রোযার ফজিলত ও রােজার দাবি কী?

Rozar Dhavi ki

 

Table of Contents

রোজার দাবী কী?

الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفرہ، ونؤمن به ونتوكل عليه، ونعوذ بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنيا، من يهده الله فلا مضلَّ لَهٗ ومن يُّضلل فلا هادي له، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له، وأشهد أنّ سيدنا وسَنَدنا ونبينا ومولانا محمدا عبده ورسوله صلى الله تعالى عليه وعلى آله وأصحابه وبارك وسلم تسليما كثيرا كثيرا – أما بعد : أعوذ بالله من الشيطان الرجيم ، بسم الله الرّحمن الرّحيم –  شهر رمضان الّذي أنزل فيه القرآن هدى لّلناس وبينات من الهدی والفرقان، فمن شهد منكم الشهر فليصمه ومن کان مریضا او علی سفر فعدۃ من ایام اخر – (سورة البقرة : ۱۸۰) أمن بالله صدق الله مولانا العظيم وصدق رسوله النّبي الكريم ونحن على ذٰالك من الشّٰهدين والشّٰكرين والحمد لله رب العالمين

বরকতের মাস: রমাযান মাস

(রমযানের পূর্বে এই আলোচনা লেখা শুরু হয়) কিছুদিন পরই পবিত্র রমজান  মাস শুরু হতে যাচ্ছে। এই মাসের ফযীলত আর বরকত সম্পর্কে জানে না, এমন মুসলমান নেই বললেই
চলে। আল্লাহ তাআলা এ মাস তার ইবাদত করার জন্য দান করেছেন। অজানা বহু রহমত আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাকে এ মাসে দান করেন। যেসব রহমতের কল্পনা আমি আর আপনি করতেও পারি না।
| এ মাসের মাঝে কিছু রহমত এমন, যেগুলো প্রত্যেক মুসলমানই জানে এবং আমলও করে। যেমন এ মাসে রোজা রাখা ফরজ, আর মুসলমানদের রোজা
রাখার তাওফীকও হয়ে যায়- আলহামদুলিল্লাহ। তারাবীহ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহএ বিষয়টি কোনো মুসলমানের অজানা নয়। আর তাতে শরিক হওয়ার সৌভাগ্যও তাদের ভাগ্যে জুটে যায়। যেমন হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে :  شَھْرٌ کَتَبَ اللّٰہ عَلَیْکُم صیَامَہٗ وَ سَنَنْتُ لَکُمْ قِیَامَہٗ – ইহা এমন একটি মাস যে মাসে দিনের বেলায় সিয়াম সাধনাকে ফরয করা হয়েছে আর রাতে তারাবীকে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ করা হয়েছে। কিন্তু এ মুহূর্তে আমি আপনাদের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে সাধারণত মনে করা হয়, রমজানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এ মাসে শুধু দিনের বেলা রোজা রাখা আর রাতে তারাবীহ পড়া ব্যাস, আর কোনো বৈশিষ্ট্য যেন এ মাসের জন্য নেই। নিঃসন্দেহে এ দুটি ইবাদত এ মাসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে কথা শুধু এ পর্যন্তই নয়; বরং প্রকৃতপক্ষে রমজান শরীফ আমাদের নিকট আরো কিছু প্রত্যাশা করে। 

কুরআন মজীদে আল্লাহ বলেন:

وما خلقت الجن والإنس إلا ليعبدون – (سورة الذاريات : 56)

অর্থাৎ- মানব ও জিন জাতিকে আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি। এ আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মৌলিক উদ্যেশ্য বর্ণনা করলেন এভাবে যে, তারা আল্লাহর ইবাদত করবে।

ফেরেশতাগণ কি যথেষ্ট ছিল না?

এখানে কিছু লোকে- বিশেষ করে নতুন হেদায়াতপ্রাপ্ত কিছু লোকে এসন্দেহ পোষণ করে যে, মানবসৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য যদি ইবাদত করাই হয়, তবে এ কাজের জন্য মানবসৃষ্টির প্রয়োজনই বা কী ছিল? এ কাজ তো দীর্ঘদিন যাবৎ ফেরশতাগণ সুচারুভাবেই আঞ্জাম দিয়ে আসছেন? তারা তো সর্বদাই আল্লাহ তাআলার ইবাদতে, পবিত্রতা বর্ণনায় এবং তাসবীহতে লিপ্ত ছিলেন। তাই তো আল্লাহ তাআলা যখন হযরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করার ইচ্ছা ফেরেশতাদের নিকট ব্যক্ত করলেন যে, অচিরেই আমি এরূপ মানব সৃষ্টি করছি, তখন ফেরশতারাও নির্দ্বিধায় বলেছিল, হে প্রভু! আপনি এমন জাতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছেন, যারা পৃথিবীতে ঝগড়া-ফ্যাসাদে লিপ্ত থাকবে। যারা পৃথিবীতে একে অপরের রক্ত ঝরাবে। আর ইবাদত, তাসবীহ, তাকদীস, সেটাতো আমরাই পালন করছি। বর্তমানেও কিছু প্রশ্নকারী প্রশ্ন তোলে, যদি মানবসৃষ্টির উদ্দেশ্য একমাত্র ইবাদত করাই হয়, তাহলে শুধু এ উদ্দেশ্যে মানবসৃষ্টির কোনো প্রয়োজন ছিল না। কারণ, কাজটি তো ফেরশতারা দীর্ঘদিন যাবৎ করেই আসছিল।

এটি ফেরেশতাদের কোনো কৃতিত্ব নয়।

নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার ফেরেশতারা তাঁর ইবাদত করে আসছিল। তবে তাঁদের ইবাদত আর মানুষের ইবাদতের মাঝে রয়েছে বিস্তর ফারাক বা পার্থক্য। কারণ, ফেরশতারা তাঁদের উপর আরোপিত ইবাদতের বিপরীত কোনো কিছু করতে পারে না। তাঁরা ইবাদত ছেড়ে দিতে চাইলেও ছাড়তে সক্ষম নয়। গুনাহ করার সম্ভাবনাটুকুও আল্লাহ তাআলা তাদের থেকে খতম করে দিয়েছেন। তাই তাদের ক্ষুধা লাগে না, পিপাসা অনুভূত হয় না, জৈবিক চাহিদা পূরণের ইচ্ছা জাগে না। এমনকি গুনাহ করার কুমন্ত্রণাও তাদের মাঝে উদিত হয় না। গুনাহ করতে চাওয়া কিংবা গুনাহের প্রতি হাত বাড়ানো তো অনেক দূরের কথা। এ কারণে তাদের ইবাদতের কোনো প্রতিদান বা সওয়াব আল্লাহ তাআলা রাখেননি। কারণ, গুনাহ করার যোগ্যতা না থাকার দরুন যদি তারা গুনাহ না করে- এটা তো তাদের বিশেষ কোনো কৃতিত্ব নয়। যেহেতু তাদের বিশেষ কোনো পূর্ণতা বা কৃতিত্ব নেই, সেহেতু তারা জান্নাতও পাবে না। প্রশ্নপত্রে যে প্রশ্নটা নেই আপনি যদি সে প্রশ্নের উত্তর দেন তাহলে আপনি কি নাম্বার পাবেন? না কখোনো না।

অন্ধ ব্যক্তির গুনাহ থেকে বেঁচে থাকায় ।
বিশেষ কোন কৃতিত্ব নেই।

মনে করুন, এক ব্যক্তি দৃষ্টিশক্তি থেকে বঞ্চিত, যে কারণে আজীবন সে কোনো ধরনের ফিল্মও দেখেনি, টিভিও দেখেনি, পরনারীর প্রতি দৃষ্টিও দেয়নি। এবার বলুন, এ গুনাহগুলো না করার মাধ্যমে তার বিশেষ কোনো কৃতিত্ব জাহির হয়েছে কি? কারণ, তার মাঝে তো গুনাহগুলো করার যোগ্যতাই নেই। কিন্তু আরেক ব্যক্তি, যার দৃষ্টিশক্তি সম্পূর্ণ সুস্থ, ইচ্ছে মাফিক সব কিছুই দেখতে পারে। দেখতে পারার এই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পরনারীর প্রতি দৃষ্টি দেয়ার ইচ্ছে জাগলে সাথে সাথে শুধু আল্লাহর ভয়ে দৃষ্টি অবনত করে নেয়।বাহ্যিক দৃষ্টিতে দুজনেই গুনাহ করেনি, তবুও উভয়ের মাঝে রয়েছে। আসমান-জমীন ব্যবধান। প্রথম ব্যক্তিও গুনাহ করেনি, দ্বিতীয় ব্যক্তিও গুনাহ করেনি, কিন্তু প্রথম ব্যক্তির
গুনাহ না করার মাঝে কোনো কৃতিত্ব নেই
; আর দ্বিতীয় ব্যক্তি গুনাহ না করার মাঝে অনেক কৃতিত্ব রয়েছে।

ইবাদত করার সাধ্য ফেরেশতাদেরও নেই।

সুতরাং ফেরেশতারা যদি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাবার না খান, তবে এটা কোনো বড় কিছু নয়। কারণ, তাদের তো ক্ষুধা-ই নেই, তাই খাবারেরও প্রযয়োজন নেই এবং না খাওয়ার মাধ্যমে কোনো সওয়াব নেই। কিন্তু মানুষ তো সৃষ্টি হয়েছে এসব প্রয়োজন নিয়েই। মানুষসে যত বড় মর্যাদাবানই হোক না কেন, এমনকি সবচেয়ে সম্মানজনক স্তর অর্থাৎ নবুয়তের মাকামে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিও খানা-পিনার প্রয়োজন থেকে মুক্ত নয়। তাইতো দেখা যায়, কাফিররাও আম্বিয়ায়ে কেরামকে এপ্রশ্নটিই করেছে

অর্থাৎ-ইনি কেমন রাসূল, যিনি খাবারও খান এবং বাজারেও চলাফেরা করেন।

 

তাহলে বােঝা গেল, খাবারের চাহিদা আম্বিয়ায়ে কেরামেরও ছিল। সুতরাং কারাে ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও যদি আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ পালনার্থে না খায়, তবে এটা অবশ্যই কৃতিত্বের দাবি রাখে। এ কারণেই ফেরশতাদের সম্বােধন করে। আল্লাহ তা’আলা বলেছিলেন, আমি এমন একদল জীব তৈরি করতে চাচ্ছি, যাদের ক্ষুধা অনুভূত হবে, পিপাসা নিবারণের প্রয়ােজন হবে, যাদের অন্তরে। জৈবিক চাহিদা জাগবে এবং গুনাহ করার সমূহ উপকরণও যাদের হাতের নাগালে থাকবে, কিন্তু যখন গুনাহ করার খেয়াল অন্তরে আসবে, তখনই তারা | আমাকে স্মরণ করবে। আমাকে স্মরণ করেই গুনাহ থেকে নিজেকে রক্ষা করবে। তখন তাদের এই ইবাদত ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার মূল্য আমার নিকট অনেক অনেক বেশি। তার প্রতিফল-প্রতিদান হিসেবে আমি তাদের জন্য | এমন জান্নাত তৈরি করে রেখেছি, যে জান্নাতের বিস্তৃতি আসমান ও জমীনসম; বরং তার চেয়েও বেশি। যেহেতু তার অন্তরে রয়েছে গুনাহ করার তীব্র আকাক্ষা, রয়েছে প্রবৃত্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষা, গুনাহ করার বিভিন্ন প্রকার উপকরণও তার সামনে বিদ্যমান। অথচ মানুষটি আমার ভয়ে, আমার বড়ত্বের কথা ভেবে গুনাহ হতে নিজ চোখকে হেফাজত করে, গুনাহর দিকে অগ্রসরমান কদমকে

গুটিয়ে নেয় এবং তার অন্তরে এই আশা যে, যেন আমার আল্লাহ আমার উপর। অসন্তুষ্ট না হন। এ ধরনের ইবাদত করার সাধ্য তাে ফেরেশতাদের নেই তাই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে এ ধরনের ইবাদত করার জন্যই।

مالهذا الرّسول يأكل الطعام ويمشي في الأسواق – (سورة الفرقان : ۷)

হযরত ইউসুফ (আ.)-এর মহত্ত্ব।

জুলাইখার সামনে হযরত ইউসুফ (আ.) যে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন, সেকথা কয়জন মুসলমানের অজানা। কুরআনে কারীমে বলা হয়েছে, জুলাইখা হযরত ইউসুফ (আ.)-কে গুনাহর প্রতি আহ্বান করেছিল। সে মুহূর্তে জুলাইখার ইচ্ছা ছিল গুনাহ করার আর হযরত ইউসুফ (আ.)-এর অন্তরও আকৃষ্ট হয়েছিল গুনাহের প্রতি। সে এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষ তো হযরত ইউসুফ (আ.)-এর সম্পর্কে অভিযোগ তোলে, তার দোষ ধরে থাকে অথচ আল-কুরআন আমাদেরকে বলতে চাচ্ছে যে, গুনাহ করতে মনে চাওয়া সত্ত্বেও শুধু আল্লাহ তাআলার ভয়ে, তাঁর বড়ত্বকে সামনে রেখে ওই গুনাহটি তিনি করেননি; বরং তিনি তো আল্লাহ তাআলার হুকুমের সামনে মাথানত করে দিয়েছিলেন।

হযরত ইউসুফ (আ.)-এর অন্তরে যদি গুনাহ করার ইচ্ছা না জাগত, গুনাহ করার যোগ্যতাইনা থাকত, যদি গুনাহ করার আকাঙ্ক্ষাই তার না থাকত, তবে হাজারবার গুনাহের প্রতি জুলাইখার ডাক আর হযরত ইউসুফ (আ.)-এরও বেঁচে থাকার মাঝে বিশেষ কোনো মহত্ত্ব বা কৃতিত্ব থাকত না। মহত্ত্ব তো এখানেই যে, গুনাহর প্রতি তাঁকে ডাকা হচ্ছিল, পরিবেশও ছিল মনঃপূত, অবস্থাও সম্পূর্ণ অনুকুলে, অন্তরও চাচ্ছিল, এসব কিছু বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও তিনি আল্লাহ তাআলার হুকুমের সামনে মাথা নত করে দিয়ে বলেছিলেন …আমি আল্লাহ তাআলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এটাই তো ইবাদত, যার জন্য আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।

আমাদের জীবন বিক্রিত পণ্য:

চাই মানবসৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য যখন ইবাদত করা‘, তখন তো তার দাবি।হচ্ছে, মানুষ জন্মের পর থেকে সকাল-সন্ধ্যা শুধুই ইবাদত করবে, অন্য কাজ করার অনুমতি তার জন্য না থাকাই উচিত ছিল। সুতরাং আল-কুরআনে অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে

إن الله اشتري من المؤمنين أنفسهم وأموالهم بأنّ لهم الجنة

অর্থাৎ- ‘আল্লাহ তাআলা মু’মিনদের জান-মাল খরিদ করে নিয়েছেন এবং বিনিময় হিসেবে জান্নাত নির্দিষ্ট করেছেন।’

সুতরাং আমাদের জীবন একটি বিক্রিত পণ্য। যে প্রাণ নিয়ে আমরা বসে রয়েছি, সেটা প্রকৃতপক্ষে আমাদের নয়। আমাদের বিক্রিত এ পণ্যটির মূল্যও তো নির্ধারিত। তাহলে যে প্রাণটি নিজেদের নয়, সে প্রাণের দাবি তো ছিল- এই প্রাণ-শরীর আল্লাহ তাআলার ইবাদত ছাড়া অন্য কোনো কাজে নিয়োজিত না হওয়া। অতএব, যদি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হতো যে, রাত-দিন সেজদায় পড়ে থাক, ‘আল্লাহ-আল্লাহকর; অন্য কোনো কাজের অনুমতি নেই। এমনকি উপার্জনেরও অনুমতি নেই, খাবারেরও অনুমতি নেই, তাহলে এ হুকুমটি কিন্তু ইনসাফের পরিপন্থী হতো না। কারণ, আমরা তো সৃষ্টিই হয়েছি

একমাত্র ইবাদত করার জন্য। তাই-

 

 এমন ক্রেতার জন্য কুরবান হই।

এমন ক্রেতার জন্য কুরবান হওয়া উচিত, যে ক্রেতা আমাদের জান-মাল খরিদ করে তার যথাযযাগ্য মূল্যও দিয়ে দিয়েছেন। অর্থাৎ মূল্যস্বরূপ যিনি জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। অন্যদিকে তিনি আমাদেরকে অনুমতি দিয়ে দিলেন; খাও, পান কর, কামাই কর, দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্যও কর, তবে শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে অমুক অমুক বিষয় থেকে বেঁচে থাক। অবশিষ্ট সময়ে যেমন চাও তেমন কর।এগুলো তো আল্লাহ তাআলার করুণা এবং তার বড়ত্বেরই প্রমাণ।

এ মাসে মূল লক্ষ্যপানে ফিরে আস।

কিন্তু, অবশিষ্ট সব কিছু জায়েয করার ফলাফল কি হয়- আল্লাহ তাআলাও জানতেন যে, মানুষ যখন দুনিয়াবি কাজ-কারবার ও ধান্দায় ব্যস্ত হয়ে যাবে, তখন ধীরে ধীরে তাদের অন্তরে গাফলতির পর্দা পড়ে যাবে এবং এক সময় তারা দুনিয়াবি কাজ কারবারে কিংবা ধান্দায় হারিয়ে যাবে। তাই এহেন গাফলতিকে সময়ে সময়ে দূরীভূত করার জন্য আল্লাহ তাআলা কিছু সময় নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। মাহে রামাযানসেই নির্ধারিত সময়ের একটি। কারণ, এগার মাস তাে আপনি লিপ্ত ছিলেন ব্যবসায়, কৃষিকাজে, চাকরিতে, দুনিয়ার সমূহ কাজকারবারে, ধান্দায়, জীবিকার অন্বেষায় কিংবা হাসি-তামাশায়। যার ফলে অন্তরে গাফলতির পর্দা পড়ে যাচ্ছিল। এজন্য আল্লাহ তাআলা পূর্ণ একমাস নির্ধারিত করে দিয়েছেন, যাতে এ মাসে তোমরা সৃষ্টির মূল লক্ষ্যপানে ফিরে আসতে পারো। অর্থাৎ ইবাদতের দিকে, যার জন্য তোমাদেরকে

পৃথিবীতে প্রেরণ করা হয়েছে। সুতরাং এ মাসে আল্লাহ তাআলার ইবাদতে আত্মনিয়োগ
কর। এগার মাসব্যাপী কৃত গুনাহগুলো মাফ করিয়ে নাও। হৃদয়ের কার্যকারিতার উপর যেসব ময়লা জমাট বেঁধেছে
, সেগুলো ধুয়ে-মুছে ছাফ করে ফেলো। গাফলতির যে পর্দা অন্তরে পড়েছে, তা দূর করে দাও-এ সকল উদ্দেশ্যেই তো আল্লাহ তাআলা মাসটি নির্ধারিত
করেছেন।

রামাযানশব্দের অর্থ কি আর:

আমরা রামাযানশব্দটির মীমঅক্ষর সাকিনের সাথে ভুল উচ্চারণ করে থাকি। সঠিক শব্দ হচ্ছে-রামাযানঅর্থাৎ যবরবিশিষ্ট মীম‘- এর সাথে। রামাযানশব্দটির অর্থ অনেকে
অনেকভাবে করেছেন। মূলত আরবি ভাষায় শব্দটির অর্থ-
দগ্ধকারী‘, ‘দাহনকারী‘, ‘জ্বালানি ইত্যাদি।

মাসটি এই নামে নামকরণের কারণ হচ্ছে- সর্বপ্রথম যখন এ মাসের নামকরণ
করা হচ্ছিল
, সে বছর এ মাসে প্রচণ্ড গরমের মৌসুম ছিল, তাই মানুষ এ মাসের
নাম
রামাযানরেখে দিয়েছে।

গুনাহসমূহ মাফ করিয়ে নাও:

তবে ওলামায়ে কেরাম বলেন, মাসটিকে রামাযাননামে আখ্যায়িত করার কারণ হচ্ছে, এ মাসে আল্লাহ তাআলা স্বীয় রহমত ও ফজলে বান্দার সকল গুনাহ জ্বালিয়ে দগ্ধ করে দেন। এ উদ্দেশ্যেই আল্লাহ তাআলা মাসটি নির্ধারণ করেছেন। এগার মাসব্যাপী দুনিয়াবি কাজ-কারবার এবং ধান্দায় ব্যস্ত থাকার ফলে অন্তর গাফলতির পর্দায় ছেয়ে গিয়েছিল। ওই দিনগুলোতে যেসব গুনাহ হয়েছে সেগুলো আল্লাহ তাআলার দরবার থেকে মাফ করিয়ে নিন। গাফলতির পর্দা অন্তর হতে সরিয়ে নিন, যেন জীবনের নব অধ্যায়ের সূচনা হয়।

তাই তো কুরআন মজীদে বলা হয়েছে:

يا أيها الّذين أمنوا كتب عليكم الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلكم تتقون

(سورة البقرة : ۱۸۳)

অর্থাৎ- হে ঈমানদারগণ! পূর্ববর্তী উম্মতের মতো তোমাদের উপরও রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।

সুতরাং মাহে রামাযানের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, বছরব্যাপী ঘটে যাওয়া গুনাহগুলো মাফ করিয়ে নেয়া, অন্তর থেকে গাফলতির পর্দা সরিয়ে নেয়া এবং অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি করা।যেমনিভাবে একটি যান্ত্রিক মেশিন অল্পসময় ব্যবহার করার পর পরিষ্কার করতে হয়, সার্ভিসিং করতে হয়, তেমনিভাবে নানা গুনাহে জর্জরিত মানবজাতির সার্ভিসিং করার লক্ষ্যে, তাদেরকে পরিচ্ছন্ন করার লক্ষ্যে আল্লাহ তাআলা রামাযাননামক মাসটি নির্ধারণ করেছেন। যেন তারা স্বীয় জীবনকে এমাসেই পরিশুদ্ধ করে নতুন রূপে সাজিয়ে নেয়।

