় বাকী নামায বসেই পড়তে পারবে। আর যদি রুকুসিজদা করার ক্ষমতা না থাকে তাহলে অবশিষ্ট নামায ইশারায় পড়তে হবে। একইভাবে বসারও শক্তি না থাকলে শুয়ে শুয়েই বাকী নামায আদায় করতে হবে। (মাজমাউল আনহুর ১ম খন্ড পৃঃ ১৫৫)
৩৯। প্রশ্ন:-
উত্তর : হ্যা, ইকামতের জবাব দেয়া মুস্তাহাব। তাও হুবহু আযানের জবাবের মত। তবে শুধুমাত্র পার্থক্য হল কাদকামাতিচ্ছালাহ এর জবাব হবে আকামাহুল্লাহ’ (ফতোয়ায়ে শামী ১ম খন্ড পৃঃ ৩৭১, তাহতাবী পৃঃ
৪০। প্রশ্ন : যদি কোন মুক্তাদী ঈদের নামাজের দ্বিতীয় রাক‘আতে ইমামের সাথে শরীক হয় তাহলে সে ছুটে যাওয়া রাক‘আতটি কিভাবে আয় করবে।
উত্তর:- যদি মুক্তাদী দ্বিতীয় রাক‘আতে ইমামের সাথে শামিল হয় তাহলে
৪১। প্রশ্ন:-
উত্তর : প্রতি ওয়াক্তের সুন্নাতে মুয়াক্কাদা পড়ার গুরুত্ব রয়েছে। তাই সুন্নাতে মুয়াক্কাদা পড়ার পর ওমরী কাজা ও পড়বেন। তবে সুন্নাতে যায়িদা যেমন
৪২। প্রশ্নঃ
উত্তরঃ ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ নামাজে প্রথম বৈঠকে আত্তাহিয্যাতু পাঠান্তে দুরুদ শরীফের ‘আল্লাহুম্মা সাল্লিাআলা মুহাম্মদ’ পর্যন্ত পড়ে ফেললে সেজদায়ে–সাহু ওয়াজিব হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় শেষ বৈঠকে সেজদায়ে–সাহু করে নিলেই যথেষ্ট হবে। নচেত এ নামাজ পূনরায় পড়া ওয়াজিব হবে। (রাদুল–মুহতার ১ম খন্ড পৃঃ ৩৮৭, আহসানুল ফাতাওয়া ৪র্থ খন্ড)
৪৩। প্রশ্নঃ
উত্তরঃ– নামাজ পড়া অবস্থায় যদি হাসি এতােটা জোরে বের হয়ে আসে যে, তা সে নিজেও শুনেছে এবং তার পার্শ্বস্থ সবাই শুনেছে; ঠিক যেমন অট্টহাসি দিলে সবাই শুনে ফেলে তেমন; তাহলে নামাজ ও অজু উভয়টাই ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু যদি হাসিটা এমন হয় যে, যে হেসেছে শুধুমাত্র সেই শুনেছে, সবাই শুনেনি তাহলে কেবল নামাজই ভেঙে যাবে অজু ভাঙবে না। আর যদি || হাসির প্রাক্কালে কোন আওয়াজ না হয়ে দাত বের হয় তাহলে নামাজ এবং অজু কোনটাই ভাঙবে না। (ফঃ আলমগীরি খঃ ১)
৪৪।প্রশ্নঃ–
উত্তর:- মুক্তাদির জন্য ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। সুতরাং মুক্তাদী ইমামের আগে সালাম ফিরায়ে ফেললে মুক্তাদির নামায ভঙ্গ হয়ে যাবে। পূনরায় নামায আদায় করতে হবে ।(ফতওয়ায়ে দারুল উলুম ৩য় খন্ড পৃঃ ৩৭৩)।
৪৫।প্রশ্ন ও নফল নামায জামাতে আদায় করা যায় কি?
উত্তর:- নফল নামায় তথা তারাবীহর নামায, ইস্তিস্কার নামায়। নামাযে কুসুফ ও নামাযে খুসুফ জামাতে পড়া সর্বসম্মতিক্রমে যায়েজ। (ফতাওয়ায়ে কাদীর ১ম খন্ড পৃঃ ৪০৯)।
৪৬।প্রশ্ন:-
৪৭।প্রশ্নঃ– লোক দোয়ায়ে কুনুত জানা না থাকলে কিভাবে বিতর নামায আদায় করবে?
উত্তর:- তিনবার সূরা এখলাস পড়ে নিলেও চলবে। তবে দ্রুত দোয়ায়ে ||কুনুত শিখে নিতে হবে। (মাজমাউল আনহুর ১ম খন্ড পৃঃ ১২৯)
৪৮। প্রশ্ন:-
উত্তর:- এমতাবস্থায় শুয়ে শুয়েই নামায আদায় করবে। (শরহুত–তানবীর ১ম খন্ড পৃঃ ৭৯৯)।
৪৯। প্রশ্ন:- প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর দীর্ঘদিন নামায পড়েনি। বর্তমানে তাওবা করে নামায পড়া শুরু করেছে। এখন কি তাকে পূর্বের ছেড়ে দেয়া নামাযগুলোর কাযা আদায় করতে হবে?
উত্তর : হ্যাঁ, এখন তাকে অতীত জীবনের ছেড়ে দেয়া নামাযগুলোর কাযা আদায় করতে হবে। কারণ, তাওবা করার কারণে কাযা নামায মাফ হয়ে যায় না। অবশ্য না পড়ার কারণে যে পাপ বা গুনাহ হয়েছিল সেটা হয়তো মাফ পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এখন যদি অতীতের কাযা নামাযগুলো আদায় না করে তাহলে দায়িত্বে কাযা নামায থেকে যাবে যা মারাত্মক গোনাহের কারণ হবে। (শরহে বেকায়াহ ১ম
খন্ড পৃঃ ১৭৯) ;
৫০। প্রশ্ন
উত্তর : এমতাবস্থায় নামায ছেড়ে দেওয়া ওয়াজিব। প্রয়োজনে ডাকুক
৫১। প্রশ্নঃ অসুস্থ ব্যক্তি যে বিছানায় আছে ওটা নাপাক। এখন বিছানা পালটাতে গেলে তার খুবই কষ্ট হবে। এমতাবস্থায় করণীয় কি হবে?
উত্তর : হ্যা, অপছন্দের সহীত আদায় করে নিবে। তারপরও ফরয ছেড়ে | দিবে না। (অলমগীরী খঃ ১ পৃঃ ১৩৭)
৫২। প্রশ্ন :- বিতর নামাযে তৃতীয় রাকআতে দোয়া কুনুত পড়তে মনে নেই। রুকুতে গিয়ে মনে পড়েছে। এমতাবস্থায় করণীয় কি হবে?
উত্তর : এমতাবস্থায় নামায শেষে সিজদায়ে সাহু আদায় করতে হবে। অবশ্য রুকু হতে দাঁড়িয়ে দোয়া কুনুত পড়ে পূনরায় রুকু-সিজদা করে নামায শেষ করলেও নামায হয়ে যাবে। তবে এমনটি করা সঠিক নয়। আর এমনভাবে নামায আদায় করলেও সিজদায়ে সাহু দিতেই হবে। (কাবিরী)
৫৩। প্রশ্ন:- নামায পড়তে একাধিক সাহু সিজদার কারণ ঘটলে কি করণীয় হবে?
উত্তর:- সাহু সিজদা ওয়াজিব হওয়ার একাধিক কারণ ঘটলেও মাত্র একবারই সাহু সিজদা করতে হবে। (মাজমাউল আনহুর ১ম খন্ড পৃঃ ১৪৯)
৫৪। প্রশ্ন চার রাকআত বিশিষ্ট ফরজ নামাযের তৃতীয় রাক‘আতে ভুল বশতঃ কিরাআতে আলহামদুসহ সূরাহ মিলিয়ে পড়লে, সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব হবে কি না?
