দুই ঈদের সুন্নাত এবং আদব:
ঈদ হলো ইসলামী পরিভাষা। ইহা মুসলিম জাতীর বড় একটি ধর্মীয় উৎসব। ঈদ মুসলিম জাতীর সংস্কৃতি- এ কথাটা আগে যুক্ত করে নিতে হবে, এটি ইসলামের দেওয়া সংস্কৃতি। সুতরাং ইসলামী মূল্যবোধের আলোকেই একে বুঝতে হবে এবং ইসলাম ও শরীয়তের শেখানো পদ্ধতিতেই এর উদ্যাপন করতে হবে; নিজেদের মনগড়া চিন্তা-চেতনার আলোকে নয়, কিংবা শরীয়তের বিধিনিষেধ বিবর্জিত বস্তুবাদী ও ভোগবাদী মানসিকতা নিয়ে নয়।
– عَنْ أَنَسٍ رض: قال قَدِمَ النَّبِيُّ ﷺ مِنَ الْمَدِيْنَةَ وَلَهُمْ يَوْمَانِ يَلْعَبُوْنَ فِيْهِمَا فَقَالَ مَاهٰذَانِ الْيَوْمَانِ قَالُوْا كُنَّا نَلْعَبُ فِيْهِمَا فِي الْجَاهِلِيَّۃِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ اللهَ قَدْ اَبْدَلَکُمْ بِهِمَا خَیْرًا مِنْهُمَا يَوْمَ الْأَضْحٰی وَیَوْمَ الْفِطْرِ – (رواه ابو داؤد)
অনুবাদঃ হযরত আনাস (রাঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করিলেন, তখন তাহাদের অর্থাৎ মদিনাবাসীদের দুইটি দিন নির্ধারিত ছিল, যেই দিনগুলিতে তাহারা খেলাধুলা ও রঙ্গতামাশা করিত, হুজুর (স) লোকদিগকে জিজ্ঞাসা করিলেন, তোমাদের এই দুইটি দিন কিরূপ? লোকেরা বলিল, আমরা জাহিলিয়াত যুগে এই দুই দিনে খেলাধুলা ও রঙ্গ তামাশা করিতাম। তখন রাসূলুল্লাহ (স) বলিলেন আল্লাহ তায়ালা তোমাদের এই দিনদ্বয়ের পরিবর্তে উহার চাইতেও উত্তম দুইটি দিন তোমাদিগকে দান করিয়াছেন। তাহা হইল ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতর। (সুতরাং তোমরা জাহেলী যুগের সেই দিন দুইটিকে বর্জন করিয়া এই দিন দুইটিকে পালন কর)। (আবু দাউদ)
👉 কুরবানীর জন্তু/পশু যবাই করার নিয়ম
প্রাসঙ্গিক আলোচনা:
অত্র হাদীস হইতে বুঝা যাইতেছে যে, জাহেলী যুগের কোন উৎসব-পর্ব পালন করা কিংবা অমুসলিমদের কোন শিয়ার বা প্রতীক আদর্শ রিতী-নিতী ইত্যাদি মুসলমানদের রক্ষা করা নিষেধ বরং হারাম। মুসলমানদের তাহাতে যোগদান করা জায়েয নাই। “ধর্ম যার যার উৎসব সবার” একথাটা বলা ভ্রান্ত। অবশ্যই শাওয়ালের চাঁদ দেখে ঈদুল ফিতর উদযাপন করবে। আর জ্বিল-হজ্জ্ব মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আযহা পালন করবে।
01. ঈদের দিন রাতে ইবাদতে গুরত্ব দেওয়া। অতিরিক্ত হাসি-তামাশা বা আনন্দ উল্লাস না করা ।
02. মিসওয়াক করা।
03. গুসল করা।
04. সুগন্ধি ব্যবহার করা।
05. সাধ্যানুযায়ী ভালো কাপড় পরিধান করা।
06. ঈদের দিন ঈদের নামাযের পূর্বে কোন নফল নামায না পড়া।
07. ঈদুল ফিতরে ঈদের নামাযের পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করা। (সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব)
08. ঈদুল ফিতরে ঈদের নামাযের পূর্বে কিছু মিষ্টি জাতিয় খাদ্য খাওয়া ।
09. ঈদুল আযহায় কোন কিছু না খেয়ে ঈদের নামায শেষ করে কুরবানীকৃত জন্তুর গোস্ত দিয়ে ঐ দিনের খানা খাওয়া।
10. ঈদের নামায ঈদের মাঠে পড়া।
11. ঈদগাহে তাড়াতাড়ি যাওয়া।
12. পায়ে হেটে যাওয়া। (ঈদের মাঠ বেশি দূরে হলে কোন মাধ্যমে যাওয়া)
13. তাকবির বলতে বলতে যাওয়া ( ঈদুল ফিতরে আস্তে আস্তে আর ঈদুল আযহায় জুরে জুরে বলা)
اَلّٰلہُ اَکْبَرُ اَلّٰلہُ اَکْبَرُ لَا اِلٰہَ اِلَّا الّٰلہُ وَالّٰلہُ اَکْبَرُ اَلّٰلہُ اَکْبَرُ وَلِلّٰہِ الْحَمْدُ
14. রাস্তার আদব মেনে চলা।
15. এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া আরেক রাস্তা দিয়ে আশা। বিকল্প রাস্তা না থাকলে ডান পাশদিয়ে আশা যাওয়া করা।
16. ঈদুল ফিতরের নামায দেরীতে পড়া এবং ঈদুল আযহার নামায তাড়াতাড়ি পড়া।
17. ঈদের নামাযে আযান ইক্বামত না দেওয়া।
18. খুৎবার সময় ইমাম মুসল্লিদের দিকে ফিরে দাড়ানো এবং মুসল্লিরা বসে থেকে ইমামের খুৎবাহ শোনা ওয়াজবি।
19. ইমাম খুৎবার মধ্যে সদকাতুল ফিতর এবং কুরবানির মাসআল-মাসায়িল বয়ান করা।
20. সম্ভব হলে ঈদগাহে কুরবানি করা।
21. যে স্থানে ঈদের নামায ওয়াজিব ঐস্থানে ঈদের নামাযের পূর্বে কুরবানী করা যায়েজ নেই।
22. ঈদের আনন্দ করতে গিয়ে গুনাহ যেন না হয় সে দিকে লক্ষ রাখা। রাসূল সাঃ বলিয়াছেন প্রত্যেক ক্বাওমের জন্য ঈদ আছে আর আমাদের ঈদ হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
Thank you for reading the post.