কুরবানীর যাবতীয় মাসআলা-মাসায়েল – ১ম পর্ব
কুরবানী কখন কার উপর ওয়াজিব:
فرض ان پر حج ہے بیت اللہ کا ٭ جنکو ہے مقدار زاد و راہ کا
ان پہ قربانی بھی ہےاز واجبات ٭ جن پر فرض عین ہے دینا زکٰوۃ
০০১. স্বাধীন মুকীম (স্থায়ী অধিবাসী) আকেল, বালেগ এবং কুরবানীর দিন যে মুসলমানের নিকট সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয়, এরূপ পরিমাণ মাল মওজুদ থাকে তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব। (শামী : ১৯৮, ৫ম খণ্ড)
০০২. যদি কোনো ব্যক্তি কুরবানীর সময়ে শরয়ী মুসাফির অর্থাৎ স্বীয় বাড়ি থেকে । ৪৮ মাইল অথবা ৭৮ কিলোমিটার দূরত্বের সফরে থাকে, তাহলে ওই ব্যক্তির ওপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। (শারহে হেদায়া : ৪র্থ খণ্ড,পৃষ্ঠা ৪৪৩)
০০৩. আর সাদকায়ে ফিতরের নিসাব বা পরিমাণ প্রকৃত প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া শর্ত। (শামী : ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯৮)
১০৪. কুরবানী ওয়াজিব হবার জন্য উক্ত নিসাব পরিমাণ মাল এক বছর পূর্ণ থাকা শর্ত নয়। আবার উহা যাকাতের মত মালে নামী (যা বৃদ্ধি পায়)বা ব্যবসার মাল হওয়াও প্রয়োজন নয়। (শামী : ৫ম খণ্ড, ১৯৮ পৃষ্ঠা)।
০০৫. এজন্য বলা হয় যে, কুরবানীর নিসাব যাকাতের নিসাবের থেকে পৃথক। বরং কুরবানীর নিসাব সাদকায়ে ফিতরের সাথে সম্পর্ক রাখে । ( ফাতাওয়ায়ে শামী : ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯৮)।
০০৬. আসল অভাব ও প্রয়োজন তাকেই বলা হয়; যা জীবন, ইত-সম্মান রক্ষার জন্য অপরিহার্য। এ পরিমাণ সম্পদ, যার অভাবে জান-মান চলে যাবার ভয় থাকে। নিজের ও পরিবার-পরিজনের বাসস্থান খাওয়া ও পরার ব্যবস্থা থাকা এবং ব্যসসা-বাণিজ্য ও হাল-চাষ ইত্যাদির সামানপত্র ইহার অন্তর্ভুক্ত। (ফাতাওয়ায়ে শামী : ৫ম খণ্ড, ১৯৮ পৃষ্ঠা)।
০০৭. বড় বড় ডেগ, উন্নতমানের বিছানা, গদী, সামিয়ানা, ফ্রিজ, দামি মােবাইল সেট, রেডিও, টেলিভিশন/ডিশ ইত্যাদি যরুরী আসবাপত্রের মধ্যে গণ্য নয়। এজন্য এগুলোর মূল্য যদি নিসাব পর্যন্ত পৌঁছে তাহলে কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যাবে। (আমগিরী :৫ম খণ্ড, ২৯২ পৃষ্ঠা, শামী : ১৯৮ পৃষ্ঠা)
০০৮.আবাদী জমির মূল্য তদ্রপ ফ্ল্যাট বাড়ির মূল্য নিসাবের মধ্যে শামিল নয়;কিন্তু তার ফসল ও আয়/ভাড়া যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত থাকে এবং তার মূল্য নিসাব পরিমাণ হয় তাহলে কুরবানী ওয়াজিব। (শামী:৫ম খণ্ড ১৯৮ পৃষ্ঠা)
০০৯. নিসাবের মালিক হবার জন্য স্বর্ণ-রৌপ্যের ওজন যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্যের মূল্যের সমান হয়, তাহলে তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব (ফাতাওয়ায়ে শামী : ৫ম খণ্ড ১৯৮ পৃষ্ঠা)
০১০. সাংসারিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাব এবং বসতঘর ব্যতীত অতিরিক্ত বিক্রির জন্য কৃত ঘর অথবা তার আয় নিসাবের অন্তর্গত। ( ফাতাওয়ায়ে শামী : ৫ম খণ্ড পৃষ্ঠা ১৯৮ পৃষ্ঠা)
০১২. পাগল সন্তানের নিসাব পরিমাণ মাল থাকলে, তার পক্ষ থেকে তার মাল কিংবা তার অভিভাবকরে মাল হতে কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। (শামী)
০১৩, গরীব ব্যক্তি যদি কুরবানীর দিনগুলোর মধ্যে কুরবানীর নিয়তে কোন
০১৪. কুরবানী শুধু নিজের পক্ষ থেকে ই ওয়াজিব হয়; স্ত্রী ও বড় সন্তান-সন্ততির পক্ষ তেকে ওয়জিব হয় না।
০১৫. বিবির পক্ষ থেকে স্বামীর কুরবানী করা এবং স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর | কুরবানী করা ওয়াজিব নয়।
০১৬. হ্যাঁ যদি অনুমতি নিয়ে একে অপরের কুরবানীর করে, তাহলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।
০১৭. কাবিননামায় স্ত্রীর পক্ষ থেকে কুরবানী করার ওয়াদা করলে ওয়াদানুয়ায়ী কুরবানী করতে হবে, না করলে ওয়াদা খেলাফীর গুনাহ হবে।।
০১৮, যদি কোনো লোকের দশটি ছেলে সকলেই একত্রে থাকে, তাহলে শুধু পিতার ওপরই কুরবানী ওয়াজিব হবে। আর যদি ছেলেরা নিসাবের মালিক হয়, তাহলে তাদের কুরবানী পিতার ওপর ওয়াজিব হবে না। ফাতাওয়ায়ে শামী : ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০০)
০১৯, মিরাসী সম্পত্তি এখনো বণ্টন করেনি, এমতাবস্থায় সকলের পক্ষ থেকে একটি কুরবানী যথেষ্ট নয়; বরং যাদের ওপর কুরবানী ওয়াজিব হয়েছে তাদের প্রত্যেকের পক্ষ থেকে পৃথক কুরবানী দেয়া ওয়াজিব।
০২০. ঋণ গ্রহণ করে কুরবানী করা উত্তম নয়; কিন্তু কেউ করলে জায়েয হবে এবং সাওয়াবও পাবে। তবে তাকে ঋণ
০২১. মাদরাসার ছাত্রদের জন্যে নফল কুরবানী করার চেয়ে দীনী কিতাব ক্রয় করা উত্তম।(ফাতাওয়ায়ে মাহমূদিয়া ৪: ৩৩৪)।
০২২.সুদি ব্যাংক বা লাইফ ইস্যুরেন্স কোম্পানিতে চাকুরি করা হারাম।এর বিনিময়ে প্রাপ্ত অর্থও হারাম। এ ধরনের চাকুরি যারা করে, তাদের জন্যে হালাল ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ এসেছে এবং সে ব্যবস্থা হওয়া পর্যন্ত ইস্তি গফারের সাথে এ চাকুরির অনুমতি দেয়া হয়েছে; যাতে করে তারা মারাত্মক কোনো সমস্যায় না পড়ে। সুতরাং উক্ত চাকুরির অর্থ দ্বারা যারা কুরবানী করেন, তাদের সাথে অন্যদের শরীক হওয়ার অনুমতি নেই। ফাতাওয়ায়ে শামী- ৫: ৩২৬, আহসানুল
০২৩. ব্যাংকে বা ইস্যুরেন্সে চাকুরিজীবীদের যদি উপার্জনের অন্য কোনো হালাল মাধ্যম থাকে আর হালাল টাকা দিয়ে শরীক হয়, তাহলে তার সাথে কুরবানী দেয়া যাবে। (ফাতাওয়া শামী-৫:৩২৬, আহসানুল ফাতাওয়া- ৭: ৫০৩)।
০২৪. কেউ যদি লোনের টাকা দিয়ে গাভী ক্রয় করে এবং সে গাভী থেকে বাচ্চা হয়, তাহলে তা দিয়ে কুরবানী করা জায়েয আছে। ফাতা, রহীমিয়া- ১৬৩)
০২৫.যদি কোনো বালেগ সন্তান নিসাবওয়ালা হয় তাহলে তার ওপর ভিন্নভাবে কুরবানী করা ওয়াজিব।(শামী:৫ম খণ্ড, ২০০ পৃষ্ঠা)।
০২৬. কোনো কোনো স্থানে মানুষ এক বছর নিজের নামে এক বছর ছেলের নামে আর এক. বছর নিজের স্ত্রীর নামে কুরবানী করে অর্থাৎ প্রতি বছর নাম পরিবর্তন করতে থাকে এটা জায়েয নয়; বরং যার ওপর কুরবানী ওয়াজিব হয় প্রতি বছর শুধু তারই কুরবানী করা কর্তব্য অন্যের নামে করলে নিজের কুরবানী আদায় হবে না। (হিন্দিয়া : ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯৫)
০২৭. এভাবে সকলেই যদি নিসাবের মালিক হয়, তাহলে সকলের উপরই ভিন্ন। ভিন্নভাবে কুরবানী ওয়াজিব। (হিন্দিয়া : ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১৯৫ পৃষ্ঠা)
০২৮. যদি নিজের নামে কুরবানী না করে অন্যের নামে করে তাহলে তার নিজের যিম্মায় ওয়াজিব বাকী থাকবে। অনুমতি ছাড়া করলে অন্যের কুরবানীও আদায় হবে না। (হিন্দিয়া : ৬ষ্ঠ খণ্ড, ১৯৫ পৃষ্ঠ)।
০২৯. যদি কোনো মহিলার উসূলকৃত মােহর বা অন্যান্য মাল নিসাব পরিমাণ হয়, তাহলে তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব (হিন্দিয়া : খণ্ড- ৬, ১৮৭ পৃষ্ঠা)
০৩০. পিতার জীবদ্দশায় ছেলেরা যদি একই সাথে কারবার করে তাহলে তাদের সকলের মালকে বণ্টন করে যদি প্রত্যেকের ভাগে নিসাব পরিমাণ সম্পদ হয়, তাহলে প্রত্যেক আকেল, বালেগ ছেলের ওপর পৃথকভাবে
: ৫ম খণ্ড, ২০৯ পৃষ্ঠা)
০৩১. যদি এক ভাইয়ের নামে কুরবানী করা হয়, তাহলে বাকী ভাইদের যিম্মা থেকে কুরবানী আদায় হবে না। বরং বাকী থেকে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে শামী : ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০৯)। |
০৩২.. কোনো লােক যদি কুরবানীর জন্য জন্তু ক্রয় করে কুরবানীর দিন আসার পূর্বেই সফরে চলে যায়, তাহলে সফরের মধ্যে তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। (শামী : ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯৮)
০৩৩. কুরবানী করা ওয়াজিব, ফরয নয়। এজন্য কুরবানী পরিত্যাগকারী ও অস্বীকারকারীকে ফাসিক বলা হয়, কাফির নয়। (শামী : ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯৬)।
০৩৪. মুসাফির হাজী ও অন্যান্যদের ওপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। মক্কা মদীনায় সমবেত বিদেশী হাজীগণ মুসাফির বিধায় তাঁদের কুরবানী ওয়াজিব নয়। (ফাতাওয়ায়ে শামী : ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০০)
০৩৫. বিশুদ্ধ মতানুসারে ছোট ছেলেমেয়েদের পক্ষ থেকে কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। (শামী:৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০৯) কেননা ইমাম মুহাম্মাদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি-এর যাহিরী রেওয়ায়াত অনুসারে কুরবানী ওয়াজিব হবার জন্য আকেল, বালেগ হওয়া শর্ত।(ফাতাওয়ায়ে শামী : ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০৯)। |
০৩৬. এর কারণে যে সব সময় পাগল থাকে, তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় । (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ৬ষ্ঠ, পৃষ্ঠা ২৯৫)। কিন্তু যে ব্যক্তি কখনও পাগল হয় আবার কখনও ভাল থাকে, যদি সে নিসাবে মালিক হয়, তাহলে তার ওপর কুরবানী ওয়াজিব। এভাবে যে ব্যক্তি কুরবানীর দিনসমূহের মধ্যে মারা যায়, তার সম্পর্কে ইমামগণের
০৩৭. কুরবানীর জন্য ক্রয় করা হয়েছে কিন্তু কুরবানীর পূর্বেই জন্তুটি মারা গেল। যদি ক্রেতা ধনী হয়, তাহলে আরো একটি জন্তু খরিদ করে কুরবানী দেয়া যরুরী। আর যদি সে গরীব হয়, তাহলে যরুরী নয় ।
০৩৮. যদি ব্যবসার সম্পদ হয় বা পার্টনারশীপ ব্যবসার মাল এমন ব্যক্তির নিকট রয়েছে, যে ব্যক্তি অনুপস্থিত। এমতাবস্থায় মালিকের নিকট যদি
০৩৯. কুরবানীর হুকুম আসার পর আতিরাহ এবং ফরা‘ এর হুকুম রহিত হয়ে গিয়েছে। (আইনুল হিদায়াহ্ : ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮২) জাহিলিয়াতের যুগে রজব মাসের জন্তু বলী দেয়াকে: (আতীরাহ) বলা হতো এবং ওই বাচ্চা যা মাদী জানোয়ার থেকে প্রথমে জন্ম হয়, ওটাকে প্রতিমার নামে যবাই করা হত। তাকে ২ (ফারা‘) বলা হতো। (আইনুল হিদায়াহ্ : ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৬)
০৪০. নিসাবওয়ালা ব্যক্তির মাল যদি কোম্পানির অথবা শরীকদারের নিকট থাকে এবং তার থেকে নেয়া অসম্ভব হয়, তাহলে তার নিকট যদি কোনাে বিক্রয়যােগ্য মাল থাকে যা প্রয়োজনাতিরিক্ত, তবে তা বিক্রয় করে কুরবানী দেয়া ওয়াজিব। (ইমদাদুল ফাতওয়া : ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৫৩) ০৪১. নিসাবের মালিক ব্যক্তি যদি বকরা ঈদের পূর্বে কুরবানী করার মান্নত করে, তাহলে তার ওপর দুটি কুরবানী করা ওয়াজিব। একটি নযর বা মান্নতের, দ্বিতীয়টি নিসাবের। শামী : ৫ম খণ্ড, ২০৩)
০৪২. কিন্তু হ্যা, যদি সে এ মান্নত কুরবানীর দিনের মধ্যে তার কুরবানী করার আগেই করে থাকে; আর এ দ্বারা সে তার কুরবানীর ঘোষণা দেয়া উদ্দেশ্য হয়, তাহলে একটা কুরবানীই যথেষ্ট। আর যদি এরূপ না হয়
০৪৪. কিন্তু জায়েয হবার সুরত হালো যদি কোন ক্ষুধার্ত ব্যক্তি নিজে খানা না খেয়ে ধৈর্য ধরে এবং তার খাদ্য অপরকে দিয়ে দেয়, তাহলে এটা যেমন জায়েয, এরূপ মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানীও জায়েয। যদি ওই ব্যক্তি ওসিয়ত না করে যায়, তাহলে এ
কুরবানী জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকেই আদায় হবে; সাওয়াব মৃতেরও হবে। (মাহমূদিয়া : ৪র্থ খণ্ড, ৩৩৬)