উত্তর:- ফরজ নামাযের তৃতীয় ও চতুর্থ রাক‘আতে সূরাহ মিলানোর নিয়ম নেই। তবে কেউ ভুলে সূরাহ মিলালে তাতে নামায হয়ে যাবে, কোন অসুবিধা হবে না এবং সিজদায়ে সাহুও করতে হবে না। (বাহরুর রায়িক ১ম খন্ড পৃঃ ২৯৬)
৫৫। প্রশ্নঃকেউ ইচছাকৃতভাবে নামাজের মধ্যে বার বার চুলকালে তার নামজের হুকুম কি?
উত্তর : কারো যদি চুলকানি রোগ থাকে, আর নামাযের মধ্যে শরীর না চুলকালে তার নামাযের খুশু-কুজু নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে ২/১ বার চুলকালে নামায নষ্ট হবে না। আর যদি ৩বার এমনভাবে চুলকায় যে, প্রতি দুইবার চুলকানোর মাঝে এক রূকন (অর্থাৎ তিন তাসবিহ) পরিমাণ সময়ও বিরতি হয় তাহলে নামায নষ্ট হয়ে যাবে। (আহসানুল ফাতাওয়া ৩য় খন্ড পৃঃ ৪১৬)এর
৫৬। প্রশ্নঃ
উত্তর : উক্ত অবস্থায় দ্বিতীয় রাক‘আতে সূরাহ বাকারার শুরু থেকে পড়তে পারে, কিংবা সূরা নাসই দ্বিতীয় বার পড়তে পারে। তবে এক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাকআতে সূরাহ নাস পড়াই ভাল।
৫৭। প্রশ্ন:- যারা সমগ্র বাংলাদেশে ট্রাক অথবা বাসের ড্রাইভারী করে তারা কি সবসময় কছর নামাজ পড়বে নাকি পূর্ণ নামায পড়বে।
উত্তরঃ- ড্রাইভার যদি নিজ বাড়ীতে অবস্থান করে তাহলে যে দিন সে গাড়ী নিয়ে ৪৮ মাইলের ভিতরে ভ্রমণ করার নিয়ত করে এবং বাস্তব ভ্রমণও তাই হয় তাহলে ঐ অবস্থায় পূর্ণ নামায পড়বে। অনুরূপভাবে কোন নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ী নিয়ে ১৫ দিন বা ততোধিক অবস্থান করার নিয়ত করে তাহলে পূর্ণ নামাজ পড়বে। কিন্তু যারা নিজ বাড়ীতে থাকে না। বা কোন নির্দিষ্ট জায়গায় লাগাতার ১৫ দিন বা তার অধিক দিন থাকার নিয়ত না করে বরং ২/৪ দিন এখানে এবং ২/৪ দিন সেখানে এভাবে সারা দেশে ভ্রমণ করতে থাকে, তাহলে তাদের একাকী নামাজগুলো কছর করে পড়তে হবে। হ্যাঁ যদি কোন স্থানে স্থানীয় ইমামের পিছনে ইক্তেদা করে নামাজ পড়ে তাহলে পূর্ণ নামাজ পড়বে। (ফতোয়ায়ে শামী)।
৫৮। প্রশ্নঃ
৫৯। প্রশ্ন :
উত্তর:- মহিলারা মসজিদে নামায আদায় করার চাইতে ঘরে নামায আদায় করা উত্তম এভাবে মহিলারা ঘরের যত গহীনে নামাজ পড়বে, তত বেশী ফজীলত লাভ হবে। অতএব, উক্ত হাদীসের ফজীলত মহিলারা ঘরের বন্ধ কক্ষে সংগোপনে ওয়াক্ত মত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে লাভ করবে। নিঃসন্দেহে। (সূরাহ আহযাব পৃঃ ৩৩, আদুররুল মুখতার ১ম খন্ড পৃঃ ৫৬৬ মারেফুল কোরান খঃ৭ পৃঃ ২০৭ সুরা আহাব (পদী সম্পকিত আয়াত)
৬০। প্রশ্নঃ
উত্তর:- ইমামের আগে মুক্তাদী রুকু বা সিজদায় গিয়ে ইমামের আগে রুকু সিজদা থেকে উঠে গেলে, তার নামায নষ্ট হয়ে যাবে। এ নামায পূনঃ পড়তে হবে। তবে সে যদি আগে রুকু বা সিজদায় গিয়ে না উঠে ইমামের। জন্য অপেক্ষা করে এবং ইমামের সাথে রুকু/সিজদায় যাওয়ার পর সে। শরীক হয়ে তারপর ইমামের উঠার পর সে উঠে, তাহলে তার নামায হয়ে যাবে, নষ্ট হবে না। তবে এভাবে ইমামের আগে রুকু-সেজদায় চলে যাওয়া মাকরুহ হবে। (ফাতাওয়া দারুল উলুম ৪র্থ খন্ড পৃঃ ১৪১, ৫৬০, ৬১।
৬১। প্রশ্ন:- ফজর নামাজ আদায়ের পরপর সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে যে অল্প সময় থাকে, এ সময় কাজা নামাজ পড়া যায় কি না?
উত্তরঃ উল্লেখিত সময়ে নফল নামাজ পড়া যদিও মাকরূহ কিন্তু এ সময় কাজা নামাজ পড়া। যায়, এমতবস্থায় মাকরূহ হবে না। (এমদাদুল মুফতীঈন পৃঃ ৩৬৬)
৬২। প্রশ্নঃ কারো অনেক নামাজ কাজা হলে তা আদায় করার নিয়ম কি?
উত্তরঃ যদি কারো অধিক সংখ্যক নামায কাজা হয়ে যায়, আর সেগুলোর সংখ্যা জানা না থাকে তাহলে নিজের প্রবল ধারণা অনুযায়ী তার পরিমাণ নির্ধারণ করে নিবে। এরপর তা আদায় করার সময় কোন ওয়াক্তের নামায তাও ঠিক করে নিবে। যেমন, আমার জীবনের সর্বপ্রথম যে জোহরের নামায কাজা হয়েছিল তার প্রথম ওয়াক্ত আদায় করছি। এমনিভাবে সব। কাজা নামায উক্ত নিয়মে আদায় করে নিতে পারেন।(ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১খন্ড পৃঃ ১২১, হিদায়া। ১ম খন্ড পৃঃ ১৫৪, হালবী কাবীর পূঃ ৫২৯, ইমদাদুল ফাতাওয়া ১ম খন্ড পৃঃ৩৩৮)
৬৩। প্রশ্ন :
উত্তর:- রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর হাদীস, ফাতওয়ার নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের আলোকে প্রমাণিত হয় যে, নামাযে কাতার সোজা করানো ইমামের দায়িত্ব। (বুখারী শরীফ ১ম খন্ড পৃঃ ১০০, মিশকাত শরীফ ১ম খন্ড পৃঃ ৯৮, দুররে মুখতার ১ম খন্ড পৃঃ ৫৬৮, দারুল উলুম ১ম খন্ড পৃঃ ৩৪০)।
৬৪। প্রশ্নঃ নামাজি ব্যক্তির সম্মুখে দিয়ে যাতায়াত করা শরীয়তের দৃষ্টিতে কিরূপ? উত্তর : নামাজী ব্যক্তির সম্মুখ দিয়ে যাতায়াত করা (কবিরাহ্ গুনাহ্)বা মারাত্মক গুনাহ। এ মর্মে রাসুল আকরাম (সাঃ) ইরশাদ করেন, নামাজী ব্যক্তির সম্মুখ দিয়ে। যাতায়াত করা যে কত মারাত্মক গুনাহ, এটা যদি যাতায়াতকারী ব্যক্তি জানতো তাহলে সে চল্লিশ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলেও নিজ স্থানে সে দাড়িয়ে থাকত। তাপরও নামাজী ব্যক্তির সম্মুখ দিয়ে যাতায়াতের সাহস করত না। (ফাতাওয়া আলমগীরী ১ম খন্ড পৃঃ ১০৪)
৬৫। প্রশ্নঃ ইমাম সাহেব মাত্র একজন মুক্তাদী নিয়ে নামাজ শুরু করার পর আরো কয়েকজন জামাতে শামিল হল। এমতাবস্থায় কি করবে? জনৈক আলেম বলেছে, ইমাম সাহেব সামনে বাড়লে আমলে কাছীর হয়ে নামাজ ভেঙ্গে যাবে কথাটি ঠিক কিনা?
