ইসলামী রাজনীতি এবং গণতন্ত্র: একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ

ইসলামী রাজনীতি এবং গণতন্ত্র: একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ

ইসলামী রাজনীতি এবং গণতন্ত্র: একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ
ইসলামী রাজনীতি এবং গণতন্ত্র: একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ

ইসলামি রাজনীতি কি? রাজনীতি কাকে বলে?

কুরআন ও সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে যে রাজনীতি পরিচালিত তাই ইসলামি রাজনীতি। জনগনের মাঝে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, তাদের সবধরনের চাহিদা পূরণ ও তাদের যাবতীয় অধিকার নিশ্চিত করা। আল্লাহ বলেছেন,

إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا الْأَمَانَاتِ إِلَى أَهْلِهَا وَإِذَا حَكَمْتُمْ بَيْنَ النَّاسِ أَنْ تَحْكُمُوا بِالْعَدْلِ إِنَّ اللَّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُمْ بِهِ إِنَّ اللَّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تأويلا

“নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন আমানত সমুহ হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে। আর যখন মানুষের মধ্যে ফয়সালা করবে তখন ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে কতইনা সুন্দর উপদেশ দিচ্ছেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। হে মুমিনগণ, তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্য থেকে কর্তৃত্বের অধিকারীদের। অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর”। [সূরা নিসা: ৫৮-৫৯]

তাহলে যারা বলেন, ইসলামে কোন রাজনীতি নেই, দীনের সাথে রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই তাদের কথার কি কোন ভিত্তি আছে? নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, তাদের এসব কথার কোন ভিত্তি নেই।

ইসলামি শরিয়াহ মুসলিম ও অমুসলিম রাষ্ট্রে শান্তিপূর্ণ ও যুদ্ধাবস্থায় সর্বাবস্থায়ই সঠিক ও সফল রাজনীতি নিয়ে এসেছে। সব মুসলিম ও ইসলামি রাষ্ট্রের শাসকদেরকে এসব রাজনীতি চর্চা করা ফরয। মুসলমানদের দুনিয়া ও আখেরাতের সব কার্যাবলী এসব নীতিতে পরিচালনা করা ফরয।

অন্যদিকে মিথ্যাচার ধোকাবাজি, অঙ্গিকারভঙ্গ, গাদ্দারী, জনগণের সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ না করার ধোকার রাজনীতি ইসলাম সমর্থন করেনা এবং এধরনের নোংরা রাজনীতিও ইসলাম নিয়ে আসেনি। যে কেউ কুরআন, হাদীস, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালামের জীবনী অনুসন্ধান করে দেখতে পাবে যে, ইসলাম সঠিক মাপকাঠীতে রাজনীতি নিয়ে এসেছে এবং এর মাধ্যমে মানুষের মাঝে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে।

প্রশ্নঃ ধর্মহীন, ধর্মনিরপেক্ষকে ভোট দেওয়া যাবে?

উত্তরঃ নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, দেশের বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে এ ধরনের লোকদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করা জায়েয হবেনা। যেসব লোক সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী বা ইসলামকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও উপহাস করে, বা সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, বা তারা ইসলামকে শুধু দীন হিসেবে মনে করেন তাদেরকে নির্বাচিত করা যাবেনা। কেননা এদেরকে নির্বাচিত করার অর্থই হলো আপনিও তার এসব কাজে সন্তুষ্ট ও তাদের এসব অন্যায় কাজে সহযোগী। এমন করাটা তাদের এসব ভ্রান্ত আক্বিদা-বিশ্বাসে সহযোগিতা করার নামান্তর। এর ফলে তারা তাদের বিরোধী ইসলামপন্থী বা ডানপন্থীদের উপর নানারকম উপহাস, নির্যাতন, নিপীড়ন ও অধিকারহরণ করে। তাছাড়া এটা একটা ভ্রান্ত মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য উৎসাহ ও সহযোগিতা। তাই এ ধরনের লোকদেরকে নির্বাচিত করা যাবেনা।

সমাজতন্ত্রীর মত কোন ইহুদী, খৃস্টান, কাদিয়ানি ইত্যাদি ভ্রান্ত আক্বিদার লোকদেরকে নির্বাচিত করা যাবেনা। এতে তাদের বাতিল আক্বিদা ও বিশ্বাস সাধারণ মানুষের মাঝে প্রভাব ফেলতে পারে বা তারা তাদের বিরোধীদের সাথে খারাপ আচরণ করতে পারে বা খারাপ কিছু করার আশঙ্কা থেকে এরা মুক্ত নয়। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

عَنْ أَبِي مُوسَى، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: ” إِنَّمَا مَثَلُ الْجَلِيسِ الصالح، والجليس السَّوْءِ كَحَامِلِ الْمِسْكِ، وَنَافِخِ الْكِيرِ، فَحَامِلُ الْمِسْكِ: إِمَّا أَنْ يُحْذِيَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَبْتَاعَ مِنْهُ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ مِنْهُ رِيحًا طَيِّبَةً، وَنَافِخُ الْكِيرِ: إِمَّا أَنْ يُخرِقَ ثِيَابَكَ، وَإِمَّا أَنْ تَجِدَ رِيحًا خَبِيثَةً –

আবু মূসা আশ’আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সৎ সাথী ও মন্দ সাথীর উপমা মিশকধারী ও অগ্নিকুণ্ডে ফুৎকার দানকারীর (কামারের) মত। মিশকধারী (বিক্রেতা) হয়ত তোমাকে কিছু দিবে (সুগন্ধি নেওয়ার জন্য হাতে কিছুটা লাগিয়ে দেবে) অথবা তুমি তার নিকট থেকেকিছুটা খরিদ করবে, কিংবা তুমি তার কাছ থেকে সুঘ্রাণ লাভ করবে। আর অগ্নিকুণ্ডে ফুকদানকারী হয়ত তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে অথবা তুমি তার দুর্গন্ধ পাবে”।

বাতিল কাজে সহযোগিতা করা জায়েয নেই:

এছাড়া বাতিল কাজে সহযোগিতা করা জায়েয নেই। এটা অন্যায় ও সীমালঙ্ঘনের কাজে সহযোগিতা করার নামান্তর। আল্লাহ বলেছেন,

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

“সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর”। [আল-মায়েদা : ২]

যারা তাদের এসব ভ্রান্ত মতবাদের সাথে একত্বতা পোষণ করবে বা সহযোগিতা করবে তারা অন্যায় ও যুগ্ম করল। তাদের উচিত ঐ সব লোকদেরকে উপদেশ দেয়া, তাদেরকে সৎ পথের সন্ধান দেয়া। যদি তারা উপদেশ গ্রহণ করে ও ভ্রান্ত মতবাদ থেকে ফিরে আসে তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো, নতুবা তাদেরকে ত্যাগ করতে হবে।

মুসলমানগণ কাকে ভোট দিবে?

এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, যেসব দেশে ইসলামি শাসন নেই, আল্লাহর কুরআন ও রাসূলের সুন্নাহ্ মোতাবেক দেশ পরিচালিত হয় না, সেখানে মুসলমানগণ কি নিজেরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বা কাউকে ভোট দিবে? এ প্রশ্নের উত্তরে সৌদি আরবের একাডেমিক গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি বলেছেন, এধরনের দেশে বাতিল ও ভ্রান্ত মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য কোন মুসলমানের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা জায়েয হবেনা এবং অন্যকেও ভোট দিয়ে নির্বাচিত করা যাবেনা। তবে কোন মুসলমান যদি কুফুরী সংবিধানকে পরিবর্তন করে ইসলামি শরিয়াহ বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা করে তবে সে নিজে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এবং অন্যরাও তাকে ভোট দিবে। এটা সে অনৈসলামিক আইনকে ইসলামি আইনে পরিবর্তনের চেষ্টার উসিলা হিসেবে গণ্য হবে, তবে সে নির্বাচিত হলে ইসলামি শরি’আতের বিরোধী কোন পদ গ্রহণ করবে না বা সে সংক্রান্ত কোন আইন সমর্থন করবে না।

ধর্মনিরপেক্ষ বা ধর্মহীন দেশে প্রচলিত আইনের অধীনে ইসলামি সংগঠন তৈরী করা কি জায়েয? উল্লেখ্য, ইসলামি সংগঠনের উদ্দেশ্য ভিন্ন, তাদের মূল লক্ষ্য হলো দাওয়াতী কাজ পরিচালনা করা।

এ প্রশ্নের জবাবে সৌদি আরবের একাডেমিক গবেষণা ও ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী কমিটি বলেছেন, আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষায় নিপতিত অসহায় মুসলামনের জন্য অমুসলিম বা কাফির দেশে সংঘবদ্ধভাবে থাকা, পরস্পর সাহায্য সহযোগিতা ও সম্প্রীতির লক্ষ্যে এ ধরনের ইসলামি দল বা সংগঠন করা জায়েজ। এটা সৎ ও তাকওয়ার কাজে পরস্পর সহযোগিতার নামান্তর।’

প্রশ্ন: গণতন্ত্র কাকে বলে?

উত্তর: গণতন্ত্রের পুথিগত সংজ্ঞা আমরা সবাই জানি। কিন্তু বাস্তবতার সাথে পুথিগত বিদ্যার মিল না থাকায় তার সংজ্ঞা বদলে গেছে। বাস্তব সংজ্ঞা হচ্ছে- ‘যে তন্ত্রে দেশ চালালে জনগণের টাকা নিজের টাকা হয়ে যায়, দেশের সম্পদ নিজের সম্পদ হয়ে যায়, দেশ বিক্রি করে বিদেশে সম্পদের পাহাড় বানানো যায়, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণেরই ভোটে জয়ী হওয়া যায়, জনগণকে খুব সহজেই বোকা বানানো যায়, উন্নয়নের নামে বিদেশী ষড়যন্ত্র (এজেন্ডা) বাস্তবায়ন করা যায়, দেশ ও জনগণের স্বার্থবিরোধী বৈদেশিক চুক্তি করা যায়, সর্বোপরি পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার বিরোধিতা করা যায় এবং ইচ্ছে মতো দেশ চালানো যায়- তাকে গণতন্ত্র বলে।

প্রশ্ন: গণতন্ত্র কত প্রকার ও কি কি?

উত্তর: গণতন্ত্র সাধারণত দুই প্রকার। একশালী গণতন্ত্র ও টাকশালী গণতন্ত্র।

ব্যাখ্যা ও উদাহরণ: একশালী গণতন্ত্রের তত্ত্ব অনুযায়ী ক্ষমতাসীন সরকার কৌশলে নিজের ইচ্ছে মতো ক্ষমতায় থাকতে পারে। রাজতন্ত্রের মতো একতরফা দেশের শাসন কায়িম করতে পারে। এ সুবিধা গণতন্ত্রে আছে। উদাহরণ- এদেশে প্রধান দুই দলই ক্ষমতায় গেলে এমন ব্যবস্থাই করে।

টাকশালী গণতন্ত্র বলতে বোঝায়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হোক বা না হোক সরকারের (মন্ত্রী/এমপি/আমলা… Wink অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত। উদাহরণ- গণতান্ত্রিক সরকারের এবং বিরোধী দলের (সাবেক সরকার) প্রত্যেকের নিজস্ব বাড়ি আছে গাড়ি আছে দেশে-বিদেশে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রচুর টাকা আছে কিন্তু এদেশের জনগণের প্রতেকের নিজের বাড়ি নেই, প্রত্যেকের নিজস্ব গাড়ি নেই, প্রত্যেক নাগরিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই বা অ্যাকাউন্টে প্রচুর টাকা নেই।

গণতন্ত্রের শাব্দিক বিশ্লেষণ:

গণতন্ত্র আধুনিক বিশ্বে সর্বাপেক্ষা কল্যাণধর্মী শাসনব্যবস্থা বলে সুবিদিত।

গণতন্ত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Democracy। এই Democracy শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক শব্দ Demos এবং Kratia থেকে। Demos শব্দের অর্থ People বা জনগণ; এবং Kratia বা Kratos অর্থ Power বা ক্ষমতা। সুতরাং উৎপত্তিগত ভাবে গণতন্ত্র হলো জনগণের ক্ষমতা বা জনগণের শাসন। সাধারণভাবে গণতন্ত্র শব্দটি রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলেও বিভিন্ন প্রকার সংস্থা বা সংগঠনের ক্ষেত্রেও গণতন্ত্র শব্দটি প্রযোজ্য হতে পারে।

গণতন্ত্র কাকে বলে?

যে শাসনব্যবস্থায় জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় জড়িত থাকে এবং রাষ্ট্রের যোগ্যতা সম্পন্ন নাগরিক বা সদস্যগণ মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ পায় তাকেই গণতন্ত্র বলে।

অন্যভাবে বলা যায়, আধুনিক ধারায় গণতন্ত্র বলতে বুঝায় এমন এক ধরনের শাসন ব্যবস্থা যেখানে জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিজেদেরকে শাসন করে।

গণতন্ত্রের প্রামাণ্য সংজ্ঞা: গণতন্ত্র সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষী বিভিন্নভাবে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে তাদের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞা উত্থাপন করা হলো:

অধ্যাপক সিলি বলেন,”গণতন্ত্র এমন এক শাসন ব্যবস্থা যাতে প্রত্যেকেরই অংশ গ্রহণের অধিকার রয়েছে।

টি.ইউ স্মিথ এর মতে, ” democracy is a fact not fiction.

অধ্যাপক লিন্ডেস এর মতে,” Democracy is a theory of society as well as a theory of government.

যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকন এর মতে,” গণতন্ত্র হলো জনগণের দ্বারা, জনগণের জন্য, জনগণের শাসন ব্যবস্থা।

অধ্যাপক ম্যাকাইভারের মতে,” সংখ্যাগরিষ্ঠ অথবা অন্য বিধি উপায়ে শাসন

পরিচালনার পন্থা নয়, গণতন্ত্র হচ্ছে প্রথমত, কারা শাসন করবে এবং আরো ব্যাপক অর্থে কি উদ্দেশ্যে শাসন করবে তা নিরূপণ করা।

জনসম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত: গণতন্ত্র মানে জনগণের সরকার। তাই এটি জনসম্মতির উপরে নির্ভরশীল। নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন ঘটে। নির্বাচনের ফলাফলেই হল জনসম্মতি ৷

বহুদলীয় ব্যবস্থা : বহুদলীয় ব্যবস্থা গণতন্ত্রের স্বীকৃত অন্যতম বৈশিষ্ট্য। দল অন্যতম প্রয়োজনীয় শর্ত। একাধিক রাজনৈতিক দলের মাঝখান থেকে অপেক্ষাকৃত ভালো প্রতিনিধি যেমন নির্বাচন করা যায় তেমনি এর উপস্থিতি বিপ্লবের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

আইনের শাসন: আইনের শাসন গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। আইনের শাসনের অর্থ আইনের চোখে সকলে সমান এবং আইনের কাছ থেকে সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। আইনের অনুমোদন ছাড়া আটক করা যাবে না এবং উপযুক্ত আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী বলা যাবে না। জনগণ, সরকার সকলকেই আইন মেনে চলতে হয় কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

অধিকার সংরক্ষণ : গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় প্রত্যেক নাগরিকের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় অধিকারগুলো আইনের মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়।

আইনের শাসন: আইনের শাসন গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। আইনের শাসনের অর্থ আইনের চোখে সকলে সমান এবং আইনের কাছ থেকে সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী। আইনের অনুমোদন ছাড়া আটক করা যাবে না এবং উপযুক্ত আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী বলা যাবে না। জনগণ, সরকার সকলকেই আইন মেনে চলতে হয় কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

অধিকার সংরক্ষণ : গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় প্রত্যেক নাগরিকের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় অধিকারগুলো আইনের মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়।

ভোটাধিকার: ভোটাধিকার গণতন্ত্রের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, নারী-পুরুষ, ধনী- দরিদ্র নির্বিশেষে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক ভোটাধিকারপ্রাপ্ত হয়ে রাষ্ট্রীয় শাসনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায়। যার গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য।

নাগরিক স্বাধীন: গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নাগরিকদের স্বাধীনতাগুলোর উল্লেখ ও বাস্তবায়নের নির্দেশনা

নাগরিক স্বাধীন: গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নাগরিকদের স্বাধীনতাগুলোর উল্লেখ ও বাস্তবায়নের নির্দেশনা থাকে। অর্থনৈতিক মতামত প্রকাশের সকল মাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্রে স্বীকৃত। বিশেষ করে রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রয়োজন। এতে সরকারের ত্রুটিসমূহ চিহ্নিত হয় বলে শাসনের ব্যাপারে আরো মনোযোগী হতে পারে।

সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থা : গণতন্ত্রে সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়। জনগণ যাতে শাসকদের অন্যায্য রোষানলে পড়ে শাস্তি ভোগ না করে সেদিকে খেয়াল রাখা হয়। ।

দায়িত্বশীল: গণতন্ত্র দায়িত্বশীল শাসন ব্যবস্থা। সরকারকে তার কাজের জন্য জনগণের নিকট জবাবদিহি করতে হয়। সংবিধান, ভোটাধিকার, জনমত, আইনসভা, জনপ্রতিনিধিত্ব ইত্যাদির মাধ্যমে এই জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।

উপযুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যা যে, উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলোর আলোকে বুঝা যায় গণতন্ত্র একটি উৎকৃষ্ট শাসন ব্যবস্থা যা জবাবদিহিমূলক এবং দায়িত্বশীল।

 

উপরের সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায় যে, গণতন্ত্র বলতে আমরা সেই সরকার ব্যবস্থা কে বুঝি যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ, জনমতের প্রাধান্য এবং জনপ্রতিনিধি কর্তৃক শাসন কার্য পরিচালিত হয়।

গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যসমুহ

গণতন্ত্র বলতে সেই সরকার বা শাসন ব্যবস্থাকে বুঝায় যেখানে জনমতের প্রাধান্য স্বীকৃত হয় এবং যেখানে জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা শাসন কার্য পরিচালিত হয়। গণতন্ত্রের উল্লেখযোগ্য অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিচের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো:

গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যসমুহ

  • জনসম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত
  • বহুদলীয় ব্যবস্থা
  • আইনের শাসন
  • অধিকার সংরক্ষণ
  • ভোটাধিকার
  • নাগরিক স্বাধীন
  • সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থা
  • দায়িত্বশীল

 

প্রাসঙ্গিক অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

১. গণতন্ত্রের মূল কথা কি?

উঃ গণতন্ত্রের মূল কথা হলো জনগণই সকল ক্ষমতার অধিকারী।

২. আধুনিক গণতন্ত্রের জনক বলা হয় কাকে?

উঃ আধুনিক গণতন্ত্রের জনক হলেন জন লক।

৩. সংসদীয় গণতন্ত্রের জনক কে?

উঃ সংসদীয় গণতন্ত্রের জনক হলেন জন লক।

৪. পরোক্ষ গণতন্ত্রের প্রত্যক্ষ পদ্ধতি সমূহ লিখ।

উঃ পরোক্ষ গণতন্ত্রের প্রত্যক্ষ পদ্ধতি সমূহ হল: ১. গণভোট ২. গণ উদ্যোগ ৩. পদচ্যুতি ও ৪. গণনিৰ্দেশ।

৫. আধুনিক গণতন্ত্র কত প্রকার ও কি কি?

উঃ আধুনিক গণতন্ত্র দুই প্রকার। যথা: প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র এবং পরোক্ষ বা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র।

৬. প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র কথা বলে?

উঃ যে শাসন ব্যবস্থায় জনগণ সরাসরি রাষ্ট্রের শাসন কার্য পরিচালনা করে তাকে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বলে।

৭. পরোক্ষ গণতন্ত্র কাকে বলে?

উঃ যে শাসন ব্যবস্থায় জনগণ সরাসরি রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ না করে প্রতিনিধির মাধ্যমে

অংশগ্রহণ করে তাকে পরোক্ষ গণতন্ত্র বলে।

৮.গণতন্ত্রকে মূর্খ শাসন বলেছেন কে?

উঃ গণতন্ত্রকে মূর্খের শাসন বলেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল।

৯. গণভোট কি?

উঃ গণভোট বলতে আইন প্রণয়ন কিংবা সংবিধানের সংশোধন সংক্রান্ত বিষয়ে জনগণের মতামত

গ্রহণ করাকে বুঝায় ।

১০. গণউদ্যোগ কি?

উঃ গণউদ্যোগ বলতে জনসাধারণ কর্তৃক আইন প্রণয়ন করাকে বুঝায়।

১১. গণনির্দেশ কি?

উঃ যখন কোন রাজনৈতিক সমস্যা সম্পর্কে জনসাধারণের মতামত ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গণভোটের আয়োজন করা হয় তখন এরূপ গণভোটকে জনমত নির্ধারণ অথবা গণনির্দেশ বলা হয়।

১২.পদচ্যুতি কি?

যদি কোন জনপ্রতিনিধি মেয়াদউত্তীর্ণ হওয়ার পূর্বেই জনগণের আস্তাভঙ্গের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে অপসারিত হন তবে তাকে পদচ্যুতি বলে।

১৩. বাংলাদেশে কতবার গণভোট অনুষ্ঠিত হয়?

উঃ বাংলাদেশে তিনবার গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। যথা: ক. ১৯৭৭ সালে খ. ১৯৮৫ সালে গ. ১৯৯১ সালে।

2 thoughts on “ইসলামী রাজনীতি এবং গণতন্ত্র: একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top