google-site-verification=rXaFmwSiYigXRnCfxubQMUMfWDLuTGq64pGk6OzeFd4

জিলহজ্বের প্রথম দশ দিন ও ইসলামের কর্মসূচী

%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%B9%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A5%E0%A6%AE%20%E0%A6%A6%E0%A6%B6%20%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A8%20%E0%A6%93%20%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%B8%E0%A7%82%E0%A6%9A%E0%A7%80%E0%A5%A4

 জিলহজ্বের প্রথম দশ দিন ইসলামের কর্মসূচী

বিভিন্ন মাসে ও বিভিন্ন সময়ে আল্লাহ রাব্বল আলামীন মুমিনদের জন্য নানা ইবাদতের কর্মসূচী পেশ করেছেন। জিলহজ্ব মাসের চাঁদ উদয় হওয়ার আগেই আমাদেরকে এই মাস উদযাপন করার প্রস্ততি নিতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে এ মাসের শুরুতে একটানা দশ দিনের এবাদত দান করেছেন। কোরআন শরীফের ৩০ নং পারার একটি সূরার নাম হচ্ছে সূরা আল-ফজর। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই সূরাতে বলেন

والفجر وليال عشر والشفع والوتر واليل إذا يسر

৫টি বিষয়ের নামে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শপথ করেছেন।

১ম হল:

والفجر আমি ফজরের কসম করে বলছি। সকাল বেলায় আমাদের যে নামায আদায় করতে হয় তার নাম সালাতুল ফজর। আল্লাহ রাব্বল আলামীন ফজরের নামে কসম করেছেন। আল্লাহ রাব্বল আলামীনের কসম করে কোন কথা বলতে হয়না। কারণ তিনি সবচেয়ে বিশ্বস্ত

ا وَمَنْ اَصْدَقُ مِنَ اللہ قِیْلًا

আল্লাহর চেয়ে সত্য বিষয় আর কে বলতে পারেমহান সত্যবাদি হলেন আল্লাহ নিজেই। কাজেই আল্লাহর কথাকে বিশ্বাস করানোর জন্য কখনো শপথ কিংবা কসম করতে হয়না। কিন্তু আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআনে বারবার বিভিন্ন আয়াতে কেন কসম করেন ? যে জিনিসের নামে কসম করেন সে জিনিস অত্যন্ত মর্যাদাবান, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ তথ্য মানবজাতিকে বুঝানোর জন্য বিভিন্ন নামে আল্লাহ কসম করেছেন। এই সূরার শুরুতে আল্লাহ কসম করে বলেন, وَالْفَجْرِ  ফজরের কসম, ফজরের নামাজের কসম, সুনির্দিষ্ট একটি দিনের ফজরের কসম, ফজর মানে হচ্ছে সকাল,

অন্য আরো দুইটি আয়াতে আল্লাহ সকালের নামে কসম করেছেন

 وَ الصُّبْحِ اِذَا تَنَفَّسَ আমি সকালের নামে কসম করছি যখন সকাল নিঃশ্বাস ফেলে, অর্থাৎ সকাল যখন প্রতিভাত হয়, নতুন প্রভাত যখন আসে সে প্রভাতের নামে আমি কসম করছি। অন্য আয়াতে বলেন, وَالصّبْحِ اِذا اَسْفَر সকাল বা প্রভাত যখন আলোক উজ্জল হয় সেই প্রভাতের নামে আমি কসম করছি। তাহলে দেখা যায় প্রভাতের নামে দুইবার কসম, ফজরের নামে একবার কসম করা হয়েছে।

 

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআনে কারীমে তিন স্থানে সকাল বেলার কসম করেছেন। তাফসীরবিদগণ বলেন:  ফজর হল দিনের প্রথম অংশ ও সূচনা। আর এই সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর নামে কসম করেছেন। মানব জাতিকে এই সময়ের পবিত্রতা ও এই সময়ের মূল্য অনুধাবন করানোর জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ফজর এবং সকালের নামে কসম করেছেন, আল্লাহর নবী দোয়া করেছেন,

اللهم بارك لأمتي في بكورها

হে আল্লাহ,আমি তোমার দরবারে আমার উম্মতের জন্য ফরিয়াদ করছি, দোয়া করছি। আমার উম্মত সকাল বেলায় যে কাজ করবে সে কাজের মধ্যে তুমি বরকত দান কর। তাহলে বুঝা যায়, সকালের কাজ গুরুত্বপূর্ণ। সকালের অল্প কাজে আল্লাহ বিস্তর বরকত দান করেন এবং আল্লাহর নবীও আমাদের জন্য দোয়া করেছেন। মুসলিম দেশ গুলোতে | দেখা যায় সকাল বেলায় দোকান পাট বন্ধ, রাস্তাঘাটে মানুষ নেই, সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন।

 অথচ এই সময়ে কাজ করার জন্য আল্লাহর নবী আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। ছাত্ররা ঘুমে, পড়া-শুনা নেই ছাত্র ও যুবকদেরকে দেখা যায় মধ্যরাত পর্যন্ত পড়া শুনা করে তার পর শুয়ে পড়ে, সকাল ৯টা বা ১০টা বেজে গেলে ঘুম থেকে উঠে। এটা ইসলামের রীতি নয়।

ইসলাম বলে:

এশার পর যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি শুয়ে যাও, আর সকাল বেলা তাড়াতাড়ি উঠে যাও। সকালের সময় ব্রেইন ফ্রেশ থাকে, সচ্ছ থাকে যা কিছু ছাত্ররা পড়বে সহজেই তা বুঝতে পারবে এবং মুখস্ত করতে পারবে। এজন্য ছাত্রদের উচিৎ ভোর রাতে উঠা এবং বিশেষ করে ফজরের নামাজের পর থেকে পড়া শুনা শুরু করে দেয়া। এমন অভ্যাস করা উচিৎ নয় যে, মধ্যরাত পর্যন্ত রাত জাগবে আর সকাল বেলা ঘুমেই চলে যায়। যদি এরকম হয় তাহলে আমার বরকতের সময় আমি হারিয়ে ফেলব।

যে সময়ের ব্যাপারে আল্লাহর নবী আল্লাহর দরবারে দোয়া করেছেন, আমাদের জন্য চেয়েছেন, সে সময়ের প্রতি গুরুত্ব দানের ব্যাপারে আমরা অবশ্যই সচেষ্ট থাকব। কাজেই আমি অনুরোধ করব, যে যে পেশা নিয়ে আমরা যে স্তরে আছি সকাল বেলাকে মূল্যায়ন করতে হবে। কারণ আল্লাহ তায়ালা সকালের নামে তিনবার কসম করেছেন। আবার আল্লাহর নবী এই সময়ের জন্য দোয়া করেছেন। বিশেষত ছাত্রদেরকে আমি উদ্বুদ্ধ করব তারা যেন এ সময়ে পড়ালেখা করে।

 

وَالْفَجْرِ দিনের ফজরের কসম, কোন কোন তাফসীরবিদ বলেন, এই আয়াতে -ওয়াল ফাজরি – বলে বছরের সুনির্দিষ্ট একটি ফজরের কসম আল্লাহ করেছেন। সেটি হল یَوْمُ النّحرِ যিলহজ্জের ১০ তারিখের সকাল বেলা, এটাকে বলা হয় ) یَوْمُ النّحرِ  বা কোরবানীর দিন।  নাহরবলা হয় উটকে বর্শা নিক্ষেপ করে জবাই করা। আর ছুরি দিয়ে জবাই করাকে জবেহ বলা হয়। যেহেতু আরবরা উট দিয়ে কোরবানি বেশি করত এজন্য কোরবানের দিনকে বলা হয় – یَوْمُ النّحرِ (জবাইয়ের দিন): এই দিনের ফজরের কসম করে আল্লাহ বলেন : وَالْفَجْر আমি কোরবানের দিন সকাল বেলার ফজরের সময়ের কসম করে তোমাদেরকে বলছি। এই দিন, এই সময় অত্যন্ত বরকতপূর্ণ সময়। ৩৬০ দিনের ফজরের মধ্যে ১০ই যিলহজ্জের ফজর পৃথক বৈশিষ্ট মন্ডিত ফজর। এই দিনের ফজরের কসম আল্লাহ করেছেন কেন?

তার কারণ হল, ইমাম কুরতবী (রহঃ) তাঁর তাফসীরে। এই আয়াতের ব্যখ্যায় বলেন, নাহরের দিনের ফজর বিশেষ বৈশিষ্টের অধিকারী। তার কারণ, প্রতিটি সকালের জন্য থাকে একটি রাত। ইসলামী শরীয়ার দষ্টিতে নাহরের দিনের কোন রাত নেই। যেমন, আজকের দিন হল ১২-এ যিলকাদ। আজকের রাত হল গত রাত, যা আমরা অতিবাহিত করেছি। সে রাত ছিল ২৫শে যিলকা এর রাত্রি। আজকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ১২ তারিখ। সুর্যাস্তের পর থেকে ১২ তারিখ শুরু হয়ে যাবে। তাহলে প্রত্যেক দিনের জন্য একটি রাত আছে। আরবী হিসাব অনুযায়ী আগে রাত আসে তার পর দিন আসে। তাহলে ১২ যিলকদ এর রাত চলে গেছে। আমরা দিনে পদার্পন করেছি, সূর্যাস্ত হবে, ১২ তারিখ শেষ হয়ে যাবে। প্রতিটি দিন ও প্রতিটি ফজরের একটি রাত থাকে। কিন্তু ব্যতিক্রম হল নাহরের দিন, তার কোন রাত নেই। কেন? কারণ, যিলহজ্বের নয় তারিখ হল আরাফা দিবস। হজ্ব পালনের জন্য সকাল থেকে আরম্ভ করে অবশ্যই কিছুক্ষণ সময় আরাফার ময়দানে অবস্থান করতে হয়। কেউ যদি অবস্থান না করে, তার হজ্ব আদায় হবেনা। কারণ হজ্জের রুকন বা প্রধান কাজ হল, আরাফার প্রান্তরে কিছুক্ষণ অবস্থান করা। 

এখন আমি ৯ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার ময়দানে যেতে পারলামনা, অসুস্থতার কারণে, ঝামেলার কারণে বা যানজটের কারণে। আমি পৌছতে পৌছতে আরফার দিনের সূর্যাস্ত হয়ে গেল। রাতের ১০টা বেজে গেল, তখন এসে আরফার ময়দানে আমি পৌছলাম। তাতেও হজ্ব আদায় হয়ে যাবে। অনেক সময় আরাফা প্রান্তরে পৌঁছতে বিলম্ব হয়। কারণ মানুষের ভিড় খুব বেশী থাকে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হল, আমরা বের হয়েছি মিনা থেকে আরফাতে যাওয়ার জন্য সকাল ৮টায়, পৌঁছতে প্রায় আছরের সময় হয়ে গেল, তাহলে বুঝা যায় মানুষের দেরি হতে পারে। ভিড় হতে পারে। আর আরফার অবস্থান যদি কারো চলে যায় তাহলে আবার তাঁকে হজ্ব করতে হবে। কারণ সে হজ্ব পায়নি। আসল কাজ হল আরাফার ময়দানে অবস্থান করা। এখন কেউ যদি দিন চলে যাওয়ার পরের যে রাত নিয়ম অনুযায়ী সে রাত হচ্ছে পরের দিনের রাত; ৯তারিখের রাত নয়, ১০ তারিখের রাত। কিন্তু এই রাতকেও ৯তারিখের রাত হিসেবে শরীয়ত সাব্যস্ত করেছে।

 তাহলে আরাফাতের ৯তারিখ যে দিন এই দিনের দুটা রাত, আগেরটাও সে দিনের রাত, পরেরটাও সে দিনের রাত। এজন্য কেউ আরফাতের দিন চলে যাওয়ার পর রাতের বেলায়ও যদি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করতে পারে তাহলে সে হজ্ব পেয়ে যাবে। কাজেই বুঝা যায় – یَوْمُ النّحرِ নাহারের দিন বা ১০ তারিখের দিনের কোন রাত নেই। কারণ এই রাতকে ৯তারিখ অধিগ্রহণ করে নিয়েছে। ১০ তারিখের রাত কোথায়? তাহলে বুঝা যায় যিলহজ্জের ১০ তারিখের ইসলামী বিধান ও ইসলামী শরীয়া অনুযায়ী কোন রাত নেই। ব্যাতিক্রমধর্মী একটি দিন। কাজেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সে দিনকে এতটুকু মর্যাদা দান করেছেন, তার রাত না থাকলেও একটি দিনের রাত সহ যে মর্যাদা সে মর্যাদা তাকে দিয়েছেন। এজন্য সে দিনের ফজরের কসম করে বলেন,

وَالْفَجْرِ ا۔یّ فَجْر یَوم النّحرِ –  অর্থাৎ:- ১০ তারিখ কোরবানের দিনের সকালের কসম করে আমি বলি, এই দিন ৩৬০ দিনের অন্যান্য ফজরের তুলনায় সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম একটি ফজর। কারণ তার কোন রাত নেই। রাত না থাকলেও রাতের বৈশিষ্ট ও ফজিলত এই ফজরের মধ্যে রয়েছে। তার পর আল্লাহ কসম করেন, وَلَیَالٍ عَشْرِ আমি ১০টি রাতের কসম করে তোমাদেরকে বলছি

আমরা জানি:

 ইংরেজিতে Article ব্যবহার করা হয়। Article দুই প্রকার। (১) নির্দিষ্ট (২) অনির্দিষ্ট।  নির্দিষ্ট হচ্ছে (দি) The বা The (দ্যা)  Vowel যদি থাকে তখন উচ্চারণ করতে হয় The (দি)  Consonent থাকলে The (দ্যা) উচ্চারণ করতে হয়। আর অনির্দিষ্ট যে Article সেটা হল A, An আরবীতেও এরকম Article ব্যবহার করা হয়।  আরবীতে Article ব্যবহার করার জন্য ব্যবহার করা হয় ھٰذَا ব্যবহার করা হয়।  ھُوَব্যবহার করা হয়  এটা হচ্ছে নির্দিষ্ট। অনুরূপ ভাবে ا ل যুক্ত করা হয়। আর এগুলো ব্যবহার না করলে সেটা অনির্দিষ্ট হয়ে যায়।  যেমন:  قَلَمٌ মানে অনির্দিষ্ট ১টি কলম।  আর اَلْقَلَمُ কলমটি মানি (সুনির্দিষ্ট একটি কলম)।

আল্লাহ তায়ালা বলেন:

وليال عشر

১০ টি রাতের কসম করে আমি বলছি। اللّیال العشر আল্লাহ বলেন নি অনির্দিষ্ট করে বলেছেন। আরবী গ্রামার অনুযায়ী অনির্দিষ্ট Article ব্যবহার করার অনেক কারণ থাকে, তার মধ্যে একটি কারণ হল কোন জিনিসের গুরুত্ব, মহত্ব, বড়ত্ব বুঝানোর জন্য অনেক সময় শব্দটিকে অনির্দিষ্টভাবে ব্যবহার করা হয়।

ليال عشر

অনির্দিষ্টভাবে আল্লাহ রাব্বল আলামীন শব্দটিকে ব্যবহার করেছেন। যে ১০টি রাতের কসম আমি করেছি সে রাতগুলো অনেক বিশাল মর্যাদার অধিকারী। অনেক মহান, অনেক বড়।

১০টি বড় রাত কি কি যেগুলোর ব্যাপারে আল্লাহ কসম করেছেন?

তাফসীরবিদগণ প্রায় সকলে একথা বলেছেন যে, এ দশ রাত হল জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ রাত। হযরত ইবনে আব্বাস যিনি তাফসীরবিদদের প্রধান, যাকে رَئیس المُفِسِّرِین বলা হয়। আল্লাহর নবী তার জন্য দোয়া করেছেন, তিনি ছিলেন রাসুলের চাচাতো ভাই। আল্লাহর নবী টয়লেট থেকে এসে দেখলেন যে, অযুর পানি সাজিয়ে রাখা। চিন্তা করলেন, এত ভোর রাতে কে উঠল, আমার জন্য অযুর পানি প্রস্তুত করে রাখল। তখন তিনি দেখেন যে ৭-৮ বছরের ছেলে তার চাচা আব্বাসের সন্তান আব্দুল্লাহ। পানি রেডি করে রেখেছেন। আল্লাহর নবীর মন খুবই খুশি হয়ে গেল এবং আল্লাহর নবী তার জন্য দোয়া করলেন

اللهم علمه التأويل وفقهه في الدين

হে আল্লাহ, কোরআনের ব্যাখ্যা বুঝার মত ক্ষমতা তাঁকে দান কর, দ্বীনের যথাযথ উপলব্ধি তাকে দাও।এজন্য কোরআনের গুঢ় রহস্য হযরত ইবনে
আব্বাস বুঝতেন।
ছোট ছিলেন বয়সে, কিন্তু বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম না বুঝলে  তার নিকট জিজ্ঞেস করতেন।

সূরাতুল ফাজরির শানে নুযূল:

এই সূরা আল্লাহ কেন নাযিল করেছেন? এই আয়াতে আল্লাহ কি বুঝাতে চান ? আল্লাহ রাব্বল আলামীন যদি দিতে চান সিনিয়র-জুনিয়রের কোন পার্থক্য করেন না। বয়সের কোন পার্থক্য করেননা। ইলম হচ্ছে আল্লাহর বিশেষ গুণ। কাকে দিতে হবে আল্লাহ নিজেই চয়েস করেন, যাকে ইচ্ছা আল্লাহ তাকেই দান করেন। ফকীরের ছেলেকে আল্লাহ ইলম দিতে পারেন, ছোট বংশের ছেলেকে আল্লাহ ইলম দিতে পারেন। বয়সে ছোট তাকেও আল্লাহ ইলম দিতে পারেন। এটা হচ্ছে আল্লাহর ইচ্ছা।

হযরত ইবনে আব্বাছ (রাঃ) বলেন, ১০টি বড় রাত কি কি জান?

এই ১০টি বড় রাত হল যিলহাজ্ব মাসের ১ তারিখ থেকে ১০তারিখ পর্যন্ত (১০টি রাত)। এই রাত সম্পর্কে আল্লাহ কসম করেছেন। কারণ এ ১০ রাত বড় রাত, মহান রাত। আল্লাহ যেহেতু এই রাতগুলোর নামে কসম করেছেন তাই এই রাতগুলোকে আমাদের মর্যাদা দিতে হবে। অন্যান্য রাতে যে ইবাদত আমরা করি তার চেয়ে বেশি এবাদত এই রাতগুলোতে করতে হবে। তাহাজ্জদ নামায আদায় এবং রাতের বেলায় আল্লাহর জিকির বেশি বেশি করতে হবে।  এই রাতগুলোর পরে দশটি রাত আবার দশটি দিনও আছে।

এই দিন সম্পর্কে বোখারী শরীফের হাদীছে আছে

ما من أيام أحب إلى الله أن يعبد فيها من هذه الأيام

দশটি দিন আছে এই দশ দিনের মধ্যে ইবাদত করা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। সারা বৎসরের অন্য কোন দিনের এবাদত আল্লাহর কাছে অতটুকু প্রিয় নয় যতটুকু প্রিয় এই দশ দিনের এবাদত। অর্থাৎ এক তারিখ থেকে দশ তারিখ দিনগুলোতে এবাদত করা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। তাহলে রাতগুলোর ব্যপারে আল্লাহ নিজেই কসম করেছেন। আর দিনের মর্যাদা ছহীহ বোখারীর বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করল,  وَلَا الْجِھادُ فی سَبِیلِ اللہ   হে আল্লাহর রাসুল, অন্য দিনে যদি আমরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করি এই দিনের জিকির, আযকার, এবাদতের চেয়েও কি তা বেশী প্রিয় হবেনা? জিহাদতো কঠিন এবাদত।  সব চেয়ে বেশি প্রিয় হচ্ছে মানুষের জান । জানের চেয়ে সন্তান প্রিয় হয়না, স্ত্রী প্রিয় হয়না। কোন মানুষ প্রিয় হয়না। আমার জান আমার কাছে বেশি প্রিয়। ভূমিকম্প হলে যখন সময় থাকেনা কাউকে নিতে গেলে আমি সহ মারা যাবো এটা যদি আমি বুঝতে পারি তাহলে কারো কথা আমার মনে থাকবেনা। আমার জান বাঁচানোর জন্য আমি চেষ্টা করব।  কোরআন বলেছে

يوم ترونها تذهل كل مرضعة عما أرضعت

যে মহিলা দুধপান করায় সে মহিলা ভূমিকম্প শুরু হলে তার সন্তানের কথা ভুলে গিয়ে পালিয়ে যাবে, দিক বিদিক ছুটতে থাকবে,” সুনামি ভূমিকম্প আমাদের কাছে এটাই প্রমাণ করেছে। পত্রিকার বিভিন্ন রিপোর্টে দেখা যায় সুনামি আক্রান্ত রাষ্ট্রে বিশেষ করে ইন্দোনিশিয়াতে অনেক মা সন্তানকে নিতে পারেনি। এক জন মা তার দুটি সন্তান ছিল, তিনি চিন্তা করলেন যে কোন একজন নেওয়া যায়, দুই জনকে নিতে গেলে তিনি সহ মারা যাবেন তখন আরেক জনের কথা ভুলে গিয়ে এক সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে গেলেন। তাহলে বুঝা যায় মানুষের কাছে সব চেয়ে প্রিয় হল নিজের জান। আমি ঠিক থাকার পর, আমার সন্তান, আমার স্ত্রী, আমার মা-বাবা। জিহাদ মানে হচ্ছে সবচেয়ে প্রিয় জিনিসকে আল্লাহর রাস্তায় দিয়ে দেওয়া, জানকে আল্লাহর রাস্তায় দিয়ে দেওয়া। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ এই দশ দিনে এবাদত করা কি জিহাদের চেয়ে ভাল হবে? আল্লাহর নবী বল্লেন

ولا الجهاد في سبيل الله إلا رجل خرج بنفسه وما له فلم يرجع

জিহাদের চেয়েও এই দিন গুলোতে এবাদত করা ভাল। তবে কোন ব্যক্তি যদি আল্লাহর রাস্তায় জান মাল নিয়ে চলে গেল আর ফিরে আসতে পারেনি তার মর্যাদা বেশি। তাহলে এই দিনগুলোতে এবাদত করা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার চেয়েও বেশি মর্যাদাবান।। সুতরাং এই দিনগুলোতে বেশি বেশি এবাদত করতে হবে।

কেন এই দিনের মর্যাদা এত বেশি ?

তাফসীরকারকরা লিখেছেন যতগুলো এবাদত হতে পারে এই ১০ দিনের মধ্যে সবগুলো এবাদত করা সম্ভব। আবু দাউদ শরীফের বর্ণনা অনুযায়ী আমাদের নবী সাঃ এই 10 দিনে নয়টি রোজা রাখতেন।  ১তারিখ থেকে ৯তারিখ পর্যন্ত (তাহলে রোজা আছে) ৯দিনে নামাজ আছে। দান সদকা করা উত্তম এই দিনগুলোতে আরেকটি হল হজ্জ, বছরের অন্য কোন দিনে হজ্ব করা যায়না। কিন্তু এই দিন গুলোতে হজ্ব হয়। তাহলে ইসলামের বড় বড় সবগুলো এবাদত এই দনগুলোতে সংঘটিত হয়। এই কারণে আল্লাহর দরবারে এই ১০টি দিন অত্যন্ত প্রিয়। তাই আমাদেরকে এই দশ দিনের এবাদত অবশ্যই করতে হবে। আমরা কি এবাদত করব? আল্লাহপাক সূরা হজ্বের মধ্যে বলেন: فَاذْکُرُوا اللہ فی ایّام مّعلومات   তোমরা নির্ধারিত দিনগুলোতে আল্লাহর যিকির কর। নির্ধারিত দিনগুলোতে অর্থাৎ যিলহজ্বের প্রথম দিনগুলোতে তোমরা আল্লাহর যিকির কর।

মহানবী (সাঃ) বলেন:

 

التَّھلِیْلَ وَ التّکْبِیْرَ وَالتّحْمِیْدَ  فَاکثِرُوْا فِیھِنَّ

এই দিনগুলোতে তোমরা কি করবে?

এক:-
التَّھلِیْلَতাহলীলমানে হচ্ছে

لا إله الا الله محمد الرسول الله

এই যিকির বেশি করবে।

২য়:- তাকবীর »  التّکْبِیْرَ  আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা
করবে

الله اكبر الله أكبر  لا اله الا الله والله اكبر الله اكبر ولله الحمد

এগুলো বেশি বেশি পড়বে।

বর্ণনায় পাওয়া যায় হযরত ইবনে ওমর (রাঃ) এবং আবু হুরাইরা (রাঃ) বাজারে গিয়েছিলেন। বাজারে গিয়ে দেখলেন যে, মানুষের মুখে কোন তাকবীর শোনা যায়না তখন তারা চিৎকার করে বল্লেন:

 الله اكبر الله أكبر  لا اله الا الله والله اكبر الله اكبر ولله الحمد

তাদের তাকবীর ধ্বনি শুনে বাজারের সব মানুষ তাকবীর বলা শুরু করল।  কাজেই এই দিন গুলোতে যেখানে সেখানে শুধু আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা করা হবে, তাকবীর পড়া হবে। ৯ তারিখ থেকে বিশেষভাবে তাকবীর পড়তে হবে। ৯তারিখ ফজরের নামাজের পর থেকে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত প্রতিটি নামাযের পরে এক বার করে এই তাকবীর পড়তে হবে, এটা ওয়াজিব। ইমাম সাহেব যদি মনে করতে না পারেন মুক্তাদিরা পড়বে এবং একটু জোরে করে পড়া ভাল। যাতে সবার স্মরণ হয়ে যায়। মেয়েদেরকেও তাকবীর পড়তে হবে ঘরে। তবে তারা নিম্নস্বরে পড়বে। মহিলাদের অনেকই এ তাকবীর সম্পর্কে জানেনা। এখন থেকে তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে।  পুরুষদের জন্য সুবিধা তারা জামাতে আসে নিজের মনে না থাকলেও অন্যদের থেকে শুনে পড়তে পারে। কিন্তু মেয়েরা একা একা ঘরে নামাজ পড়ে। তারা ভুলে যায়। মহিলারাও যেন তাকবীর বেশি বেশি পড়ে। তাহলে আমাদের প্রধান দায়িত্ব হল এই ১০ দিন আমরা বেশি করে لا إله الا الله محمد الرسول الله কালেমা পড়ব এবং আল্লাহর প্রশংসা, আল্লাহর গুনকীর্তন করব। তাকবীর পড়ব।

৩য়:-

আলহামদুলিল্লাহ বেশি করে পড়ব, আল্লাহর প্রসংসা করব। অর্থাৎ যিকিরের মধ্যে এই সময়গুলো অতিবাহিত করতে হবে। আল্লাহর দরবারে এই দিন গুলোতে যিকির অত্যন্ত প্রিয়। কাজেই যিকির বিমূখ কোন সময়, কোন ক্ষণ যেন অতিবাহিত না হয়। এই দিনগুলোতে সকল পাপাচারকে বন্ধ রাখতে হবে, নিজের জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কারো গীবত করা, কারো সমালোচনা করা, কারা নিন্দাবাদ করা থেকে নিজেদের বিরত রাখতে হবে বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হয় আমার জিহ্বা যেন কারো মনে কষ্ট না দেয়, কারো অন্তরে আঘাত না করে। বিজ্ঞজনরা বলেন, একজন মানুষের প্রশংসা করতে যদি তুমি নাও পার অন্তত পক্ষে তার নিন্দাবাদ করোনা। তোমার মনে যদি এতটুকু উদারতা না থাকে যে, তুমি কারো গুণ বর্ণনা করবে অন্তত পক্ষে তার বিরুদ্ধে নিন্দাবাদ করবেনা। সংকীর্ণ মানুষের স্বভাব হল, কাউকে ভাল ফলাফল করতে দেখলে, কারো অগ্রগতি দেখলে তার মন অশান্ত হয়ে উঠে। তার ক্যরিয়ারে একটু কালিমা লেপে দিতে মনে চায়। তাই বলা হয়, তুমি নিজে উদার হও, আল্লাহও তোমার ব্যাপারে উদার হবেন।

সমালোচনা আমাদেরকে অন্যায়ের দিকে নিয়ে যায়। তাহলে এই দিন গুলোতে আমাদের ইবাদত হবে, বেশি করে  জিকির, তাকবীর, কালিমা পাঠ ও হামদ পাঠ করা। যে মুখের মধ্যে যিকির আছে সেই অন্তরে শয়তান জায়গা করে বসতে পারেনা। আর যার ভিতরে যিকির নেই সেই অন্তরে শয়তান জগদ্দল পাথরের মত জেঁকে বসে। সে শয়তানকে তাড়ানো যায়না। নানান ধরনের কুপ্ররোচনা ও কুমন্ত্রণা তার অন্তরে ছড়িয়ে দেয়।

ليال عشر

আল্লাহর কসম দশটি রাত মর্যাদাবান, এবং দশটি দিন মর্যাদাবান। রাতের বেলায় আমরা এশার এবং ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করব এবং মাঝ রাতে বা ভোর রাতে উঠে আল্লাহর দরবারে নামাজ আদায় করে দোয়া করব। প্রথম নয় দিনে আমরা রোজা রাখার চেষ্টা করব। কারণ, আল্লাহর নবী এই দিন গুলোতে রোজা রেখেছেন। তবে ১০ম দিনে নয়। কারণ, ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। নয় দিন আমাদেরকে রোজা রাখার চেষ্টা করতে হবে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তারপর আরো দুবার কসম করে বলেন,  ‏وَالشّفعِ وَ الوَتْرِ জোড়া দিন এবং জোড়া রাতের, অথবা জোড় দিন এবং বেজোড় রাতের কসম।  বেজোড় দিন আর বেজোড় রাত হল, ৯তারিখ (আরফাত) আর জোড়া দিন, জোড়া রাত হল ১০ তারিখ। বিশেষ ভাবে আল্লাহ তায়ালা ৯তারিখের কসম করেছেন। কারণ আরাফার এই দিনে সারা পৃথিবীর সকল হাজী আরাফাতের প্রান্তরে জমায়েত হবেন। আল্লাহর দরবারে তারা পাগলের মত কাদবেন। হজ্ব মানে পাগলামি, উম্মাদনা, আল্লাহর পাগল। মাথায় টুপি নেই, চুল গুলো  অগোছানো, এলোমেলো, গায়ে সিলানো কোন জামা নেই, পায়ে কোন জুতা নেই, একটি কাপড় নিচে পরা, আরেকটি কাপড় পেঁচানো। মুখে আল্লাহর যিকির لبّیک اللّھمّ لبّیک  আল্লাহ হাজির, তোমার দরবারে তুমি ডেকেছ আমি হাজির। আল্লাহর দরবারে পাগল হয়ে হাজিরা দেওয়াই হচ্ছে হজ্ব।

