দান কারার ফযিলত ও আদব সমুহ
একটি ঘটনা
দান করলে যে বালা মুসিবত থেকে মুক্ত থাকা যায় সেরকম একটি ঘটনা এবার বর্ণনা করছি। হযরত সোলায়মান (আ.)-এর যুগের একটি ঘটনা। জনৈক এক ব্যক্তির বাড়ির পাশে ছিল একটি গাছ। সেই গাছে ছিল একটি পাখির বাসা।সেই বাসায় পাখিটি যখনই ডিম দিত তখনই লোকটি তা নিয়ে খেয়ে ফেলত। লোকটির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে একদিন পাখিটি হযরত সোলায়মান (আ.)-এর কাছে অভিযোগ করল। সোলায়মান (আ.) লোকটিকে ডেকে নিষেধ করে বললেন, আর কোনো দিন যেন ঐই পাখির ডিম সে না খায়। হযরত সোলায়মান( আ.)এর নিষেধ অমান্য করে লোকটি আবারো পাখির ডিম খেয়ে ফেলল।নিরুপায় হয়ে পাখিটি পুনরায় হযরত সোলায়মান (আ.)-এর কাছে অভিযোগ করল। সোলায়মান (আ.) এক জিনকে নির্দেশ দিলেন- লোকটি এবার যখন গাছে চড়বে, তখন খুব জোরে তাকে ধাক্কা দিয়ে যেন নিচে ফেলে দেয়, যাতে লোকটি আর কোনো দিন গাছে চড়তে না পারে। এর পর একদিন লোকটি পাখির ডিমের জন্য গাছে উঠতে যাবে, এমন সময় এক ভিক্ষুক এসে হাঁক দিল বাবা! কিছু ভিক্ষা দিন। তখন লোকটি প্রথমে ভিক্ষুককে এক মুষ্টি খাবার দান করল। তারপর শান্ত মনে গাছে থেকে ডিম নামিয়ে খেয়ে ফেলল। পাখিটি আবার সোলায়মান (আ.)-এর কাছে অভিযোগ করল। সোলায়মান (আ.) সেই জিনকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি নির্দেশ পালন করলে না কেন? তখন জিন জবাব দিল, আমি আপনার নির্দেশ পালন করার জন্য প্রস্তুত ছিলাম।
এমন সময় পূর্ব ও পশ্চিম থেকে দুজন ফেরেস্তা এসে আমাকে অনেক দূরে ফেলে দিল। সোলায়মান (আ.) বিস্মিত হয়ে এর কারণ জিজ্ঞেস করলেন, জিনটি বলল, আমি দেখলাম, লোকটি গাছে ওঠার আগে জনৈক ভিক্ষুককে এক মুষ্টি খাবার দান করল। সম্ভবত এর বরকতে আল্লাহপাক তাকে আসন্ন বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন। সোলায়মান (আ.) বললেন, হ্যাঁ সদকা বালা-মুসিবত দূর করে। এ কারণেই সে তখন মহাবিপদ থেকে বেঁচে গেছে। (তাযকেরাতুল আম্বিয়া)
দান প্রসঙ্গে কুরআনে বর্ণিত বরকত।
مَّثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللهِ كَمَثَلٍ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنبُلَةٍ مَاتَهُ حَبَّةٍ وَاللَّهُ يُضٰعِفُ لِمَن يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ ه
যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ। (সুরা বাকারা আয়াত – ২৬১)
হযরত ওসমান (রা.) এর ঘটনা
উপরোল্লেখিত আয়াতের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ একটি ঘটনা এবার বর্ণনা করবো। হযরত আবু বকর (রা.) এর খিলাফত কালে একবার দুর্ভিক্ষ সংঘটিত হয়। খাদ্যদ্রব্য একেবারেই দুর্লভ হয়ে পড়ে এবং মানুষের দুঃখ দুর্দশা চরম আকার ধারণ করে। সেই সময় হযরত ওসমান (রা.) এর প্রায় এক হাজার মন গমের একটি চালান বিদেশ হতে মদীনায় পৌঁছলো। শহরের কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী হযরত ওসমান (রা.) এর কাছে এলেন। তারা তাঁর সমস্ত গমের চালান ৫০% লাভে ক্রয় করার প্রস্তাব দিলেন। সেই সাথে তারা এটাও প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, তারা দুর্ভিক্ষ পীড়িত জনগণের দুর্দশা লাঘবের জন্যই এই গম ক্রয় করতে চান। হযরত ওসমান (রা.) বললেন, “তোমরা যদি আমাকে এক হাজার গুণ লাভ দিতে পারো, তবে আমি দিতে পারি। কেননা অন্য একজন আমাকে সাতশো গুণ লাভ দিতে চেয়েছেন।” ব্যবসায়ীরা বললো, “বলেন কি? চালান মদীনায় আসার পর তো আমরাই প্রথম এলাম আপনার কাছে। সাতশো গুণ লাভের প্রস্তাব কে কখন দিয়েছেন?” হযরত ওসমান বললেন, “এই প্রস্তাব আমি পেয়েছি আল্লাহর কাছ থেকে। আমি এই চালানের সমস্ত গম বিনামূল্যে গরীবদের মধ্যে বিতরণ করবো। এর বিনিময়ে আল্লাহ আমাকে সাতশো গুণ বেশি পূণ্য দিবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তখন হযরত ওসমান( রা.)কুরআনের সেই আয়াত তাদের স্মরণ করিয়ে দেন।
আলী রাঃ এর ঘটনা
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন –
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন :
যাকাত ও সদকা দেয়ার আদব সমুহ:
1। খুলূছে নিয়তে অর্থাৎ একনিষ্ঠ মনে সঠিক ভাবে সদকা দেওয়া। কারণ দুনিয়াবি কোন সুনাম সুখ্যাতির জন্য দিলে আল্লাহ কিয়ামতের দিন বলবে তুমি কি জন্য সদকা করেছ? আপনার জন্য । আল্লাহ বলবেন না তুমি এখন মিথ্যা বলতেছ তোমাকে দানশীল বলবে। আর তা বলা হয়েছে । আল্লাহ ফিরেশতাকে নির্দেশ দিবেন তাকে উপড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর:
2। যদি কোন অসুবিধা না থাকে তা হলে গোপনে দান করা। কেননা আল্লাহ তা’য়ালা কেয়ামতের দিন যে সাত ব্যাক্তিকে আরশের চায়াতলে আশ্রয় দিবেন তাদের মধ্যে একজন হলেন যারা দুনিয়াতে এমন গোপনে দান করেছে যে ডান হাত কি খরচ করেছে বাম হাতে জানে নাই।
3। যাকাত সদকার মাসআলা জেনে যাকাত-সদকা দেওয়া।
4। সামর্থ্যানুযায়ী বেশি মূল্যের পণ্য দিয়ে ফিতরা আদায়ের চেষ্টা করা।
5। কোটিপতি হতে মধ্যবর্তী সবাই সর্বনিম্ন ৭০ টাকা দিয়েই দায়মুক্ত হতে না চাওয়া।
6। যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পর দেরি না করা।
7। নফল সদকার আগে যাকাত আদায় করা।
8। হালাল মাল দ্বারা সদকা করা । কেনান রাসূল সা: বলেছেন আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র মাল থেকেই কবুল করেন?
لاَ یُقْبَلُ اللہ الّا الطّیّب –
9। উন্নত ভালো জিনিস সদকা করা।
لن تنالوا البرّ حتی تنفقوا مما تحبّون –
10। নিজের পচন্দনীয় জিনিস সদকা করা।
11। গরিব নিকটাত্বীয়দের আগে দেওয়া।
12। সঠিক অভাবীদের খোজকরে দানকরা।
13। অভাবীদের সাথে নম্র ব্যবহার করা।
14। অভাবীদের হাতপাতাতে অসন্তুষ্ট না হওয়া।
15। যথাসম্ভব খালিহাতে না ফিরানো।
16। দেয়ার মত কোন কিছু না থাকলে ভালো ব্যবহারে বিদায় দেয়া।
17। যে আল্লা তা’য়ালা ওয়াসিলা দিয়ে চায় তাকে খালি হাতে না ফিরানো।
18। দান করে খোঁটা না দেওয়া এবং তাকে কষ্ট না দেওয়া।
یَا ایُّھا الّذینَ آمنوا لا تُبْطِلوا صَدَقٰتِکم بالمنّ والاذی – بقر 263
অর্থঃ হে ইমানদার গন তোমরা তোমাদের সদাকাকে নষ্ট করোনা, খোঁটা ও কষ্ট দিয়ে।
19। দান ফিরত না লওয়া।
Thank you for reading the post.