google-site-verification=rXaFmwSiYigXRnCfxubQMUMfWDLuTGq64pGk6OzeFd4

দোয়া কবুলের শর্তসমুহ

দোয়া কবুলের শর্তসমুহ

দোয়া কবুলের শর্তসমুহ

 

দুআ কবুলের প্রথম শর্ত : নেক আমল

দুআ যে কোন নেক আমালের পর করতে হবে। চাই সেটা নামায হোক, তিলাওয়াত হোক, যিকির হোক, দুরুদ হোক, তাসবীহ হোক, সাদকা হোক, যে কোন নেক আমল করে তারপরে দুআ করতে হবে। দু’আ কবুল না হওয়ার কারণ সমুহ এবং কেন দোয়া কবুল হয় না এর কারণ হচেছ আমরা নিয়ম মতে দোয়া করিনা। 

দুআ কবুলের দ্বিতীয় শর্ত : 

ইস্তিগফার। দুআর আগে ইস্তিগফার পড়তে হবে। ইরশাদ হচ্ছে:

فَقُلْتُ اسْتَفِرُوْا رَبَّكُمْ إِنَّهٗ كَانَ غَفَّارًا – يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْکُمْ مِدْارَارًا –  وَ يُمْدِدْ کُمْ  بِأَمْوَالٍ وّبَنِيْنَ وَيَجْعَلْ لَکُمْ جَنّٰتٍ وَّ يَجْعَلْ لَکُمْ اَنْهَارًا -مَالَکُمْ لَا تُرْجُوْنَ لِلّٰہِ وَقَارًا –

অতঃপর বলছি-তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা অবতীর্ণ করবেন।তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন। তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন। তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব আশা করছ না।” (সূরা নূহ: ১০-১৩)

যার ওসীলায় দুআ কবুল হলো:

 نُزْھَۃُ النَّوَاظِرِ فِی احْوالِ الْاکَابِرِ   নামক গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত মূসা আ.-এর যামানায় একবার খুব দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। বনী ইসরাঈল হযরত মূসা অ.-এর কাছে এসে বললো, মূসা কালিমুল্লাহ! আপনি বৃষ্টির জন্য আল্লাহর দরবারে দুআ করুন। মূসা আ. বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে, আগামীকাল সকলে ময়দানে জড়ো হবে। মূসা আ.-এর ঘোষনা অনুযায়ী সত্তর হাজার বনী ইসরাঈল মূসা আ.-এর সাথে ময়দানে সমবেত হলো। মূসা আ. দুআ শুরু করলেন। কিন্তু দুআ কবুলের কোন লক্ষণ দেখা গেল না। অবশেষে মূসা আ. বললেন, হে পরওয়াদেগার! আজ মূসার দুআ কেন কবুল হলো না? অথচ

وَلَمْ اَکُنْ بِدُعَائِکَ  رَبِّ شِقِیًّا

হে আমার পালনকর্তা, আপনাকে ডেকে কখনো আমি বিফল মনোরথ হইনি।”(সূরা মারয়াম: ৪) ঘোষনা এলো-হে মুসা! আজ তোমার সাথে চল্লিশ বৎসর পর্যন্ত লাগাতার গুনাহ্ করেছে এমন এক মহাঅপরাধী এসেছে। তার কারণে দুআ কবুল হয় নাই। তাকে বের করে দাও। ঘোষনা দিয়ে দাও যে, চল্লিশ বছরের পাপী তোমার কারণে আমার দুআ কবুল হয় নাই। তুমি বের হয়ে যাও। সত্তর হাজার মানুষের মজমায় একেক জায়গায় একেক ঘোষক দাঁড়িয়ে ঘোষনা দেওয়া শুরু করলো। অবশেষে সেই আওয়াজ ঐ পাপী ব্যক্তি পর্যন্ত পৌঁছে গেল সে মজমার মধ্যে এদিক-সেদিক দেখতে লাগলো। কিন্তু বের হওয়ার কোন রাস্তা পেল না। খুব পেরেশান হয়ে পড়লো। মনে মনে ভাবলো, যদি চলে যাই তবে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যাবো। যদি না যাই তাহলে হয়তো ওহীর মাধ্যমে মূসা আ.-কে জানিয়ে দেয়া হবে। বিরাট মুসীবাত! অবশেষে খাঁটিভাবে তাওবা ও ইস্তিগফার করে দুআ করওলো, “হে আল্লাহ! চল্লিশ বৎসর যাবৎ গুনাহ্ করেছি, তুমি ছাড়া কেউ জানে না। তুমি আমাকে অবকাশ দিয়েছ। আজ আমি তোমার দরবারে বিনীতভাবে হাজির হয়ে তাওবা করছি, তুমি আমাকে ক্ষমা কর। আমাকে লাঞ্ছিত করো না।দুআ শেষ না হতেই আকাশে খুব মেঘ দেখা দিল এবং মুষলধারে বৃষ্টি হলো। মূসা আ. সিজদায় পড়ে গেলেন, ইলাহী! তোমার হুমুক ছিল গুনাহ্গারকে বের করে না দিলে বৃষ্টি হবে না। এখনো তো

 

কেউ এখান থেকে বের হয় নি। অথচ প্রচুর বৃষ্টি হলো- কারণটা কী? ওহীর মাধ্যমে মূসা আ.কে জানানো হলো, “মূসা! যার কারণে বৃষ্টি বন্ধ ছিল তার কারণেই এখন বৃষ্টি হলো, ঐ বান্দা এখন তাওবাকারী হয়ে গেছে।কবির ভাষায়:

بازآ  بازآ ہر آنچہ ہستی باز آ – گر کافر و گبر و بت پرستی باز آ

 صد بارگر توبہ شکستی بازآ  بازآ – ایں درگاہ ما درگاہ نہ امید نیست

ফিরে এসো, ফিরে এসো, যদিও মূর্তী পূজারি হও ফিরে এসো, যদি শতবার তাওবা ভঙ্গ করে থাকো তবুও ফিরে এসো, আমার এ দরবার হতাশ হবার দরবার নয়।অর্থাৎ, বান্দা যত বড় গুনাহই করুক যদি মরার আগে স্বজ্ঞানে খাটি তাওবা করে, তা হলে আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন। অতঃপর মূসা আ. বললেন, হে খোদা! তার সাক্ষাৎ যদি আমার নছিব হতো! যার তাওবার কারণে এই রহমত নাযিল হলো।আল্লাহ বললেন, মূসা! যখন সে বান্দা অপরাধী ছিল তখন আমি তার অপরাধ প্রকাশ করিনি। এখন যখন তাওবা করেছে এখনও আমি প্রকাশ করবো না। হাদীছে আছে রাসুল সা. ইরশাদ করেন: التّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ کَمَنْ لَّا ذَنْبَ لَہٗগুনাহ থেকে তাওবা কারী ঐ ব্যক্তির ন্যায় যার কোন গুনাই নেই।

দুআ কবুলের তৃতীয় শর্ত : ইসমে আযম

ইসমে আযমকে জেনে নেয়া এবং ইসমে আযমকে ওসীলা করে দুআ করা, তা হলে আল্লাহ দুআ কবুল করবেন। কিন্তু এই ইসমে আযম যে কী, তা সঠিকভাবে, এবং নির্দিষ্ট করে কোথাও চিহ্নিত করে দেওয়া হয় নি। তবে উলামা, মুহাদ্দিসীন, মুফাচ্ছিরীন ও বুযুর্গানে দীন বহু অনুসন্ধান চালিয়ে কিছু দুআকে চিহ্নিত করে বলেছেন এবং প্রবল ধারণা করেছেন যে, এটা ইসমে আযম। যেমন: তাফসীরে কাবীরে হযরত ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত রয়েছে, তিনি বলেন:

اَعْظَمُ اَسْمَاءُ اللّٰہِ اَلْحَیُّ الْقَیُّوْمُ

ইসমে আযম হলো,   اَلْحَیُّ الْقَیُّوْمُ  এর পক্ষে সমর্থন পাওয়া যায় আবূ দাউদ শরীফে বর্ণিত এক হাদীছ থেকে। বদরের যুদ্ধে ৩১৩ জন নিরস্ত্র সাহাবী এক  হাজার সশস্ত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছিলেন। এই কঠিন সময়ে রাসূলুল্লাহ সাঃ, মুসলমানদের কামিয়াবীর জন্য সিজদায় পড়ে দু’আ করছিলেন, আর তাঁর যবান মুবারাক থেকে উচ্চারিত হচ্ছিল, یَا حَیُّ یَا قَیُّوْمُ এবং এ যুদ্ধে মুসলমানদের ঐতিহাসিক বিজয় হয়েছিল। সুতরাং আমরা যখন দু’আ করবো তখন আমাদের দু’আর মাঝে বেশি বেশি

 

 یَا حَیُّ یَا قَیُّوْمُ بِرَحْمَتِکَ اَسْتَغِیْثُ  বলা উচিত। حَیٰوۃُ الْحَیْوَان ও کِتَابُ الدّعَاء এর মাঝে বর্ণিত আছে যে, একবার আল্লামা আবু বকর ইবনে ওয়ালীদ খলীফা মানসূরের দরবারে হাজির হয়ে দেখলেন যে, খলীফা খুব দুঃশ্চিন্তামগ্ন রয়েছেন। খলীফাতাঁকে দেখে বললেন, আপনার কাছে এমন কোন দুআ আছে যা আমার দুঃশ্চিন্তা থেকে আমাকে মুক্তি দিতে পারে? | আল্লামা আবু বকর বললেন, আমি আপনাকে এমন দু’আ শিখিয়ে দেবো যা মুশকিলাতকে আসান করে ও বিপদকে প্রতিহত করে। এই বলে তিনি ঘটনা। শুনালেন, বসরা শহরে কোন এক লোকের কান দিয়ে মশা প্রবেশ করে মস্তকের মধ্যে পৌঁছে ছিল। এতে লোকটি অস্থীর যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলো। ঘটনাক্রমে হযরত হাসান বসরী রহ:-এর এক শাগরেদ তাকে দেখতে গেলেন। গিয়ে দেখলেন বেচারা অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছে। তখন তিনি বললেন, তুমি সে দু’আ পড়ছ না কেন, যা হযরত আলা হারামী রাযি. এক কঠিন মুহূর্তে পড়েছিলেন। লোকটি বললো, দোয়াটি কী? তিনি বললেন, হযরত আবু বকর রাযি. তার খিলাফাতকালে হযরত আলা হারামী রাযি.-কে জিহাদের উদ্দেশ্যে বাহরাইন অভিমুখে প্রেরণ করলেন। কাফেলা রওয়ানা হয়ে গেল এবং চলতে চলতে তারা রাস্তা ভুলে এক মরুভূমিতে গিয়ে পৌছল। প্রচণ্ড গরম, কোথাও পানি নেই, এদিকে কাফেলার লোকেরা পানির পিপাসায় কাতর হয়ে পড়লো। এমন সময় হযরত আলা হারামী রাযি. সাওয়ারী থেকে অবতরণ করলেন এবং দুই রাকাত নফল নামায আদায় করে আল্লাহর দরবারে দু’আ করলেন:

يَا حَلِيْمُ يَا عَلِيْمُ يَاعَلِيُّ يَا عَظِيْمُ اَسْقِنَا –

দুআ করার সাথে সাথে তার হাত বরাবর একখণ্ড মেঘ উড়ে এসে বর্ষণ শুরু করলো। এতে সেনাবাহিনীর লোকেরা তৃপ্তি সহকারে পানি পান করলো। এরপর মেঘ আবার চলে গেল। দ্বিতীয় দিন চলার পথে এক দরিয়ার সম্মুখীন হলেন। কোন পুল বা ব্রীজও নেই, কোন নৌকা আর মাঝিও নেই। আবার তিনি দুরাকাত নামায পড়ে ঐ একই দুআ করলেন:

يَا حَلِيْمُ يَا عَلِيْمُ يَا عَلِيُّ يَا عَظِيْمُ اَجِرْنَا –

 

দুআ করে রওয়ানা হলেন সোজা দরিয়ার ভেতর দিয়ে, চার হাজার লোক দরিয়া পার হয়ে গেল। কারও পায়ের গোড়ালিও ভিজল না এমনকি সাওয়ারীর খুর পর্যন্ত ভিজল না। সুতরাং হে আল্লাহর বান্দা! তুমিও এ দুআ পাঠ কর। রুগ্ন ব্যক্তিমাত্র একবার দুআ পাঠ করতেই মশা বের হয়ে গেল। অতএব, হে খলীফা, হে আমিরুল মুমিনীন! আপনি এ দুআ পাঠ করুন। খলীফা মানসূর ওযূ করলেন, দুরাকাত নামায আদায় করলেন এবং দুআ পাঠ করলেন:

يَا حَلِيْمُ يَا عَلِيْمُ يَا عَلِيُّ يَا عَظِيْمُ عَنَّا اَللّٰهُمّ –

একটু পরেই তিনি হাসতে হাসতে উঠলেন। বললেন, আল-হামদুলিল্লাহ! আমার সমস্ত দুঃশ্চিন্তা আল্লাহ তাআলা দূর করে দিয়েছেন। চিন্তায় খলীফা খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছিলেন। অথচ দুআর পর খলীফা খানা তলব করলেন এবং উপস্থিত লোকদের নিয়ে খানা খেলেন। এ ঘটনা দ্বারা বুঝা যায় যে, এটা ইসমে আযম হতে পারে।

দুআ কবুলের চতুর্থ শর্ত : বরকতময় যায়গা ও বরকতময় সময়:

মুবারাক জায়গায়, বরকতপূর্ণ সময়ে দুআ করা। যেমন কাবা ঘরের সামনে দুআ করা। আরাফার ময়দানে দুআ করা, সাফা-মারওয়ায় দুআ করা, মুজদালিফায় দুআ করা, বায়তুল মুকাদ্দাসে দুআ করা, কোন নেক কাজ করার মুহূর্তে দুআ করা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর দুআ করা, তিলাওয়াতের পর দুআ করা। ইফতারের সময় দুআ করা, যাকাত, দান-খয়রাত দেয়ার সময় দুআ করা, শবে বরাতে দুআ করা, লাইলাতুল কদরে দুআ করা। মোটকথা, এইসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে যদি দুআ করা হয় তা হলে আশা করা যায় যে, অবশ্যই আল্লাহ দুআ কবুল করবেন।

দুআ কবুলের পঞ্চম শর্ত : নবী-ওলীর ওসীলা

বায়হাকী শরীফে উল্লেখ রয়েছে যে, একবার এক অন্ধ সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাজির হয়ে বলল, আপনি আমার জন্য একটু দুআ করুন যাতে আল্লাহ আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যাও, ওজু কর, দুরাকআত সালাতুল হাজাত পড়। এরপর এই দুআ কর :

اَللّٰھُمَّ اِنِّی اَسْئَلُکَ وَ اَتَوَجَّہُ اِلَیْکَ نَبِیُّکَ مُحَمَّدٍ نَبِیُّ الرَّحْمَۃِ یَا مُحَمَّدٌ اَتَوَجَّہُ بِکَ اِلٰی  رَبِّکَ اَنْ یّکْشِفَ عَنْ بَصَرِی فَدَعَا فَاَبْصَرَ –

হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি এবং তোমার দিকে মুখ ফিরিয়েছি। তোমার নবীর উছিলা দিয়ে, যার নাম মুহাম্মদ। উপাধি নবীয়ে রহমত। হে মুহাম্মদ! আমি আপনার মাধ্যমে আল্লাহর অভিমুখী হচ্ছি আর আবেদন করছি যে, হে মাবুদ! আমি আপনার মাধ্যমে আল্লাহর অভিমুখী হচ্ছি। আর আবেদন করছি যে, হে মাবুদ! তুমি আমার দৃষ্টি শক্তি ভাল করে দাও।দুআও শেষ, সাথে সাথে তার চক্ষু ভাল হয়ে গেল, সে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল। (তিরমিযী, নাসায়ী) | বুখারী শরীফে
উল্লেখ রয়েছে যে
, “হযরত ওমর রা. একবার হযরত আব্বাস রা. এর ওসীলা দিয়ে বৃষ্টির জন্য দুআ করলেন, সাথে সাথে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আল্লাহ পাক তার অনুগ্রহের বদৌলতে এটা করেন। যখন কেউ তার নবী-রাসূল, ওলী-আউলিয়াদের ওসীলা দিয়ে তার কাছে প্রার্থনা করে তখন তা আল্লাহ পাক কবুল করেন। সুবহানাল্লাহ! হে আল্লাহ! আমাদেরকে সঠিক ভাবে দোয়া করার তৌফিক দান করুন।

 

Thank you for reading the post.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top