ইফতারের দোয়া, তারবির দোয়া ও নিয়ত, তারাবির মুনাজাত, রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ সহ।

Table of Contents

ইফতারের দোয়া, তারবির দোয়া ও নিয়ত, তারাবির মুনাজাত, রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ সহ
তারাবির দোয়া ফটো

রমজান মাস দোয়া কবুলের মাস। “একে সাইয়িদুশ শুহুর” বা সকল মাসের সেরা মাস বলা হয়। এ মাসের সেহরি, ইফতারের দোয়া, তারাবির নামাযের দোয়া সহ বেশি বেশি দোয়া ও নেক আমল করা অনেক বেশি ফজিলতপূর্ণ।

রেমযানে রোজাদারদের প্রত্যেক ইবাদতের সওয়াব কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়, সাত থেকে সাতশ একে সত্তর এক টাকা দান করলে সত্তর টাকা দান করার সাওয়াব পাওয়ার,জীবনের গুনাহ মাফ করে জাহান্নাম থেকে মুক্তির, রাইয়ান নামক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ ও আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কারের ঘোষণা রয়েছে। তাই রমজান মাসের রোজাকে ঘিরে সেহরি ইফতারের দোয়া তারাবির নিয়ত দোয়া ও মোনাজাত সম্পর্কে সকল তথ্য জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সাহরির নিয়ত

সাহরি হলো রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিকের পূর্বে শেষ রাতের খাবার বা পানাহার। সাহরির জন্য আলাদা কোনো নিয়ত বা দোয়া নেই। বরং সাহরি করার পূর্বে খাবারের দোয়া পড়া সুন্নত।

খাবার শুরুর দোয়া

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) খাবার শুরু করার পূর্বে এই দোয়া পড়তেন-

بِسْمِ اللّٰہ وَ عَلٰی بَرَکَۃ، اللّٰہِ
উচ্চারণ:- বিসমিল্লাহি ওয়া-আলা বারাকাতিল্লাহ্ ।
অর্থ:- আল্লাহ তায়ালার নামে খাবার খাওয়া শুরু করছি এবং মহান আল্লাহ বরকত প্রার্থনা করছি। (সাআলাবী)

রোজার নিয়ত

নিয়ত অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত। নিয়ত পড়ার চেয়ে অন্তর থেকে নিয়ত করা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে রোজার নিয়ত হিসেবে একটি আরবি নিয়ত প্রচলিত আছে। যদিও কোন হাদিস ও ফিকাহের কিতাবে এই নিয়ত বর্ণিত হয়নি। তবে চাইলে নিয়তটি পড়তে পারেন।
রোজার আরবি নিয়ত
আরবি নিয়ত:

نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم

রোজার নিয়তের বাংলা উচ্চারণ

নাওয়াইতু-আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আন-তাস সামিউল আলিম।

রোজার আরবি নিয়তের অর্থ

হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের আপনার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব, তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

রোজার নিয়ত বাংলায়

অন্তর থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যেকোনো ভাষায় নিয়ত করা যায়। নিয়ত হবে একান্তই আপনার অন্তরের ভাষায়। রোজার নিয়ত বাংলায় এভাবে করতে পারেন- “হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্য আজ রোজা রাখার নিয়ত করলাম”।

ইফতারের দোয়া

সারাদিন মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখার পর ইফতার শুরুর পূর্বে এই দোয়া পড়তে হয়:-
আরবি:-

 

بسم الله اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ بِرَحْمَتِکَ یَااَرْحَمَ الرَّاحِمِیْن

ইফতারের দোয়ার বাংলা উচ্চারণ

আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফ-তারতু বিরাহ-মাতিকা ইয়া আর-হামার রাহিমিন।

ইফতারের দোয়ার অর্থ

হে আল্লাহ! আমি আপনারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং আপনারই দেয়া রিজিকের মাধ্যমে ইফতার করছি। ( আবু দাউদ, হাদিস: ২৩৫৮)

তারাবি নামাজের নিয়ত

প্রতিটি আমলের কবুল হওয়ার পিছনে নিয়ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নিয়ত হিসেবে মানুষের অন্তরের অবস্থাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে আরবিতে নির্ধারিত নিয়ত পাঠ করা আবশ্যকীয় নয়। প্রতিটি আমলেরই নিয়ত রয়েছে। নিয়ত মনে মনে বাংলাতেও করতে পারবেন। বাংলাদেশে তারাবি নামাজের নিয়ত হিসেবে আরবি নিয়তটি হলো:

আরবি:- نويت أن أصلي لله تعالى ركعتين صلاة التراويح سنة رسول الله متوجها إلى جهة الكعبة الشريفة الله اكبر

তারাবির নামাজের নিয়ত বাংলা উচ্চারণ:

নাওয়াইতু-আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা, রাকা-আতাই সালাতিত তারাবি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তায়ালা, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার।

তারাবির নামাজের নিয়ত বাংলা অর্থ:

আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাআ’ত তারাবিহ সুন্নাত নামাজ আল্লাহর জন্য আদায়ের নিয়ত করছি, আল্লাহু আকবার।

যদি কোন ব্যক্তি আরবিতে তারাবি নামাজের নিয়ত করতে না পারে তাহলে বাংলাতে নিয়ত করবে। এক্ষেত্রে এইভাবে নিয়ত করতে পারেন-

“আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কেবলামুখী হয়ে তারাবির দুই রাকাত সুন্নত নামাজ (জামাত হলে- এই ইমামের পেছনে) আদায় করছি, আল্লাহু আকবার।

তারাবি নামাজ পড়ার নিয়ম

তারাবি নামাজ এশারের ফরজ নামাজ পড়ার পর পড়তে হয়। তারাবি নামাজ দুই রাকাত দুই রাকাত করে পড়তে হয়। অন্যান্য নামাজের মত তারাবি নামাজের নিয়ম একই। প্রথমে নিয়ত করে দুই রাকাত তারাবির নামাজ আদায় করে সালাম ফিরিয়ে আবার দুই রাকাত পড়বে।

এভাবে চার রাকাত আদায় করার পর একটু বিশ্রাম নিবে। বিশ্রামের সময় বিভিন্ন তাসবিহ তাহলিল পড়া, দোয়া, দরূদ পাঠ ও জিকির আজকার করা উত্তম। তারপর আবার দুই রাকাত করে আলাদা আলাদা তারাবি নামাজ আদায় করবে।

তারাবির নামাযের দোয়া

তারাবি নামাজে প্রতি চার রাকাত পর পর হালকা বিশ্রাম নেওয়ার সময় তাসবিহ তাহলিল পড়া, দোয়া, দরূদ পাঠ ও জিকির আজকার করা উচিত। এ সময় পবিত্র কোরানে ও হাদিসে বর্ণিত বিভিন্ন দোয়া পড়তে পারবেন। বিশিষ্ট আলেমদের মতে তারাবি নামাজের চার রাকাত পর পর কোরআন, হাদিসে বর্ণিত দোয়া, তওবা, ইসতেগফার পড়াই উত্তম।

তবে আমাদের দেশে এ সময়ের একটি নির্ধারিত দোয়ার প্রচলন রয়েছে। দেশের প্রায় সকল মসজিদেই এই দোয়াটি পড়া হয়।

তারাবি নামাজের আরবি দোয়াটি হলো:

سُبْحانَ ذِي الْمُلْكِ وَالْمَلَكُوتِ سُبْحانَ ذِي الْعِزَّةِ وَالْعَظْمَةِ وَالْهَيْبَةِ وَالْقُدْرَةِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْجَبَرُوْتِ سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْحَيِّ الَّذِيْ لَا يَنَامُ وَلَا يَمُوْتُ اَبَدًا اَبَدَ سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّنا وَرَبُّ المْلائِكَةِ وَالرُّوْحِ

তারাবির নামাজের দোয়া বাংলা উচ্চারণ

“সুবহানা জিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুবহানা জিল ইজ্জাতি ওয়াল আঝমাতি ওয়াল হায়বাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল ঝাবারুতি। সুবহানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা ইয়ানামু ওয়া-লা ইয়ামুত আবাদান আবাদ; সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালা-য়িকাতি ওয়ার রূহ।”

তারাবির নামাজের দোয়া বাংলা অর্থ

আল্লাহ পবিত্রময় সাম্রাজ্য ও মহত্ত্বের মালিক। তিনি পবিত্রময় সম্মান মহত্ত্ব ও প্রতিপত্তিশালী সত্ত্বা। ক্ষমতাবান, গৌরবময় ও প্রতাপশালী তিনি পবিত্রময় ও রাজা-ধিরাজ যিনি চিরঞ্জীব, কখনো ঘুমায় না এবং চির মৃত্যুহীন সত্ত্বা। তিনি পবিত্রময় ও বরকতময় আমাদের প্রতিপালক, ফেরেশতাকুল এবং জিব্রাইল (আঃ)- এর প্রতিপালক।

তারাবি নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে এই দোয়াটি পড়া বাধ্যতামূলক নয়। অনেকেই মনে করেন তারাবি নামাজের সময় এই দোয়া না পড়লে নামাজ পরিপূর্ণ হয় না। কিন্তু প্রকৃত অর্থে, তারাবি নামাজ বিশুদ্ধ হওয়া বা না হওয়ার সাথে এই দোয়ার কোন সম্পর্ক নেই। এ সময় আপনি চাইলে অন্যান্য জিকির আজকার ও দোয়া পড়তে পারেন।

তারাবি নামাজের মোনাজাত

রমজান মাসে বেশি বেশি দোয়া করা আমাদের সকলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। তারাবি নামাজে ৪ রাকাত পরপর ও এবং নামাজের শেষে আমরা বিভিন্ন দোয়া পড়ে থাকি। তবে তারাবি নাম শেষ করার পর আমাদের দেশে একটি দোয়া/ মোনাজাত প্রচলিত রয়েছে। যদিও এই দোয়াটি পড়া বাধ্যতামূলক নয়, তবে আপনি চাইলে মোনাজাতে এটি পড়তে পারেন।

আরবি মোনাজাত:- اَللَهُمَّ اِنَّا نَسْئَالُكَ الْجَنَّةَ وَ نَعُوْذُبِكَ مِنَ النَّارِ يَا خَالِقَ الْجَنَّةَ وَالنَّارِ- بِرَحْمَتِكَ يَاعَزِيْزُ يَا غَفَّارُ يَا كَرِيْمُ يَا سَتَّارُ يَا رَحِيْمُ يَاجَبَّارُ يَاخَالِقُ يَابَارُّ – اَللَّهُمَّ اَجِرْنَا مِنَ النَّارِ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ يَا مُجِيْرُ- بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرَّحِمِيْنَ

তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলা উচ্চারণ

“আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউ-জুবিকা মিনান্নার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান-নার। বিরাহ্-মাতিকা ইয়া আজিজু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া জাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্র। আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনান্নার। ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজিরু, ইয়া মুজির। বিরাহ-মাতিকা ইয়া আরহামার্ রাহিমিন।”

তারাবির নামাজের মোনাজাত বাংলা অর্থ

পবিত্রতা ঘোষণা করছি তাঁর,, যিনি ইহজগৎ, ফেরেশতা ও জগতের প্রভু, সেই আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করছি যিনি মহিমাময় বিরাট, ভীতিপূর্ণ, শক্তিময়, গৌরবময় এবং সর্ববৃহৎ। আমি সেই প্রতিপালকের গুণগান করছি, যিনি চিরঞ্জীব, যিনি কখনও নিদ্রা যান না এবং যার কখনও মৃত্যুবরন করবে না। তিনি পুত-পবিত্র। তিনিই আমাদের পালনকর্তা, ফেরেশতাকূল এবং আত্মা-সমূহের পালনকর্তা। আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নাই, আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমরা আপনার কাছে বেহেশত চাচ্ছি এবং দোযখ থেকে মুক্তি চাচ্ছি। হে! সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াবান।

তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল?

রোজা পালনকারী এবং যাদের উপর রোজা ফরজ হয়েছে তাদের জন্য তারাবি নামাজ পড়া সুন্নত। মহানবী (সাঃ) তার জীবদ্দশায় তারাবি নামাজ আদায় করেছেন। পরবর্তীতে সাহাবায়ে কেরাম রমজানে এই নামাজ আদায় করতেন। তাই তারাবি নামাজ আদায় করা সুন্নত।

রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন- তোমরা আমার সুন্নতকে আঁকড়ে ধরো এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরো। অতঃপর তার উপর অটুট থাকো।

তারাবির নামাজ কত রাকাত?

বিভিন্ন ওলামায়ে কেরামদের মতে তারাবির নামাজ ৮ রাকাত, ১২ রাকাত নাকি ২০ রাকাত এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। আমাদের দেশে সাধারণত ২০ রাকাত তারাবি নামাজ পড়া হয়।

মহানবী (সাঃ) রমজান মাসে বেশি বেশি আমল করতে উৎসাহিত করেছেন। তাই সেই সময়কালে সাহাবীগণ ২০ রাকাত সালাত আদায় করতেন। সাহাবীরা নামাজে শতাধিক আয়াতবিশিষ্ট সুরাসমূহ পড়তেন এবং দীর্ঘক্ষণ কিয়ামরত অবস্থায় থাকতেন। তাই কোন ওজর না থাকলে ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায় করা উত্তম। আর হাদীস দ্বারা এটাই প্রমানিত।

শেষকথা

রমজান মাসে নেক আমলের সাওয়াব ৭০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। তাই সেহরি ইফতারের দোয়া তারাবির নামাযের দোয়া ও নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আমল করার চেষ্টা করবো। নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করবো।

Thank you for reading the post.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top