সফলতার পদক্ষেপসমূহ । Steps to Success
জীবনে সফলতার জন্য মানুষের বিভিন্ন গুণাবলীর প্রয়োজন হয়। এ গুণগুলোই মানুষের জীবনকে সফল বা ব্যর্থ করে তুলতে পারে। তাই সফলতার জন্য সঠিক পরিকল্পনা, ধৈর্য, বিনয় এবং আত্মবিশ্বাসের মতো গুণাবলীর উপস্থিতি অপরিহার্য।
স্বপ্ন: সফলতার প্রথম ধাপ
মানুষের সফলতার পথে প্রথম ধাপ হলো স্বপ্ন। সাফল্য অর্জনের জন্য প্রথমে নিজের স্বপ্ন ও লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা এবং সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন।
পরিকল্পনা বাস্তবায়ন
পরিকল্পনা কখনো ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। এটি অবশ্যই সুনির্দিষ্ট, কার্যকর এবং বাস্তবায়নযোগ্য হতে হবে। লক্ষ্য, আঙ্গিনা, কৌশল ও নীতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি।
উপদেশ:
- সময়ের সদ্ব্যবহার করুন।
- অভিজ্ঞতা থেকে শিখুন।
- ভুলগুলো সঠিক সময়ে শনাক্ত করুন।
সাফল্যের জন্য প্রয়োজনীয় গুণাবলী
ধৈর্য: ধৈর্যের অভাবে মানুষ মাঝপথে যাত্রা ভঙ্গ করে। প্রকৃতপক্ষে, ধৈর্যশীল হওয়া মানে বিপদকে তুচ্ছজ্ঞান করে সামনে এগিয়ে চলা। ধৈর্য আমাদের জীবনে শৃঙ্খলা আনে এবং সাফল্যের পথ সুগম করে।
বিনয়: মানবজীবনের সৌন্দর্য এবং সফলতা বিনয়ের মধ্যেই নিহিত। বিনয়ী ব্যক্তি সহজেই অন্যদের মন জয় করতে পারে।
আত্মবিশ্বাস : আত্মবিশ্বাস মানুষকে সীমাহীন শক্তি দেয়। এটি মানুষকে শ্রান্তিহীন, ক্লান্তিহীন ও অটল করে তোলে। আত্মবিশ্বাসী মানুষ নিজের উপর এবং নিজের কর্মের সফলতার উপর বিশ্বাস রাখে।
মেধাশক্তি এবং বুদ্ধিমত্তা: মানুষের মেধাশক্তি হল সমস্ত শক্তির মূল। বুদ্ধিমত্তা এবং প্রতিভা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। তবে প্রতিভাকে যত্নের অভাবে ফেলে রাখলে তা ম্লান হয়ে যায়।
উদাহরণ: প্রতিভাবানরা নতুন চিন্তা এবং সৃষ্টিশীলতায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সৃজনশীল মানুষের জন্য সময়ের সদ্ব্যবহার এবং অধ্যবসায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আই-কিউ এবং বুদ্ধিমত্তার গুরুত্ব: বুদ্ধিমত্তা এবং আই-কিউ (Intelligence Quotient) মানুষের দক্ষতা ও সৃজনশীলতার পরিচয় বহন করে। বুদ্ধিমত্তা বাড়াতে সময়ের সঠিক ব্যবহার এবং পরিবেশের প্রভাবকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
মহান বিজ্ঞানী নিউটনের উক্তি: “প্রতিভা বলতে কিছু নেই, সময়ের সদ্ব্যবহার এবং কঠোর অধ্যবসায় প্রতিভার জন্ম দেয়।”
সাফল্যের জন্য সময় ব্যবস্থাপনা
সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহারে সফলতা অর্জন করা সম্ভব। অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ, ভুল সংশোধন এবং সঠিক পথে এগিয়ে চলাই সফলতার ভিত্তি। সফলতার জন্য শুধু পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়। মানুষের ধৈর্য, বিনয়, আত্মবিশ্বাস, এবং মেধাশক্তির সমন্বয়ে সাফল্য অর্জিত হয়।
স্বপ্ন
প্রথমে আসে স্বপ্ন। মানুষ কি চায়? কার চাওয়া কি রকম। প্রতিটি মানুষ কোন না কোন জিনিসকে বিশেষ ভাবে কামনা করেন। মানুষের এ চাওয়া থেকেই আকাঙ্ক্ষার সৃষ্টি হয়। মানুষ আকাঙ্ক্ষা পোষণ করেন বিজয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন । যার কথা হচ্ছে প্রথমেই আপনার স্বপ্ন ঠিক করতে হবে । তারপর স্বপ্নকে বাস্তবায়নের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে (Creating proper environment) বিজয়ী হওয়ার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য উপযোগী কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারলেই আপনি সফলতার শুভাকাঙ্ক্ষী। এ লক্ষ্যে নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ অপরিহার্য।
পরিকল্পনাকে কোন অবস্থাতেই ভাগ্যের উপর ছেড়ে দেবেন না ।(Planning must not be left to chance) পরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের পথ অনুসরণ করে কার্যকর পন্থা অবলম্বন করতে হবে।
এ লক্ষ্যে আপনার কাজ হবে প্রতিটি ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় এবং প্রয়োগযোগ্য ব্যবহারিক পথ অনুসরণ করা।
আপনার কাজ সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে কতটুকু সহায়ক তার ব্যবহারিক দিকটির প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করা। এজন্য পরিকল্পনাকে অবশ্যই সুনির্দিষ্ট হতে হবে। (Planning must be definite)।
আপনাকে অবশ্যই লক্ষ্য, আঙ্গিনা, কৌশল ও নীতি-জ্ঞান সম্পর্কে অবগত
হতে হবে। (Goal, premises, strategies and policies must be communicated) আপনার অকার্যকর পরিকল্পনের পেছনে বড় কারণ হল, আপনার বিজয়ী হওয়ার উদ্দেশ্যের প্রতি আস্থা (Trust) ও কর্মপন্থা সম্বন্ধে অজ্ঞতা।
আপনি কীভাবে লক্ষ্যের দিকে এগোবেন তা যদি বুঝতে না পারেন তাহলে সে পরিকল্পনা ও স্বপ্ন মূল্যহীন। এক্ষেত্রে আপনার সময়ের গুরুত্ব অনুধাবনে অসামর্থতা ও কাজের প্রতি অনিহা এবং চেষ্টার প্রতি অনাগ্রহতাই বেশী দায়ী। লক্ষ্য, আঙ্গিনা, কৌশল ও নীতি প্রয়োগ মূলত : সময়, শ্রম, উদ্যম ও স্বপ্ন অনুযায়ী উদ্দেশ্য প্রতিষ্ঠায় অভিপ্রায়ী হয়ে সকল গুণের সমন্বয় সাধন করা। তবেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে।
আপনাকে অবশ্যই প্রতিটি কাজের দক্ষতা অর্জন (Achivement of efficiencey) এবং দক্ষতা বৃদ্ধিতে (Increase in efficiencey) তৎপর হতে হবে।
আপনার সাফল্যের পদক্ষেপে থাকবে; সময়ের কাম্য ব্যবহার তথা সদ্ব্যবহার (Optimum use of time) কারণ সময়ের সদ্ব্যবহার ও সময় সচেতনতাই সাফল্যের ভীত তৈরী করে।
অভিজ্ঞতা
অভিজ্ঞতা (Experience) পেছনের ব্যর্থতা থেকে যে শিক্ষা হল তাই মূলত অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতাকে সামনের প্রতিটি কাজে ব্যবহার করা, যাতে অনুরূপ ব্যর্থতার মুখোমুখি আর না হতে হয় ।
লক্ষ্য নির্ধারণ (Determination of goals) শেখার আগ্রহ (Willingness to learn )
ভুল-ভ্রান্তি সঠিক সময়ে আবিস্কার করা (That the mistakes can be discover in time)
সফলতার জন্য শুধু পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়; বরং মানুষের আচার-আচরণ ও নানাবিধ সমন্বিত গুণের সমন্বয়ের বিশেষ প্রয়োজন। নিম্নে সেগুলোর আলোচনা করা হলোঃ- যে গুণাবলীগুলো ড. আল্লামা শায়খ মানযূর আমাদের আধ্যাত্মিক বিজ্ঞানে সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
ধৈর্য: ধৈর্যের অভাবে মানুষ চলার পথে দিশা হারিয়ে ফেলে, মাঝ পথে যাত্রা ভঙ্গ করে, বন্ধুত্বের বন্ধন ছিন্ন করে, হতাশার সাগরে নিমজ্জিত হয়, তা আমরা আমাদের চারদিকে তাকালেই দেখতে পাই। আমরা কি এসব থেকে জীবনের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করি?
মানুষকে অবনতি থেকে বাঁচতে হলে, তার সাফল্যকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে তার সিদ্ধান্তকে করতে হবে কলুষমুক্ত, স্থির, অবিচল, ধৈর্যশীল ও নিজের আয়ত্বে নিয়ন্ত্রণাধীন।
মুখে মুখে ধৈর্যের কথা বললেই ধৈর্যশীলের পরিচয় দেয়া যায় না। মনে মনে এমন একটা দৃঢ় প্রত্যয়ী, অবিনাশী ভাব আনতে হবে, যাতে বিপদকে তুচ্ছ করে সাফল্যের পথ ধরা যায়। প্রকৃত পক্ষে বিপদকে জয় করার মাধ্যমে এগিয়ে চলাই অবিচলতার পরিচয়।
বায়ু বা বাতাস প্রকৃতিগতভাবে অধীর, অস্থির, চঞ্চল। চঞ্চলতার বিপরীত গুণ হলো-ধীরতা, স্থিরতা; ‘আরবীতে যাকে বলা হয় ‘স্ববর’। চঞ্চলতা জীবনে শৃংখলা নষ্ট করে, অস্থিরতা এনে দেয় জীবনে অশান্তি; আর ধৈর্য আনে জীবনে শান্তি, যা উন্নতির সোপান। ধৈর্যই সব সমস্যার সমাধান করে। কথায় বলে ‘স্ববুরে মেওয়া ফলে’ । ধৈর্য বা স্ববর মানুষের একটা অতি প্রয়োজনীয় বিশেষ গুণ। বাতাসের চাপে যেমন ঝড় বৃষ্টি হয়, আর সে ঝড় মজবুত ঘর-বাড়ী নষ্ট করে দিতে পারে। তেমনি অধৈর্য ক্ষণিকের মধ্যে মানুষের সব গুণ, সকল কীর্তি ধ্বংস করে দিতে পারে। সাধারণতঃ দেখা যায় যে, কোন্ জিনিস অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকলে বা বশে না থাকলে যত বেশী ক্ষতি করে; তা দ্বারা তত বেশী উপকারও সাধন করা যায় নিয়ন্ত্রণে এনে।
বিনয় : মানব জীবন সুন্দর হলেই বলা যায় সফল জীবন। তাই সুন্দর- অসুন্দর, সফল-বিফল জীবনের একটা আলেখ্য বা বাস্তব-চিত্র স্রষ্টা হিসেবে আল্লাহ্ আগত মানবজাতিকে দেখাবার ব্যবস্থা করলেন। মানবের শ্রেষ্ঠত্বও প্রমাণ করলেন আদি মানব বাবা আদমকে সিজদার নির্দেশের মাধ্যমে । ফিরিশ্তাগণ আদব প্রদর্শন করলেন তাই ফিরিশতা চরিত্র ‘আদব’ এর প্রতীক হয়ে রইলো এবং ইবলীস মানবকে (আদমকে) সিজদা না করে ইবলীসী চরিত্র উদাহরণ হয়ে রইল ‘বে-আদবী’র প্রতীক হিসেবে। এ বিষয়ে হাদিস শরীফে বলা হয়েছে :
الادب خیر من الذحب و الفضۃ “আল্ আদা-বু খাইরুম মিনায-যাহাবি ওআল ফিদ্ব্যাতি”
অর্থাৎ আদব (শিষ্টাচার, বিনয়) স্বর্ণ এবং রৌপ্যের চেয়েও উত্তম।
বস্তুত সকল ‘ইবাদতের সৌন্দর্য ও পূর্ণতা আদবের মাঝেই নিহিত। আদবের মাধ্যমেই সম্ভব ইবাদতকে গ্রহণযোগ্য করে তোলা। কোন কাজ শিষ্টাচার বা আদবের সাথে না হলে যথারীতি তার সফলতা আসে না। আর আদবের বাহন হচ্ছে বিনয়। বাস্তবে বে-আদবী বিনয়ের বিপরীত। এ বিনয়ের মাঝেই প্রকাশ পায় আদব।
জাগতিক ঐশ্বর্য ও ঐতিহ্যের যত কিছুই একজন মানুষের মধ্যে থাকুক না কেন, যদি তার মধ্যে আদব বা শিষ্টাচার, নম্রতা, তাওআদ্বু‘আ বা বিনয় না থাকে তা হলে সে সম্মানের পাত্র হতে পারে না। পক্ষান্তরে সে হয় ঘৃণার পাত্র। কোন ফল বা খাদ্যে যদি স্বাদ না থাকে তবে তা গ্রহণ যোগ্য হয় না ।
একজন কর্মচারী তার অফিসের কাজ যতই সুন্দরভাবে করুক না কেন, সে যদি উর্ধ্বতনের কাছে বিনয়ী না হয়, তার পদোন্নতির আশা হয় সুদূর পরাহত। বিনয়ভাব মনে-প্রাণে মস্তিষ্কে মজ্জাগতভাবে যদি জমাট না বাঁধে তা’হলে প্রতিটি ব্যক্তি হবে আত্ম-অহংকারে আত্ম-জ্ঞান হারা, আত্ম- মর্যাদাবোধ বর্জিত, উগ্র, দাম্ভিক-যে মানামানির ধার ধরে না, কারো সম্মানের তোয়াক্কা করে না, অবাধ্যতা যেন অস্থি-মজ্জা পেরিয়ে চিন্তা-চেতনায়, স্বভাব- মেজাজে, আচার-আচরণে এমন কি চেহারায় বুঝা যায় লোকটি যেন আস্ত বে-
আদব ।
আর সবাই ইয্যতের ভয়ে তার থেকে দূরে থাকতে চেষ্টা করে। আজ ঘর- বাড়ী, সমাজ-দেশ এমন কি দুনিয়াটা এমন এক স্থানে দাঁড়িয়েছে, যেন মনে হয় মানুষের মাঝে প্রায় সর্বত্রই শালিনতাবোধের অভাব, মানা-মানির অভাব, আদবের অভাব, যেন গোটা সমাজটা একটা বে-আদবের আখড়া।
স্বামী-স্ত্রীতে যেমন মানা-মানির অভাব তেমনি সন্তানেরাও হয়ে উঠে মা- বাবার অবাধ্য। ছোটরা বড়দের মানে না, ছাত্ররা শিক্ষক-গুরুজন মানে না। চাকরেরা মনীবের সাথে বে-আদবীর আচরণ করে। অফিস আদালতেও একই পরিস্থিতি, অধস্তনরা উর্ধ্বতনদের মানে না। এ অবস্থা জাগতিক প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে যেমন প্রযোজ্য তেমনি স্রষ্টার নিকটও বিনয়ী না হয়ে আদবের অভাবে আত্মার উন্নতি সাধন হয়ে উঠে অসম্ভব। শুধু স্থান-কাল-পাত্র ভেদে নয় বরং প্রায় সার্বজনীনভাবে সর্বত্র মানবতা-বর্জিত যে ভয়ংকর মানব-সমাজ দিনে দিনে গড়ে উঠছে, নৌতিকতা-বিধ্বংসী যে মানসিকতা সংক্রমিত হচ্ছে; তাতে মানব-সভ্যতা প্রকম্পিত হবারই কথা। এর পরিণাম ভেবে চিন্তাশীলদের শংকিত হবার কথা। এর থেকে বাঁচার জন্য সতর্কবান মানুষদের দিশেহারা হবারই কথা। তবে মহান স্রষ্টা বিশেষ করুনা সৃষ্টির প্রতি যে, যেমনিভাবে সন্তান ভূমিষ্ট হবার আগেই মায়ের বুকে দুয়ের ধারা সৃষ্টি করেন, তেমনিভাবে প্রত্যেকটি সমস্যা-সংকটেও সামাধান রেখে দিয়েছেন- যা পাওয়ার জন্য মানুষকে প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এমনি প্রচেষ্টা চালিয়ে মানুষ আবিস্কার করেছে বা করছে নানা প্রকার ব্যধির ঔষধ ।
প্রকৃত পক্ষে মানুষ অ-গণিত স্বত্বার অধিকারী একটি রূপ। এ অগণিত স্বত্বার ভাল-মন্দ, সুস্থতা-অসুস্থতা, দুর্বলতা-সবলতা, সক্রিয়তা-নিষ্ক্রিয়তা, উন্নতি-অবনতি, সব কিছুর দায়িত্ব মানুষের উপর।
এ স্বত্বাগুলোর প্রতিটির অবস্থার দু’টি দিক আছে, দৈহিক আর আত্মিক। দেহের ভালো বা আত্মার ভালো, দেহের অসুস্থতা বা আত্মার অসুস্থতা, দেহের উন্নতি বা আত্মার উন্নতি। কিন্তু আত্মোন্নয়নের আরেকটি ব্যক্তিক উন্নতি আছে। যা ব্যক্তিকে সাফল্য মণ্ডিত করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করে। সে উন্নতি- জ্ঞানও আত্মিক উন্নতির সাথে সম্পৃক্ত।
মানুষ অনেক সময়ে দুশ্চিন্তা গ্রস্থ হলে নিজের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে । এ সময় অদৃষ্টকে আচ্ছা করে গালি দিতে পারলেই মনে হয় তার মনের খেদ্ মিটে, আর বিফলতার গ্লানি মুছে যায়। এমনিতর একটা ভাব সাধারণতঃ মানুষের আচরণে ফোটে উঠে। অদৃষ্টের শ্রাদ্ধ না করে বরং একবার কৃতকার্য না হতে পারলে বার বার চেষ্টা করে দেখা যায়, কবিতার ভাষায় বলতে হয়, ‘একবার না পারিলে দেখ শতবার।’ এখানে শতবারের প্রয়োজন নেই কমপক্ষে সাতবার দেখলেই একটা ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে।
একবার সফলতা বিপন্ন হলে তার জন্য হা-হুতাশ করে দুশ্চিন্তা বাড়ালে তাতে ব্যর্থতাকে মেনে নেওয়া হয়। বিজয়ীরা ব্যর্থতাকে জয় করেন। মেনে নেন না। ব্যর্থতাকে মেনে নিলে তাতে নিরাশায় ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনাই বেশী। ব্যর্থতাকে জয় করার অনুশীলন করুন। ব্যর্থতাকে জয় করার অনুশীলনের জন্য অবিচল ও অটল ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে হবে।
ব্যাহ্যিক দৃষ্টিতে যা মন্দ বা প্রতিকূল বলে মনে হয়, প্রকৃতপক্ষে তা যে ভালো বা অনুকূল নয়, তা-কে নিশ্চিত করে বলতে পারে? মানুষ যা চায় তার পক্ষে মঙ্গলজনক মনে করেই চায়। আবার সে তা না পেলে অসন্তুষ্ট হয়। কিন্তু সে যে স্রষ্টার অতি প্রিয় সৃষ্টি, স্রষ্টাই সবকিছু ভাল জানেন এবং স্রষ্টাই তাকে পরিশ্রম করার আদেশ দিয়েছেন। দিয়েছেন ভাল-মন্দ বোঝার জ্ঞান। কিসে তার উন্নতি কিসে তার অবনতি সবই স্রষ্টা পরিস্কার করে দিয়েছেন তার বিচার বুদ্ধিতে। মানুষের মধ্যে এ বিচার বুদ্ধি জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও মানুষ ভুল করেন। স্রষ্টাকে ভুলে গিয়ে সমাজে বিশৃংখল কাজ করে বসেন। আত্ম-অহংকারে মানবিক গুণাবলীর কথা ভুলে অমানবিক কাজে লিপ্ত হন। দুশ্চিন্তা ও হতাশার সৃষ্টি করে ভাগ্যকে দোষারোপ করেন।
স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাসে ঘুণ ধরান। অবিশ্বাসের সাগরে ডুব দিয়ে শয়তানের অনুসারী হয়ে যান। অহংকার তাকে পুরোপুরি ঘ্রাস করে বসে। হিতাহিত জ্ঞান শূন্য অবস্থায় সে ভুল পথে চলতে থাকে।
অহংকার পতনের মূল। কিন্তু প্রশ্ন হলো অহংকারীই কি নিজের পতন চায়? যদি কোন অহংকারী এ কথা শুনে থাকেন; তাহলে চিৎকার করে বলবেন, না, পতন চাই না। তাহলে তাকে বাঁচাবার ব্যবস্থা কি? তার আগে দেখা যাক অহংকারটা কি বা কিসের জন্য। আসলে অহংকারটা যে কি, তা সঠিক করে বলা মুশকিল, তবে ভাব-ভঙ্গিতে ফুটে উঠে মানুষটা দেমাগী কি না। সাধারণ কথায় একে গরিমাও বলা হয়ে থাকে। কারণ অহংকারীর হাম- হাম ভাব থাকে। সে ছাড়া আর কেউ যেন কিছু না, বা কেউ কিছু বুঝে না, তেমন একটা গরিমার ভাব। এটা নির্বোধেরই নামান্তর। এ গরিমা পার্থিব বিষয়ে কিসে আসতে পারে? সমাজের লোকদের আচার-ব্যবহার পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, যার টাকা-পয়সা আছে সে ব্যক্তি তার আচরণে তেমন একটা ভাব দেখিয়ে থাকেন, এক কথায় টাকার গরম। আরও দেখা যায় মানুষের মধ্যে শক্তির গরম, অর্থের গরম, বিদ্যার গরম, গরম, জনবলের গরম, গুণের গরম, স্বাস্থ্যের গরম, রূপের গরম ইত্যাদি ।
মানুষের দেহে তাপ অতিমাত্রায় দেখা দিলে হুশ-জ্ঞান থাকে না, প্রলাপ বকে। এমতাবস্থায় সাধারণ আচরণ তার দ্বারা সম্ভব হয়ে উঠে না। আধ্যাত্মিক বিজ্ঞানী ড. আল্লামা শায়খ মানযূর আমাদের মতে, আতশ্ বা অগ্নি বা আগুন- যা মানুষের গঠন- উপাদানে আছে, তা যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তা হলেই দেখা দেয় গরম ভাব নৈতিক দিক থেকে।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে দেহের নিয়মতান্ত্রিক দিকে লক্ষ্য করে বলে থাকে অগ্নি- মন্দা বা চড়া, আর আধুনিক চিকিৎসা-বিজ্ঞানে ও তাপের চড়া ভাব অস্থির করে তোলে ডাক্তারকে ।
সমাজে কিছু সংখ্যক লোক যাদেরকে এক্ষেত্রে ভাগ্যবান বলা যায়; তারা জন্মের পর থেকে এমন একটা পরিবেশ পেয়ে আসছেন যার প্রভাব তাদেরকও সে সব ভাল গুণ অর্জনে কিছুটা সাহায্য করে, কিন্তু সেই পরিবেশেও আজকাল ব্যতিক্রমের মাত্রা বেড়ে গেছে। এর জন্য অবশ্য পরিবেশ দায়ী নয়। আর এ কথাও নিশ্চিত করে বলা ঠিক নয়।
সে যাই হোক, আমাদের বিষয় হলো নৈতিক ও চারিত্রিক দিক, সে দিকটা নিয়ন্ত্রিত না হলে কি কি অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে; তা চিন্তা করা দরকার। সাধাণতঃ দেখা যায়, মানুষের মেজাযে গরম ভাব বা অহংকার থাকলে সে অন্য কারও মতের ধার ধারে না। সমাজে সবার সাথে সদ্ভাব রাখতে হলে, যে Adjustability থাকা দরকার; তা হয়ে উঠে না। সব কিছু মাথা পেতে নিতে পারে না। এমনকি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সিদ্ধান্তকেও চূড়ান্ত বলে মেনে নিতে কষ্ট হয়। আত্ম-সমর্পন করতে চায় না তাঁর কাছে। আর আত্ম-সমর্পন করাকেই আরবীতে বলা হয় ‘তালীম।’
সমাজের প্রতিটি স্তরেই যেন এ গরম ভাবের ছড়াছড়ি। যার আছে তারও, আর যার নেই তার তো আরও বেশী।
ভদ্রাচার, শিষ্টাচারের গণ্ডি ছাড়িয়ে এ যেন সভ্যতার এক কালো রূপ । পক্ষান্ত রে, গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, অ-মানুষের আচরণের বাড়াবাড়ি সীমাতিক্রম করে গেছে, ফলে সমাজের প্রায় সকলেই জ্বালায় ভুগছে, গোটা সমাজটাই যেন একটা সক্রিয় আগ্নেয় গিরি (Active volcono)।
আমাদের এ অহংবোধ থেকে মুক্তি পেয়ে তালীম বা আত্ম-সমর্পণ করার আত্ম-শক্তি অর্জন করতে হবে; তবেই আমাদের ব্যক্তি জীবনে আসবে সুখ সমৃদ্ধি ও উন্নতির জোয়ার ।
উপসংহার:
“আপনার স্বপ্ন, পরিকল্পনা, এবং পরিশ্রমই আপনাকে সফলতা এনে দেবে।”
জীবনে সফলতার জন্য মানুষের নানান গুণের প্রয়োজন হয়। পৃথিবীতে একমাত্র মানুষই সেই গুণাবলীর অধিকারী। মানুষ ব্যতীত কোন জীবের মাঝে ঐ সমস্ত গুণাবলীর গুণাগুণ নেই। আর সফলতা ও ব্যর্থতা সেই গুণাবলীগুলোর উপস্থিতি অনুপস্থিতির উপর নির্ভরশীল
ইমেজ জেনারেটরের জন্য উপযুক্ত প্রম্পটগুলো নিচে দেওয়া হলো, যা আপনার টাইটেল এবং বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ: