দু’আ কবুল না হওয়ার কারণ সমুহ এবং কেন দোয় কবুল হয় না

দু'আ কবুল না হওয়ার কারণ সমুহ

দু’আ কবুল না হওয়ার কারণ সমুহ এবং কেন দোয় কবুল হয় না

দুআ কবুল না হওয়ার পেছনেও কতকগুলো কারণ রয়েছে।

 এক নাম্বার কারণ:

হারাম লোকমা থেকে বেঁচে না থাকা। একবার হযরত মূসা আ. এক জায়গা দিয়ে যাচ্ছিলেন, দেখলেন একব্যক্তি খুব অনুনয়-বিনয় সহকারে দুআ করছে। কিন্তু তার দুআ কবুল হচ্ছে না। লোকটির প্রতি হযরত মূসা আ.-এর খুব দরদ হলো। তিনি বললেন, খোদা! তার দুআ কেন কবুল করছো না? আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা এলো, মূসা! ঐ লোক যদি কান্নাকাটি করতে করতে মরেও যায় আর হস্ত প্রসারিত করতে করতে আসমান পর্যন্ত পৌছে দেয়, তবুও তার দুআ কবুল হবে না। মূসা আ. বললেন, হে আল্লাহ! কারণ কী? উত্তর এলো, হারাম লোকমা তার পেটে রয়েছে। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত এ বান্দা হারাম থেকে না বাঁচবে ততক্ষণ পর্যন্ত তার দুআ কবুল হবে না। | একবার জনৈক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সা.-কে জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ! মানুষ হস্ত প্রসারিত করে দুআ করে। কিন্তু দুআ কবুল হয় না এবং কবুলিয়াতের কোন লক্ষণও দেখা যায় না, কারণটা কী? রাসূলুল্লাহ সা. উত্তর দিলেন:

مَطْعَمُہٌ حَرَامٌ مَلْبَسُہٗ حَرَامٌ وَ یَقُوْلُ یَا رَبِّ یَا رَبِّ اَنّٰی یُسْتَجَابُ یَا رَبِّ یَا رَبِّ –

তার খানা হারাম, পোষাক হারাম আর সে মুখে বলছে: یَا رَبِّ یَا رَبِّ কিভাবে তার দুআ কবুল হবে?”

দু’আ কবুল না হওয়ার দুই নাম্বার কারণ:  

দুআর সময় অন্তর গাফেল থাকা। মুখে দুআ আর অন্তরে অন্য ফিকির থাকা অর্থাৎ, একাগ্রতা না থাকা। নুযহাতুল মাজালিসনামক এক কিতাবে আছে যে, হযরত মূসা আ. এক ব্যক্তিকে খুব কান্নাকাটি ও দুআ করতে দেখলেন। মূসা আ. বললেন, হে আল্লাহ! যদি এ লোকের প্রয়োজন পুরো করার ক্ষমতা আমার থাকতো, তা হলে আমি তা অব্যশই পুরো করে দিতাম। কিন্তু তুমি কেন তার দুআ কবুল করছো না? আল্লাহর পক্ষ থেকে জবাব এলো, “সে মুখে দুআ করছে আর অন্তর লেগে আছে বকরীর পালের প্রতি। আর আমি এমন গাফেল অন্তরের দুআ কবুল করি না।

 

তিন নাম্বার কারণ:  

হারাম জিনিসের তলব, না-জায়েয, হারাম ও গুনাহর বস্তুর কামনা করলে আল্লাহ তা কবুল করেন না।

চার নাম্বার কারণ:  

হিকমাতে ইলাহী। অর্থাৎ, আল্লাহ তাআলা বিশেষ কোন হিকমাতের কারণে বান্দার দুআ তাৎক্ষণিকভাবে সে যা চায় সে মুতাবেক কবুল করেন না। কারণ, তার কাঙ্ক্ষিত বস্তু বান্দার দৃষ্টিতে শুভ মনে হলেও আল্লাহর দরবারে তা বান্দার জন্য মোটেও শুভ নয়। তাই তিনি তার এ দুআর পরিবর্তে বা বিনিময়ে পরকালে তাকে বিরাট নেকী দিবেন। তখন বান্দা আফসোস করে বলবে, “হে খোদা! দুনিয়াতে যদি আমার একটা দুআও কবুল না হতো। আর সকল দুআর বিনিময় আখিরাতে পেতাম তা হলে কতই না ভালো হতো?” সুতরাং নিরাশা আর হতাশার কোন কারণ নেই, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেখানে ইবলিসের দুআ কবুল করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে:

رَبِّي اَنْظِرْنِی إِلٰى يَوْمِ يُبْعَثُوْنَ –

হে আল্লাহ! আমাকে কিয়ামতের দিবস পর্যন্ত অবকাশ দাও।আল্লাহ বললেন: اِنَّکَ مِنَ الْمُنْظَرِیْنَ  “তোমাকে অবকাশ দেয়া হলো।ঠিক তেমনিভাবে ফিরআউনের দুআও আল্লাহ কবুল করেছেন।একবার মিশরে খুব দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। বৃষ্টি নাই, পানি নাই, নীল দরিয়া পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে। মানুষ অতিষ্ট হয়ে ফিরআউনের কাছে এসে বললো, জনাব! আপনি কেমন খোদা হলেন যে মানুষ দুর্ভিক্ষে কষ্ট পাচ্ছে, ক্ষেত-খামার শুকিয়ে গেছে, জীবজন্তু পিপাসায় কষ্ট পাচ্ছে, আর আপনি কোন বৃষ্টি দিচ্ছেন না? ফিরআউন বললো, যাও আগামীকাল বৃষ্টি হবে। পরের দিন ফিরআউন শাহী টুপি মাথায় দিয়ে ঘোড়ায় সাওয়ার হয়ে এক পাহাড়ে গেল। সেখানে ঘোড়া বেঁধে রেখে গুহার মধ্যে ঢুকে মাথার শাহী টুপি ফেলে দিল। মাথায় মাটি মেখে আল্লাহর কাছে দুআ করলো, “হে আল্লাহ! আমি এক অধম বান্দা, আমি জানি যে, তুমিই হলে

مَالِکُ الْمُلْکِ

 তুমি সার্বভৌম শক্তির মালিক।  তুমি প্রকৃত খোদা। কিন্তু আমি আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়া খরিদ করে নিয়েছি। তুমি দুনিয়াতে আমার অংশ কম করো না।তখনই মেঘ এলো এবং বৃষ্টিবর্ষণ করে চললো। এ অবস্থা দেখে লোকেরা ফিরআউনকে সিজদা করলো, আর তারা খোদা হিসেবে বিশ্বাস করলো। নাউযুবিল্লাহ!এভাবে মআল্লাহ তার এক দুশমন মুশরিক এর দুআ কবুল করলেন। আর আমরা আখেরী নবীর শ্রেষ্ঠ উম্মত। আমরা পাপী এতে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু আমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হতে পারি না।

 

পাঁচ নাম্বার কারণ:  

আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা না করে দুআ করা। বরং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো সাহায্য কামনা করা। “দূররে মানছুর” গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, হযরত ইউসুফ আ. যখন জেলখানায় ছিলেন, তখন তিনি সদ্য মুক্তি পাওয়া ক্বয়েদিকে বন্দিদেরকে বলে দিলেন, “তুমি যখন বাদশাহর কাছে যাবে তখন বাদশাহকে বলবে যে, জেলখানায় এক নিরাপরাধ ব্যক্তি বন্দী হয়ে আছেন। কুরআনের ভাষায় : اُذکُرْنِی عِنْدَ رَبِّکَতোমার প্রভুর নিকট আমার কথা বলবে।এই কথা বলার সাথে সাথে জমিন কাঁপতে শুরু করলো, পাহাড় কেঁপে উঠল, জেলখানার দেয়াল ফেঁটে গেল। হযরত জিবরাঈল আ. তাশরীফ আনলেন এবং বলেন, ইউসুফ! আপনি আজ কি করলেন! আল্লাহকে ছেড়ে গায়রুল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করলেন। আল্লাহ বলেন :

১. ইউসুফ! তোমাকে সৌন্দর্য কে দিয়েছেন? ইউসুফ বললেন : আল্লাহ।

২. ভাইদের ষড়যন্ত্রের হাত থেকে তোমাকে কে রক্ষা করেছেন? ইউসুফ বললেন : আল্লাহ।

৩.জুলাইখার ষড়যন্ত্র থেকে কে তোমাকে উদ্ধার করেছেন? ইউসুফ বললেন : আল্লাহ।

৪. জেলখানার মধ্যে আরাম আয়েশের ব্যবস্থা কে করেছেন? ইউসুফ বললেন : আল্লাহ।

এরপর আল্লাহ বললেন, ইউসুফ আজ পর্যন্ত সবকিছুই আমি করলাম, আজ আমার অপরাধ কি? তুমি আজ আমাকে ছেড়ে গাইরুল্লাহর সাহায্য কামনা করলে? ইউসুফ আ. তার ভুল স্বীকার করলেন, কান্নাকাটি করলেন, ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। এভাবে আরও সাত বছর কেটে গেল। এরপর আল্লাহ ইউসুফ আ. এর উপর রহম করলেন এবং জেলখানা থেকে মুক্ত করে মিশরের বাদশাহ বানিয়ে দিলেন।

 মোটকথা, দুআ কবুলের শর্তসমূহ ও দুআ কবুল না হওয়ার কারণসমূহের প্রতি লক্ষ্য রেখে যদি দুআ করা হয় তা হলে আশা করি অবশ্যই দুআ কবুল হবে। তবে দুআ করেই তাৎক্ষণিক ফলাফল লাভের জন্য অস্থির হলে চলবে না। বরং ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আল্লাহ তাআলার দুই জলীলুল কদর নবী মুসা ও হারুন আ.দুআ করেছিলেন। আর আল্লাহ ওহীর মাধ্যমে তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছিলেন:

قَالَ قَدْ  أُجِيْبَتْ دَعْوَتُکُمَا فَاسْتَقِيْمَا

তিনি বললেন, তোমাদের দুজনের দুআ কবুল হলো। সুতরাং তোমরা দৃঢ় থাক এবং তোমরা কখনো অজ্ঞদের পথ অনুসরণ করবে না।‘ (সূরা ইউনুছ: ৮৯) এ আয়াতে দুআ কবুলের সংবাদ দেয়া হয়েছিল। আর তা বাস্তবায়িত হয়েছিল ৪০ বছর পর। ফিরআউন সদলবলে সাগরে নিমজ্জিত হওয়ার মাধ্যমে। তাই আমাদের উচিৎ একাগ্রতার সাথে দুআ করা এবং শতভাগ কবুলের আশা রাখা। তা হলে অবশ্যই আল্লাহ আমাদের দুআ কবুল করবেন। আমরা আল্লাহর দরবারে দুআ করে বিফল মনোরথ হবো না। অবশ্যই আল্লাহ আমাদের মনবাঞ্ছা পূর্ণ করবেন! আমীন!

 দোয়া কবুলের শর্ত সমুহ….

Thank you for reading the post.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top