কুরবানীর জন্তু যবাই করার পদ্ধতি।
০১.যবাইয়ের সময় জন্তুকে কিবলামুখী করে শুয়ে দিতে হবে। একান্ত অসুবিধা ব্যতীত এর উল্টো করবে না। (মাহমূদিয়া ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩০)।
(কুরবানীর যাবতীয় মাসআলা 👉 এখানে ক্লিক করুন)
০২.কিবলামুখী করে শোয়ানোর পর ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার‘ বলে যবাই করা ওয়াজিব। যে যবাই করবে তার জন্যই, এটা বলা যরুরী; অন্যান্য লোকদের জন্য নয়, যদি তারাও বলে তাহলে দোষ নেই। ইমদাদুল ফাতওয়া : ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৪০)
0৩. যদি যবাই করনেওয়ালাকে কেউ সাহায্য করে, যেমন- তার হাতের ওপর হাত রাখে তাহলে দুজনেরই বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার‘ বলা যরুরী । (ফাতাওয়ায়ে শামী ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২১২)। ২১৯. যদি উল্লিখিত দু’জনের একজনে ‘বিসল্লিাহ্’ বলে অন্যজনে না বলে, তাহলে জন্তু হালাল হবে না। (শামী ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২১২)।
০৪. আল্লাহর নাম ব্যতীত অন্য নাম দ্বারা যবাই করলে উহা হালাল হবে না। ফাতাওয়ায়ে শামী ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১২)। কুরবানী করার সময় মুখে নিয়ত করা যরুরী নয়; বরং মনে মনে যদি এতটুকু খেয়াল করে যে, আমি আল্লাহর ওয়াস্তে কুরবানী করছি এবং মুখে কিছু উচ্চারণ না করে, তাহলেও যথেষ্ট। হ্যাঁ, মৌখিক দোয়া পড়া মুস্তাহাব। (ফাতাওয়ায়ে শামী ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯৮) |
০৫. যখন জন্তুকে পশ্চিমমুখী করে শোয়ানো হয়, তখন এ দোয়া পড়বে :
إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضَ حَنِيْفًا وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ. إِنَّ صَلَاتِی وَنُسُکِیْ وَمَحْيَایَ وَمَمَاتِيْ رَبِّ الْعٰلَمِيْنَ. لَا شَرِيْكَ لَهٗ وَبِذٰلِكَ أُمِرْتُ وَاَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ. اللّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ. (سورة انعام
و مشکٰوۃ)
৬.অতঃপর ‘বিসমিল্লাহ আল্লাহু আকবার‘ পাঠ করে যবাইয়ের কাজ সমাধা করবে, তারপর এ দোয়া পাঠ করবে
اللّٰهُمَّ تَقَبَّلْ مِنِّیْ کَمَاتَقَبَّلْتَ مِنْ حَبِيْبِكَ وَخَلِيْلِکَ إِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَامِ
–
৭. যদি অন্যের পক্ষ থেকে কুরবানী করা হয়, তাহলে مِنِّی এর স্থলে مِنْ فُلَانٍ وَ فُلَانٍ
কয়টি রগ কাটতে হবে
৮. যবাইয়ের মধ্যে চারটি রগ কাটা যরুরী। রগগুলোর নাম যথা-
حلقوم – مری – ودجان – وجین (হলকুম, মরী, ওয়াদজান, ওয়াজীন)
৯. এ চারটি রগের মধ্যে যদি তিনটি কেটে যায়, তাহলেও কুরবানী দুরস্ত (জায়েজ) হবে, এর কম হলে হবে না। (ইমদাদুল ফাতওয়া : ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৩৭)।
১০. যবাই করার সময় জন্তুর মাথা একাবরে যেন পৃথক করা না হয়। কেননা, এরূপ করা মাকরূহ। (মাহমূদিয়া ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩২৪)
১১.আল্লাহ না করুক এরূপ যদি হয়েই যায়, তাহলে কুরবানী হারাম হবে না। হালালই থেকে যাবে; কিন্তু কাজটা মাকরূহ। (ফাতুয়ায়ে মাহমূদিয়া)
১২। এভাবে যবাই করার পরই তৎক্ষণাৎ চামড়া খোলা মাকরূহ। বরং ঠাণ্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। (ফাতাওয়ায়ে মাহমূদিয়া : ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৯৮)।
১৩. যবাইর সময় জন্তুর গলার ওপর পা রাখা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
১৪. উটের বেলায় সুন্নাত হলো নহর করা। অর্থাৎ পা বেঁধে দাঁড় করিয়ে ধারাল বর্শা অথবা ছুরি গলদেশে ঢুকিয়ে রক্ত প্রবাহিত করে দেয়া। উট ব্যতীত অন্যান জন্তুর বেলায় যবাই করা সুন্নাত। যুবাইর সময় ‘বিসমিল্লাহ‘ বলতে ভুলে গেলে, যবাইর পর স্মরণ হওয়ামাত্র যদি বিসমিল্লাহ’ পড়ে নেয়, তাহলে হানাফীদের মতে জন্তু হালাল। (ইমদাদুল ফাতওয়া : তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৫৮) |
১৫. লোক দেখানো ও সু-নামের জন্য যদি কুরবানী করা হয়, তাহলেও ওয়াজিব থেকে মুক্তি পাবে, কিন্তু কুরবানীর সাওয়াব পাবে না। সাওয়াবের জন্য নিয়তের বিশুদ্ধতার প্রয়োজন। (ফাতাওয়ায়ে শামী ৫ম
১৬. যদি ইচ্ছাকৃত ‘বিসমিল্লাম’ ও ‘আল্লাহু আকবার‘ বলা ছেড়ে দেয়,তাহলেও কুরবানী ও গোশত কোনোটিই হালাল ও শুদ্ধ হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিদায়া : ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৯)
১৭. ঘাড়ের ওপর হতে যবাই করার দ্বারা চারটি রগ কাটা গেলে ওই যবাইও শুদ্ধ হবে। অভিজ্ঞতার দ্বারা প্রতীয়মান যে, এভাবে যবাই করলে চারটি রগ কাটা যায় না। তাই এরূপে যবাই করলে বিশুদ্ধ না হবার সম্ভাবনায় বেশি। (ফাতাওয়ায়ে মাহমূদিয়া ও ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৯৭)
Thank you for reading the post.