দোয়া কবুলের শর্তসমুহ
দু‘আ কবুলের প্রথম শর্ত : নেক আমল
দুআ যে কোন নেক আমালের পর করতে হবে। চাই সেটা নামায হোক, তিলাওয়াত হোক, যিকির হোক, দুরুদ হোক, তাসবীহ হোক, সাদকা হোক, যে কোন নেক আমল করে তারপরে দু‘আ করতে হবে। দু’আ কবুল না হওয়ার কারণ সমুহ এবং কেন দোয়া কবুল হয় না এর কারণ হচেছ আমরা নিয়ম মতে দোয়া করিনা।
দুআ কবুলের দ্বিতীয় শর্ত :
ইস্তিগফার। দু‘আর আগে ইস্তিগফার পড়তে হবে। ইরশাদ হচ্ছে:
فَقُلْتُ اسْتَفِرُوْا رَبَّكُمْ إِنَّهٗ كَانَ غَفَّارًا – يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْکُمْ مِدْارَارًا – وَ يُمْدِدْ کُمْ بِأَمْوَالٍ وّبَنِيْنَ وَيَجْعَلْ لَکُمْ جَنّٰتٍ وَّ يَجْعَلْ لَکُمْ اَنْهَارًا -مَالَکُمْ لَا تُرْجُوْنَ لِلّٰہِ وَقَارًا –
“অতঃপর বলছি-তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা অবতীর্ণ করবেন।তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন। তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন। তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহ’র শ্রেষ্ঠত্ব আশা করছ না।” (সূরা নূহ: ১০-১৩)
যার ওসীলায় দুআ কবুল হলো:
نُزْھَۃُ النَّوَاظِرِ فِی احْوالِ الْاکَابِرِ নামক গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত মূসা আ.-এর যামানায় একবার খুব দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। বনী ইসরাঈল হযরত মূসা অ.-এর কাছে এসে বললো, মূসা কালিমুল্লাহ! আপনি বৃষ্টির জন্য আল্লাহর দরবারে দু‘আ করুন।
وَلَمْ اَکُنْ بِدُعَائِکَ رَبِّ شِقِیًّا
“হে আমার পালনকর্তা, আপনাকে ডেকে কখনো আমি বিফল মনোরথ হইনি।”(সূরা মারয়াম: ৪)
কেউ এখান থেকে বের হয় নি। অথচ প্রচুর বৃষ্টি হলো- কারণটা কী? ওহীর মাধ্যমে মূসা আ.কে জানানো হলো, “মূসা! যার কারণে বৃষ্টি বন্ধ ছিল তার কারণেই এখন বৃষ্টি হলো, ঐ বান্দা এখন তাওবাকারী হয়ে গেছে।” কবির ভাষায়:
بازآ بازآ ہر آنچہ ہستی باز آ – گر کافر و گبر و بت پرستی باز آ
صد بارگر توبہ شکستی بازآ بازآ – ایں درگاہ ما درگاہ نہ امید نیست
“ফিরে এসো, ফিরে এসো, যদিও মূর্তী পূজারি হও ফিরে এসো, যদি শতবার তাওবা ভঙ্গ করে থাকো তবুও ফিরে এসো, আমার এ দরবার হতাশ হবার দরবার নয়।”
দু‘আ কবুলের তৃতীয় শর্ত : ইসমে আযম
ইসমে আযমকে জেনে নেয়া এবং ইসমে আযমকে ওসীলা করে দু‘আ করা, তা হলে আল্লাহ দু‘আ কবুল করবেন। কিন্তু এই ইসমে আযম যে কী, তা সঠিকভাবে, এবং নির্দিষ্ট করে কোথাও চিহ্নিত করে দেওয়া হয় নি। তবে উলামা, মুহাদ্দিসীন, মুফাচ্ছিরীন ও বুযুর্গানে দীন বহু অনুসন্ধান চালিয়ে কিছু দু‘আকে চিহ্নিত করে বলেছেন এবং প্রবল ধারণা করেছেন যে, এটা ইসমে আযম। যেমন: তাফসীরে কাবীরে হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেন:
اَعْظَمُ اَسْمَاءُ اللّٰہِ اَلْحَیُّ الْقَیُّوْمُ
ইসমে আযম হলো, اَلْحَیُّ الْقَیُّوْمُ
یَا حَیُّ یَا قَیُّوْمُ بِرَحْمَتِکَ اَسْتَغِیْثُ বলা উচিত। حَیٰوۃُ الْحَیْوَان ও کِتَابُ الدّعَاء এর মাঝে বর্ণিত আছে যে, একবার আল্লামা আবু বকর ইবনে ওয়ালীদ খলীফা মানসূরের দরবারে হাজির হয়ে দেখলেন যে, খলীফা খুব দুঃশ্চিন্তামগ্ন রয়েছেন। খলীফা
يَا حَلِيْمُ يَا عَلِيْمُ يَاعَلِيُّ يَا عَظِيْمُ اَسْقِنَا –
দু’আ করার সাথে সাথে তার হাত বরাবর একখণ্ড মেঘ উড়ে এসে বর্ষণ শুরু করলো। এতে সেনাবাহিনীর লোকেরা তৃপ্তি সহকারে পানি পান করলো। এরপর মেঘ আবার চলে গেল। দ্বিতীয় দিন চলার পথে এক দরিয়ার সম্মুখীন হলেন। কোন পুল বা ব্রীজও নেই, কোন নৌকা আর মাঝিও নেই। আবার তিনি দু‘ রাকাত নামায পড়ে ঐ একই দু‘আ করলেন:
يَا حَلِيْمُ يَا عَلِيْمُ يَا عَلِيُّ يَا عَظِيْمُ اَجِرْنَا –
দু‘আ করে রওয়ানা হলেন সোজা দরিয়ার ভেতর দিয়ে, চার হাজার লোক দরিয়া পার হয়ে গেল। কারও পায়ের গোড়ালিও ভিজল না এমনকি সাওয়ারীর খুর পর্যন্ত ভিজল না।
يَا حَلِيْمُ يَا عَلِيْمُ يَا عَلِيُّ يَا عَظِيْمُ عَنَّا اَللّٰهُمّ –
একটু পরেই তিনি হাসতে হাসতে উঠলেন। বললেন, আল-হামদুলিল্লাহ! আমার সমস্ত দুঃশ্চিন্তা আল্লাহ তাআলা দূর করে দিয়েছেন। চিন্তায় খলীফা খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিলেন। অথচ দু’আর পর খলীফা খানা তলব করলেন এবং উপস্থিত লোকদের নিয়ে খানা খেলেন। এ ঘটনা দ্বারা বুঝা যায় যে, এটা ইসমে আযম হতে পারে।
দু‘আ কবুলের চতুর্থ শর্ত : বরকতময় যায়গা ও বরকতময় সময়:
মুবারাক জায়গায়, বরকতপূর্ণ সময়ে দু‘আ করা। যেমন কাবা ঘরের সামনে দু‘আ করা। আরাফার ময়দানে দু‘আ করা, সাফা-মারওয়ায় দুআ করা, মুজদালিফায় দুআ করা, বায়তুল মুকাদ্দাসে দুআ করা, কোন নেক কাজ করার মুহূর্তে দুআ করা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর দুআ করা, তিলাওয়াতের পর দু‘আ করা। ইফতারের সময় দু‘আ করা, যাকাত, দান-খয়রাত দেয়ার সময় দুআ করা, শবে বরাতে দু‘আ করা, লাইলাতুল কদরে দু‘আ করা। মোটকথা, এইসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে যদি দু‘আ করা হয় তা হলে আশা করা যায় যে, অবশ্যই আল্লাহ দু‘আ কবুল করবেন।
দু‘আ কবুলের পঞ্চম শর্ত : নবী-ওলীর ওসীলা
বায়হাকী শরীফে উল্লেখ রয়েছে যে, একবার এক অন্ধ সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাজির হয়ে বলল, আপনি আমার জন্য একটু দুআ করুন যাতে আল্লাহ আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যাও, ওজু কর, দু‘রাকআত সালাতুল হাজাত পড়। এরপর এই দুআ কর :
اَللّٰھُمَّ اِنِّی اَسْئَلُکَ وَ اَتَوَجَّہُ اِلَیْکَ نَبِیُّکَ مُحَمَّدٍ نَبِیُّ الرَّحْمَۃِ یَا مُحَمَّدٌ اَتَوَجَّہُ بِکَ اِلٰی
“হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে মুখ ফিরিয়েছি। তোমার নবীর উছিলা দিয়ে, যার নাম মুহাম্মদ। উপাধি নবীয়ে রহমত। হে মুহাম্মদ! আমি আপনার মাধ্যমে আল্লাহর অভিমুখী হচ্ছি আর আবেদন করছি যে, হে মাবুদ! আমি আপনার মাধ্যমে আল্লাহর অভিমুখী হচ্ছি। আর আবেদন করছি যে, হে মাবুদ! তুমি আমার দৃষ্টি শক্তি ভাল করে দাও।” দু‘আও শেষ, সাথে সাথে তার চক্ষু ভাল হয়ে গেল, সে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল। (তিরমিযী, নাসায়ী) | বুখারী শরীফে
উল্লেখ রয়েছে যে, “হযরত ওমর রা. একবার হযরত আব্বাস রা. এর ওসীলা দিয়ে বৃষ্টির জন্য দুআ করলেন, সাথে সাথে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আল্লাহ পাক তার অনুগ্রহের বদৌলতে এটা করেন। যখন কেউ তার নবী-রাসূল, ওলী-আউলিয়াদের ওসীলা দিয়ে তার কাছে প্রার্থনা করে তখন তা আল্লাহ পাক কবুল করেন। সুবহানাল্লাহ!
Thank you for reading the post.