শবে কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য

AVvXsEjwzTLhRw6eI87 HqpTXl40VlO7jd3RmgAc89wQuBoK FVsjYAW5NRvSKzZsDPin4i8CldnugNE09EITcDtwyxMYHjaOCqjr6cTEPQeB90pL8QoG39kP oYbV865u O 4FakOFDOFUa2Gj2KkyeyCJeT obptr3mV1qOsyDPlZVY09MIejy5OwbWIfziQ=w401 h242

শবে কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য

বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বরকতময় রাত হলো শবে কদর। জীবন্ত মুজিজা মহাগ্রন্থ আল–কোরআন এই রাতেই প্রথম নাজিল হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি মাহাত্ম্যপূর্ণ রজনীতে। আপনি কি জানেন মহিমাময় রাত্রি কী? মহিমান্বিত নিশি সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাত্রিতে ফেরেশতারা রুহুল কুদুস হজরত জিবরাইল (আ.) সমভিব্যাহারে অবতরণ করেন; তাদের প্রভু মহান আল্লাহর নির্দেশ ও অনুমতিক্রমে, সকল বিষয়ে শান্তির বার্তা নিয়ে। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে উষা উদয় পর্যন্ত।’ (সুরা-৯৭ কদর, আয়াত: ১-৫)। আরবিতে ‘লাইলাতুল কদর’ বা কদর রজনী, এর ফারসি হলো শবে কদর। অর্থ সম্মানিত মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমান্বিত, সম্ভাবনাময়, ভাগ্যনির্ধারণী রজনী। পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস রমজান মাস, কোরআন নাজিলের রাত শবে কদর। এ রাতেই প্রথম পবিত্র মক্কা মুকাররমার জাবালে রহমত তথা হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে জিবরাইল (আ.)–এর মাধ্যমে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি কোরআন কারিম অবতীর্ণের সূচনা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাস! যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে মানবের দিশারি রূপে ও হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর সন্ধান করো।’ (মুসলিম)। এ রাতগুলো হলো ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯। আরবিতে দিনের আগে রাত গণনা করা হয়। অর্থাৎ ২০, ২২, ২৪, ২৬ ও ২৮ রমজান দিবাগত রাত্রসমূহ।

মুফাসসিরিনে কিরাম বলেন, আরবিতে ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দদ্বয়ে ৯টি হরফ বা বর্ণ রয়েছে; আর সুরা কদরে ‘লাইলাতুল কদর’ শব্দদ্বয় তিন তিনবার রয়েছে; নয়কে তিন দিয়ে গুণ করলে বা নয়কে তিনবার যোগ করলে সাতাশ হয়, তাই সাতাশ রমজানের রাতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। (তাফসিরে মাজহারি)। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)–কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমি যদি লাইলাতুল কদর সম্পর্কে জানতে পারি, তাহলে আমি ওই রাতে আল্লাহর কাছে কী দোয়া করব?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি বলবে, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’(‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করাকে পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।’) (ইবনে মাজা, আস-সিলসিলাতুস সহিহাহ, নাসিরুদ্দিন আলবানী)। পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস রমজান মাস, কোরআন নাজিলের রাত শবে কদর। এ রাতেই প্রথম পবিত্র মক্কা মুকাররমার জাবালে রহমত তথা হেরা পর্বতের গুহায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে জিবরাইল (আ.)–এর মাধ্যমে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি কোরআন কারিম অবতীর্ণের সূচনা হয়। সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করবে; তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি শরিফ, ইমান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ২৫, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২৯-৩০, হাদিস: ৩৪; ই. ফা.)।

শবে কদরে যেসব আমল করা যায়

নফল নামাজ—তাহিয়্যাতুল অজু, দুখুলিল মাসজিদ, আউওয়াবিন, তাহাজ্জুত, সালাতুত তাসবিহ, তাওবার নামাজ, সালাতুল হাজাত, সালাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল ইত্যাদি পড়া। নামাজে কিরাআত ও রুকু–সিজদা দীর্ঘ করা। কোরআন শরিফ: সুরা কদর, সুরা দুখান, সুরা মুজাম্মিল, সুরা মুদ্দাচ্ছির, ইয়া-সিন, সুরা ত্ব-হা, সুরা আর রহমান ও অন্যান্য ফজিলতের সুরা তিলাওয়াত করা; দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া; তাওবা–ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা; দোয়া কালাম, তাসবিহ তাহলিল, জিকির আসকার ইত্যাদি করা; কবর জিয়ারত করা। নিজের জন্য, পিতা–মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সব মুমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি এবং বিশ্ববাসীর মুক্তি কামনা করে দোয়া করা। এই রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে অবতরণ করে বান্দাদের ডেকে ডেকে বলেন, ‘কে আছ অসুস্থ আমার কাছে চাও আমি শেফা দান করব, কে আছ অভাবগ্রস্ত আমার কাছে চাও আমি প্রাচুর্য দান করব, কে আছ বিপদগ্রস্ত আমার কাছে চাও আমি বিপদমুক্ত করে দেব।’ লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য নবীজি (সা.) শেষের ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। হজরত আয়িশা (রা.) বলেন, ‘ওফাতের আগ পর্যন্ত প্রত্যেক রমজানের শেষের ১০ দিন রাসুল (সা.) ইতিকাফ করতেন।’ (বুখারি: ২৩২৬, মুসলিম: ১১৭২)। ‘কিন্তু তিনি যে বছর ওফাত পান, সে বছর ২০ দিন ইতিকাফ করেন।’ (বুখারি: ৪৯৯৮)। ‘রাসুল (সা.)–এর ওফাতের পরও তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করতেন।’ (বুখারি: ২০২৬, তিরমিজি: ৭৯০)।

লাইলাতুল ক্বদর:

আল্লাহ তা’য়ালা ইরশাদ করেন:

انّا انزلناہ فی لیلۃ القدر
– وما ادرٰک ما لیلۃ القدر –

لیلۃ القدر خیرٌ مّن الف
شھر – تنزّلُ الملٰئکۃ والرُّوح –

فیھا باذن ربّھم من کل امر
سلٰمٌ ھی حتّی مطلع الفجر –

নিশ্চয় আমি কুরআন অবতির্ণ করেছি মহিমান্বিত রাতে। আর মহিমান্বিত রাত কি জান?  মহিমান্বিত রাত সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম । সেই রাতে পেরেশতাগন ও রূহ অবতির্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি। রাত উষার আবির্ভাব পর্যন্ত।

বনি ইসরাইলের জনৈক মুজাহিদের ঘটনা:

ইবনে আবি হাতেম রহ. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সা: একদা বনি ইসরাঈলের জনৈক মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন। সে এক হাজার মাস পর্যন্ত অবিরাম জিহাদে লিপ্ত ছিল। কখনো অস্ত্র সংবরণ করেনি। এতদশ্রবনে সাহাবীগন বিস্মিত হয়ে পড়লে উক্ত সূরাটি অবতির্ণ হয়।  অন্য একটি বর্ণনা এভাবে এসেছে যে, বনী ইসরাঈলের জনৈক আবেদ পূর্ণরাত ইবাদতে কাটিয়ে সকাল হতেই জিহাদে মাশগুল থাকতেন।  বনী ইসরাঈলের ঐ আবেদের এক হাজার মাস ইবাদত ও জিহাদের চেয়ে লাইলাতুল ক্বদরের একরাতের  ইবাদত উত্তম

Thank you for reading the post.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top