উত্তর : বর্তমানকালে মুসল্লীদের মাসআলা সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে মুক্তাদী পিছনের দিকে না গিয়ে বরং ইমাম সামনের দিকে যাওয়া উত্তম। (শামী ১ম খন্ড পৃঃ ৫৩১, দারুল উলুম ৩য় খন্ড পৃঃ ২৫২)।
৬৬।প্রশ্নঃ
উত্তর:- বর্ণিত অবস্থায় ইমামসহ যে সকল মুক্তাদীরা কথাবার্তা বলেনি এবং নামাজ ভঙ্গ হয় এমন কোন কাজও করেনি তাদের নামাজ সহী হয়েছে। পক্ষান্তরে যারা কথাবার্তা বলেছে কিংবা সালাম ফিরানোর পর নামাজ ভঙ্গ হয় এমন কোন কাজ করেছে তাদের নামাজ সহী হয় নাই, এ নামাজ পুনরায় পড়তে হবে। (ফাতাওয়া শামী ১ম খন্ড পৃঃ ৬৯১ ফঃ দঃ খঃ ৪ পৃঃ ৪১০)
৬৭। প্রশ্নঃ মসজিদে কিংবা বাসায় একাকী নামাজ আদায় কালে একামত দিতে হয় কিনা? উত্তর:- মসজিদে জামায়াত শেষে একাকী নামাজ আদায়কালে একামত বলার প্রয়োজন নেই। এ ক্ষেত্রে একামত বলা মাকরূহ, তবে বাসায় একাকী। নামাজ আদায়কালে একামত বলতে হবে। (ফাতাওয়া আলমগীরী ২য় খন্ড, মাহমুদীয়া ৫ম খন্ড ফঃ শামী খঃ ১ পৃঃ ২৯১ আঃ ফঃ খঃ ২ পৃঃ ২৭৯)
৬৮।প্রশ্ন
উত্তর:- চুলকানে ওয়ালা, অপর পায়ের দ্বারা ঐ পরিমাণ চুলকাতে পারবে যার দ্বারা অপর কোন ব্যক্তি তাকে নামাজরত অবস্থায় নেই বলে ধারণা না হয়। এর বেশী চুলকাতে পারবে না। (ফাতাওয়া দারুল উলুম ৪র্থ খন্ড পৃঃ ১৪৫)।
৬৯। প্রশ্নঃ ইমাম সাহেব আখেরী বৈঠকে থাকাবস্থায় এক ব্যক্তি তাড়াতাড়ি এসে তাকবীর তাহরীমা বাধল। অতঃপর বসার পূবেই ইমাম সাহেব ছালাম ফিরালেন। এখন ঐ ব্যক্তির ইক্তেদা দুরস্ত হল কিনা?
উত্তর : প্রশ্নোল্লিখিত অবস্থায় ঐ ব্যক্তির ইক্তেদা দুরস্ত হয়েছে। (শামী ১ম | খন্ড পৃঃ ৪৩৬ আযীযুল কঃ পৃঃ ২২২)
অসমাপ্ত চলবে………
Thank you for reading the post.