কুরবানীর বিধান ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
মাওঃ মুহাঃ নাছির উদ্দিন
কনটেন্টটি জুমার বয়ান থেকে লেখিত।
কুরবানীর বিধান ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
আজ ৯ই জিলহজ্ব অর্থাৎ আরাফার দিন, (কনটেন্টটি যে দিন লেখা হয়েছে ঐদিনটি ছিল ৯ জিলহজ্ব) বছরের শ্রেষ্ঠ একটি দিন। যে দিনের রোজা একজন মানুষের এক বছর আগের ও এক বছর পরের সমস্ত গুনাহকে ক্ষমা করে দিতে পারে। আজকের দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমার বিশ্বাস, সকল মুসল্লী এই দিনের রোজা রেখেছেন। আজ আমরা আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করব, কান্নাকাটি করব যেন আমাদের রোজাকে, আমাদের এবাদতকে কবুল করে নেন এবং আমাদের সব গুনাহকে ক্ষমা করে দিয়ে আমাদেরকে পবিত্র করে নেন। আগামীকাল আমাদেরকে কুরবানী করতে হবে। আল্লাহর
পথে উৎসর্গ বা আল্লাহর রাস্তায় বিসর্জন দিতে হবে। কুরবানীর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ইতোপূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন হযরত ইব্রাহীম (আঃ)কে পরীক্ষা করেছিলেন আর সে পরীক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব করে দেয়া হয়েছে।
কোরআনে প্রথম কোরবানীর ইতিহাসঃ হাবিল ও কাবিল।
সূরা মায়েদার ২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরবানী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। আল্লাহ পাক বলেন:
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ ابْنَيْ آدَمَ بِالْحَقِّ
হে নবী, আপনার উম্মতের কাছে আপনি বর্ণনা করুন আদম (আঃ) এর দুজন পুত্রের কাহিনী। হযরত আদম (আঃ) এর সন্তান আমরা সকলে। তবে এখানে সরাসরি দু‘জন সন্তানের কথা বলা হচ্ছে। এই দুজনের ঘটনা আপনি আপনার উম্মাহর কাছে তুলে ধরুন সঠিকভাবে। এখানে بالحق সঠিকভাবে একটি শব্দ যােগ করা হয়েছে। কারণ, প্রাচীন কালের ঐতিহাসিক ঘটনা বর্ণনা করতে লোকেরা অতিরঞ্জন করে, যা ঘটেনি তাও তারা বর্ণনা করে। এজন্য ঐতিহাসিক ঘটনা বর্ণনা করার ক্ষেত্রে সঠিকভাবে বর্ণনা করার জন্য, সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য আল্লাহর নবীকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রাচীন কালের অনেক ঘটনা বর্ণনার ক্ষেত্রে অতি মাত্রায় অনেক ধরনের গীতি-গান, অনেক ধরনের গজল কাওয়ালী প্রচলিত আছে। প্রাচীন কালের অনেক ঘটনা মানুষ বানিয়ে বানিয়ে লোকজনকে আকৃষ্ট করার জন্য বর্ণনা করত। এই জন্যআল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার নবীকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, সাবধান! সঠিকভাবে বর্ণনা করতে হবে। হযরত আদমের দুই সন্তান কারা? এই দুই সন্তান সম্পর্কে তাফসীরের কিতাবে আছে, এক জনের নাম ছিল কাবিল, আরেক জনের নাম হাবিল। আল্লাহ বলেন|
اِذْ قَرَّبَا قُرْبَانًا
এই দুই সন্তানই আল্লাহর নিকট কুরবানী দিয়েছে। কোরবান অর্থ কি?
আল্লাহ পাক কুদরতীভাবে ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। হযরত আদমের ঔরশে এবং হাওয়ার গর্ভে একই সাথে দু জন বাচ্চা আসবে। একটি ছেলে আরেকটি মেয়ে। এভাবে প্রতি গর্ভে দুটি সন্তান প্রসবিত হত। নিয়ম ছিল একই গর্ভে যে দুজন আসবে তারা ভাই-বােন, আর ভাই-বােনের বিয়ে জায়েয নেই। এখন বিয়ে কাকে করবে? পরবর্তী গর্ভে যে দুজন সন্তান আসবে তাদের মধ্যেও একজন ছেলে, অপরটি মেয়ে হবে। এই গর্ভের ছেলে পূর্বের গর্ভের মেয়েকে বিয়ে করবে এবং সে গর্ভের ছেলে এই গর্ভের মেয়েকে বিয়ে করবে। অর্থাৎ একই গর্ভের দু‘জনকে ভাই-বােন ধরা হত, তাদের পারস্পরিক বিয়ে নিষিদ্ধ ছিল। প্রয়ােজনের কারণে এভাবে নির্দেশ দেয়া হল যে, বিয়ের ব্যবস্থা এক গর্ভের ছেলে আরেক গর্ভের মেয়ের সাথে হবে। এই নিয়মে দেখাগেল, কাবিলের সাথে যে মেয়ে জন্মলাভ করেছে সে মেয়ে ছিল অত্যন্ত রূপবর্তী, সুন্দরী আর হাবিলের সাথে যে মেয়ে জন্ম লাভ করল সে ছিল কুশ্রী, অসুন্দরী। কাবিলের মনে একটি প্ররােচনা জাগল, আমার সাথে যে মেয়ের জন্ম হয়েছে আমি তাকে বিয়ে করব, কারণ, সে রূপবতী। হাবিল কেন তাকে বিয়ে করবে? আর হাবিলের সাথে যে মেয়ে জন্ম লাভ করেছে সে কুশ্রী। আমি কেনতাকে বিয়ে করতে যাব? আমার সাথে একই গর্ভে যে মেয়ে জন্মলাভ করেছে আমিই তাকে বিয়ে করবো।
যার যার কুরবানী রেখে আসা হত, হঠাৎ করে আকাশ থেকে একটি অগ্নি প্রবাহ আসত। এসে যার কুরবানীকে স্পর্শ করে জ্বালিয়ে ফেলে মনে করা হবে তার কুরবানীকে আল্লাহ কবুল করেছেন। আর যে কুরবানীকে অনল স্পর্শ করবেনা, ধরে নেয়া হবে আল্লাহ সেগেুলোকে কবুল করেননি। কাবিল আর হাবিল দুই ভাই আল্লাহর রাস্তায় কুরবানী করে পাহাড়ের চূড়ায় রেখে আসল, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে অগ্নি স্ফুলিঙ্গ এসে কাবিলের কৃষিপণ্যকে স্পর্শ না করে হাবিলের ভেড়া যা তিনি আল্লাহর রাস্তায় কুরবানী দিয়েছিল, পুড়িয়ে দিয়েছে। বুঝা গেল হাবিলের কুরবানী আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে
কিন্তু কাবিলের কুরবানী আল্লাহ কবুল করেননি। সূরা মায়েদাতে আল্লাহ বলেন-
فَتُقُبِّلَ مِنْ اَحَدِھِمَا وَ لَمْ یَتَقَبَّلْ مِنَ الْآخَرِ – قَالَ لَاَقْتُلَنَّکَ –
দুই ভাইয়ের মধ্যে এক ভাইয়ের কুরবানীকে কবুল করা হল, আরেক ভাইয়ের কুরবানীকে কবুল করা হলনা। তাহলে হযরত আদম (আঃ) সুন্দরী মেয়েকে বিয়ের জন্য যে মাপকাঠি নির্ধারণ করেছিলেন সে মাপকাঠি অনুযায়ী তাকে বিয়ে করতে পারে হাবিল, কাবিল বিয়ে করতে পারছেনা। তখন কাবিলের মাথায় আরাে জেদ চেপে বসল। সে বলল, لاقتلنّک হে হাবিল! তোমার কারণে আমি সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করতে পারলামনা, তোমার কারণে আমার কুরবানীও কবুল হলনা তাই আমি তোমাকে হত্যা করব, আমি এর প্রতিশোধ কল্পে.অবশ্যই অবশ্যই তোমাকে হত্যা করব। শক্তি, সামর্থ্য সব ছিল কাবিলের।
মায়েদাতে এই ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন
قَالَ إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللهُ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ –
“যার অন্তরে আল্লাহর ভয়-ভীতি, আল্লাহর ভালবাসা আছে এই ধরণের লােকের কুরবানীই একমাত্র আল্লাহ কবুল করেন। তাহলে বড় গরু দিয়ে কুরবানী করলে যে কুরবানী কবুল হয়ে যাবে তার কোন গ্যারান্টি নেই। ছােট কোন জন্তু কুরবানী দিলে তা কবুল হবে না
لَنْ يَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَلَا دِمَائُهَا
আল্লাহর গোস্তের ক্ষুধা লাগেনি, আল্লাহর রক্তের পিপাসা জাগেনি। আল্লাহ চান না যে, হাজার হাজার জন্তু কুরবানী করা হউক আর আল্লাহ রক্তপান করবেন ও গোস্ত খাবেন। গোস্ত তোমরাই খাবে।
وَلٰكِنْ يَّنَالُهُ التَّقْوٰى مِنْكُمْ
আল্লাহ তোমাদের অন্তরকে চান কে শুধু মাত্র আল্লাহকে রাজী করার জন্য, আল্লাহর ভয়ে তার হুকুম পালন করার জন্য কুরবানী করেছে, এটা আল্লাহ দেখবেন এবং সে অনুযায়ী আল্লাহ ফলাফল দান করবেন। কাজেই কুরবানীর লক্ষ হল তাক্ওয়া, আল্লাহর ভয়। এটা নয় যে, আমি কুরবানী করব, আগে বাজারে গিয়ে কয়েকদিন পর পর গোস্ত ক্রয় করতে হত, এখন কুরবানীকৃত গোস্ত ফ্রীজে রেখে দেব এবং ওখান থেকে আস্তে আস্তে খাব আর একমাস বাজার না করলেও চলবে। আল্লাহ চান না যে, কুরবানী করে ফকিরদের লাইন ধরিয়ে গোস্ত বিতরণ করবো, এটাও চাননা। দাপটের কারণে, বড়ত্বের কারণে যদি আল্লাহ। কুরবানী করতেন, তাহলে আল্লাহ কাবিলের কুরবানী কবুল করতেন। আল্লাহ পাক বলেন, নিরীহ সাধারণ ব্যক্তি, যার দাপট নেই, কথা বলার সামর্থ নেই এই ধরণের একজন লোক ছিল হাবিল তার কুরবানীকেই আমি কবুল করলাম। কারণ তার ভিতরেই ছিল তাকওয়া, আল্লাহ ভীতি এবং আল্লাহকে রাজী করার দৃঢ় প্রত্যয়। কাবিল যখন বল্ল, لاقتلنّک আমি তোমাকে হত্যা করব, তোমার জন্য অমি সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে পারছি না। তোমার কারণে আমার কুরবানীও কবুল হল না আমি তোমাকে হত্যা করব। তখন হাবিল কি উত্তর দিল?
হাবিলের উত্তর:
لَاِنْ م بَسَطْتَّ إِلَىَّ يَدَكَ لَتَقْتُلَنِيْ مَا أَنَا بِبَاسِطٍ يَدِيَ إِلَيْكَ لِأَقْتُلَكَ
জন্য আসবে তার পরেও আমি তোমাকে মারতে যাবনা। কারণ
اِنِّيْ أَخَافُ اللهَ رَبَّ الْعٰالَمِيْنَ –
আমি আল্লাহকে যিনি বিশ্ব জগতের পরওয়ারদেগার, প্রতিপালক, তাকে ভয় করি। আমি তার ভয়েই তোমার দিকে আমার হাতকে প্রসারিত করবনা।
কেননা আল্লাহ নিজেই ঘোষনা করেছেন,
কোরবানীর প্রতিদান:
হযরত যায়েদ ইবনে আরকম (রাজি.) বলেন
قال اصحاب رسول الله صلعم ما هذه الأضاحي يا رسول الله
صلعم
হে আল্লাহর রাসূল, কুরবানী কি? এটা কোথা থেকে এসেছে? তখন আল্লাহর রাসূল
উত্তর দিলেন
سنة ابيكم ابراهيم عليه السلام
এই কুরবানী হল তোমাদের আদি পিতা হযরত ইব্রাহীম
(আঃ) এর আদর্শ, সুন্নাত। এই আদর্শকে অনুসরণ করার জন্য আল্লাহ তোমাদের
উপর কুরবানীকে ওয়াজিব করেছেন। তোমরা কুরবানী করবে।
قالو فمالنا فيها یا رسول الله
আমরা জম্ভ কুরবানী করব তাতে আমরা কি পাব ? আমাদের প্রতিদান কি
হবে?
قال بکلّ شعرۃ حسنۃ
মানুষ সারা জীবন যত জন্তু কুরবনী করেছিল আল্লাহ সব গেুলোকে একটা জন্তুতে পরিণত করবেন। সে জন্তুর উপর সে আরোহন করে পুলসিরাত পার হয়ে যাবে। এই কুরবানীর জন্তু আমার একটা যানবাহন। কঠিন সময় জন্তুগুলো আমার বাহন হবে এই নিয়ত করে আল্লাহর রাস্তায় কুরবানী করতে হবে। কোন জম্ভ কোরবানী জায়েয ? নিয়তকে সচ্ছ-পরিচ্ছন্ন করে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে আমার সামর্থ অনুযায়ী বাজার থেকে সুন্দর দেখে আমাকে জন্তু কুরবানী করতে হবে।
لا يضحي بالعمياء والعوراء والعرجاء التي لا تمشي إلى
المنحر ولا العجفاء ولا تجزئ مقطوعة الأذن والذنب ولا التي – ذهب اكثر أذنها فإن
بقي الاكثر من الأذن والذنب جاز ويجوز أن يضحي بالجماء والخصي والجرباء والأولاء
কোন অন্ধ গরু-ছাগল কুরবানী করা যাবেনা। দুই চোখ নষ্ট হয়ে গেছে বা এক চোখ নষ্ট হয়েগেছে এরকম কোন জন্তু কুরবানী করা যায়না। ঐ গরুকেও কুরবানী করা যাবেনা যার চার পাথেকে যে কোন একটা পা নষ্ট, পঙ্গু হেটে যেতে পারে না এবং সে গরু ছাগল কুরবানী করাযাবেনা যাদের হাড্ডি শুকিয়ে গেছে। এত ক্ষীণকায়, এত দুর্বল যে হাড্ডির মগজ পর্যন্ত শুকিয়েগেছে। এ জাতীয় কোন গরু ছাগল দিয়ে কুরবানী করা যাবেনা। লেজহীন বা লেজের অধিকাংশকাটা এ রকম জল্পর কুরবানী জায়েজ হবেনা। অথবা কান কাটা জন্তু জবাই করা যাবেনা।হাঁ সে জন্তু দিয়ে কুরবানী করা যাবে যে গেুলোকে খাসি করা হয়েছে। যে জন্তুর চামড়ায় সামান্যএকটু দাগ লেগেছে তা দিয়ে কুরবান করা যায়। অথবা যে জন্তু পাগলের মত হয়ে গেছে এদিকও দিক ছুটাছুটি করে বা মস্তিষ্ক বিকৃত হয়ে গেছে এই জাতীয় গরু ছাগল দিয়ে কুরবানী হয়েযাবে। ফেকাহর কিতাবে স্পষ্ট আছে।
কুরবানীর জন্তু জবাই:
নিজের জন্তু নিজেই জবাই করব, নিজের কুরবানী নিজে জবাই করা মোস্তাহাব। কারণ, আমি আল্লাহর রাস্তায় কুরবানী করব এবং আমি নিজেই জন্তুর গলায় ছুরি দিয়ে জবেহ করব। এজন্য খেয়াল করতেহবে আমাদের কুরবানীর জন্তু আমরা নিজেরা এবং শরীকের কুরবানীর জন্য যে কোন একজন জবেহকরব। ইসলাম কোন পাদ্রীবাদের ধর্ম নয়। আল্লাহর রাস্তায় কুরবানী করব সেখানে ইমামকে ডেকেআনতে হবে। মােয়াজ্জিনকে ডেকে আনতে হবে। জবাই করা এমন কোন বিষয় নয় যে আমি পারবনা।গলার যে নালি আছে ওটা কাটতে হবে, দুটো বড় রগ আছে তা কাটতে হবে আরেকটি খাদ্যনালী আছেতা কাটতে হবে। এই চারটি জিনিষ কাটা গেলে জবাই হয়ে যাবে। চারটার মধ্যে তিনটাও যদি কাটা যায়জবেহ হয়ে যাবে। ছুরিকে ভাল করে ধারিয়ে নিতে হবে। হাদীস শরীফে আছে যে, তোমরা যখন জন্তুজবাই করবে তখন ভাল করে জবাই করবে।» بسم اللہ اللہ اکبر বিসমিল্লাহি আল্লাহ আকবর বলে জন্তুকে কুরবানী করতে হবে।জবাই করার লম্বা কোন দোয়া নেই যে, অনেক লম্বা দোয়া আছে এজন্য আমরা মুখস্ত করতে পারব না। কাজেই আমরা সর্বাপেক্ষ ভালটি করার চেষ্টা করব। কোন জিনিষ কিনতে গেলে আমরা দেখে দেখে ভাল কোয়ালিটির পণ্য কিনতে চেষ্টা করি। কুরবানীর সময়ও নিজের হাতে জবাই করা এক নম্বর। আমরা দুই নম্বরে কেন যাব। বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় সব মানুষ দাড়িয়ে আছে এক ঘন্টা আধঘন্টা পার হয়ে যাচ্ছে।
ইমাম সাহেব আসার জন্য অপেক্ষা। ইমাম সাহেবের অবস্থাতা তো বলার অপেক্ষা রাখেনা, রক্তাক্ত জামা এবং রক্ত মাখা ছুরি নিয়ে পুরা এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন, ঘাম ঝর ঝর। অথচ মোস্তাহাব হল সে দিন জবেহর আগে কিছু না খাওয়া এবং কুরবানীর গোস্ত দিয়ে প্রথম খাওয়া।১২ যাতে আল্লাহর জিয়াফতকে আপনি আগ্রহের সাথে গ্রহণ করেন। শুধু শুধু দেরিতে জবেহ করার কারণে আপনি হতে পারে ক্ষুধা সইতে না পেরে খাওয়া দাওয়া শুরু করলেন। আপনি মোস্তাহাবের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হলেন। এজন্য আমি সবাইকে অনুরোধ করব আমরা নিজেরাই জবাই করব। আবার আশে-পাশের মসজিদের ইমামরা যাতে এটা মনে না করেন যে, আমার এ বক্তব্যের কারণে তাদের রিযিকের উপর একটা আঘাত আসছে। জবাই না করলেও ইমামদেরকে ঈদের শুভেচ্ছা হিসেবে কিছু দিতে পারেন। আলেমদের সম্মান তো অনেক উপরে। তাদেরকে যে কোন সময় যে কোন উপহার আপনারা দিতে পারেন। আবার এটাও ঠিক নয় যে, বিভিন্ন এলাকায় একটা দর নির্ধারণ করে দেয়া হয়। গরু জবাই এত টাকা, ছাগল জবাই এত টাকা, মহিষ জবাই এত টাকা, এভাবে রেট করার সিষ্টেমও ইসলামে নেই। কারণ কুরবানীততা আল্লাহকে রাজী। করার জন্য। তাই আমরা নিজেরাই জবেহ করব।
ঈদের দিনের আমল
ঈদের দিন খুব ভোরে উঠা মোস্তাহাব। ভোরে উঠে মসজিদে জামাত আদায়ের জন্য চেষ্টা করতে হবে। পরে ঈদগাহে আসার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। গোসল করা মোস্তাহাব কোন অসুবিধা থাকলে অযু করতে হবে। মেসওয়াক প্রতি দিনের সুন্নাত, সে দিন বিশেষ ভাবে সুন্নত। নুতন জামা বা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন জামা পরিধান করা ও আনন্দ প্রকাশ। করা মোস্তাহাব। সুগন্ধি-আতর ইত্যাদি ব্যবহার করাও মোস্তাহাব। কোন সেন্ট যেগুলো অ্যালকোহল যুক্ত, ব্যবহার করলে অসুবিধা নেই তবে আতর ব্যবহার করা উত্তম। তাকবীরে তাশরীক পড়ে পড়ে ঈদগাহে যাওয়া মোস্তাহাব। এক রাস্তায় ঈদগাহে যাওয়া আরেক রাস্তায় আসা এটাও মোস্তাহাব। ঈদগাহের দিকে আসার সময় জোরে জোরে তাকবীর বলতে হবে।
لله اكبر الله أكبر لا اله الا الله الله اكبر الله اكبر
ولله الحمد
অথবা আল্লাহর প্রশংসা, হামদ ইত্যাদি পাঠ করে ঈদগাহে আসতে হবে। ঈদের জামাত খোলা ময়দানে পড়া মোস্তাহাব। আল্লাহর রাসূল পুরা জীবন খোলা ময়দানে ঈদের জামাত আদায় করেছেন। কুরবানী হল আল্লাহর একটা হুকুম। এই তিন দিন কোন রোজা রাখা যাবেনা, তিনদিন পর্যন্ত কুরবানীর গোস্ত খাওয়া মোস্তাহাব। ঈদের দিন যদি কেউ কুরবানী করতে না পারে, ঈদের পর দিন বা তার পর দিন কুরবানী করা যায়।
চামড়ার বিধানঃ
কুরবানী করার পর জম্ভর সব কিছু আমি গ্রহণ করতে পারব। চামড়া, হাড্ডি, শিং ইত্যাদিও ব্যবহার করতে পারব। আল্লাহ বলেন
فكلو منها وأطعموا البائس الفقير
কুরবানী করার পর নিজে খাও এবং ফকিরকেও খাওয়াও। এ জন্য ফেকাহের কিতাবে আছে মাংসকে তিনভাগে ভাগ করা মোস্তাহাব। এক ভাগ নিজের জন্য নিজের পরিবারের জন্য, আরেক ভাগ আত্মীয়দের জন্য এবং আরেক ভাগ ফকির-মিসকিনদের জন্য। যাদেরকে আমরা কাজের জন্য নিয়োগ করব গোস্ত দিয়ে তাদেরকে পারিশ্রমিক দিলে কুরবানী হবেনা। মনে করেন, আপনি জবেহ করার জন্য, খাল চামড়া ছাড়ানোর জন্য লোক। নিয়োগ করেছেন। তাকে বেতন দিতে হবে। হাঁ, আপনি যদি তাকে কিছু
T?reading the post.