দোয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

দোয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

দোয়ার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা:

اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشّيطان الرّجيم . بِسمِ الله الرَّحْمٰنِ الرّحيم –

 وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِيْ عَنِّي فَإِنِّي قَرِيْبٌ أُجِيْبُ دَعْوَةِ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ
فَلْيَسْتَجِيْبُوْا لِيْ وَلْيُؤْمِنُوْا بِيْ لَعَلَّهُمْ یَرْ شُدُوْنَ (سورة
البقرة:
۱۷۹) 
وَقَالَ رَسُوْلُ اللہِ صَلَّى اللهُ عَلَيْہِ
وَ سَلَّم – اِنَّ رَبّکُمْ حَیٌّ کَرِیْمٌ یَسْتَحْیِیْ مِنْ عَبْدِہ إِذَا رَفَعَ
يَدَيْهِ أَنْ يَّرُدَّهُمَا صِفْرًا  – رواه
الترمذي الدعوات / في دُعَاء النّبِیّ ﷺ 
رقم: ۳۰۰۶) ۱۸۰/۲ دعاء النبي

মুহতারাম হাযিরীন!

আমি আপনাদের সামনে যে আয়াতে কারীমা তিলাওয়াত করেছি ও যে হাদীছ শরীফ পাঠ করেছি এ আয়াত ও হাদীছে আল্লাহর বান্দাদেরকে তার কাছে দুআ করার আহ্বান জানানো হয়েছে এবং দুআ কবুলের প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়েছে। দুআ ইবাদতের মগজ, দুআ মুমিন বান্দার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আল্লাহর প্রিয় বান্দারা যুগে যুগে দুআর মাধ্যমে আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ লাভ করেছেন। বিপদ আপদ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। কামনা-বাসনা পূর্ণ করেছেন। রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন। শত্রুর বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছেন। এক কথায়, যাবতীয় সমস্যার সমাধান তারা দুআর মাধ্যমে করেছেন।

٭ আদম আঃ দুআ করেছেন। * নূহ আ. দুআ করেছেন। * শুআইব আঃ দুআ করেছেন। * সালেহ আঃ দুআ করেছেন। * ইউনুস আ. দুআ করেছেন। * ইবরাহীম আঃ দুআ করেছেন। * ইউসুফ আঃ দুআ করেছেন। * মূসা আঃ দুআ করেছেন। * ঈসা আঃ দুআ করেছেন।

সর্বশেষে মুহাম্মাদুর
রাসূলুল্লাহ সা. দুআ করেছেন। আল্লাহ তা’আলা তার এ  সকল প্রিয় বান্দাদের দুআই কবুল করেছেন।
এখনও সে আল্লাহই আছেন তিনি চিরঞ্জীব। তিনি আছেন, তিনি থাকবেন তিনি অনাদি ও অনন্ত। ইরশাদ হচ্ছে:

ھُوَ الحَیُّ لَا اِلٰہَ اِلَّا ھُوَ فَادْعُوْہُ مُخْلِصِیْنَ لَہُ الدِّیْنَ – الْحَمْدُ لِلّٰہِ رَبِّ الْعٰلَمِیْنَ –

তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তাঁর খালিচ ইবাদতের মাধ্যমে তোমরা তাকে ডাকো। সকল প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য।” (সূরা মুমিন: ৬৫)

রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন:

اِنَّ رَبّکُمْ حَیٌّ کَرِیْمٌ یَسْتَحْیِیْ مِنْ
عَبْدِہ إِذَا رَفَعَ يَدَيْهِ أَنْ يَّرُدَّهُمَا صِفْرًا

 

নিশ্চয় তোমাদের পালনকর্তা চিরঞ্জীব দয়ালু। বান্দা যখন হাত উঠায় তাঁর কাছে কিছু চায়, তখন তিনি খালি হাতে ফিরাতে লজ্জাবোধ করেন

এ আয়াত ও হাদীছে আল্লাহর বান্দাদেরকে দুআর প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং এতে আল্লাহ তাআলার একটি বিশেষ গুণ উল্লেখ করা হয়েছে। তা হলো: الحَیُّ চিরঞ্জীবতিনি সর্বদা জীবিত। তার কোন মাউত নেই, তার কোন ধ্বংস নেই। তার তন্দ্রা নেই, তার ঘুম নেই। তার কোন অলসতা নেই, তার কোন দুর্বলতা নেই। তিনি এমন আল্লাহوَحْدَہٗ لَا شَرِیْکَ لَہٗ  এক ও অদ্বিতীয়। তাঁর কোন শরীক নেই। সুতরাং দুআ কবুলের ক্ষমতা ও তিনি ব্যতীত আর কারও নেই। দুনিয়ার মধ্যে মানুষ তার কাছেই কিছু চায় যার দেওয়ার ক্ষমতা আছে, যে সক্ষম, যে জীবিত। কিন্তু মৃত ব্যক্তির কাছে কেউ কিছু চায় না, চাইলেও সে দিতে পারে না পারবেও না। বড় আফসোস! তাদের উপর যারা খড়কুটা, মাটি, পাথর দ্বারা স্বহস্তে নির্মিত দেব-দেবীদের কাছে চায়।
তাদের সামনে নতজানু হয়ে দু
আ করে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:

لَهٗ دَعْوَۃُ الْحقِّ – وَ الَّذِيْنَ یَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِه لَا يَسْتَجِيْبُوْنَ لَهُمْ بِشَیْءٍ الَّا كَبَاسِطٍ  کَفَّيْہِ إِلَى الْمَاءِ لِيَبْلُغَ فَاہُ وَمَا ھُوَ بِبَالِغہ – وَمَا دُعَاءُ الْکٰفِرِیْنَ اِلَّا فِیْ ضَلَالٍ –

সত্যের আহ্বান একমাত্র তাঁরই এবং তাঁকে ছাড়া যাদেরকে তারা ডাকে তারা তাদের কোন কাজে আসে না। ওদের দৃষ্টান্ত সেরূপ, যেমন কেউ দুহাত পানির দিক প্রসারিত করে, যাতে পানি তার মুখে পৌছে যায়, অথচ পানি কোন সময় পৌছবে না। কাফেরদের যত আহ্বান তার সবই পথভ্রষ্টতা। (সূরা রাদ: ১৪)

দেব-দেবীরা অসহায়।

কাফেররা যাদের কাছে চায় তারা এতই দুর্বল, এতই অসহায় যে, কুকুর যদি তাদের সামনে থেকে দুধ-কলা খেয়ে যায়, তবু তারা একটু শব্দও করতে পারে না। মাছি যদি তাদের নাকের ডগায় বসে পায়খানা করে, তবুও তারা তা তাড়াতে সক্ষম নয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:

یٰاَیُّھَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوْلَہٗ اِنَّ الّذِینَ تَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰہ لَنْ یَّخْلُقُوّا ذُبَابًا وَّ  لَوِاجْتَمَعُوْا وَاِنْ یَّسْلُبْھُمُ الذُّبَابُ شَیْئًا لَّا یَسْتَنْقِذُوْہُ مِنْہُ – ضَعُفَ الطَّالِبُ وَ الْمَطْلُوْبُ –

হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো। অতএব, তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন, তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের পূজা কর, তারা কখনো একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না যদিও তারা সকলে একত্রিত হয়। আর মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোন কিছু ছিনিয়ে নেয়, তবে তারা তার কাছ থেকে তা উদ্ধারও করতে পারবে না। প্রার্থনাকারী ও যার কাছে প্রার্থনা করা হয় উভয়েই শক্তিহীন।” (সূরা হজ: ৭৩)

দুআর উপযুক্ত একমাত্র আল্লাহ তায়ালা, সুতরাং দুআ তার কাছেই করতে হবে যিনি সবকিছু শুনেন, যিনি সবকিছু দেখেন। যিনি সদা সর্বদা সর্বত্র বিরাজমান ও উপস্থিত থাকেন, যখনই তাকে ডাকা হয় তখনই তিনি সে ডাক শুনেন এবং নিকটে থেকেই শুনেন। যিনি গর্দানের শাহরগ থেকেও নিকটে। যাহা আল্লাহ কুরআনে বলেছেন نَحْنُ اَقْرَبُ اِلَیْہِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِید

গভীর সমুদ্রে মাছের পেট থেকে ডাক দিলে যিনি শোনেন।

• নমরুদের অগ্নিকুণ্ডের ভেতর থেকে ডাক দিলে যিনি শোনেন।

• তূর পাহাড়ে গিয়ে ডাক দিলে যিনি শুনেন। 

• আর বদরের প্রান্তরে
সিজদায় পড়ে ডাক দিলে যিনি শোনেন।

তিনিই আল্লাহ, তিনিই আমাদের মালিক দুআ তার কাছেই করতে হবে। তিনি আমাদের দুআ কবুল করবেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:

 

وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِيْ عَنِّي فَإِنِّي قَرِيْبٌ أُجِيْبُ دَعْوَةِ الدَّاعِ إِذَا دَعَانِ فَلْيَسْتَجِيْبُوْا لِيْ وَلْيُؤْمِنُوْا بِيْ لَعَلَّهُمْ

  یَرْ شُدُوْنَ (سورة البقرة:۱۷۹)

আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে, বস্তুত আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে তাদের প্রার্থনা কবুল করে নিই যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। কাজেই আমার হুকুম মান্য করা তাদের একান্ত কর্তব্য। যাতে তারা সৎপথে আসতে পারে।” (সূরা বাকারা: ১৮৬)

মোটকথা, দুআ আল্লাহর নিকট করতে হবে এবং দুআ করলে তিনি তা কবুল করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এখন আমাদের কারও কারও মনে এ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে যে, আল্লাহ বলেন, اُدْوُوْنِیْ اَسْتَجِبْ لَکُمْ  “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো।কিন্তু এত ডাকা ডাকছি! কিন্তু কই, কোন সাড়া তো পাচ্ছি না।

কোন লক্ষণ দেখছি না। কারণটা কী? কারণ, হলো দরখাস্ত, এপ্লিকেশন আর আবেদনপত্র জমা দিতে হবে, এরপর অপেক্ষা করতে হবে। তাড়াহুড়া
করলে চলবে না। এটা হলো দুনিয়ার নিয়ম। ঠিক তেমনিভাবে আল্লাহ
র দরবারে দুআ কবুল হওয়ার জন্যও কিছু শর্ত আছে। সেগুলোর ব্যাপারে লক্ষ্য না রাখলে দু
আ কিছুতেই কবুল হবে না।

দোয়া কবুল হওয়ার শর্ত সমুহ।

 

Thank you for reading the post.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top