 وَلِلّہِ عَلَی النّاسِ حجُّ الْبیت আল্লাহর জন্য হজ্ব করতে হবে, আল্লাহর জন্য পাগল হতে হবে। তাহলে যেখানে লক্ষ লক্ষ হাজী আল্লাহর দরবারে পাগল হয়ে ইবাদত করছেন সেখানে আমরা যারা হজ্ব করতে যেতে পারিনি সে দিনগুলোতে আমাদেরও তাদের অনুকরণে ইবাদত করতে হবে। এজন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিশেষভাবে নয় তারিখের কসম করেছেন, নয় তারিখ দিন এবং নয় তারিখ রাত দুটির কসম করে আল্লাহ বলেন:  وَالشّفعِ وَ الوَتْرِ  আল্লাহর নবীকে জিজ্ঞাস করা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! নয়তারিখ আরফাতের দিন যদি আমরা রোজা রাখি তাহলে আমরা কি ছোয়াব পাব? এবং মুহরমের ১০ তারিখ রোজা রাখলে আমরা কি ছোয়াব পাব?

প্রথমত : মুহরামের দশ তারিখ রোজা:


যেটাকে আশুরা বলা হয়। অপরটি হল আরফার নয় তারিখ । আল্লাহর নবী বল্লেন
, কেউ যদি আশুরার দিন মুহরমের ১০ তারিখ রোজা রাখে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার আগের বছরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।  আর আরফাতের দিনের রোজা যদি কেউ রাখে ( অর্থাৎ ৯তারিখে ) তাহলে এক বছর আগের গুনাহ ক্ষমা করবেন এবং আগামী এক বছরের গুনাহও আল্লাহ ক্ষমা করে দিবেন। তাহলে বুঝা যায়, আরফাতের রোজার ফজিলত আশুরার রোজার ফজিলতের চেয়েও বেশি। আশুরার রোজাতে এক বছরের অতীতের গুনাহ মাপ হয়। ভবিষ্যতের গুনাহ মাপ হয়না। কিন্তু আরাফাতের ব্যাপারে আল্লাহর রাসুল বলেছেন, মেশকাত শরীফের হাদীসে আছে:

السّنۃ الماضیۃ وَ السّنۃ الآتیۃ

অতীতের এক বছর আগামী এক বছর দুই বছরের গুনাহ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ক্ষমা করে দিবেন। তার কারন প্রশ্ন জাগে; আগামী বছর যদি আমি গুনাহ না করি? গুনাহ না করলে আল্লাহ তার মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে দিবেন। আর অনেক হাদীস বিশারদ বলেছেন, এই হাদীসে সূক্ষ ইঙ্গিত থাকতে পারে যে, কেউ যদি আরফাতের নয় তারিখ রোজা রাখে তাহলে আগামী বছরও তার হায়াত থাকবে, জীবিত থাকবে। কারণ, আগামী বছরের গুনাহ যদি মাপ হয় তাহলে আগামী বছর তাকে গুনা করার সুযোগ দিতে হবে। তাতে বুঝা যায় আগামী বছর গুনাহ

করার সুযোগ থাকবে এবং আগামী বছর আমার জীবনও থাকবে, আমি বেঁচে থাকব। কাজেই আরফাতের রোজা রাখার জন্য আমরা চেষ্টা করব। নয়টি রোজা রাখার চেষ্টা করব। বিশেষভাবে নয় তারিখের রোজা আমরা যেন অবশ্যই রাখি। আল্লাহর নবী আরেকটি কাজ আমাদেরকে দিয়েছেন

من رآی هلال ذي الحج وأراد أن يضحي فلا يأخد من ظفره ولا من شعره

যিলহজ্জের চাঁদ কেউ যদি দেখ, এবং সে কোরবানী করার নিয়ত করেছে, (কোরবান করবে) সে যেন তার নখ না কাটে, তার শরীরের কোন চুল না কাটে। তাহলে আমরা যারা কোরবান করার ইচ্ছা করেছি এই হাদীসের আলোকে বুঝা যায় যিলহজ্বের চাদ উদয় হওয়ার আগে আগে চুল নখ ইত্যাদি কেটে নেব। কিন্তু চাদ উঠার পর থেকে কোরবানি করা পর্যন্ত, পশুর গলায় ছুরি দেওয়া পর্যন্ত নখ, চুল কাটা যাবেনা। কেউ যদি এ নিয়ম পালন করে আল্লাহ রাব্বল আলামীন তাকেও কোরবানির ছোয়াব দিবেন। আবার হাজীদের সামঞ্জস্য গ্রহণ করার কারণে আল্লাহ রাব্বল আলামীন তাকে বিশেষ ছোয়াব দান করবেন। কাজেই এটি খুব সহজ ব্যাপার, কঠিন কোন ব্যাপার নয়। সুতরাং আমরা পূর্ব থেকেই প্রস্তুতি গ্রহন করব যাতে এইদিন গুলোতে কোন প্রকার
পশম কিংবা নখ কাটতে না হয়।

হযরত ইবনে ওমর (রা.) রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পেলেন যে, একজন মহিলা তার ছেলের চুল কাটছে। তখন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) মহিলাকে বল্লেন : হে। মহিলা, তুমি যদি তোমার ছেলের চুল এখন না কেটে আর কয়টা দিন অপেক্ষা করতে কোরবানির পর কাটতে, তাহলে তোমার জন্য খুবই উত্তম হত, তুমিও ছোয়াব পেতে এবং তোমার সন্তানও ছোয়াব পেত। তুমি কেন আগে কাটলে। জেনে রাখা দরকার যে, এটা ফরজ, ওয়াজিব আমল নয় বরং মুস্তাহাব। কাজেই আমরা নিজেরাও এ রীতি অনুসরণ করব এবং নিজের সন্তানের ব্যাপারেও খেয়াল রাখব। এই ঘটনা ইমাম হাকেম তার
মুস্তাদরেক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।

ইমাম হাকেম, বোখারী এবং মুসলিমের অনুকরণে একটি হাদীসের কিতাব রচনা করেছেন। বোখারী ও মুসলিম যেমন বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থ অনুরূপ ইমাম হাকেমর কিতাবও বিশুদ্ধ। সারাংশ কথা হল, আগামী দশ দিন এবং দশ রাত এবাদতের বিশেষ কর্মসূচী নিয়ে আমাদের কাছে আসছে। আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল যেভাবে এই দিনগুলোকে অতিবাহিত করতে বলেছেন, সে ভাবে অতিবাহিত করার জন্য আমরা সচেষ্ট হব। 

রাতের বেলায় আমরা। এবাদত করব, বেশি বেশি তাকবীর, তাহলীল, তাহমীদ বলব। তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার চেষ্টা করব এবং এশা, ফজর জামাতে আদায় করার চেষ্টা করব। দিনের বেলায় রোজা রাখার চেষ্টা করব। নয় তারিখ বিশেষ ভাবে রোজা রাখার চেষ্টা করব। নয় তারিখ থেকে প্রতিটি নামাজের পর আমরা তাকবীর বলব, আল্লাহ রাব্বল আলামীন এই দশ দিন এবাদত করে আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই দশ দিনকে পুরা বৎসরের শ্রেষ্ট দিন বলেছেন, এইদিনগুলোতে সবচেয়ে বেশি এবাদত করা যায়। কাজেই বেশি এবাদত করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। মনে রাখতে হবে এই দিনগুলা যদি চলে যায় আর ফিরে আসবেনা।  জীবনের একটি অংশ চলে যাচ্ছে। কাজেই বুদ্ধিমান, চতুর , প্রজ্ঞাবান তারাই যারা দিনগুলোকে অত্যন্ত সুবর্ণ সুযোগ মনে করে উপকৃত হয় এবং মৃত্যুর পরের জন্য পুঁজি সংগ্রহ করবে।

কুরআন সুন্নাহ এর আলোকে জিল-হজ্জ্ব মাসের বিশেষ ১০ টি বৈশিষ্ট।

১। হজ্জে বাইতুল্লাহ অর্থাৎ হজ্জ্ব করতে যাওয়া । মক্কা শরীফে বাইতুল্লাহ ত্বওয়াফ , রাওযায় আতহার যিয়ারত কার, ছফা-মারওয়া চায়ী করা। 

২। আল্লাহর নৈকট্ট অর্জনের লক্ষে হালাল অর্থ দিয়ে কুরবানী করা। 

৩। ঈদুল আযহা অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ থেকে মেহমানদারীর ব্যবস্থা। 

৪। তাকবীরে তাশরীকের আমল অর্থাৎ জিল-হজ্জ্ব মাসের ৯ তারিখ ফজর  থেকে ১৩ তারিখ আসর পর্যন্ত তাকবীর বলা। 

৫। আশ্-রায়ে জিল-হাজ্জাহ এর রোজা অর্থাৎ এমাসের ১ – ৯ তারিখ পর্যন্ত  রোজা রাখা ।

৬। বিশেষ করে ইয়াওমে আরাফার রোজা অর্থাৎ ৯ তারিখের রোজা। 

৭। এই মাসে চারদিন রোজা রাখা নিষেধ। অর্থাৎ ১০,১১,১২,১৩ এই তারিখ গুলোতে রোজা রাখা নিষেধ। 

৮। জিল-হজ্জ্ব মাসের প্রথম দশ রাত্রির ফযিলত। 

৯। কুরবানী দেনেওয়ালাদের জন্য নখ, চুল না কাটা। 

১০। গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য দোয়া ও ইস্তেগফারে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া। 

 

 সমাপ্ত।

Thank you for reading the post.

1 thought on “জিলহজ্বের প্রথম দশ দিন ও ইসলামের কর্মসূচী”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top