মুসলমানের ছয়টি হক ( রযব মাসের ১ম খুৎবাহ: মুসলমানদের হক্ব সম্পর্কে)
الخطبة الاولٰی لشهر رجب في حقوق المسلمین
মুসলমানের হক্ব সম্পর্কে
اَعوذ باللہ من الشیطان الرّجیم 0
بسم الله الرحمن الرّحيم 0
(1) الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره (2) ونعوذ بالله من شرور انفسنا
(1) সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার, আমরা তাঁহারই গুণকীর্তন করিতেছি এবং তাঁহারই। সাহায্য চাহিতেছি
(2) এবং আমরা আমাদের প্রবৃত্তির কুচক্র হইতে বাঁচিবার জন্য,আল্লাহর সাহায্য ভিক্ষা করিতেছি।
(3) من يهد الله فلا مضل له ومن يضللہ فلا هادي له
(৩) আল্লাহ পাক যাহাকে হেদায়েত করেন কেহ তাহাকে গোমরাহ করিতে পারে না, পক্ষান্তরে বান্দা নিজ ইচ্ছায় গোমরাহ হইবার জন্য দৃঢ় হইবার পর আল্লাহ যদি তাহার জন্য গোমরাহী নির্ধারণ করেন তবে আর কেহ তাহাকে হেদায়েত করিতে পারে না।
(4) ونشهد أن لا اله الا الله وأن محمدا عبده ورسوله صلى الله – عليہ وعلى الہ وسلم ارسله بالحق بشيرا ونذيرًا بين يدي الساعة –
(৪) আমরা সাক্ষ্য দিতেছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কেহই উপাস্য নাই এবং মুহাম্মদ (দঃ) আল্লাহরই বান্দা এবং রাসূল । আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের পূর্বে তাঁহাকে সত্য (ইসলাম) সহ সুসংবাদদাতা এবং ভীতি প্রদর্শক করিয়া পাঠাইয়াছেন।
(5) مَنْ یُّطِعِ اللّہَ وَ رَسُوْلَہٗ فَقَدْ رَشَدَ – وَ مَنْ یَّعْصِھِمَا فَقَدْ غَوٰی –
(৫) যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁহার রাসূলকে মান্য করিল সে জ্ঞানীর কাজ করিল, আর যে ব্যক্তি
(6) اَمّا بَعْدُ : فَيَا أَيُّهَا الْإِخْوَانُ فِي الدِّينِ – اَرْشَدَكُمُ اللهُ الْمَتِين اَدُّوْا حُقُوْقَ الإخْوَانِ الْمُسْلِمِينَ . فَإِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم –
حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللهُ فِي حَاجَتِهِ – وَمَن فَرَّجَ عَن مُّسلمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ
(৬) হে দ্বিনী ভাইগণ! জবরদস্ত আল্লাহ পাক আপনাদিগকে সৎপথে পরিচালিত করুন। আপনারা মুসলমান ভাইগণের হক আদায় করুন। রাসূলুল্লাহ (দঃ) বলিয়াছেন,- এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই, সে তার প্রতি জুলুম করিবে না এবং তাহাকে শত্রুর নিকট সমর্পণ করিবে না। যে মুসলিম অপর ভাইর বিপদ দূর করার চেষ্টা করে আল্লাহ তায়ালা তাহার বিপদ দূর করিয়া দেন, যে মুসলিম অপর কোন মুসলিম ভাইর একটি কষ্ট দূর করিয়া দেন, আল্লাহ পাক তাহার কিয়ামতের কষ্ট সমূহের একটি কষ্ট দূর করিয়া দিবেন, আর যদি কোন মুসলিম অপর মুসলিমের দোষ ঢাকিয়া ফেলে আল্লাহ পাক কিয়ামতে তাহার পাপ ঢাকিয়া ফেলিবেন— বুখারী, মুসলিম।
(7) وَقَالَ عَلَيْهِ السَّلَامُ – وَالَّذِي نَفْسِى بِيَدِهِ لَا يُؤْمِنْ عَبْدٌ حَتَّى يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِه . متفقٌ عَلَيْهِ.
(৭) হুযূর (দঃ) বলেন, –আমি আল্লাহর কসম করিয়া বলিতেছি, কোন ব্যক্তি নিজের জন্য যাহা পছন্দ করে তাহা অপর ভাইয়ের জন্য যতক্ষণ পর্যন্ত পছন্দ না করিবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে
পূর্ণ মু‘মিন হইতে পারিবে না।— বুখারী, মুসলিম।
(8) وَعَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – اَلْمُؤْمِنُونَ كَرَجُلٍ وَاحِدٍ – إِنِ اشْتَكَى عَيْنَهُ اشْتَكَى كُلَّهُ –
(৮) হুযূর (দঃ) বলেন, দুনিয়ার সকল মুসলমান মিলিয়া একজন মানুষের মত, যদি তাহার চক্ষু যন্ত্রণা প্রাপ্ত হয়, তবে তাহার সর্বশরীর যন্ত্রণাপ্রাপ্ত হয়, এইরূপ যদি তাহার মাথা আক্রান্ত হয় তবে তাহার সব শরার যন্ত্রণায় অধার হয়। — মুসালম।
(9) وَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلوةُ وَالسَّلَامُ – إِنَّ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ- يَقُولُ أَنَا ثَالِثُ الشَّرِكَيْنِ مَالَمْ يَخْنُ أَحَدُهُمَا صَاحِبَهٗ –
(৯) হাদাসে কুদসীতে বর্ণিত আচে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, – যতক্ষণ পর্যন্ত দুইজন অংশীদারের একজন অপর জনের খেয়ানত না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তাহাদের সহিত মিলিত থাকি, আর যখন একে অন্যের খেয়ানত করে তখন আমি তাহাদের মধ্য হইতে সরিয়া যাই।— আবু দাউদ।
(10) وَعَنْهُ عَلَيْهِ السَّلَامَ – مَلٌعُونٌ مَّنْ ضَارَّ مُؤْمِنًا وَ مَكَرَبِهِ – رَوَاهُ التِرْمِذِى –
(১০) হুযূর (দঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কোন মু‘মিনের ক্ষতি করে কিম্বা ধোকা দেয় সে অভিশপ্ত। —তিরমিজী ।
(11) وَقَالَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – مَنْ خَبَّبَ زَوْجَةَ امْرَءٍ وَمَمْلُوكَہٗ فَلَيْسَ مِنَّا – رَوَاهُ الْبُخَارِى –
(১১) হুয়ুর (দঃ) বলেন,- যে ব্যক্তি কাহারও স্ত্রী বা গোলামকে ভাগাইয়া দেয় সে আমাদের নহে।—বুখারী ।
(12) وَقَدْ جَاءَ فِي الْحَدِيثِ – إِنَّ رَجُلًا شَكٰى إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَسْوَةَ قَلْبِهِ قَالَ امْسَحْ رَأسَ الْيَتِيمِ وَأَطْعِيمِ الْمِسْكِيْنَ – رَوَاهُ أَحْمَدُ –
(১২) হাদীসে আছে,- এক ব্যক্তি নিজের অন্তরের কাঠিন্য সম্পর্কে হযরত (দঃ) এর নিকট অভিযোগ করিলে হযরত (দঃ) বলিলেন,— স্নেহভরে এতিমের মাথায় হাত বুলাও এবং কাঙ্গালিদিগকে খাদ্য দান কর।— আহমদ।
(13) وَعَنْهُ عَلَيْهِ السَّلَام يُغْفَرُ لِلشَّهِيدِ كُلُّ ذنبٍ اِلَّا الدَّيْنَ – رَوَاهُ مُسْلِمٌ –
(১৩) হুযূর (দঃ) বলেন,– শহীদ ব্যক্তির সকল পাপই মাফ হইবে কিন্তু ঋণ মাফ হইবে না।— মুসলিম।
(14) وَعَنْهُ عَلَيْهِ الصَّلَوةُ وَالسَّلَامُ – مَنْ كَانَ لَهُ عَلٰى رَجُلٍ حَقٌّ فَمَنْ أَخَّرَهُ كَانَ لَهُ بِكُلِّ يَوْمٍ صَدَقَةً – رَوَاهُ أَحْمَدُ –
(১৪) হুযূর (দঃ) বলেন,-যে ব্যক্তি তাহার দেনাদারকে কিছুটা সময় দেয় তাহার আমলনামায় প্রত্যেক দিন একটি করিয়া ছদকাহ লিখিত হয় – আহমদ ।
( 15) وَقَدْ جَاءَ – فِى الْخَبَرِ – لَعَنَ رَسُولُ اللهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ الْوَالِدِ وَوَلَدِهِ – وَبَيْنَ الْآخِـ
(১৫) হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি পিতাপুত্রে ও ভাইয়ে ভাইয়ে বিচ্ছেদ ঘটায়, হুযূর (দঃ) তাহাকে লা‘নাত করেন। • ইবনু মাজাহা ।
(16) وَعَنْهُ عَلَيْهِ الصَّلٰوۃُ و السَّلَامُ – لِلْمُؤْمِن عَلَى الْمُؤْمِن سِتُّ خِصَالِ – يَعُودُهٗ إِذَا مَرِضَ – وَيَشْهَدُهُ إِذَا مَاتَ –
(১৬) হুযূর (দঃ) বলেন, এক মু‘মিনের প্রতি অপর মু‘মিনের ছয়টি হক রহিয়াছে— রোগাক্রান্ত হইলে তাহার দেখা শুনা করিবে, মৃত্যুপ্রাপ্ত হইলে তাহার জানাজায় উপস্থিত হইবে, দাওয়াত করিলে কবুল করিবে, দেখা হইলে ছালাম করিবে, হাঁচি শুনিলে “ইয়ারহামকুমুল্লাহ” বলিবে এবং সম্মুখে পিছনে সকল সময় তাহার কল্যাণ কামনা করিবে।— নাছায়ী।
(17) نَسْئلُ اللهَ الْعَظِيمَ . أَنْ يُمِيْتَنَا مُؤْمِنِينَ –
(১৭) আল্লাহ পাকের নিকটে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদিগকে আমাদের ঈমানের হালতে মৃত্যু দান করেন ।
( 18) بَارَكَ اللهُ لَنَا وَلَكُمْ فِي الْقُرْآنِ الْعَظِيمِ –
(১৮) আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ কুরআনের বরকত আমাদিগকে ও আপনাদিগকে দান করুন।
( د) أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ –
(১৯) বিতাড়িত শয়তানের প্রতারণা হইতে বাঁচিবার জন্য আল্লাহ তায়ালার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করিতেছি।
(20) إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصٌلِحُوْا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ – وَاتَّقُوا الله لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ –
(২০) নিশ্চয়ই সকল ম‘মিন পরস্পর ভাই ভাই, তোমরা তোমাদের ভাইদের পরস্পরের মধ্যে সৌহার্দ্য স্থাপন করিয়া দাও এবং আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর তাহা হইলে তোমরা দয়াপ্রাপ্ত হইবে । আল- কুরআন
এক মুমিনের প্রতি অন্য মুমিনের ছয়টি হক:
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের ছয়টি হক রয়েছে। যাহা খুৎবাহতে উল্লেখ করা হল।
১। অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাবে।
২। মারা গেলে তার জানাযায় হাজির হবে।
৩। তাকে ডাক দিলে সে সাড়া দিবে। (দাওয়াত কবুল করবে যদি দাওয়াত ইসলাম সম্মত হয়। )
৪। যখন সাক্ষাৎ হবে তখন তাকে সালাম করবে। (সালামের নিয়ম কানুন)
৫। হাঁচি দিলে তার জবাবে দু’আ করবে (ইয়ার হামুকাল্লাহ্ এর জবাবে- ইয়াহদি কুমুল্লাহ।)
৬। এবং উপস্থিত-অনুপস্থিত সকল সময় তার কল্যাণ কামনা করবে। ( সূনান আত তিরমিজী: ২৭৩৭, মান-সহীহ)
হাদীসের রাবীর (বর্ণনাকারী সাহাবীর) পরিচিতি :
হাদিসের রাবী প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রা:। যিনি রাসূল সা: থেকে হাদিস বর্ণানার দিক থেকে সকলের উর্ধে। তাঁর বর্ণিত হাদিস সংখ্যা ৫৩৭৪টি।
নাম ও বংশ পরিচয় :
ইসলাম পূর্ববর্তী তার নাম ছিল আব্দু শামস (অরুণ দাস)। ইসলাম গ্রহণের পর রাসূল স: তার নাম পরিবর্তন করে রাখেন আব্দুর রহমান। এই নাম রাখার ফলে তিনি এতো বেশি খুশি হন যে তিনি রাসূল স: কে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমার পিতা-মাতা আপনার নামে কুরবানী হোক। তিনি আদ দাওসী গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন।
ইসলাম গ্রহণ :
তুফাইল ইবনে আমর আদ দাওসী রা: এর হাত ধরেই ইসলামে দীক্ষিত হন। ষষ্ঠ হিজরীতে যুবক আবু হুরায়রা রা: মদীনায় আগমন করেন এবং নিরবিচ্ছন্নভাবে রাসূল স: এর সাহচর্যে থাকেন তাঁর তেতে বিভিন্ন তারবিয়্যাত নেন। আর এর সুবাদেই তিনি হয়ে ওঠেন রাসূল স: এর সর্বাধিক হাদিস বর্ণানাকারী সাহাবী।
কুনিয়াত :
আব্দুর রহমান রা ইতিহাসে আবু হুরায়রা রা: নামেই প্রসিদ্ধ। এটি তার কুনিয়াত নাম। বলা হয়ে থাকে যে, তিনি একটি বিড়াল ছানা খুঁজে পান এবং তাকে লালন পালন করেন ও তার সাথে খেলাধুলা করতেন। কখনো তিনি এটিকে নিয়ে রাসূল (স:) এরে দরবারেও উপস্থিত হতেন। আর এটা দেখে তার সাথীগণ ও রাসূল স: তাকে আবু হুরায়রা (বিড়াল শাবক ওয়ালা বা বিড়াল ছানার মালিক ) বলে ডাকতেন। আর তখন থেকে তিনি এই নামেই প্রসিদ্ধ। (আসহাবে রাসূলের জীবন কথা।)
বিড়াল ছানার পিতা নাকি বিড়াল ছানাওয়ালা
বাংলাদেশ সহ এই অঞ্চলের মানুষগুলো জানেন যে, আবু হুরায়রা অর্থ বিড়াল ছানার পিতা। শুধু তাই নয়, পাঠ্যপুস্তকগুলোতেও এই অর্থটি গ্রহণ করা হয়েছে। যা একটি স্পষ্ট ভুল অর্থ। কারণ اَبٌ শব্দটি একবচন, যার বহুবচন হলো اَبُوْ (আবু) । যার অর্থ পিতা, মালিক, ওয়ালা, বিশিষ্ট, সত্বাধিকারী। পিতা অর্থ গ্রহণ করলে আবু হুরায়রা অর্থ দাড়ায় বিড়াল ছানার পিতা। কোন মানুষের পক্ষে বিড়ালের পিতা হওয়া অসম্ভব এবং তা শুনতেও বেমানান। কিন্তু যদি আবু হুরায়রা অর্থ বিড়াল ছানার মালিক, বা বিড়াল ছানা ওয়ালা নেওয়া হয়, তাহলে যথার্থ হবে। যেমন আমারা বলে থাকি মাছওয়ালা, রিক্সা ওয়ালা ইত্যাদি। তাছাড়া বুঝার সুবিধার্থে اَبُوْ (আবু) শব্দ যোগে আরো কিছু আরবী শব্দ তুলে ধরা হলো- اَبُوْ مِلْعَقَةُ অর্থ চামচের মতো ঠোঁট বিশিষ্ট এক প্রকার পাখি। اَبُوْمِنْقَارَ অর্থ সুঁচালো লম্বা মুখ ওয়ালা এক প্রকার পাখী। اَبُوْالنَّوْمِ অর্থ আফিম গাছ। [ মুজামুল ওয়াফী ] শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করলে হবে ঘুমের পিতা। আর এই শব্দগুলোতে আবু শব্দের অর্থ বিশিষ্ট, ওয়ালা ইত্যাদি বুঝিয়েছে। সুতরাং আবু হুরায়রা অর্থ হবে বিড়াল ছানা ওয়ালা বা বিড়াল ছানার মালিক।
মায়ের ইসলাম গ্রহণ:
আবু হুরায়রা রা: যখন ইসলাম গ্রহণ করেন তখন তার মা পৌত্তলিকতায় অটল ছিলেন । আবু হুরায়রা রা: তার মাকে প্রতিদিন ইসলাম গ্রহনের দাওয়াত দিতেন। কিন্তু তার মা তার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায় এবং রাসূল স: কে অশ্রাব্য ভাষায় গাল মন্দ করে। এতে আবু হুরায়রা রা: খুবই ব্যথিত হন এবং রাসূল স: দরবারে গিয়ে সব ঘটনা তিনি খুলে বলেন। রাসূল স: সবকিছু শুনে তার মায়ের ইসলাম গ্রহণেরম জন্য দুআ করেন। রাসূল স: দুআর বরকতেই আবু হুরায়রা রা: মা তার বাড়ি ফিরে যাওয়ার পূর্বেই শাহাদাহ পড়ে ইসলাম গ্রহণ করেন।
রাসূল স: সম্পর্কে তার মন্তব্য :
রাসূল স: কে আবু হুরায়রা রা: দু-একবার দেখে কখনো পরিতৃপ্ত হতেন না। তাই আবু হুরায়রা রা: রাসূল স: সম্পর্কে বলেন, “রাসূল স: অপেক্ষা অধিকতর সুন্দর ও দীপ্তিমান কোন কিছু আমি দেখিনি। তার চেহারায় যেন সূর্যের কিরণ ঝলমল করে।”
আবু হুরায়রা রা: জন্য রাসূল স: এর দুআ:
আবু হুরায়রা রা: বলেন, একদিন আমি রাসূল স: কে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আপনার অনেক কথাই শুনি, কিন্তু তার অনেক কথাই ভুলে যাই। একথা শুনে রাসূল স: বললেন, ‘তোমার চাদরটি মেলে ধর’। আমি মেলে ধরলাম। তারপর বললেন, ‘তোমার বুকের সাথে লেপ্টে ধর’। আমি লেপ্টে ধরলাম। এরপর থেকে আর কোন কথাই ভুলিনি। ইমাম বুখারী র: বলেন, আটশর মতো সাহাবী তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেন।
ইন্তেকাল :
অন্তিম কালে যখন তিনি রোগ শয্যায়, তখন তিনি আকুল হয়ে কাঁদছিলেন। তাকে কাঁদার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তোমাদের এ দুনিয়ার জন্য আমি কাঁদছিনা। কাঁদছি দীর্ঘ ভ্রমণ ও স্বল্প পাথেয়র কথা চিন্তা করে। যে রাস্তাটি জান্নাত ও জাহান্নামে গিয়ে পৌঁছেছে। আমি সেই দুই রাস্তার কোনটিতে যাব।
মুসলমানের হক সম্পর্কিত হাদিস :
لِلْمُؤْمِنِ عَلَى الْمُؤْمِنِ سِتُّ خِصَالٍ
অর্থাৎ একজন মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের ছয়টি অধিকার বা হক রয়েছে। আর এগুলো এমন কতগুলো অধিকার যার প্রত্যেকটি পৃথক পৃথক বিবেচনায় নিলে ইবাদতের দিক থেকে তার কোনটি সুন্নাত, কোনটি ওয়াজিবের পর্যায়ে পড়ে, ফরজের কাতারে নয়। কিন্তু একজন ব্যক্তি যখন ঈমানের ভিত্তিতে নিজেকে মুসলিম দাবী করে তখন তার ঈমানের দাবীই হলো অপর মুসলমানের প্রতি উল্লেখিত ছয়টি কর্তব্য পালন করা। আবার এগুলো কুরআন বা হাদীস কর্তৃক নির্ধারিত নিকট আত্মীয়দের জন্য কোন অধিকার নয়, বরং এটি আত্মীয়, অনাত্মীয়, ধনী-গরীব, পরিচিত-অপরিচিত সকল মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের ঈমানের দাবী যে, সে তার অন্য মুসলিম ভাই থেকে উল্লিখিত ছয়টি অধিকার লাভ করবে।
মূলত ইসলাম যেমন রক্তের বা বংশের সম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়েছে তার চেয়েও বেশি গুরুত্বারোপ করেছে ঈমানে ভিত্তিতে যে বন্ধন তৈরী হয়েছে তার ওপর।
يَعُودُهُ إِذَا مَرِض
অর্থাৎ যখন কোন মুসলিম অসুস্থ হবে তখন তাকে দেখতে যাবে। একজন মুসলিম অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া ও তার সেবা শুশ্রুষা করা অন্য মুসলিমের নৈতিক দায়িত্ব।
إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَا ابْنَ آدَمَ مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِي . قَالَ يَا رَبِّ كَيْفَ أَعُودُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ . قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ عَبْدِي فُلاَنًا مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ عُدْتَهُ لَوَجَدْتَنِي عِنْدَهُ يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَطْعَمْتُكَ فَلَمْ تُطْعِمْنِي . قَالَ يَا رَبِّ وَكَيْفَ أُطْعِمُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ . قَالَ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّهُ اسْتَطْعَمَكَ عَبْدِي فُلاَنٌ فَلَمْ تُطْعِمْهُ أَمَا عَلِمْتَ أَنَّكَ لَوْ أَطْعَمْتَهُ لَوَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي يَا ابْنَ آدَمَ اسْتَسْقَيْتُكَ فَلَمْ تَسْقِنِي . قَالَ يَا رَبِّ كَيْفَ أَسْقِيكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِينَ قَالَ اسْتَسْقَاكَ عَبْدِي فُلاَنٌ فَلَمْ تَسْقِهِ أَمَا إِنَّكَ لَوْ سَقَيْتَهُ وَجَدْتَ ذَلِكَ عِنْدِي
অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিনে বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমার খোজ-খবর রাখনি। সে বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি কী করে তোমার খোজ-খবর করব, অথচ তুমি সারা জাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, আর তুমি তার সেবা করনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি তার সেবা-শুশ্রুষা করলে তার কাছেই আমাকে পেতে।
মুসলমানের হক সম্পর্কে একটি কবিতা:
হাশরের দিন বলিবেন খোদা-
হে আদম সন্তান তুমি মোরে সেবা কর নাই যবেছিনু রোগে অজ্ঞান।
মানুষ বলিবে- তুমি প্রভু কর্তার,আমরা কেমনে লইব তোমার পরিচর্যার ভার?
বলিবেন খোদা- দেখনি মানুষ কেঁদেছে রোগের ঘোরে,তারি শুশ্রূষা করিলে তুমি যে সেথায় পাইতে মোরে।
সুতরাং প্রতিটি মুসলিমের উচিৎ রোগে শোকে অন্য মুসলিমের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া, তার খোজ খবর নেয়া, তাকে আর্থিক ও শারিরীকভাবে সহযোগিতা করা এবং তার সুস্থতার জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করা
Thank you for reading the post.