সংকলনে মাওঃ মুহাঃ নাছির উদ্দিন
প্রশ্নঃ- সিফাত কাকে বলে?
উত্তরঃ সিফাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো গুন, নিয়ম, পদ্ধতি বা অবস্থা।
প্রশ্নঃ সিফাত কত প্রকার ও কি কি?
উত্তরঃ- সিফাত প্রথমত দুই প্রকার
প্রশ্নঃ সিফাতে লাযেমাহ কাকে বলে?
উত্তরঃ- সিফাতে লাযেমাহ ঐ সিফাতকে বলে যা হরফ আদায়ের সময় সর্বদা জরুরী হয়ে থাকে। যদি ঐ সিফাতে লাযেমহি আদায় না করা হয় তাহলে হরফটি পূর্ণাঙ্গ রূপে উচ্চারিত হয় না।
যেমনঃ- ص এর মধ্যে اطباق (ইতবাক) ও استعلاء (ইস্তে লাহ) এ দুইটি সিফাত আদায় না হলে ص হরফটি س এ পরিনত হয়ে যাবে ।
প্রশ্নঃ- সিফাতে আরেজা কাকে বলে?
উত্তরঃ- সিফাতে আরেজা ঐ সিফাতকে বলে যা আদায় না হলে হরফটি ঠিকই থাকে কিন্তু তাহার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায় ।
যেমনঃ-– ر এ যবর অথবা পেশ হলে – ر – কে (পুর) মোটা করে পড়তে হয়। তেমনিভাবে আল্লাহ শব্দের লামের পূর্বে যবর অথবা পেশ হলে লামকে (পুর)
প্রশ্নঃ- সিফাতে লাযেমাহ কত প্রকার?
উত্তরঃ- সিফাতে লাযেমাহ দুই প্রকার
প্রশ্ন : متضادّہ ও غیر متضادّہ কাকে বলে?
উত্তরঃ- متضادّہ ঐ সিফাতকে বলে যার বিপরীত সিফত আছে আর غیر متضادّہ ঐ সিফাতকে বলে যার বিপরীত সিফাত নাই ।
প্রশ্ন : صفت لازمہ متضادّہ কয়টি?
উত্তরঃ- صفت لازمہ متضدّہ (10) দশটি ।
যথাক্রমে নিছে দেওয়া হল।
ھمسٌ جھرٌ شدّۃٌ رِخَاوَۃٌ بَیْنَھُمَاتوَسّطْ استعلاءٌ اِسْتِفالٌ اِطْبَاقٌ اِنْفِتاحٌ اِذْلاقٌ اِصْماتٌ
صفات حروف
ھمسএর হরফ দশটি ।
فَحَثّہٗ شَخْصٌ سَکَتْ
হামস এর এই দশ হরফ ব্যতীত বাকী সব হরফ جھر এর ।
شدّۃ এর হরফ ৮টি ।
এগুলোকে এক সাথে এভাবে বলবেন 👉 (اَجِدُ قَطٍّ بَکَتْ)
شدّۃ এবং توسّط এর হরফ ব্যতীত বাকী সব হরফ رِخَاوَۃ এর ।
استعلاء এর হরফ ৭টি । যথা ঃ (ص– ض – ط – ظ – غ -خ- ق –) এগুলোকে এক সাথে এভাবে বলবেন 👉
استعلاء এর এই সাত হরফ ব্যতীত বাকী সব হরফ استفال এর اِطباق
اظلاق এর হরফ ৬টি । যথা ঃ(ف – ر – م – ن – ل – ب ) এগুলোকে এক সাথে এভাবে বলবেন 👉
اظلاق এর এই ৬ হরফ ব্যতীত বাকী সব হরফ اصمات এর ।
সিফাতের কাজ ও ব্যবহার
১) ھمسٌ বাতাস চালু ।
২) جھر বাতাস বন্ধ ।
৩) شِدّۃ আওয়াজ বন্ধ ।
৪) رِخاوۃ আওয়াজ চালু।
توسط আওয়াজ মধ্যম বা অল্প চালু
৫) استعلاء উপরে উঠানাে বা (উৰ্দ্ধ গতি)।
৬) استفال (নিম্নগামী) নিচের দিকে ।
৭) اطباق মিলানাে বা জড়ানাে ।
৮) انفتاح পৃথক করা বা খােলা রাখা ।
৯) اذلاق স্লিপ কাটা বা নড়াচড়া করা ।
১০) اصمات জমে থাকা বা স্থির থাকা।
১) ھمس বাতাস চালু, ھمس এর হরফগুলি তার মাখরাজ থেকে আদায় করার সময় উচ্চারণে বাতাস চালু থাকবে।
২) جھر বাতাস বন্ধ, جھر এর হরফ গুলি তার মাখরাজ থেকে আদায় করার সময় উচ্চারণে বাতাস বন্ধ থাকবে।
৩) شِدّۃٌ আওয়াজ বন্ধ, شِدّۃ এর হরফগুলি তার মাখরাজ থেকে আদায় করার সময় উচ্চারনে আওয়াজ বন্ধ থাকবে ।
এমনিভাবে شدّۃ এর বাকী সবগুলি হরফে যবর, যের, পেশ, জযম ও তাশদীদ দ্বারা অধীক পরিমানে মশক করা ।
৪) رِخاوۃ আওয়াজ চালু, رِخاوۃ এর হরফগুলি তার মাখরাজ থেকে আদায় করার সময় উচ্চারনে আওয়াজ চালু থাকবে।
* এমনিভাবে رِخاوۃ এর বাকী সবগুলি হরফে যবর, যের, পেশ, জযম ও তাশদীদ দ্বারা অধীক পরিমানে মশক করা ।
توسّط অওয়াজ মাধ্যম বা অল্প চালু, توسّط এর হরফগুলি তার মাখরাজ থেকে আদায় করার সময় উচ্চারনে আওয়াজ মাধ্যম বা অল্প চালু থাকবে।
৫) استعلاء উপরে উঠানােاِستعلاء এর হরফগুলি তার মাখরাজ থেকে আদায় করার সময় উচ্চারনে জিহ্বার গোড়া উপরের দিকে উচু করা, যার দরুন উচ্চারন মোটা হয় ।
استعلاء এর প্রত্যেকটি হরফ মোটা হওয়ার ৫টি করে স্তর রয়েছে ।
১) যবরের উচ্চারন মদের সাথে হওয়া,
যেমনঃ- صَ – ضَ – طَ – ظَ – غَ –خَ – قَ
৩) পেশ যুক্ত হওয়া,
৪) ছাকিন হওযা,
৫) যের যুক্ত হওয়া,
৬) استفال নিচের দিকে থাকা, استفال এর হরফগুলি তার মাখরাজ থেকে আদায় করার সময় উচ্চারনে জিহবার গোড়া নিচের দিকে থাকে, যার দরুন উচ্চারন পাতলা হয়।
যেমনঃ- سَ- سِ – سُ / اَسْ – اِسْ – اُسْ / اَسَّ – اِسَّ – اُسَّ
* এমনিভাবে استفالএর বাকী সবগুলি হরফে যবর, যের, পেশ, জযম ও তাশদীদ দ্বারা অধীক পরিমানে মশক করা ।
৭) اطباق মিলানাে বা জড়ানাে। اطباق এর হরফগুলি তার মাখরাজ থেকে আদায় করার সময় উচ্চারনে জিহবার মধ্যখান উপরের তালুর সাথে মিলে যাবে।
* এমনিভাবে ওড়া এর বাকী সবগুলি হরফে যবর, যের, পেশ, জযম ও তাশদীদ দ্বারা অধীক পরিমানে মশক করা ।
৮) انفتاح পৃথক থাকা বা খােলা রাখা, انفتاح এর হরফগুলি তার মাখরাজ থেকে আদায় করার সময় উচ্চারনে জিহবার মধ্যখান উপরের তালুর থেকে পৃথক থাকবে।
৯) اذلاق স্লিপ কাটা বা নড়াচড়া করা, اذلاق এর হরফগুলি তার মাখরাজ থেকে আদায় করার সময় ঠোট এবং জিহবার কিনারা থেকে খুব সহজেই তাড়াতাড়ি আদায় হয়ে যায়।
দ্বারা অধীক পরিমানে মশক করা।
১০) اصمات স্থির থাকা বা জমে থাকা । اِصماتএর হরফগুলি তার মাখরাজ থেকে আদায় করার সময় উচ্চারনে জমে থাকবে অর্থ্যাৎ মজবুতির সাথে আদায় হবে।
* এমনিভাবে اصمات এর বাকী সবগুলি হরফে যবর, যের, পেশ, জযম ও তাশদীদ দ্বারা অধীক পরিমানে মশক করা ।
صفت لازمہ غیر متضادّہ টি।
1. صفیر – ص ۔ س ۔ ز
2. قلقلہ – ق۔ ط ۔ ب ۔ ج ۔ د
3. لین – بَوْ – بَیْ
4. اِنْحِرَافْ – ر۔ ل
5. تَکّرَار – ر
6. تَفَشِّی – ش
7. اِسّتِطَاعت – ض
صفیرএর আভিধানিক অর্থ এমন আওয়াজ যা পাখির আওয়াজের মত। পারিভাষিক অর্থ এই হরফগুলোর কোন একটি হরফ উচ্চারনের সময় একটি অতিরিক্ত আওয়াজ তার মাখরাজ থেকে বের হয়। صفیر এর হরফ ৩টি (ص – س – ز)। ص থেকে রাজহাঁসের আওয়াজের মত একটি আওয়াজ বের হয়।ز থেকে মৌমাছির আওয়াজের মত একটি আওয়াজ বের হয় ।
س থেকে টিড্ডির আওয়াজের মত একটি আওয়াজ বের হয়। এই তিনটি হরফের মধ্যে শক্তিশালী হল ص– কেননা তার মধ্যে সিফাতে ইসতে’লা, ইতুবাক এবং সফীরের মত তিনটি শক্ত সিফাত রয়েছে। অতঃপর ز কেননা তার মধ্যে সিফাতে যাহর রয়েছে। অতপর سএই হরফটি মাহমুছা হওয়ার কারনে সর্বাধিক দূর্বল ।
২) قلقلہ কম্পন বা নড়াচড়া করা, পারিভাষিক অর্থ-قلقلہ এর কোন একটি হরফ সাকিন অবস্থায় উচ্চারন করার সময় তার মাখরাজের মধ্যে আওয়াজ স্থির থাকা সম্ভব না হওয়ার কারনে তার মাখরাজ থেকে যে শক্ত আওয়াজটি বেরিয়ে আসে, তাকে قلقلہ বলে । قلقلہ হরফ ৫টি যথা ق – ط – ب – ج – د = قُطُبُ جَدٍّ
কালক্বালার কারণ
কালকালার হরফগুলো শাদীদাহ ও মাজহুরাহ (জাহর) শ্বাস জারী থাকাকে বাঁধা দেয় এবং (শিদ্দাহ) আওয়াজ জারী থাকাকে বাধা দেয়। এই দুটি সিফাত এই হরফগুলির মধ্যে একত্রিত হওয়ার কারনে শ্বাস এবং আওয়াজ বাধা প্রাপ্ত হয়ে হরফগুলো প্রকাশ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে, বিধায় তাকাল্লুফ করে হরফগুলো প্রকাশ করার প্রয়োজন হয়। আর তা এই হরফগুলো সাকিন অবস্থায় উচ্চারন করার সময় তাদের মাখরাজে চাপ দেওয়ার পর কম্পন বা হরকত সৃষ্টি হয়ে মুতাহাররিক হরফের ন্যায় বেরিয়ে আসার উপক্রম হয় বলে।
টিকাঃ ھمزہ হরফে সিফাতে জাহর এবং শিদ্দাহ থাকা সত্ত্বেও তাকে কলকলার হরফের অন্তভূক্ত করা হয়নি, যাতে বমি করার আওয়াজের মত
আওয়াজ বেরিয়ে না আসে। কেননা কেরাতের মূল হলো তাকালুফ না করা।
হরফের স্তর অনুযায়ী ক্বলক্বলা দুই প্রকার
১)قلقلۃ اعلی আর তা হরফে ق এবং ط এর মধ্যে সিফাতে ইস্তে’লা থাকার কারনে হয়ে থাকে।
২) قلقلۃ ادنی আর তা অবশিষ্ট ৩টি হরফ (ب- ج- د) এর মধ্যে বাস্তবায়িত হয়।
১) সর্বোচ্চ স্তরের কালক্বালা হল মুশাদ্দাদ হরফের উপর সুকুনের সাথে ওয়াক্ফ করা অবস্থায়। যেমনঃ (الحقُّ)
২) মধ্যম স্তর হল মুশাদ্দাদ নয় এমন অক্ষরের উপর সুকুনের সাথে ওয়াকফ করা অবস্থায়, যেমনঃ (البلدُ)