এ মাসে ঝামেলামুক্ত থাকুন:

অতএব, শুধু রোজা রাখবে কিংবা তারাবীহ এতটুকুতেই কথা শেষ হয়ে যায় না। যেহেতু এগার মাসব্যাপী মানুষ জীবনের বিভিন্ন ধান্দায় ব্যস্ত ছিল, তাই এ মাসকে সকল ব্যস্ততা থেকে মুক্ত রাখতে হবে।এমাস তো সৃষ্টির মৌলিক লক্ষ্যপানে ফিরে আসার মাস। তাই এ মাসের পুরো সময় বা অধিকাংশ সময় কিংবা যত বেশি সময় সম্ভব হয় আল্লাহ তাআলার ইবাদতের মধ্য দিয়ে কাটাতে হবে। এ লক্ষ্যে শুরু থেকেই সকলের প্রস্তুত থাকা উচিত।রামাযানের পূর্বেই প্রোগ্রাম সাজিয়ে রাখা উচিত।

মাহে রামাযানকে স্বাগতম জানানোর সঠিক পদ্ধতি:

বর্তমানে মুসলিম বিশ্বে একটি প্রথা ছড়িয়ে পড়েছে। যে প্রথাটির সর্বপ্রথম উদ্ভব হয়েছিল আরববিশ্ব বিশেষত মিসর এবং সিরিয়া থেকে। অতঃপর ধীরে ধীরে তা অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের দেশেও তা এসে গেছে। প্রথাটি হচ্ছে, ‘স্বাগতম মাহে রামযাননাম দিয়ে বিভিন্ন স্থানে কিছু ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এটি সাধারণত রমযানের দু-তিন দিন পূর্বে হয়ে থাকে।সেখানে কুরআনখানি, ওয়াজ, আলোচনা ইত্যাদি করা হয়। উদ্দেশ্য, মানুষকে একথা জানানো যে, আমরা পবিত্র মাহে রামাযানকে স্বাগত জানাচ্ছি, তাকে খোশ আমদেদবলছি।

এধরনের জযবা তো খুবই ভালো। তবে এ ধরনের জ্যবাই এক সময় বিদআতের রূপ ধারণ করে। অনেক স্থানে আজ এ বিদআত আরম্ভও হয়েছে। তাই বলতে চাচ্ছি, রামাযান শরীফকে স্বাগতম জানানোর সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে, রামাযান শরীফ আগমনের পূর্বেই স্বীয় সময়ের রুটিন পরিবর্তন করে নতুন রুটিন তৈরি করে নেয়া; যাতে মুবারক মাসটির অধিকাংশ সময় আল্লাহ তাআলার ইবাদতে ব্যয়িত হয়। রামাযান আসার পূর্বে চিন্তা করুন যে, রামাযান আসছে। ফিকির করুন, কিভাবে আমার ব্যস্ততা কমানো যায়।

কেউ যদি মাসটির জন্য নিজেকে সম্পূর্ণ ঝামেলামুক্ত করে নেয়, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ।
যদি তা সম্ভব না হয়
, তাহলে দেখতে হবে কোন্ কোন্ কাজ এ মাসে না করলেও চলবে সে কাজগুলো ছেড়ে দিন। যে ধরনের ব্যয় কমানো সম্ভব, কমিয়ে দেখুন। যেসব কাজ রামাযানের পরে করলেও চলবে, সেগুলো পরে করুন।

তবুও রামাযানের অধিক সময় ইবাদতের মাধ্যমে কাটানোর ফিকির করুন।রামাযানকে স্বাগতম জানানোর সঠিক পদ্ধতি এটাকেই মনে করি। এভাবে করলে ইনশাআল্লাহ-এমাসের সঠিক প্রাণ, তার নূর এবং তার বরকত অর্জিত হবে। অন্যথায় রামাযান আসবে আর যাবে ঠিক, তবে তার থেকে সঠিকভাবে উপকৃত হতে পারবো না।

যে বিষয়টি রোজা আর তারাবীহ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।

মাহে রামাযানকে অন্যান্য ব্যস্ততা থেকে মুক্ত করার পর অবসর সময়ে আপনি কী করবেন? রোজা সম্পর্কে তো প্রত্যেকরই জানা যে, রোজা রাখা ফরজ। তারাবীহ সুন্নত এটাও সকলেই জানে। কিন্তু একটি বিশেষ বিষয়ের প্রতি আমি আপনাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই। তা হচ্ছে- আলহামদুলিল্লাহ এক সরিষা দানা পরিমাণ ঈমানও যার অন্তরে আছে, তার অন্তরেও রামাযান শরীফের মর্যাদা ও পবিত্রতা বিদ্যমান। ফলে এমাসে আল্লাহ তাআলার ইবাদত একটু বেশি করার জন্য এমন ব্যক্তিও সচেষ্ট হয়। এমন ব্যক্তিও চায় কিছু নফল বাড়িয়ে পড়তে।

যে লোকটি অন্য সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে পড়তে-গড়িমসি করত, তার মতো লোকও তারাবীহর ন্যায় দীর্ঘ নামাজে শরিক হয়।এসব কিছু আলহামদুলিল্লাহ-এ মাসেরই বরকত। এ মাসে মানুষ নামাজে, যিকির-আযকারে ও কুরআন তেলাওয়াতে লিপ্ত হয়।

একমাস এভাবে কাটিয়ে দিন।

কিন্তু এসব নফল নামাজ, নফল যিকির-আযকার, নফল তেলাওয়াত, নফল ইবাদত থেকেও গুরুতপর্ণ আরেকটি বিষয় রয়েছে যার প্রতি সাধারণত দৃষ্টি দেয়া হয় না। আর তা হচ্ছে- গুনাহসমূহ থেকে বেঁচে থাকা। এমাসে কোনো গুনাহ যেন আমাদের মাথায় চেপে না বসে, এ পবিত্র মাসটিতে যেন চোখের বিচ্যুতি না ঘটে, ভুল স্থানে যেন দৃষ্টি না যায়, কান যেন অশ্লীল কোনো কিছু না শোনে, জবান থেকে যেন গলদ কোনো কথা নিসৃত না হয়, যেন আল্লাহ তাআলার নাফরমানি থেকে পুরোপুরি বেঁচে থাকা যায়।কারন এ পবিত্র মাসটি যদি এভাবে অতিবাহিত করা যায়, তাহলে যদি এক রাকাআত নফল নামাজও না পড়েন, তেলাওয়াত-যিকির-আযকারও যদি খুব একটা না করেন, যদি শুধু গুনাহ থেকে বেঁচে থাকেন, তবেই তো আপনি আল্লাহ তাআলার নাফরমানি থেকে বেঁচে থাকলেন। এতেই আপনি মুবারকবাদ পাওয়ার যোগ্য। এমাসও হবে আপনার জন্য মুবারক মাস। দীর্ঘ এগার মাসব্যাপী তো নানা ধরনের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। আর আল্লাহ তাআলার এই একটা মাস আসছে অন্তত একে গুনাহ থেকে পবিত্র করে নিন। আল্লাহর নাফরমানি থেকে বিরত থাকুন। পবিত্র মাসটিতে কানকে গলদ স্থানে ব্যবহার করবেন না । ঘুষ খাবেন না, সুদ খাবেন না। কমপক্ষে এই একটি মাস এভাবে চলুন।

এ কেমন রোজা?

তাই বলতে চাচ্ছি, রোজা তো -মাশাআল্লাহ- বড় আগ্রহের সাথেই রাখেন। কিন্তু রোজার অর্থ কী? রোজা অর্থ হচ্ছে, খানা-পিনা এবং প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকা। রোজার সময় এ তিনটি বিষয় অবশ্যই পরিত্যাগ করতে হয়। এবার লক্ষ্য করুন, এ তিনটি বিষয় এমন, যা মূলত হালাল। খাবার খাওয়া, পানি পান করা এবং বৈধ পদ্ধতিতে স্বামী-স্ত্রী তাদের প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণ করা হালাল। রোজার দিনগুলোতে আপনি এসব হালাল বিষয় হতে নিজেকে মুক্ত রাখলেন। অর্থাৎ আপনি খাচ্ছেন না, পানও করছেন না ইত্যাদি। কিন্তু যেগুলো পূর্ব থেকেই হারাম ছিল। যথা- মিথ্যা বলা, গিবত করা কুদৃষ্টি দেয়া এগুলো পূর্ব থেকেই হারাম ছিল। অথচ এখন রোজাও রাখা হচ্ছেমিথ্যা কথাও বলা হচ্ছে, রোজাও রাখা হচ্ছে, গিবতও করা হচ্ছে, কুদৃষ্টিও দেয়া হচ্ছে, রোজাদার অথচ সময় কাটানোর নামে রোংরা ফিল্মও দেখছে। তাহলে আমার প্রশ্ন, পূর্ব থেকে হালাল বিষয়সমূহও রোজার ভিতর ত্যাগ করা হলো অথচ হারামসমূহ ত্যাগ করা হলো না, তাহলে এটা রোজা হলো কি? তাই তো হাদীস শরীফে নবী করীম (সা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা বলেন-যে ব্যক্তি রোজার মধ্যে মিথ্যা কথা ছাড়ে না, তার ক্ষুধার্ত আর পিপাসার্ত থাকায় আমার কোন প্রয়োজন নেই।‘ [আল-হাদীস]

যেহেতু মিথ্যা কথাই ছাড়েনি, যা পূর্ব থেকে হারাম, তবে খানা-পিনা ছেড়ে সে এমন বড় কী আমল করে ফেলল? রোজার সওয়াব নষ্ট হয়ে গিয়েছে

এ যদিও ফিক্‌হী দৃষ্টিকোণ থেকে রোজা শুদ্ধ হয়ে যায়, যদি কোনো মুফতী সাহেবকে ফতওয়া জিজ্ঞেস করেন যে, আমি রোজা রেখেছি মিথ্যা কথাও বলেছি, এখন আমার রোজা নষ্ট হলো কিনা? মুফতী সাহেব ফতওয়া দেবেন রোজা আদায় হয়ে গেছে। তার কাজা ওয়াজিব হবে না। কিন্তু কাজা ওয়াজিব না হলেও সওয়াব আর বরকত তো নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ, আপনি রোজার রূহ অর্জন করতে পারেননি।

রোজার উদ্দেশ্য : তাকওয়ার আলো প্রজ্বলিত করা

আল্লাহ তা’য়ালা বলেন:

ياأيها الذين امنوا كتب عليه الصيام كما كتب على الذين من قبلكم لعلّکم تتّقون

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল পূর্ববর্তী উম্মতগণের উপর। কেন ফরজ করা হয়েছে? যেন তোমাদের মাঝে
তাকওয়া সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ-রোজা মূলত অন্তরের মাঝে তাকওয়া বা আল্লাহভীতির আলোক প্রজ্বলিত করার লক্ষ্যে ফরজ করা হয়েছে। রোজায় তাকওয়া সৃষ্টি হয় কিভাবে
?

রোজা তাকওয়ার সিঁড়ি:

কতক আলিম বলেন, রোজা দ্বারা তাকওয়া এভাবে সৃষ্টি হয় যে, রোজার মাধ্যমে মানুষের
জৈবিক শক্তি এবং পশুসুলভ দাপট ভেঙে চুরমার করে দেয়া হয়। মানুষ ক্ষুধার্ত থাকার ফলে
পশুসুলভ আচরণ এবং জৈবিক চাহিদা একেবারে দুর্বল হয়ে পড়ে। যার কারণে গুনাহের দিকে অগ্রসর হওয়ার উপলক্ষ ও জযবা তার থেকে স্তিমিত হয়ে পড়ে।

আমাদের বুজুর্গ শাহ আশরাফ আলী থানভী (রহ.) আল্লাহ তাআলা তাঁর মর্যাদা উচ্চ করুন-আমীন, রোজা দ্বারা যে শুধু পশুসুলভ চরিত্রের মৃত্যু ঘটবে এমন নয়, বরং বিশুদ্ধ রোজা মানেই তাকওয়ার উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন সিঁড়ি। কারণ তাকওয়া অর্থ হচ্ছে, মানুষের হৃদয়ে আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব ও বড়ত্বকে উপস্থিত রেখে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। অর্থাৎ “আমি আল্লাহর গোলাম‘- একথা ভেবে গুনাহ ছেড়ে দেয়া, সর্বদা আল্লাহ তাআলা আমাকে দেখতে পাচ্ছেন, তাঁর সামনে আমাকে উপস্থিত হতে হবে, জবাবদিহি করতে হবে-এ ধরনের ভাবনা-চিন্তা করে গুনাহসমূহ থেকে নিজেকে বাঁচানোর নামই তাকওয়া।

যথা-আল্লাহ তাআলা বলেন:

وأما من خاف مقام ربه ونهى النفس عن الهوى – (سورة النازعات : 40)

অর্থাৎ- যে ব্যক্তি এ কথা ভয় পায় যে, আমাকে আল্লাহ তাআলার
দরবারে উপস্থিত হতে হবে
, তাঁর দরবারে দাঁড়াতে
হবে। আর এর ফলে সে প্রবৃত্তির চাহিদা এবং গোলামি থেকে নিজেকে রক্ষা করে- তারই নাম
তাকওয়া

মালিক আমায় দেখছেন:

অতএব, রোজা হচ্ছে তাকওয়া অর্জনের সর্বোত্তম ট্রেনিংকোর্স। একজন মানুষ সে যতবড় গুনাহগারই হোক না কেন, যতবড় ফাসিক, পাপিষ্ঠ কিংবা যেমনই হোক না কেন রোজা রাখার পর তার অবস্থা হয় এমন যে, প্রচণ্ড গরমের দিনে
পিপাসায় কাতর সে
, একাকী কক্ষে, অন্য কেউ সাথে নেই, দরজা-জানালা বন্ধ, কক্ষে রয়েছে ফ্রিজ, ফ্রিজে রয়েছে শীতল পানি- এমনি মুহূর্তে তার তীব্র চাহিদা হচ্ছে, এ প্রচণ্ড গরমে এক ঢোক ঠাণ্ডা পানি পান (করে কলজেটা শীতল) করার। কিন্তু, তবুও কি এ রোজাদার
লোকটি ফ্রিজ হতে শীতল পানি বের করে পান করে নেবে কি
না? কখনই নয় অথচ লোকটি যদি পানি পান করে, জগতের কেউই জানবে না। তাকে কেউ অভিশাপ কিংবা গাল-মন্দও বলবে না। জগতবাসীর নিকট সে রোজাদার হিসেবেই গণ্য হবে। সন্ধ্যায় বের হয়ে সে লোকজনের সাথে ইফতারও করতে পারবে। কেউই জানবে না তার রোজা ভঙ্গের কথা। এতদসত্ত সে পানি পান করে না। কেন? কারণ, সে ভাবে যে, অন্য কেউ আমাকে না দেখলেও আমার মালিক- যার জন্য রোজা রেখেছি তিনি আমায় দেখছেন। এছাড়া আর অন্য কোনো কারণ নেই। তার প্রতিদান আমিই দেবো। তাই তো আল্লাহ তাআলা বলেন:

الصَّوْمُ لِیْ وَ انَا اجْزِی بہ ( ترمذی کتاب الصّوم)

অর্থাৎ- রোজা আমার জন্যই, সুতরাং আমিই তার প্রতিদান দেবো। অন্যান্য আমলের ক্ষেত্রে আমার ঘোষণা কোনো কোনো আমলের সওয়াব দশগুণ, কিছু আমলের সওয়াব সত্তরগুণ আবার কিছু আমলের সওয়াব একশগুণ। এমনকি সদকার সওয়াব সাতশগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি
পায়।
কিন্তু রোজার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, রোজার সওয়াব আমি দেবো। যেহেতু রোজা তো বান্দা একমাত্র আমার জন্য রাখে। প্রচণ্ড তাপদাহে যখন কণ্ঠনালী ফেটে যাওয়ার উপক্রম, শুকনো জিহ্বা, ফ্রিজে আছে ঠাণ্ডা পানি, একাকী ঘর, দেখার মতো কেউ নেই তবুও আমার বান্দা পানি শুধু এজন্য পান করে না, যেহেতু তার হৃদয়ে আমার সম্মুখে দণ্ডায়মান হবার এবং জবাবদিহিতার ভীতি ও অনুভূতি সম্পূর্ণ জাগ্রত। এ জাগ্রত অনুভূতিকেই বলে তাকওয়া

যদি কারো এই অনুভূতি সৃষ্টি হয়ে যায়, তাহলে মনে করতে হবে তার অন্তরে তাকওয়া সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য রোজা একদিকে তাকওয়ার প্রতিচ্ছবি, অন্যদিকে তাকওয়া অর্জনের সিঁড়ি।
তাই তো আল্লাহ তা
আলা বলেন, রোজা আমি ফরজ করেছি যেন বান্দা তাকওয়ার ব্যবহারিক ট্রেনিং নিতে পারে।
অন্যথায় এ ট্রেনিং কোর্স অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে ।

রোজার মাধ্যমে তাকওয়ার এব্যবহারিক ট্রেনিংকোর্স সম্পন্ন করার পর তাকে আরো উচ্চশিখরে নিয়ে যাও। সুতরাং যেমনিভাবে রোজার দিনে প্রচণ্ড পিপাসা সত্ত্বেও পানি পান করনি, আল্লাহর ভয়ে আহার করনি, তেমনিভাবে জীবনের অন্যান্য কাজকর্মে যদি গুনাহ করার ইচ্ছা জাগে, যদি গুনাহ করার কোনো উপলক্ষ তোমার সামনে আসে, তখন সে ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার ভয়ে নিজেকে গুনাহ হতে বাঁচিয়ে রেখো। এ লক্ষ্যেই তোমাকে এক মাসের ট্রেনিংকোর্স করানো হচ্ছে। ট্রেনিং কোর্সটি পরিপূর্ণ হবে তখন, যখন জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে এর ভিত্তিতে আমল করবে।
রমযানে দিনের বেলায় পানি ইত্যাদি পান করনি আল্লাহর ভয়ে- অথচ জীবনের অন্যান্য কাজকর্মে আল্লাহকে ভুলে গিয়ে চোখ দ্বারা কুদৃষ্টি
দিচ্ছ, কান দ্বারা অশ্লীল কথা শুনছ- তাহলে এভাবে ট্রেনিংকোর্সটি আর পূর্ণতা লাভ করবে না। রোজার এয়ারকন্ডিশন লাগানো হয়েছে, কিন্তু…

রোগের চিকিৎসা যেমন প্রয়োজন, তেমনিভাবে রোগ থেকে বাঁচাও প্রয়োজন। আল্লাহ তাআলা আমাদের মাধ্যমে রোজা পালন করানোর উদ্দেশ্য হলো, আমাদের মাঝে তাকওয়া সৃষ্টি হওয়া। কিন্তু তাকওয়াতখন সৃষ্টি হবে, যখন আমরা আল্লাহ তাআলার নাফরমানি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবো। যেমন মনে করুন, একটি কক্ষ শীতল করার জন্য আপনি এয়ারকন্ডিশন ফিট করলেন।

এয়ারকন্ডিশনের কাজ হলো পুরা কক্ষটি শীতল রাখা। এখন আপনি এয়ারকন্ডিশন অন করলেন, কিন্তু সাথে সাথে দরজা-জানালাও খুলে দিলেন। ফলে এয়াকন্ডিশন একদিক থেকে হিমেল হাওয়া দিচ্ছে, অন্যদিকে দরজা-জানালা দিয়ে তা বের হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে এভাবে কক্ষটি শীতল করতে পারবেন না। ঠিক তেমনিভাবে

রোজার এয়ারকন্ডিশন তো আপনি ফিট করলেন, কিন্তু সাথে সাথে অন্যদিকে যদি আল্লাহর নাফরমানির দরজা-জানালাও খুলে দেন। তাহলে বলুন তো-এ ধরনের রোজা আপনার কোনো উপকারে আসবে কি?

হুকুম মান্য করাই মূল উদ্দেশ্য।

পাশবিক শক্তি ভেঙে চুরমার করে দেয়া রোজা পালনের হেকমত। এ হেকমতটি কিন্তু একটু পরের। কারণ, রোজা পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ তাআলার হুকুম পালন করা। এমনকি পুরো দ্বীনের মূল কথাই হচ্ছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর হুকুম পালন করা। যখন বলবেন খাও তখন খাওয়াটাই দ্বীন। যখন বলবেন, খেও না-তখন না খাওয়াটাই দ্বীন। আল্লাহ তাআলার দাসত্ব স্বীকার আর আনুগত্যের ক্ষেত্রে এক বিস্ময়কর পদ্ধতি তিনি বান্দাকে দান করেছেন। যথা-তিনি দিনব্যাপী রোজা রাখার হুকুম দিলেন, তার জন্য বহু সওয়াব
বা প্রতিদানও রাখলেন। অন্যদিকে সূর্যাস্তের সাথে সাথে তার নির্দেশ-তাড়াতাড়ি ইফতার
করে নাও। ইফতারে তাড়াতাড়ি করাটা আবার মুস্তাহাব হিসেবে আখ্যায়িত করলেন। বিনা কারণে ইফতারের মাঝে বিলম্ব করাকে মাকরুহ হিসেবে আখ্যায়িত করলেন। কেন মাকরুহ
? যেহেতু সূর্যাস্তের


সাথে সাথে আল্লাহ তা
আলার হুকুম হচ্ছে ইফতার করে নেয়ার। সেহেতু এখন যদি না খাওয়া হয়, যদি ক্ষুধার্ত থাকা হয়, তবে এ ক্ষুধার্ত অবস্থা আমার নিকট পছন্দনীয় নয়। কারণ, সকল কিছুর মূল উদ্দেশ্য তো আমার আনুগত্য-দাসত্ব প্রকাশ করা, নিজ আকাঙ্ক্ষা পূরণ
করা না।

আমার হুকুম নস্যাৎ করে দিয়েছে:

পৃথিবীর যে-কোনো বস্তুর প্রতি লোভ-লালসা করা বড়ই দূষণীয়। কিন্তু কখনো কখনো

এলোভ-লালসাই বন্ধুত্ব ও মজার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ প্রসঙ্গে কবি কত সুন্দরইনা বলেছেন।

  چوں شمع خواهد زمن سلطان دین ٭ خاک به فرق قناعت بعد از یں

দ্বীনের বাদশাহ যখন চাচ্ছেন যেন আমি লোভ করি, তখন অল্পে তুষ্টির উপর | ছাই পড়ক কারণ তখন তো আর অল্পতুষ্টিতে মজা নেই। লোভ আর লালসার মাঝেই তখন মজা নিহিত। ইফতারের সময় তাড়াতাড়ি করার হুকুম এ কারণেই। সূর্যাস্তের পূর্বে তো হুকুম ছিল যে সামান্য ক্ষুদ্র জিনিস খেলেও গুনাহও হবে, কাফফরাও দিতে হবে।যেমন- মনে করুন সূর্যাস্তের সময় হচ্ছে সাতটা। এখন কেউ যদি ছয়টা ঊনষাট মিনিটে একটি ছোলা খেয়ে নেয়, তাহলে বলুন তো রোজার মধ্যে কতটুকু কমতি আসল ? মাত্র এক মিনিটের
কমতি এসেছে। কিন্তু এ এক মিনিটের রোজার কাফফারা দিতে হয় লাগাতার ষাট দিন রোজা পালন করে। কারণ
, বিষয়টি মূলত একটি ছোলা কিংবা এক মিনিটও নয়; বরং মূল বিষয় হচ্ছে, এ ব্যক্তি আমার হুকুম অমান্য করেছে। আমার হুকুম তো ছিল সুর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার করা যাবে না। কিন্তু যেহেতু তুমি হুকুমটি অমান্য করেছ, সেহেতু এক মিনিটের পরিবর্তে ষাট দিন রোজা রাখ।

ইফতার তাড়াতাড়ি কর:

একটু পরে সূর্যাস্তের সাথে সাথেই হুকুম এল যে, এখন তাড়াতাড়ি খাও। বিনা কারণে ইফতার বিলম্বে করা গুনাহ। কেন গুনাহ? কারণ, আমি যেহেতু এখন হুকুম দিয়েছি খাও, সেহেতু এখনই খেতে হবে।

সেহরিতে বিলম্ব করা উত্তম।

সেহরির ব্যাপারে হুকুম হচ্ছে, সেহরি বিলম্বে খাওয়া উত্তম। তাড়াতাড়ি খাওয়া সুন্নত পরিপন্থী। অনেকে রাত বারটায়ই সেহরী খেয়ে শুয়ে পড়ে, এটা সুন্নত পরিপন্থি। সাহাবায়ে কেরামেরও এ অভ্যাস ছিল যে, তাঁরা সেহরির শেষ সময় পর্যন্ত খেতে থাকতেন। কারণ, সেহরির সময়ে সেহরি
খাওয়া আল্লাহ তা
আলার শুধু অনুমতিই নয়; বরং হুকুমও। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত সময় থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা খেতে থাকবো। আল্লাহ তাআলার নির্দেশের আনুগত্য তো এরই মাঝে নিহিত। অতএব, কেউ যদি সেহরির সময়ের পূর্বেই সেহরি খেয়ে নেয়, তাহলে কেমন যেন রােজার সময়ের মাঝে কিছু সময় নিজ থেকে-সংযোজন করে নিল।

আনুগত্যের মাঝেই দ্বীনের সব খেলা নিহিত।

আমি (আল্লাহ) যখন বলি খাও‘, তখন খাওয়াটাই সওয়াবের কাজ। যখন বলি খেয়ো নাতখন না খাওয়াটাই সওয়াবের কাজ। তাই তো হাকীমুল উম্মত হযরত আশরাফ আলী থানভী (রহ.) বলেন, ‘যখন আল্লাহ তাআলা খাওয়ার নির্দেশ দেন, তখন বান্দা যদি বলে-খাবো
না কিংবা যদি বলে-আমি কম খাই
, তাহলে এটা তো আনুগত্যের প্রকাশ হলো না। আরে ভাই! খাওয়ার আর না খাওয়ার মাঝে কিছুই নেই। সকল কিছুই হচ্ছে তাঁর আনুগত্যের মাঝে। অতএব, যখন তিনি বলেন,খাও, তখন খাওয়াটাই ইবাদত। তখন না খেয়ে নিজের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত আনুগত্য প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই।

 একটি মাস গুনাহমুক্ত কাটান:

মোটকথা, রোজা যখন রাখলেন, তখন থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন। চোখ, কান, জিহ্বাকে হেফাজত করুন।এমনকি ডা. আব্দুল হাই (রহ.) বলতেন, “আমি তোমাদেরকে এমন একটি কথা বলছি, যা আর কেউ বলবে না।সেটা হচ্ছে, নিজের নফসকে ভুলাও।তাকে বল যে, একটি মাত্র মাস গুনাহমুক্ত কাটাও। তারপর মাসটি শেষ হয়ে গেলে আবার তোমার ইচ্ছানুযায়ী চলতে পারবে। এরপর তিনি বলেন, আশা করি, যে লোকটি এক মাসের কোর্সে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে, একমাস পর তার আর গুনাহ করার মন-মানসিকতা থাকবে না। কিন্তু, তবুও প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একটিমাত্র মাস আসছে, যে মাসটি ইবাদতের
মাস
, তাকওয়া অর্জন করার মাস।

এ মাসে আমরা গুনাহ করবোনা। প্রত্যেকের উচিত নিজের হিসাব নিজে কষে নেয়ার। কোন্ কোন্ গুনাহ আমাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, সেসব গুনাহ চিহ্নিত করে নিজ থেকে মিটিয়ে দেয়ার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। যেমন প্রতিজ্ঞা করতে হবে, আমি অন্তত রমযান মাসে চোখ ভুল স্থানে পরিচালনা করবো না। আমার কান কোনো অশ্লীল কথা শুনবে না। জিহ্বা হতে শরিয়ত পরিপন্থি কোনো কথা বের হবে না। বলুন তো, আপনারা রোজাও রাখলেন, গুনাহও করলেন- তো এটা কেমন কথা হলো।

এ মাসে হালাল রিজিক:

দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কথা, যা শায়খ ডা. আব্দুল হাই (রহ.) বলতেন, তা হচ্ছে- কমপক্ষে এ মাসে হালাল রিজিকের প্রতি একটু লক্ষ্য করুন। আপনার রিজিকে যে লােকমাটি আছে, সেটা যেন হালাল হয়। রােজা রাখলেন আল্লাহর জন্য আর ইফতার করবেন হারাম দ্বারা এমন যেন না হয়। মনে করুন, সুদ-ঘুষের টাকা দিয়ে যদি ইফতার করেন, তাহলে আপনিই বলুন- এটি কী ধরনের রােজা হবে? সেহরিও যদি হারাম হয়, ইফতারীও যদি হারাম হয়, মাঝখানে আমাদের রােজাটা কেমন রােজা হবে ? সুতরাং বিশেষ করে এ মাসে হারাম উপার্জন হতে বেঁচে থাকুন। আল্লাহ তাআলার নিকট ফরিয়াদ করুন যে, হে আল্লাহ! আমি হালাল রিজিক চাচ্ছি। অতএব, আপনি আমাকে হারাম রিজিক থেকে বাঁচিয়ে রাখুন।

হারাম উপার্জন থেকে বেঁচে থাকুন:

আমাদের মাঝে অনেক ভাই আছেন যাদের জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপাদান হচ্ছে পেনশন। আলহামদুলিল্লাহএটা হারাম নয়। তবে হ্যাঁ, সতকর্তা অবলম্বন না করার কারণে অনেক সময় হারামের মিশ্রণও ঘটে। তারা কিন্তু একটু সতর্ক হলেই হারাম থেকে বেঁচে যেতে পারে। তাই অন্তত এ মাসে একটু এদিকে সতর্ক দৃষ্টি দিতে হবে। তাহলে ইনশাআল্লাহ বিশুদ্ধ হালালের মাধ্যমে রােজা পালন করা সম্ভব হবে।

অবাক কাণ্ড হচ্ছে-

এ মাসকে আল্লাহ তাআলা সহযােগিতা, সমবেদনা ও সহমর্মিতার মাস হিসেবে আখ্যা দেয়া সত্ত্বেও একদল লােক তার উল্টোটা করে। তারা অপরকে ফাঁদে ফেলার চিন্তায় মগ্ন থাকে। একদিকে আগমন করে মাহে রামাযান, অন্যদিকে শুরু হয় নিত্য প্রয়ােজনীয় দ্রব্যাদি স্টক করার প্রতিযােগিতা। তাই অনুরােধ করছি, অন্তত এ
পবিত্র মাসটিতে এ ধরনের হারাম কাজ থেকে বেঁচে থাকুন।

যদি উপার্জন সম্পূর্ণ হারাম হয়, তাহলে…

আবার অনেকেই রয়েছেন, যাদের উপার্জনের পন্থা সম্পূর্ণ হারাম। যেমন, কোনাে ব্যক্তি যদি সুদী অফিসে চাকরি করে তাে এ ধরনের লােক কী করবে ? এ ব্যাপারে শায়খ ডা. আব্দুল হাই (রহ.) বলেন, যার ইনকাম-পদ্ধতি সম্পূর্ণ হারাম, তার ব্যাপারে আমার পরামর্শ হচ্ছে- সে যেন কমপক্ষে এই একটি মাসের জন্য তার সুদী অফিস থেকে ছুটি নিয়ে হালাল পদ্ধতিতে ইনকাম করার সঠিক কোনাে পন্থা বের করে নেয়। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে যেন সে এ মাসটি চলার জন্য কারাে কাছ থেকে কিছু টাকা ঋণ করে নেয়। তবুও যেন সে এ পবিত্র মাসটিতে নিজে হালাল রিজিক খাওয়ার, পরিবারকে হালাল রিজিক খাওয়ানাের ফিকির করে। কমপক্ষে এতটুকু
তাে করা যাবে।

গুনাহ থেকে বাঁচা সহজ হয়।

মােটকথা, আমি আপনাদের
বােঝাতে চাচ্ছি
, মানুষ এ মাসে নফলের প্রতি যথেষ্ট যত্ন নেয়, কিন্তু গুনাহ হতে বাঁচার প্রতি মনােযােগ দেয় না। অথচ আল্লাহ তাআলা এ মাসে গুনাহ থেকে বাঁচা সহজ করে দিয়েছেন। কারণ, শয়তানকে এ মাসে শিকল পরিয়ে রাখা হয়। তাকে কারাগারে আবদ্ধ করা হয়। অতএব,
শয়তানের পক্ষ থেকে কোনাে কুমন্ত্রণা এ মাসে আসতে পারে না। ফলে গুনাহ থেকে বাঁচাও সহজ হয়ে যায়।

রােজার মাসে ক্রোধ পরিহার করা:

যে কথাটি রােজার সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কযুক্ত, তা হচ্ছে- ক্রোধ থেকে নিজেকে হেফাজত করা। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এ মাস সহমর্মিতার মাস, একে অপরকে সমবেদনা জানানাের মাস। সুতরাং ক্রোধ এবং ক্রোধের কারণে যেসব গুনাহ সংগঠিত হয়, যথা- ঝগড়া, মারপিট ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকার প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হতে হবে। এমনকি হাদীস শরীফে হুযুর (সা.) বলেন

وإن جَهِلَ عَلٰى أَحَدِكُمْ جَاهِلٌ وهو صَائمٌ  فليقُل اإنِّي صائم

(ترمذی، کتاب الصوم – باب ما جاء في فضل الصوم حديث 764)

অর্থাৎ- তােমাদের কারাে সাথে কেউ যদি মূর্খতার বা ঝগড়ার কথা বলে, তখন বলে দাও-আমি রােজাদার। ঝগড়া করার জন্য আমি প্রস্তুত নই। মৌখিক ঝগড়া বা হাতের লড়াই কোনােটার জন্য আমি প্রস্তুত নই। ঝগড়া লড়াই হতে বেঁচে থাকুন। এগুলাে সব মৌলিক কাজ।

রমজানে নফল ইবাদত বেশি বেশি করুন।

মাশাআল্লাহ সকল মুসলমানেরই জানা আছে যে, রােজা রাখা এবং তারাবীহ পড়া জরুরি। এ মাসের সাথে কুরআন তেলাওয়াতের সম্পর্কও যথেষ্ট রয়েছে। এ মাসে হুযুর (সা.) এবং হযরত জিবরাঈল (আ.) পালাক্রমে একে অপরকে
সম্পূর্ণ কুরআন তেলাওয়াত করে শােনাতেন। তাই যত বেশি সম্ভব এ মাসে তেলাওয়াত করতে হবে।
এ ছাড়াও চলতে-ফিরতে
, উঠতে-বসতে আল্লাহর জিকির জবানে চালু থাকতে হবে।

তৃতীয় কথা হলাে

এই দোয়াটি, দুরূদ শরীফ
এবং এস্তেগফার বেশি বেশি পড়বেন।

سبحان الله والحمد لله ولا إله إلا الله والله أكبر

আর নফল ইবাদত যত বেশি সম্ভব করবেন। অন্যান্য সময়ে তো রাতের বেলায় উঠে তাহাজ্জুদ এর নামায পাড়ার সুযোগ মিলেনা কিন্তু রমযানে যেহেতু মানুষ সাহরী খাওয়ার জন্য জাগ্রত হয়, সেহেতু তাহাজ্জুদ নামাজও পড়ার সুযােগ হয়ে যায়। তাই একটু আগে আগে উঠুন। সাহরির পূর্বে দু/চার রাকআত তাহাজ্জুদ পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। পবিত্র এ মাসটিতে সকলেরই বিনয়-নম্রতার সাথে নামাজ পড়ার, বিশেষত পুরুষেরা জামাআতের সাথে নামাজ পড়ার প্রতি যত্নবান হােন। এসব তাে এ মাসেই করতে হবে। কারণ, এগুলাে তাে রমজানের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এগুলাের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলাে- গুনাহ থেকে বাঁচার ফিকির করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে কথাগুলাের উপর আমল করার তাওফীক দিন। আর রামযানুল মুবারকের নূর ও বরকত থেকে সঠিক পদ্ধতিতে উপকৃত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন!

 واخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for reading the post.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top