৩) ওয়াকফ ছাড়া অবস্থায় কুলকুলার সাকিন হরফের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ের কৃলক্লাহ করতে হয়। যেমনঃ (الم یجعل)।
কালকৃালাহ আদায় করার নিয়ম
এ বিষয়ে উলামাদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। তবে সর্বোত্তম মতানুযায়ী কালক্বালাহ সর্বাবস্থায় যবরের কাছাকাছি হবে। অন্য মতানুযায়ী বলা হয়েছে যে, কালক্বালাহ তার আগের অক্ষরের অনুসরণ করবে। সুতরাং আগের অক্ষর যদি যরবওয়ালা হয় তবে কালক্বালাহ যবরের কাছাকাছি থাকবে। যেমন (اقربْ) আর যদি তার আগের হরফ যেরওয়ালা হয় তবে কালকৃালার আওয়াজ যেরের কাছাকাছি থাকবে। যেমন (اِقْراْ)
৩. لین ” আভিধানিক অর্থ সহজ বা নরম
৪) انحراف এর অর্থ মোড় নেওয়া, ধাবিত হওয়া, অঁকা। =3] انحرافএর হরফ দুইটি যথাঃ (ر – ل)।ال আদায়ের সময় ر এর মাখরাজের দিকে ঝুঁকে।
৫)تکرار কোন বিষয় বার বার হওয়া। تکرار দুই প্রকার।
৬) تفشّی আভিধানিক অর্থ ছড়িয়ে যাওয়া।
৭) استطالت আভিধানিক অর্থ দীর্ঘ হওয়া,
পারিভাষিক অর্থ ও জিহবার কিনারার শুরু থেকে হরফের মাখরাজের শেষ সীমা পর্যন্ত এমনকি ل এর মাখরাজ পর্যন্ত আওয়াজ দীর্ঘায়িত হয়ে যাওয়া। তার হরফ ১টি – ض যথাঃ (ولا الضّالین)
ইস্তেত্বালাতের হরফ এবং মদ্দের হরফের মধ্যে ব্যবধান:
ইস্তেত্বালাতের হরফ এবং মদ্দের হরফের মধ্যে ব্যবধান এই যে, ইস্তেত্বালাতের হরফে তার মাখরাজের দৈর্ঘ্যের পরিমাণে মাখরাজের মধ্যে আওয়াজ জারী থাকে, এর বাইরে যায় না। কেননা তার মাখরাজ مُحقّقْ বা নিদিষ্ট।
ہ
– ع – ح – غ – خ – ق – ک – ج – ش – ی – ض – ل – ن – ر – ط –
د – ت – ص – س – ز – ظ – ذ – ث – ف – و – ب – م
٭ اَءْ – اَہْ
– اَعْ – اَحْ – اَغْ – اَخْ – اَقْ – اَکْ – اَجْ – آشْ – آیْ – اَضْ – اَلْ – اَنْ
– اَرْ اَطْ – اَدْ – اَتْ – اَصْ – اَسْ –
اَزْ – اَظْ – اَذْ – اَثْ – اَفْ – اَوْ – اَبْ – اَمْ
বিঃ দ্রঃ সিফাতা বুঝার জন্য ৬টি বিষয় লক্ষ রাখা উচিত:
১। সিফাতের সংজ্ঞা মুখস্থ করা
২। সিফাতের নামগুলাে মুখস্থ করা
৩। সিফাতের হরফগুলাে মুখস্থ করা ।
৪। একটি হরফের মধ্যে কয়টি সিফাত তা নির্ণয় করা।
৫। সিফাতের কাজ ও ব্যবহার শিখা।।
৬। তেলাওয়াতের সময় সিফাত আদায় করে পড়ার চেষ্টা করা।
লাইক, কমেন্ট, শেয়ার এবং ফলোওয়ার হয়ে থাকুন নতুন আপডেট পাওয়ার জন্য। ধন্যবাদ।
খুব সুন্দর লাগলো সিফাতগুলো পড়ে আলহামদুলিল্লাহ মাশাল্লাহ আল্লাহ আপনাকে এভাবে দ্বীনের খেদমত করার তৌফিক দান করেন আমিন
ধন্যবাদ।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবিাদ।