শবে মেরাজ, ‍Shobe Meraz, شب معراج،

 

Table of Contents

শবে মেরাজ এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ

শবে মেরাজ

ভূমিকা

نَحْمَدُهُ وَ نُصَلِّي عَلَى رَسُوْلِهِ الْكَرِيمِ أَمَّا بَعْدُ !قَالَ للهُ تَعَالَى : سُبْحَانَ الَّذِينَ أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلَا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ اٰيُتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ-

সত্তা খুবই পবিত্র, যিনি স্বীয় খাস বান্দা মুহাম্মাদ . কে রাত্রির এক সামান্য সময়ের মধ্যে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন। যার চারপাশে রেখে দিয়েছি বরকতসমূহ। যাতে করে আমি তাঁকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা (সূরা বনি ইসরাঈল, আয়াত-) সূরায়ে ইসরাতে মাসজিদে আক্বসা পর্যন্ত সফরের কথা উল্লেখ আছে। বাকিটা হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে।  মিরাজের ঘটনা হাদীস শরীফে প্রায় ২৫ জন সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত আছে। যেমন:-

(১) হযরত আনাস ইবনে মালিক রাঃ।

(২) হযরত আবু যর গিফারী।

(৩) হযরত মালিক ইবনে সা’সা রাঃ।

(৪) হযরত বুরায়দাহ আসলামী রাঃ।

(৫) হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাঃ।

(৬) হযরত আবু সাইদ খুদরী রাঃ।

(৭) হযরত সাদ্দাদ বিন আউস রাঃ।

(৮) হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ।

(৯) হযরত  আব্দুল্লাহ ইবনে মাস্উদ রাঃ।

(১০) হযরত আবু হুরায়রাহ রাঃ।

(১১) হযরত উম্মে হানী রাযিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা সহ আরো ১৪ জন।

মি’রাজ নাম করণ:

معراج শব্দের শাব্দিক অর্থ সিঁড়ি । মাফহুমী অর্থ উর্ধগমন বা উর্ধজগতের ভ্রমণ।  এর মাদ্দাহ হল: عروج কেননা হাদীস শরীফে বাক্যটি ثُمَّ عُرِجَ بِیْ  এভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। আমরা যে রকম ভাবে নিচ থেকে উপরে উঠতে শিড়ি ব্যবহার করি আর সিঁড়ির একস্তর থেকে আরেক স্তরে এরকম ভাবে উঠতে েউঠতে একেবারে চুড়ায় যাওয়া যায়।  আল্লাহর নবী সাঃ এর পুরা সফরটিও স্তরে স্তরে হয়েছে। অথবা এভাবেও বলতে পারি নাবী কারীম সাঃ আল্লাহ তা’য়ালার কুদরতী সিঁড়ির  মাধ্যমে  কিছু পথ অতিক্রম করেছেন। তাই এঘটনাকে মিরাজ নামে নাম করণ করা হয়।

ইমাম বুখারী রাঃ এর বর্ণনা:

ইমাম বুখারী রাঃ চহী বুখারী ২য় খন্ড – ৬৮৬ পৃষ্ঠা– কিতাবুত তাফসীর-রিচ্ছেদ নম্বর ০৮-হাদীস নম্বর ৩৮৮৮ এই পরিচ্ছেদের অধিনে সূরা বনি ইসরাইলের ৬০ নম্বর আয়াতের তাফসীর করেছেন।

وَمَا جَعَلْنَا الرُّؤْيَا الَّتِي أَرَيْنَاكَ إِلَّا فِتْنَةً لِلنَّاسِ

হে নবী মেরাজ রজনীতে আমি আপনাকে যে দৃশ্য দেখিয়েছি তা কেবল মানুষদের পরীক্ষার জন্য। বোঝা গেল মেরাজ সংগঠিত হয়েছিল মানুষদের পরীক্ষার জন্য। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেরাজ থেকে ফিরে এসে সফর-বিবরণ পেশ করলেন যারা পাকা মুমিন ছিল তারা বিশ্বাস করল।যারা ঈমানহারা ছিল তারা ওটাকে অস্বীকার করল। আর যারা কাচা নব মুসলিম ছিল তারাও এই ঘটনা শুনে মুরতাদ হয়ে গেল এবং ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ করে দিল। বোঝা গেল এ মিরাজ মানুষদের জন্য একটা পরীক্ষা ছিল যারা  মুমিন ছিল  তারা পরীক্ষায় পাশ করল,আর যারা ঈমানহারা বা কাঁচা ঈমানওয়ালা তারা পরীক্ষায় ফেল করল। সুরাবানি ইসরাইলের এই ষাট নম্বর আয়াতের তাফসীর বর্ণনা করেন ইমাম বুখারী রাহিমাহুল্লাহ মুফাসসির সম্রাট সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা থেকে নিজের সনদের বর্ণনা করছেন।

তিনি বলেছেন ھِیَ رُؤیَا عَینٍ মেরাজ রজনীতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যা দেখিয়েছিলেন তা ছিল প্রত্যক্ষভাবে চোখের দেখা স্বপ্ন যোগের দেখা নয়। বোঝা গেল আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মেরাজ হয়েছিল স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় এবং তিনি মিরাজের সফরে যা কিছু দেখেছিলেন তা প্রত্যক্ষভাবে চোখের দেখা দেখেছিলেন স্বপ্নযোগে দেখেননি এটা আমাদের আকিদা বা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা।  রাসূলূল্লাহ সা. তায়েফ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আল্লাহ তায়ালা তাঁকে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত স্বশরীরে জাগ্রত অবস্থায় এক রাতে ভ্রমণ করান। যাকেইসরাবলে, আর মসজিদে আকসা থেকে সিদরাতুল মুন তাহা পর্যন্ত ভ্রমণকে মেরাজ বলে । সাধারনত উভয়টাকেই মিরাজ বলে। 

মেরাজের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা:

রাসূলুল্লাহ সা. হাতিমে কাবায় শুয়ে ছিলেন। এমন সময় হযরত জিবরাঈল . অবতরণ করলেন। তিনি সেখান থেকে রাসূলুল্লাহ সা. কে যমযম কুপের কাছে নিয়ে যান এখানে রাসূলুল্লাহ সা.-এর বক্ষ বিদারণ করে যমযমের পানি দ্বারা ধৌত করেন স্বর্ণের একটি তশতরী আনা হয়, যা ঈমান হেকমত দ্বারা পূর্ণ ছিল ঈমান হেকমত রাসূলুল্লাহ সা.- এর অন্তরে ভরে বক্ষ মোবারক সেলাই করে দেয়া হয় এরপরবোরাকনামক একটি বাহন আনা হয়। যেটি খচ্চর থেকে ছোট এবং গাধার চেয়ে বড় সাদা বর্ণের ছিল যার গতি ছিল বিদ্যুত গতির চেয়েও বেশি   দৃষ্টির শেষ সীমায় এর কদম পড়ত (মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা৫২৬) আলোর গতি প্রতি সেকেন্ডে ১,৮৬,০০০ (এক লক্ষ ছিয়শি হাজার মাইল।) প্রায় তিন কোটির কাছাকাছি কিলোমিটার।  এই দৃষ্টিকোন থেকে বলতে পারি বোরাকের গতি ছিল প্রতি সেকেন্ডে ১,৮৬,০০০ (এক লক্ষ ছিয়শি হাজার মাইলের চেয়ে বেশি ।  রাসূলুল্লাহ সা. আরোহন করলে বোরাক খুশিতে লাফালাফি করতে থাকে এরপর রাসূলুল্লাহ সা.কে নিয়ে বোরাক রওয়ানা হয়ে যায়। হযরত জিবরাঈল . মিকাঈল . সফরে রাসূলুল্লাহ সা.-এর সাথে ছিলেন কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায়, বোরাকের ওপর রাসূলুল্লাহ সা.কে আরোহন করিয়ে হযরত জিবরাঈল . তাঁর পিছনে বসেন

মিরাজের  পথের কিছু ঘটনা:

হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- পথিমধ্যে এমন স্থান দিয়ে রাসূলুল্লাহ সা. গমণ করেন, যেখানে প্রচুর খেজুরগাছ ছিল । হযরত জিবরাঈল আ. সেখানে অবতরন করে নফল নামায আদায় করতে বললেন । রাসূলুল্লাহ সা. সেখানে নফল নামায পড়লেন এরপর হযরত জিবরাঈল  আ. বললেন, কোথায় নামায আদায় করলেন, তা কি আপনি জানেন ? রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, আমার জানা নেই ৷ হযরত জিবরাঈল আ. বললেন, আপনি ইয়াছরিব তথা মদীনা শরীফে নামায আদায় করলেন । এখানে আপনি হিজরত করে আসবেন ।এরপর সেখান থেকে আবার রওয়ানা করলেন । অন্য আরেকটি স্থানে গিয়ে জিবরাঈল আ. আবার নামায আদায় করতে বললেন । এখানেও নামায আদায় করার পর জিবরাঈল আ. বললেন, আপনি সাইনা উপত্যকায় সাজারায়ে মুসা এর নিকটবর্তী স্থানে নামায আদায় করেছেন । এখানে আল্লাহ  তায়ালা হযরত মুসা আ.- এর সাথে কথা বলেছিলেন চলতে চলতে আরেকটি স্থানে গিয়ে আবার নামায  পড়তে বললেন । রাসূলুল্লাহ সা. নামায আদায় করলেন । হযরত জিবরাঈল আ. বললেন, আপনি মাদায়েন শহরে নামায আদায় করেছেন । এটা হযরত শুয়াইব আ.- এর বাসস্থান ছিল এরপর বাইতুল লাহাম নামক স্থানে গিয়ে হযরত জিবরাঈল আ. আবারো রাসূলুল্লাহ সা. কে নামায আদায় করতে বলেন । এট ছিল হযরত ঈসা আ.-এর জন্মস্থান ।

অভূতপূর্ব সফর:

রাসূলুল্লাহ সা. বোরাকে আরোহণ করে চললেন পথিমধ্যে এক বৃদ্ধা মহিলার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন মহিলাটি রাসূলুল্লাহ সা.কে উচ্চস্বরে ডাক দিল হযরত জিবরাঈল . বললেন, আপনি সামনে অগ্রসর হন এদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করবেন না আরো কিছুদূর যাওয়ার পর এক বৃদ্ধ লোককে দেখতে পান। সেও রাসূলুল্লাহ সা.কে আহবান করে হযরত জিবরাঈল . বললেন, আপনি সামনে চলুন । সামনে চলতে চলতে একটি দলের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন তারা রাসূলুল্লাহ সা.কে এভাবে সালাম জানায়

السّلامُ عَلَيْكَ يَا أُولُ السّلامُ عَلَيْكَ يَا أَخِرُ السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا حَاشِرِ

হযরত জিবরাঈল . রাসূলুল্লাহ সা.কে সম্বোধন করে বললেন, আপনি সালামের উত্তর দিন

জিবরাঈল . সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনার ব্যখ্যা:

এরপর হযরত জিবরাঈল . সাথে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনার ব্যখ্যা দিলেন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধা মহিলাটি হলো দুনিয়া দুনিয়ার এমন অল্প বয়স অবশিষ্ট রয়েছে, যেমন বৃদ্ধা মহিলার অল্প বয়স অবশিষ্ট রয়েছে বৃদ্ধ পুরষটি ছিল শয়তান উভয়ের উদ্দেশ্য ছিল আপনাকে তাদের প্রতি আকৃষ্ট করা আর যারা আপনাকে সালাম দিল, তাঁরা হলেন হযরত ইবরাহীম ., হযরত মুসা . এবং হযরত ঈসা . সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন– ‘মেরাজের রাতে আমি মুসা .কে কবরের মধ্যে নামায আদায় করতে দেখেছি । আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন– ‘আমি মেরাজের রাতে হযরত মুসা ., দাজ্জাল এবং দোযখের দারোগা মালেককে দেখেছি দারোগা মালেক

মেরাজে যাওয়ার পথে রাসূলুল্লাহ সা. এমন কিছু মানুষের পাশ দিয়ে অতিক্রম করেন, যাদের নখ তামার মতো তারা তাদের চেহারা বক্ষকে নখ দিয়ে আচড়াচ্ছিল রাসূলুল্লাহ সা. হযরত জিবরাঈল . কে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি উত্তরে বললেন, এরা হচ্ছে ঐসব ব্যক্তি, যারা মানুষের গোশত খায় অর্থাৎ পরনিন্দা করে তাদের ইজ্জতসম্মানের ওপর আঘাত হানে ৷ এ সফরে রাসূলুল্লাহ সা. এক ব্যক্তিকে দেখতে পান, যে নদীতে সাতার কাটছে এবং পাথর খাচ্ছে । রাসূলুল্লাহ সা. হযরত জিবরাঈল আ.কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন, তারা সুদখোর ছিল । রাসূলুল্লাহ সা. আরেকটি গোত্রের নিকট দিয়ে গমণ করেন, যারা একই দিনে ফসল বপন করছে এবং একই দিনে তা কেটেও নিচ্ছে । কাটার পরে আবার আগের মত ক্ষেতে ফসল হয়ে যাচ্ছে। রাসূলুল্লাহ সা. হযরত জিবরাঈল আ.কে জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কারা? হযরত জিবরাঈল আ. বললেন, এরা আল্লাহর পথে জিহাদকারী । এদের একটি নেকী সাতশত নেকী থেকেও বেশী। এরা যা ব্যয় করে আল্লাহ তা’য়ালা তার প্রতিদানে এমনটি দান করেন ।

এ রাতে আরেকটি দলের নিকট দিয়ে রাসূলুল্লাহ সা. অতিক্রম করেন, যাদের মাথা পাথর দিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হচ্ছিল । পাথর আনতে আনতে তাদের মাথা আবার ঠিক হয়ে যাচ্ছিল । বিরতিহীন ভাবে এমনটি চলছিল । রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, এরা কারা? জিবরাঈল আ. বললেন, এরা হচ্ছে ঐ সমস্ত লোক, যারা ফরজ নামাযে গাফলতি করত । আরেকটি দলের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। এদের লজ্জাস্থানের সামনে ও পিছনে কাপড়ের টুকরা পেঁচানো রয়েছে । তারা উট-গরুর মত ঘাস খাচ্ছে এবং কাঁটা ও জাহান্নামের পাথর ভক্ষণ করছে । রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, এরা কারা? জিবরাঈল আ. বললেন, এরা হলো ঐ সকল লোক যারা পৃথিবীতে মালের যাকাত আদায় করেনি ।

 

আরেকটি দলের নিকট দিয়ে গেলেন, যাদের সামনে একটি ডেকচিতে পাকানো গোশত রয়েছে, আরেকটিতে কাঁচা বাসি গোশত রয়েছে তারা কাঁচা বাসি গোশত খাচ্ছে। পাকানো ভুনা গোশত খাচ্ছে না। রাসূলুল্লাহ সা. তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে হযরত জিবরাঈল . বলেন, এরা আপনার উম্মতের ঐসব লোক, যাদের নিকট হালাল এবং পবিত্র স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তারা ব্যভিচারী করত খারাপ মেয়েদের সাথে এবং পবিত্র স্ত্রী বলে রাত্রিযাপন করত এরা সমস্ত মহিলা, যাদের বৈধ এবং পবিত্র স্বামী থাকতে তারা ব্যভিচারী দুশ্চরিত্রবান পুরুষের সাথে রাত্রি যাপন করত এরপর রাসূলুল্লাহ সা. এমন একটি দলের পাশ দিয়ে যান, যারা কাঠের একটি বিরাট স্তুপ একত্রিত করছে কিন্তু তারা তা উঠাতে পারছে না  তবুও তারা না। কাঠ এনে এনে স্তুপ আরো বড় করছে রাসূলুল্লাহ সা. জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কেমন ঘটনা? হযরত জিবরাঈল . উত্তরে বললেন, এরা আপনার উম্মতের ঐসব ব্যক্তি যাদের উপর অন্যের হক এবং আমানতের বোঝা ছিল অথচ তারা তা আদায় করেনি তা সত্ত্বেও তারা আরো বোঝা নিজের ওপর জমা করেছে আরেকটি দলের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, যাদের জিহ্বা এবং পেট লোহার জিঞ্জির দ্বারা কাটা হচ্ছে সাথে সাথে আবার তা ঠিক হয়ে যাচ্ছে। এভাবেই বিরতিহীন চলছে শাস্তি। রাসূলুল্লাহ সা. জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কারা? হযরত জিবরাঈল . বললেন, এরা আপনার উম্মতের ঐসব ব্যক্তি, যারা অন্যদেরকে উপদেশ দিত, কিন্তু নিজেরা আমল করত না ।এরপর রাসূলুল্লাহ সা. এমন স্থান দিয়ে গমণ করেন, যেখানে খুবই ঠান্ডা এবং সুগন্ধযুক্ত বাতাস বইছিল। হযরত জিবরাঈল . বললেন, এটা বেহেশতের সুগন্ধি ।পরবর্তীতে দুর্গন্ধময় যুক্ত স্থান দিয়ে গমণকালে জিবরাঈল . বললেন, এটা জাহান্নামের দুর্গন্ধ

বাইতুল মুকাদ্দাসে অবতরণ:

রাসূলুল্লাহ সা. স্বশরীরে বাইতুল মুকাদ্দাসে পৌঁছে বোরাক থেকে অবতরণ করেন সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আনাস রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বোরাক স্থানে বেঁধেছিলেন যে স্থানে রাসূলগণ স্বীয় বাহনগুলো বেঁধেছিলেন। হযরত বাজ্জাজের সুত্রে বর্ণিত আছে যে, হযরত জিবরাঈল . একটি পাথরে আঙ্গুল দ্বারা ছিদ্র করে সেখানে বোরাক বেঁধেছিলেন ।এটা কোন আশ্চর্য্য বিষয় নয় যে, বোরাক বাঁধার ব্যাপারে তাঁরা উভয়ে শরিক ছিলেন। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে হয়ত সেই ছিদ্র বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, যা হযরত জিবরাঈল . আঙ্গুল দিয়ে খুলে দিয়ে ছিলেন এরপর রাসূলুল্লাহ সা. বাইতুল মুকাদ্দাসে প্রবেশ করেন এরপর দুই রাকাআত তাহিয়্যাতুল মসজিদ নামায আদায় করেন। হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাযি হতে বর্ণিত রাসূল সা. ইরশাদ করেন– “আমি এবং জিবরাইল আঃ উভয়ে মসজিদে প্রবেশ করি এবং আমরা উভয়ে দুই রাকআত নামায পড়ি রাসূলুল্লাহ সা.-এর শুভাগমণের প্রেক্ষিতে অভ্যর্থনা জ্ঞাপনের জন্য হযরত আম্বিয়ায়ে কেরামগণ আগে থেকেই সেখানে অপেক্ষা করছিলেন এদের মধ্যে হযরত ইবরাহীম ., হযরত মুসা . এবং হযরত ঈসা . ছিলেন খুব অল্প সময়ে অনেক আম্বিয়ায়ে কেরাম মসজিদে আকসায় একত্রিত হন

একজন মুআযযিন আযান দেন এবং একামত বলেন সবাই সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যান। সকলেই অপেক্ষায় ছিলেন, কে ইমামতি করবে হযরত জিবরাঈল . রাসূলুল্লাহ সা.-এর হাত ধরে তাঁকে সামনে যাওয়ার অনুরোধ জানান সবাই রাসূলুল্লাহ সা.-এর পেছনে নামায আদায় করেন নামায করে শেষে জিবরাঈল . জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি জানেন যে, কাদের ইমামতি করলেন? রাসূলুল্লাহ সা. বললেন– “না, আমি জানি না জিবরাঈল . বললেন, পৃথিবীতে যত নবীরাসূল আগমণ করেছিলেন, আপনি তাঁদের সকলের ইমামতি করলেন সবাই আপনার পেছনে নামায আদায় করেছেন (ইবনে আবি হাতিম) আরেকটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, রাসূলের শুভাগমণের প্রেক্ষিতে আকাশ থেকে ফেরেশতাগণও অবতরণ করেছিলেন তাঁরাও রাসূলের পেছনে নামায আদায় করেছেন। নামায শেষে ফেরেশতাগণ হযরত জিবরাঈল . কে জিজ্ঞাসা করেন, আপনার সাথে ব্যক্তিটি কে? হযরত জিবরাঈল . উত্তরে বলেন– “আমার সাথের ব্যক্তিটি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

অন্য একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়, হযরত জিবরাঈল . উত্তরে বলেছিলেন, তিনি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. খাতামুন নাবিয়্যন ফেরেশতাগণ জিজ্ঞেস করেন, তাঁকে আসার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে কি? জিবরাঈল . বললেন, হ্যাঁ, নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ফেরেশতাগণ বললেন, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সুস্থ অবস্থায় জীবিত রাখুন তিনি আমাদের উত্তম ভাই এবং আল্লাহর খলীফা।এরপর রাসূলুল্লাহ সা. নবীগণের সাথে সাক্ষাত করেন সবাই আল্লাহর পবিত্রতা প্রশংসা করেন

হযরত ইবরাহীম ., হযরত মুসা ., হযরত দাউদ ., হযরত সুলাইমান ., হযরত ঈসা . সহ অনেকের প্রশংসা কিতাবে বর্ণিত আছে সবশেষে রাসূলুল্লাহ সা. আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করেন

রাসূলুলস্নাহ সা.-এর প্রশংসার বর্ণনা করে।

الحمدُ للهِ الَّذِي أَرْسَلَى رَحْمَةً لِلْعَالَمِيْنَ وَكَافَّةً لِلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا ، وَانْزِلَ عَلَى ا. الْفُرْقَانَ فِيْهِ بَيَانَ لِكُلِّ شَيْ. وَجَعَلَ أُمَّتِي خَيْرَ أُمَّةٍ أَخْرَجَتْ لِلنَّاسِ وَجَعَلَ أُمَّتِي هُم الأولِينَ وَالْآخِرِينَ – وَشَرَحَ لِي صَدْرِى وَوَضَعَ عَلَى وَذَرِي وَرَفَعَ فِي ذِكْرِي وَجَعَلَنِي فاتحا و خاتماً .

 ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য, যিনি আমাকে দুজাহানের রহমত হিসেবে পাঠিয়েছেন সমস্ত জগৎবাসীর জন্য সুসংবাদ প্রদানকারী ভীতি প্রদর্শনকারী হিসেবে সৃষ্টি করেছেন আমার ওপর পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করেছেন, যাতে দ্বীনের সমস্ত বিষয় বর্ণিত হয়েছে আমার উম্মতকে শ্রেষ্ঠ উম্মত বানিয়াছেন। তাদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তাদেরকে মর্যাদার দিক দিয়ে প্রথম এবং আত্মপ্রকাশের দিক দিয়ে শেষ উম্মত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। আমার বক্ষ প্রসারিত করেছেন। আমার গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন আমার আলোচনা সর্বাপেক্ষা সমুন্নত করেছেন। নবুওয়তের দিক দিয়ে আমাকে শুরু বানিয়েছেন এবং পৃথিবীতে আগমণের দিক থেকে সর্বশেষ নবী হিসেবে পাঠিয়েছেন।রাসূলুল্লাহ সা.-এর প্রশংসাবাণী শেষ হলে হযরত ইবরাহীম . সমস্ত নবীদেরকে সম্বোধন করে বলেন

هٰذَا فَضَّلَكُمْ مُحَمّدٌ صلى الله عليه وسلم

উল্লেখিত গুণাবলীর কারণেই মুহাম্মাদ সা. তোমাদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন রাসূলুল্লাহ সা. খুতবা শেষ করে বাইরে আসেন তখন তাঁর সামনে তিনটি পেয়ালা পেশ করা হয়। একটিতে পানি, একটিতে দুধ আরেকটিতে ছিল মদ রাসূলুল্লাহ সা. তিনটির মধ্যে দুধের পেয়ালা বেছে নেন হযরত জিবরাঈল . বলেন, আপনি স্বভাবগত দ্বীন বেছে নিয়েছেন আপনি যদি শরাবের পেয়ালা নিতেন, তবে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হত । আর পানির পেয়ালা নিলে আপনার উম্মত পানিতে ডুবে যেত ।কোন কোন হাদীসে বর্ণিত আছে, মধুর পেয়ালাও পেশ করা হয়েছিল তিনি সেখান থেকে কিছু পানও করেছিলেন

আসমানে আরোহণ:

উল্লেখিত ঘটনাবলী সংঘটিত হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সা. হযরত জিবরাঈল . অন্যান্য ফেরেশতাদের সাথে আসমানে আরোহণ করেন মসজিদে আকসা থেকে বের হওয়ার পর যমরদ যবরযদের তৈরী একটি জান্নাতের সিঁড়ির মাধ্যমে আসমানে আরোহণ করেন ফেরেশতাগণ রাসূলের ডানে বামে ছিলেন ইবনে ইসহাক বলেন, একজন নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী আমার নিকট বর্ণনা করেছে যে, হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাযি. বলতেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা.কে কথা বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, বাইতুল মুকাদ্দাসে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদী সম্পন্ন করার পর একটি সিঁড়ি আমার জন্য নিয়ে আসা হয়  এর চেয়ে উত্তম সিঁড়ি আমি কখনো দেখিনি । এটা হচ্ছে ঐ সিঁড়ি, যা দ্বারা আদম সন্তানের রূহসমূহ আসমানে উত্তোলন করা হয় এবং মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি তার মৃত্যুকালীন সময় ঐ সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে । আমার সফরসঙ্গী হযরত জিবরাঈল আ. আমাকে ঐ সিঁড়ির ওপর আরোহন করান । এভাবে আমি আসমানের একটি দরজা পর্যন্ত পৌঁছি, যাকে ‘বাবুল হাফাযাবলা হয় । হাফেজ ইবনে কাসির রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বাইতুল মুকাদ্দাসের আনুষাঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করার পর ঐ সিঁড়ি দিয়ে আসমানে তাশরীফ নিয়ে যান এবং বোরাক মসজিদে আকসার দরজায় বাঁধা থাকে । আসমান থেকে ফিরে এসে সেই বোরাকে আরোহণ করে রাসূলুল্লাহ সা. মক্কা শরীফে ফিরে আসেন ।

নবীগণের সাথে সাক্ষাৎ:

প্রথম আসমানে পৌঁছার পর হযরত জিবরাঈল আ. দরজা খুলে দিতে বলেন । দরজা খুলে দেয়া হয়। প্রহরী জিজ্ঞেস করেন, আপনার সাথে আর কে আছে ? হযরত জিবরাঈল আ. বলেন, আমার সাথে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা. আছে । আবার জিজ্ঞাসা করেন যে, তাঁকে কি আহবান করা হয়েছে? তিনি বলেন হ্যাঁ । এ কথা শুনে ফেরেশতাগণ ধন্যবাদ দেন এবং দরজা খুলে দেন । রাসূলুল্লাহ সা. সেখানে প্রবেশ করে একজন বুযুর্গ ব্যক্তি দেখতে পান । হযরত জিবরাঈল আ. বলেন, এ ব্যক্তি আপনার পিতা হযরত আদম আ. । আপনি তাঁকে সালাম করুন । রাসূলুল্লাহ সা. তাঁকে সালাম করেন । আদম আ. সালামের উত্তর দেন এবং বলেন-

 مَرْحَباً بِالابْنِ الصّالِحِ و النّبِيِّ الصّالِحِ

ধন্যবাদ নেককার সন্তান এবং নেককার নবীর প্রতি । হযরত আদম আ. রাসূলুল্লাহ সা.-এর জন্য মঙ্গল কামনা করেন । এখানে রাসূলুল্লাহ সা., আদম আ.-এর ডানে ও বামে কিছু আকৃতি দেখতে পান । হযরত আদম আ. ডানে তাকালে সন্তুষ্ট হয়ে হাসেন । আর বামে তাকালে ক্রন্দন করেন । হযরত জিবরাঈল আ. বলেন, ডান দিকে তাঁর নেক সন্তানদের আকৃতি । তারা আসহাবে ইয়ামিন ও জান্নাতবাসী । রাসূলুল্লাহ সা.ও তাদেরকে দেখে আনন্দিত হন। আর যারা বামে আছে, তারা গুনাহগার সন্তানদের আকৃতি । তারা আসহাবে শিমাল ও দোযখবাসী । রাসূলুল্লাহ সা.ও তাদেরকে দেখে কষ্ট পান এবং ক্রন্দন করেন । হযরত আবু হুরাইরা বাযি. থেকে ‘মুসনাদে বাযযারগন্থে বর্ণিত আছে যে, হযরত আদম আ.- এর ডান দিকে দরজা রয়েছে । সেখান থেকে প্রচুর সুগন্ধি নির্গত হয়। আর বাম দিকে অন্য একটি দরজা রয়েছে । সেখান থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। রাসূলুল্লাহ সা. ডানে দেখলে আনন্দিত হতেন আর বামে দেখলে মনঃক্ষুণ্য হতেন । এরপর রাসূলুল্লাহ সা. দ্বিতীয় আসমানে তাশরীফ নিয়ে যান । জিবরাঈল আ. আসমানের দরজা খুলে দেয়ার নির্দেশ দেন । এখানেও প্রথম আসমানের মত প্রশ্নোত্তর হয়। দ্বিতীয় আসমানে হযরত ইয়াহইয়া আ. ও ঈসা আ.কে দেখতে পান । জিবরাঈল আ. না তাঁদেরকে সালাম করতে বলেন। রাসূলুল্লাহ সা. সালাম করেন। তাঁরা সালামের উত্তরে বলেন

مرْحَبًا بِالْآخِ الصَّالِحِ والنَّتِي الصَّالِحِ

ধন্যবাদ নেককার ভ্রাতা এবং নেককার নবীর প্রতি ।

এরপর রাসূলুল্লাহ সা. তৃতীয় আসমানে গিয়ে হযরত ইউসুফ আ.-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। চতুর্থ আসমানে গিয়ে হযরত ইদরিস আ., পঞ্চম আসমানে হযরত হারুন আ.-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন । ষষ্ঠ আসমানে গিয়ে হযরত মুসা আ.-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
সপ্তম আসমানে হযরত ইবরাহীম আ.-এর সাথে সাক্ষাত করেন। সপ্তমাকাশে দেখলেন
, বাইতুল মামূরের দেয়ালে হেলান দিয়ে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) বসে আছেন । বাইতুল মামুর হচ্ছে ফেরেশতাদের কেবলা । ইহা কাবা শরীফ সোজা উপরে সপ্তম আসমানে অবস্থিত। প্রতিদিন সত্তর হাজার ফেরেশতা সেখানে তাওয়াফ করেন । একবার তাওয়াকারী দ্বিতীয়বার সুযোগ পান না । সেখানে হযরত ইবরাহীম আ.-এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। জিবরাঈল আ. তাঁকে সালাম করতে বলেন । রাসূলুল্লাহ সা. সালাম করলে ইবরাহীম আ. উত্তরে বলেন-

مرحبًا بِالابْنِ الصَّالِحِ وَالنَّتِي الصَّالِحِ

‘ধন্যবাদ নেককার সন্তান এবং নেককার নবীর প্রতি।

সিদরাতুল মুনতাহা:

সপ্তম আসমানের পর রাসূলুল্লাহ সা.কে সিদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যাওয়া হয় । এটি সপ্তম আসমানের ওপর একটি বৃক্ষ । পৃথিবী থেকে সবকিছু সিদরাতুল মুনতাহায় গিয়ে থেমে যায় । তারপর সেখান থেকে উপরে উড্ডয়ন করে । ‘মালায়ে আলাতথা উর্ধ্ব জগত
হতে যেসব জিনিস নিচে আসে
, তা সিদরাতুল মুনতাহায় এসে উপস্থিত হয়। এরপর নিচে অবতরণ করে । এজন্য এর নাম হয়েছে  সিদরাতুল মুনতাহা রাসূলুল্লাহ সা. এখানে হযরত জিবরাঈল আ. কে তাঁর আসল আকৃতিতে দেখেন এবং আল্লাহ তা’য়ালা অভুতপূর্ব নূর ও তাজাল্লী প্রত্যক্ষ করেন । সেখানে তিনি অসংখ্য ফেরেশতা এবং স্বর্ণের কীটপতঙ্গ অবলোকন করেন, যা সিদরাতুল মুনতাহা বেষ্টন করে রয়েছে। সিদরাতুল মুনতাহা থেকে রাসূলুল্লাহ সা. উর্ধ্বোলোকে গমন করেন এবং এমন উঁচুস্থানে পৌছেন, সেখানে তিনি صریف الاقلام ‘সরীফুল আকলামশোনেন । লেখার সময় কলমের যে শব্দ হয়, তাকে ‘সরীফুল আকলাম’ বলে । এখানে মানুষের ভাগ্য লেখার কাজে ফেরেশতাগণ নিয়োজিত আছেন। তাঁরা বিভিন্ন বিষয়াদী এবং হুকুম-আহকাম লাওহে মাহফুয থেকে লিপিবদ্ধ করেন । যেমন সূরায়ে নাজমে উল্লেখ আছে।

ثُمَّ دَنا فَتَدَلّٰی এবং وَلَقَدْ رَاٰہُ نَزْلَۃً اُخْرٰی – عِنْدَ سِدْرَۃِ الْمُنْتَھٰی

এই আয়াত সম্পর্কে আম্মাজান আয়েশা রাঃ বলেন। এখানে জিবারাইল আঃ কে দেখা উদ্দেশ্য। রাসূল সাঃ এর খিদমতে  জিবরাইল আঃ মানুষের সূরতে আসতেন । সিদরাতুল মুনতাহায় আল্লাহর রাসূল সাঃ জিবরাইল আঃ কে আসলী সূরতে ছয়শত ডানা সহ দেখতে পান।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহুর তাফসীরঃ

فَکَانَ قَابَ قَوْسَیْنِ اَوْ ادْنٰی এবং رَاٰی مِنْ اٰیٰتِ رَبِّہِ الْکُبْرٰی

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু আনহু এই আয়াতের তাফসীরে বলেছেন যে এখানে হযরত জিবরাইল আঃ  নিকটবর্তি হওয়া এবং রাসূল সাঃ তাকে আসলী সূরতে দেখাই উদ্দেশ্য।

 জান্নাত ও জাহান্নাম:

জান্নাত সিদরাতুল মুনতাহার নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত । পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-

عنْدَ سِدْرَةِ الْمُنْتَهَى عِنْدَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَى

সিদরাতুল মুনতাহার নিকট জান্নাতুল মাওয়া অবস্থিত ।

হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বাইতুল মামুরে নামায আদায় করে সিদরাতুল মুনতাহায় চলে যান । সিদরাতুল মুনতাহা থেকে বেহেশতের দিকে গমণ করেন । বেহেশত ভ্ৰমণ করার পর তাঁকে দোযখ দেখানো হয় ।

আল্লাহ তায়ালার তাজাল্লী:

এরপর আল্লাহ তায়ালার নূরানী পর্দাসমূহ অতিক্রম করে তাঁর দরবারে পৌছে যান । রাসূলুল্লাহ সা.-এর আরোহণের জন্য রফরফ (সবুজ রং বিশিষ্ট মখমলের সিংহাসন) আসে। তিনি তাতে আরোহণ করে আল্লাহ তায়ালার এমন নিকটে
পৌঁছেন যে
, মাঝে দুই ধনুক পরিমান বা তার চেয়েও কম ব্যবধান থাকে । কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায়, রাসূলুল্লাহ সা. কোন মাধ্যম ছাড়া আল্লাহর সাথে কথা বলেন। এসময় আল্লাহ তায়ালা প্রিয় হাবীবের উম্মতের জন্য পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করেন। 

মেরাজের রাতে আল্লাহ তা’য়ালা তিনটি নেয়ামত দান করেন:

সহীহ মুসলিম শরীফের হাদীসে বর্ণিত আছে, আল্লাহ তায়াল রাসূলুল্লাহ সা.কে মেরাজের রাতে তিনটি নেয়ামত দান করেন । এক. পাঁচ ওয়াক্ত নামায । দুই. সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত । তিন. উম্মতে মুহাম্মদীর কোন ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করলে, তিনি তার সকল কবীরা গুনাহ মাফ করে দিবেন । রাসূলুল্লাহ সা.কে আল্লাহ তায়ালা যেসব হুকুম আহকাম দিয়েছিলেন, তন্মধ্যে পাঁচওয়াক্ত নামায সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ।  স্বানন্দে তিনি প্রত্যাবর্তন করছিলেন । পথে হযরত ইবরাহীম আ.-এর সাথে দেখা হয় । তিনি কোন মন্তব্যকরেননি । কিন্তু মুসা আ.-এর সাথে সাক্ষাত হলে তিনি বলেন, আল্লাহর নিকট থেকে কি নিয়ে এলেন ? রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, দিনে-রাতে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়েছে । এটা নিয়ে আমি আসছি। মুসা আ. বলেন, বনী ইসরাঈল সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা রয়েছে । আপনার উম্মত দুর্বল। তারা এত বেশী নামায আদায় করতে সক্ষম হবে না। অতএব আপনি আল্লাহর কাছে গিয়ে আবেদন করুন, যেন কিছু নামায কমিয়ে দেন । রাসূলুল্লাহ সা. আল্লাহ তায়ালার দারবারে গিয়ে কিছু নামায কমিয়ে দেয়ার আবেদন পেশ করেন ।আল্লাহ তায়ালা পাঁচ ওয়াক্ত নামায কমিয়ে দেন। এরপর মুসা আ.-এর কাছে এলে তিরি পুনরায় একই কথা বলেন । রাসূলুল্লাহ সা. আবার আল্লাহ তায়ালার দারবারে গিয়ে আরো কিছু নামায কমিয়ে দেয়ার আবেদন জানান। এভাবে নয়বার রাসূলুল্লাহ সা. মুসা আ.-এর সাথে সাক্ষাত করেন এবং আল্লাহর দরবারে ফেরত যান । নয়বারে পাঁচ ওয়াক্ত করে কমিয়ে দেয়ার পর অবশিষ্ট থাকে মাত্ৰ পাঁচ ওয়াক্ত । তখনও মুসা আ. বলেন, আরো কিছু কমিয়ে নিয়ে আসুন ।

কিন্তু রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, নয়বার আবেদন করেছি। এখন আর আবেদন করা আমি লজ্জার বিষয় মনে করছি । রাসূলুল্লাহ সা. এ জবাব দিয়ে চলে আসেন । তখন গায়েব থেকে একটি আওয়াজ আসে যে, পাঁচ ওয়াক্ত নামায নেকীর দিক থেকে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সমান হবে । আমার কথার মধ্যে কোন পরিবর্তন নেই আমার ইলমে এটা ছিল যে, নামায মূলত পাঁচ ওয়াক্তই হবে । কিন্তু নেকী হবে পঞ্চাশ ওয়াক্তের । বিশেষ হিকমতে এটা অবলম্বন করা হয়েছে ।

সকাল হওয়ার আগেই মক্কা শরীফে প্রত্যাবর্ত:

রাসূলুল্লাহ সা. আসমান থেকে প্রত্যাবর্তন করেন । বাইতুল মুকাদ্দাসে অবতরণ করেন। সেখান থেকে বোরাকে আরোহণ করে সকাল হওয়ার আগেই মক্কা শরীফে পৌঁছেন । সকালে কুরাইশদেরকে মেরাজের ঘটনা বর্ণনা করেন । তারা শুনে আশ্চার্য হয় । কেউ
কেউ উপহাস করে বলে
, একই রাতে বাইতুল মুকাদ্দাস গমণ করে সেখান থেকে প্রত্যাবর্তন করে কীভাবে? যেসব ব্যক্তি বাইতুল মুকাদ্দাস দেখেছিল, তারা রাসূলুল্লাহ সা. কে পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন প্রশ্ন করে । আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ সা.-এর সামনে বাইতুল মুকাদ্দাস এনে উপস্থিত করেন । তাদের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দেন। কোন প্রশ্নেই তারা তাঁকে ঠেকাতে পারেনি। সবশেষে কাফেররা রাস্তার ঘটনাবলী জানতে চায়। রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, পথে অমুক স্থানে সিরিয়া হতে মক্কাগামী একটি ব্যবসায়িক কাফেলার সাথে আমার সাক্ষাত হয়। তাদের একটি উট হারিয়ে গিয়েছিল, যা পরে পাওয়া গেছে । ইনশাআল্লাহ, তিন দিন পর ঐ কাফেলা মক্কায় পৌছবে । ধূসর বর্ণের একটি উট সামনে থাকবে । পরবর্তীতে দেখা যায়, উল্লেখিত অবস্থায় সেই কাফেলাটি মক্কায় পৌঁছে এবং তারা তাদের একটি উট হারিয়ে যাওয়ার কথাও বলে ।

সূর্য থেমে গেছে:

ইমাম বাইহাকী রহ. মেরাজ সংক্রান্ত একটি হাদীস বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছিলেন, সিরিয়া থেকে মক্কাগামী ব্যবসায়ী কাফেলাটি বুধবার সন্ধ্যা অবধি এসে পৌঁছবে । বুধবার সন্ধ্যা । সূর্য ডুবে যাবে প্রায় এখনও সেই কাফেলাটি মক্কায় পৌঁছেনি। রাসূলুল্লাহ সা. আল্লাহর দরবারে দুআ করলেন । আল্লাহ তায়ালা কিছুক্ষণের জন্য সূর্যকে থামিয়ে রাখেন । এভাবে সেই কাফেলা রাসূলুল্লাহ সা.-এর কথা অনুযায়ী ঐ দিন সন্ধ্যায় মক্কা শরীফে পৌঁছে । ঐতিহাসিকগণ এটিকে ‘হাবসে শামছ’ নাম দিয়ে থাকে । এভাবে আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ সা.-এর সত্যবাদিতা প্রকাশ করেন। কিন্তু কুরাইশরা রাসূলুল্লাহ সা.-এর সত্যবাদিতা দেখেও দেখেনি, শুনেও শুনেনি। তাদের হঠকারিতাই তাদেরকে সত্য গ্রহণ থেকে দূরে রেখেছিল । ইতিমধ্যে কিছু লোক হযরত আবু বকর রাযি. এর কাছে এসে বলল, তোমার বন্ধু মাহাম্মাদ বলছে, সে নাকি রাতে বাইতুল মুকাদ্দাস গেছে এবং সকাল হওয়ার আগেই প্রত্যাবর্তন করেছে । তুমি কি তার এমন কথাও বিশ্বাস করবে ? হযরত আবু বকর রাযি. বললেন, মুহাম্মাদ সা. কি এমনটিই বলেছেন । তারা বলল, হ্যাঁ, এমনটি বলেছে । হযরত আবু বকর রাযি. বললেন, যদি রাসূল এমন কথা বলে থাকেন, তবে তা সম্পূর্ণই সত্য বলেছেন । আমি এটা সত্য বলে বিশ্বাস করি । আমি এর চাইতেও আশ্চার্য কথা বিশ্বাস করি । তার কাছে আসমান থেকে সংবাদ আসে আমি তাও বিশ্বাস করি । সেদিন থেকে হযরত আবু বকর ‘ছিদ্দীক উপাধি লাভ করেন ।

মেরাজের তত্ত্ব ও নিগূঢ় রহস্য:

আল্লাহ তায়াল মেরাজের ঘটনাকে سبحان الّذی দ্বারা এজন্য আরম্ভ করেছেন, যাতে কোন সংকীর্নমনা ও জ্ঞানহীন লোক এটাকে কোন ধরনের অসম্ভব ও অবাস্তব বিষয় মনে না করে । আল্লাহ তায়ালা সকল প্রকার অক্ষমতা ও অপারগতা থেকে পবিত্র ।আমাদের অপরিপক্ক জ্ঞান যদিও কোন জিনিসকে আশ্চর্য্য ও অসম্ভব মনে করে, কিন্তু আল্লাহ তায়ালার অনন্ত অসীম শক্তি ও কুদরতের নিকট তা অসম্ভব নয় । আল্লাহ তায়ালা মেরাজের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সা. কে ‘আবদ’ তথা ‘বান্দাবলে অভিহিত করেছেন । নবুওত এবং রেসালাতের কথা বলেননি। কেননা আল্লাহর সান্নিধ্যে গমনের ক্ষেত্রে বান্দা করাই উল্লেখই অধিকতর সমীচিন । যাতে বান্দা তার সবকিছু ত্যাগ করে স্বীয় মনিবের দিকে গমন করে । ইমাম রাযী রহ. তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আবুল কাসেম সুলাইমান আনসারীকে বলতে শুনেছি যে, মেরাজের রাতে তায়ালা রাসূলুল্লাহ সা. কে জিজ্ঞেস করেন, আপনি সর্বাপেক্ষা কোন উপাধি, কোন বৈশিষ্ট্য বেশি পছন্দ করেন? তিনি তখন বলেছিলেন, আপনার বান্দা হওয়ার বৈশিষ্ট্য আমার বেশি প্রিয়। তাই এ সূরাটি রাসূলুল্লাহ সা.-এর পছন্দনীয় উপাধি সহকারে অবতীর্ণ হয় । আলা ইসরা’ শব্দের অর্থ ‘রাতের ভ্রমণ’ আর لیلاً শব্দটি ‘নাকেরা’ তথা অনির্দিষ্টের জন্য ব্যবহার হয়। এ শব্দটি ব্যবহার করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, সফরটি আল্লাহর কুদরতে রাতের খুবই অল্প সময়ে হয়েছে।রাতে সফর করানোর কারণ হলো, রাত নির্জন সময় । এ সময় মেরাজ সংঘটিত হওয়ার মধ্যে আল্লাহ তায়ালার আরো নৈকট্য এবং বিশেষত্ব হাসিল করার প্রমান পাওয়া যায় ।

মেরাজের রাতে রাসূলুল্লাহ সা.কে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা তথা বাইতুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার মধ্যে সম্ভবত এ হেকমতও রয়েছে যে, মসজিদে হারাম ও মসজিদে আকসা উভয় কেবলার বরকত ও বনী ইসরাঈলের সমস্ত নবীদের ফযীলত ও মর্যাদাসমূহ মুহাম্মাদ সা.-এর মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। ঈমান ও হেকমত যদিও পৃথিবীতে নিরাকার, কিন্তু আখেরাতে তা আকৃতি দেয়া হবে । রাসূলুল্লাহ সা.-এর বক্ষ মোবারক এর আগেও তিনবার বিদীর্ণ করা হয়েছিল । মেরাজের সময় চতুর্থবার বিদীর্ণ করা হয়। কলব মোবারক ধৌত করে তা থেকে এক দুটুকরা জমাট রক্তপিন্ড বের করা হয়, যা ছিল শয়তানের অংশ । এরপর কলব মোবারক একটি তশতরীতে রেখে বরফ দ্বারা ধৌত করে পূর্বের স্থানে রেখে দেয়া হয় । প্রথম আসমানে রাসূলুল্লাহ সা. হযরত আদম আ.-এর সাথে সাক্ষাত করেন । যেহেতু তিনি সর্বপ্রথম নবী এবং আদি পিতা, এজন্য রাসূলুল্লাহ সা. কে সর্বপ্রথম তাঁর সাথে সাক্ষাত করানো হয় । এ সাক্ষাতের মধ্যে হিজরতের দিকে ইঙ্গিত ছিল । হযরত আদম আ. ইবলিস শয়তানের কারণে আসমান ও জান্নাত থেকে পৃথিবীর দিকে হিজরত করেছিলেন। এমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সা.ও শত্রুর কারণে মক্কা শরীফ থেকে মদীনা শরীফে হিজরত করবেন—এদিকে ইঙ্গিত ছিল।

দ্বিতীয় আসমানে হযরত ঈসা ও ইয়াহইয়া আ.-এর সাথে সাক্ষাত হয়। রাসূলুল্লাহ সা. হযরত ঈসা আ.-এর সবচেয়ে কাছের। ঈসা আ.-এর পরে রাসূলুল্লাহ সা.-এর আগমন । এছাড়া হযরত ঈসা আ. আখেরী যামানায় দাজ্জালকে হত্যা করার জন্য আসমান থেকে অবতরণ করবেন এবং উম্মতে মুহাম্মাদীর একজন মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক হিসেবে ইসলামী শরীয়তের প্রবর্তন ঘটাবেন । কেয়ামতের দিন হযরত ঈসা আ. সকলকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সা.-এর নিকট গিয়ে সুপারিশের আবেদন করবেন । এসব কারণে হযরত ঈসা আ.-এর সাথে মুহাম্মাদ সা.কে সাক্ষাত করানো হয় । হযরত ইয়াহইয়া আ. হযরত ঈসা আ.-এর সাথে থাকার কারণ শুধু বংশীয় আত্মীয়তা । কেননা হযরত ঈসা আ. এবং হযরত ইয়াহইয়া আ. পরস্পরে খালাতো ভাই ছিলেন । এসব সাক্ষাতের মধ্যে ইহুদীদের দুঃখ, কষ্ট ও নির্যাতন পৌছানোর দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে । কারণ, ইহুদীরা রাসূলুল্লাহ সা.-এর প্রতি শত্রুতা পোষণ করত এবং তাঁকে মেরে ফেলার জন্য বিভিন্ন অপকৌশল গ্রহণ করত। কিন্তু যেভাবে আল্লাহ তায়ালা হযরত ঈসা আ.কে তাদের ষড়যন্ত্র থেকে নিরাপদ রেখেছিলেন, সেভাবে রাসূলুল্লাহ সা.কেও নিরাপদ রেখেছিলেন।

তৃতীয় আসমানে
হযরত ইউসুফ আ.-এর সাথে সাক্ষাত করেন । এ সাক্ষাতের মধ্যে এদিকে ইঙ্গিত ছিল যে
, হযরত ইউসুফ  আ.-এর মত রাসূলুল্লাহ সা.ও স্বীয় স্বজনদের পক্ষ থেকে কষ্ট ও নির্যাতনপ্রাপ্ত হবেন। পরিশেষে তিনি বিজয়ী হবেন এবং তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন ।তাইতো মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ সা. কুরাইশদেরকে ঐভাবে সম্বোধন করেছিলেন, যেভাবে হযরত ইউসুফ আ. স্বীয় ভাইদেরকে সম্বোধন করেছিলেন । এছাড়া উম্মতে মুহাম্মাদী যখন বেহেশতে যাবে, তখন তারা সবাই হযরত ইউসুফ আ.-এর আকৃতি বিশিষ্ট হবে ।রাসূলুল্লাহ সা.কে হযরত ইদরিস আ.-এর সাথে সাক্ষাতের মধ্যে এদিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সা. রাজা-বাদশাহদের নিকট ইসলামের দাওয়াত সম্বলিত পত্র প্রেরণ করবেন । কেননা লেখনী ও চিঠি-পত্রের আবিস্কারক হচ্ছেন হযরত ইদরিস আ.। হযরত হারুন আ.-এর সাথে সাক্ষাতের মধ্যে এদিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, সামেরী এবং গো-বৎস পূজারীরা যেমন হারুন আ.-এর আদেশের প্রতি মোটেও ভ্রুক্ষেপ করেনি, পরিণতিতে তাদেরকে হত্যা করা হয়, সেভাবে বদর যুদ্ধে কুরাইশের সত্তর জন নেতাকে হত্যা করা হবে, সত্তর জনকে বন্দী করা হবে এবং উরাইনাবাসী ইসলাম ত্যাগ করার কারণে তাদেরকেও হত্যা করা হবে । রাসূলুল্লাহ সা.কে হযরত মুসা আ.-এর সাথে সাক্ষাতের মধ্যে এদিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, যেভাবে মুসা আ. সিরিয়ায় দাপটপূর্ণ লোকদের সাথে জিহাদের জন্য গমন করেছিলেন এবং আল্লাহ তায়ালা তাঁকে বিজয় দান করেছিলেন, সেভাবে রাসূলুল্লাহ সা.ও সিরিয়ায় জিহাদের জন্য গমন করবেন। তিনি সিরিয়ায় তাবুক যুদ্ধের জন্য রওয়ানা করেছিলেন এবং ‘দাওমাতুল জান্দালের সম্রাট জিজিয়া প্রদানপূর্বক সন্ধি
করার জন্য আবেদন জানান । যেভাবে মুসা আ.-এর পরে ইউশা আ.- এর হাতে সিরিয়া বিজিত হয়
, তেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সা.-এর পরে হযরত ওমর রাযি.-এর হাতে গোটা সিরিয়া বিজিত হয় এবং ইসলামের অধীনে চলে আসে।

সপ্তম আসমানে হযরত ইবরাহীম আ.-এর সাথে রাসূলুল্লাহ সা. সাক্ষাত করেন । রাসূলুল্লাহ সা. তাঁকে বাইতুল মামুরের সাথে পিঠ লাগিয়ে বসা অবস্থায় দেখতে পান। বাইতুল মামুর হচ্ছে সপ্তম আসমানের একটি মসজিদ, যা কাবা শরীফের সোজা উপরে অবস্থিত । সত্তর হাজার ফেরেশতা প্রতিদিন সেখানে তাওয়াফ করেন। যেহেতু ইবরাহীম আ. কাবা শরীফের নির্মাতা, সেহেতু তাঁকে এ স্থান প্রদান করা হয়েছে । ঐ শেষ বারের সাক্ষাতে বিদায় হজ্জের দিকে ইঙ্গিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সা. মৃত্যুর পূর্বে বাইতুল্লাহ শরীফের হজ্ব আদায় করবেন ।

মেরাজ সম্পর্কে কাফেরদের আপত্তি ও তার জবাব:

নাস্তিক কাফেররা রাসূলুল্লাহ সা.-এর স্বশরীরে মেরাজের ওপর যেসব আপত্তি তোলে, তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা প্রদত্ত হল । প্রবীণ দার্শনিকরা মনে করে আসমান ভেদ করে ওপরে যাওয়া অসম্ভব। তাই তাদের নিকট মেরাজ প্রমাণিত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না । নবীন ও প্রবীণ দার্শনিকরা এ ব্যাপারে একমত যে, ভূ-পৃষ্ঠের কিছুটা উপরে শৈত মন্ডল বিদ্যমান। এর উপরে শৈত্য অগ্নিমন্ডল অবস্থিত। সুতরাং কোন স্থুলকায় ব্যক্তির পক্ষে এ দুটি স্থান নিরাপদে অতিক্রম করা আদৌ সম্ভব নয় । অতএব স্বশরীরে রাসূলুল্লাহ সা.- এর মেরাজে গমনের কথা অযৌক্তিক। আর কেউ বলেস্থুলকায় ব্যক্তির পক্ষে এত ওপরে, এত অল্প সময়ে, এত দ্রুত ভ্রমন করা জ্ঞান বহির্ভূতবিষয় ।  উল্লেখিত আপত্তির উত্তর হচ্ছে, এসব নিছক অমূলক ধারণা মাত্র। জ্ঞান ও যুক্তির প্রেক্ষিতে এটা কোন অসম্ভব ব্যাপার নয় । যারা এসব বিষয় অসম্ভব বলে মনে করে, তাদের প্রমান পেশ করা উচিত । ওলামায়ে কেরামের বিভিন্ন জবাব নিম্নে প্রদত্ত হল । 

এক. সমস্ত নবী এবং আসমানী কিতাব এ কথার ওপর একমত যে, কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে । আকাশ ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যাবে । আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-

اذا السماء انشقت . اذا السماء انفطرت

এ কথা সুস্পষ্ট যে, সমস্ত নবী-রাসূল কোন অসম্ভব বিষয়ের ওপর ঐক্যমত পোষণ করা আদৌ সম্ভব নয় প্রবীণ দার্শনিকরা আকাশ ভেদ করে ওপরে যাওয়া অসম্ভব বলেছে, মুসলিম দার্শনিকগণ তার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছেন ।

দুই. বর্তমান যুগে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি আবিস্কার হচ্ছে। যা দ্বারা উষ্ণতা ও ঠান্ডার বাহ্যিক প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকা যায় । আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কুদরত তো এরচেয়ে অনন্ত অসীম । মানুষের জ্ঞান আল্লাহ তায়ালার কুদরতের সীমায় পৌছতে পারবে? কি

তিন. হাজার হাজার টন ওজনের বিমান আকাশে উড্ডয়ন করা এবং ঘন্টায় হাজার হাজার মাইল অতিক্রম করার দৃষ্টান্ত পৃথিবীতেই বিদ্যমান । সুতরাং আল্লাহর কুদরতে তাঁরই প্রিয় ব্যক্তির উর্ধ্বাকাশে গমনের ব্যাপারে এত চিন্তা-ভাবনা কেন? এত প্রশ্ন কেন?

চার. বর্তমান যুগে এমন লিফটও আবিস্কৃত হয়েছে যে, বৈদ্যুতিক সুইচ দেয়ার সাথে সাথে এক মিনিটেই বিশাল অট্টালিকার শেষপ্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে । মানুষ যদি এটা করতে সক্ষম হয়, তবে মানুষের যিনি সৃষ্টিকর্তা তিনি এমন করতে অক্ষম হবেন, এটা ভাবা যায় কি করে?

পাঁচ. ইহুদীদের নিকট আম্বিয়ায়ে কেরাম স্বশরীরে জীবিত অবস্থায় আসমানে অবস্থান করা এবং খৃষ্টানদের নিকট হযরত ঈসা আ.-এর জীবিত অবস্থায় আসমানে গমনপূর্বক তথায় অবস্থান করা এবং শেষ যামানায় আসমান থেকে অবতরণ করা স্বীকৃত । ঠিক এভাবেই আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সা.-এরও স্বশরীরে আসমানে গমণ করা এবং পুনরায় আসমান থেকে প্রত্যাবর্তন করা কুরআন- হাদীস, ইজমা-কিয়াসের মাধ্যমে সাহাবী-তাবেয়ীসহ সকলের নিকট সন্দেহাতীতভাবে স্বীকৃত । আসমানে গমন করা যুক্তি ও জ্ঞান বহির্ভূত হলে পূর্ববর্তী সমস্ত ওলামায়ে কেরাম এর ওপর ঐক্যমত পোষন করতেন না ।

রজবের চাঁদ দেখলে রাসূল সা. এর আমল:

كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى
اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إذا دَخَلُ رَجَب قَالَ : اللَّهُمَّ بَارِك لَنَا فِي
رَجَبَ وَشَعْبَانَ وَبَلَّغْنَارَمَضَانَ . رواه البيهقي

রজব মাস আসলে রাসূলুল্লাহ সা. এভাবে দুআ করতেন- “হে আল্লাহ! আমাদেরকে রজব ও শাবানের বরকত দান করুন এবং রমযান পর্যন্ত পৌছিয়ে দিন ।উক্ত হাদীসটি রাসূলুল্লাহ সা.থেকে সহীহ সনদের সাথে বর্ণিত আছে ।

শবে মেরাজের ফযীলত প্ৰমাণিত নেই:

অনেকে শবে মেরাজ তথা রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে শবে ক্বদরের মত ইবাদত করা উচিত মনে করে । অনেকে এ রাতে নামায পড়ার জন্য বিভিন্ন সূরাকে নির্দিষ্ট করে । কুরআন-হাদীসে এসবের কোন ভিত্তি নেই । এগুলো মনগড়া, এর ওপর আমল করা
যাবে না ।

ওমর রাযি. বিদআতের দরজা বন্ধ করেছেন:

অক্টটি হযরত ওমর ফারুক রাযি.-এর যামানায় কিছু লোক রোজা রাখতে শুরু করে। তিনি জানতে পারেন, মানুষেরা রোজা রাখার এহতেমাম করছে । হযরত ওমর রাযি. দ্বীনের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতেন না । তিনি এ কথা শুনে ঘর থেকে বের হন এবং এক ব্যক্তিকে জোরপূর্বক বলেন, ‘তুমি রোজা রাখ নাইআমার সামনে খানা খেয়ে তা প্রমাণ কর । হযরত ওমর রাযি. সেদিন মানুষদেরকে এজন্য খানা খাওয়ান, যাতে মানুষ ২৭শে রজব-এর রোযার ফযীলত বেশি মনে না করে । তবে অন্য দিনের মত এদিনও নফল রোযা রাখা যাবে। হযরত ওমর রাযি. বিদআতের দরজা বন্ধ করার জন্য এ কাজ করেছিলেন । হযরত ওমর রাযি. সম্পর্কে বর্ণিত আছে, খারশাহ রাযি. বলেন-

رَأَيْتُ عُمَرُ بْنَ الْخَطَّابِ يَضْرِبُ اَكُفَّ الرّجالِ في صَوْمِ رَجَبَ حَتَّى يَضَعُوهَا فِي الطَّعَامِ . خطبة الاحكام ص ١٠٠

আমি হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাযি.কে দেখেছি, কেউ রজব মাসে রোজা রাখলে খাদ্য গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত তিনি তার হাতে আঘাত করতেন।মোটকথা, রজব মাসের ২৭ তারিখের রাতে বিশেষ কোন আমল করা এবং দিনে রোযা রাখা রাসূলুল্লাহ সা., সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ী কারো থেকে বর্ণিত নেই । উপরোল্লেখিত দুআ ছাড়া অন্য কোন আমল করা যদি ইবাদত হত, তাহলে এ সমস্ত মণীষীগণ তা করতেন । এর দ্বারা বুঝা যায়, এসব ভিত্তিহীন। কিছু কিছু কিতাবে ২৭ তারিখ নির্ধারিত থাকলেও ঐতিহাসিকগণ এ সম্পর্কে ভিন্নমতও পোষণ করেছেন । সুতরাং ২৭ তারিখকে সন্দেহাতীতভাবে নির্ধারিত করা ঠিক হবে না। তারিখ নিয়ে ইতিহাস বিশারদদের মধ্যে দশটি মত আছে ।

 

سفر معراج کا خلاصہ

حصول کیا گیا الیاس گھمن کے بیان سے 

سُبْحَانَ الَّذِينَ أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلَا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ يُتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ
اس آیت کریمہ میں اللہ رب العزت نے حضور اکرم صلی اللہ علیہ وسلم کا ایک معجزہ ذکر فرمایا ہے – اس معجزے کا نام ہے معرا ج-  معراج کے حوالے سے کئی باتوں کو سمجھنا ضروری ہے –  لیکن پہلے معراج کا مختصر سا  قصہ سماعت فرمائیں-   حضور اکرم صلی اللہ علیہ وسلم کو اللہ رب العزت نے فرش تا عرش خصوصی بہت کم وقت میں طویل ترین سیر کرائے  – اور اس میں کئی عجائبات قدرت اللہ نے آپ کو دکھائے – جس کا خلاصہ یہ ہے کہ نبی کریم صلی اللہ علیہ وسلم مکہ مکرمہ میں حضرت ام ہانی رضی اللہ تعالی عنہا کے گھر میں آرام فرما رہے تھے – رات کو حضرت جبریل امین چند مزید فرشتوں کے ہمراہ تشریف لائے اور دروازے سے گزر کر نہیں بلکہ چھت پٹھی اور وہاں سے آئے حضور اکرم صلی اللہ علیہ وسلم کو نیند سے بیدار فرمایا – اور یہ بتایا کہ اپنے سفر پر چلنا ہے ہے – حضور اکرم صلی اللہ علیہ وسلم وہاں سے اٹھے  حطیم کعبہ میں آئے اور پھر وہاں سو گئے –
جبریل امین نے آپ کو حطیم کعبہ سے اٹھایا اور سفر پر جانے کے لیے رسول اکرم صلی اللہ علیہ وسلم سے عرض کیا  – نبی کریم صلی اللہ علیہ وسلم جب حطیم کعبہ سے چلے تو کعبہ کے قریب وہ جگہ ہے جسے چاہ زمزم یعنی زمزم کا  کنواں کو کہتے ہیں – جہاں سے زمزم کا پانی  نکلا ہے رسول اکرم صلی  اللہ وسلم کو چاہ زمزم کے قریب جبریل امین نے لٹا دیا
نبی اکرم صلی اللہ علیہ وسلم کا شق صدر فرمایا جس کا خلاصہ یہ ہے کہ آپ کے سینہ مبارک کو دو حصوں میں چاک کیا ہے  – اور قلب اطہر کو سینے مبارک سے باہر نکالا ہے اور نبی کریم صلی اللہ علیہ وسلم کے قلبِ اطہر کو سونے کے طشت میں جو جبرائیل آمین جنت سے لائے تھے   اس میں زم زم کے پانی سے دھویا اور وہ سونے کا تشت ایمان اور حکمت سے بھرا ہوا تھا
اور نبی کریم صلی وسلم کے قلب اطہر میں ڈال دیا اور پھر کل بہتر کو اصل جگہ رکھے دوبارہ سینے مبارک کو ملا دیا حضور اکرم صلی اللہ علیہ وسلم کو اس کے بعد براق یعنی ایک سواری جو جنت سے جبریلِ امیں لائے تھے اس براق سواری پہ سوار کیا  – ایک روایت کے مطابق رسول اللہ سلم آگے تشریف فرما ہوئے – ایک روایت کے مطابق رسول اللہ سلم آگے تشریف فرما ہوئے اور جبریل امین آپ کے ردیف بنے یعنی آپ کے پیچھے اس براق سواری پر بیٹھے
اس براق سواری کاجو قد  روایات میں آتا ہے اس کا خلاصہ یہ ہے کہ وہ خچر سے کچھ چھوٹی اور حمار یعنی گدھے سے کچھ بڑی تھی جس میں نبی کریم صلی وسلم کے سفر کا آغاز ہوا-
مکہ مکرمہ سے چلے تو سب سے پہلے آپ اس سواری سے اترے مدینہ منورہ یثرب جس کا سابقہ نام تھا – اب اس کا نام  مدینۃ الرسول صلی اللہ علیہ وسلم یعنی مدینہ منورہ ہے-  جبریل امین نے آپ سے عرض کیا کہ آپ یہاں اتریئے اور دو رکعت نفل نماز  پڑھ لیجئے اور آپ کو بتایا گیا کہ یہ وہ جگہ ہے جہاں پر آپ نے ھجرت کر کے تشریف لانا ہے وہاں سے پھر براق  پر سوار ہو کر چلے اور طورسینٰی  وہ درخت جہاں پہ موسیٰ علیہ السلام اللہ سے ہمکلام ہوتے تھے اس کے پاس آپ اترے اور جبریل امین نے عرض کیا کہ آپ دو رکعت نفل پڑھ لیجئے اور یہ وہ جگہ ہے جہاں پر موسیٰ علیہ السلام اللہ سے ہمکلام ہوتے تھے وہاں سے آپ چلے تو مدین جو حضرت شعیب علیہ السلام کی بستی ہے وہاں اتر ے جبرایئل امین نے بتایا یہ حضرت شعیب علیہ السلام کی بستی ہے آپ یہاں دو رکعت نفل ادا فرما لیجئے – وہاں سے براق پہ سوار ہوئے تو بیت اللحم وہ جگہ جو عیسی علیہ السلام کی جائے پیدائش آپ وہاں براق سے اترے  اور جبرئیل امین نے عرض کیا کہ آپ یہاں دو رکعت نماز نفل ادا کیجیئے – یہ عیسٰ ؑ کا جائے پیدائش ہے –
وہاں سے  اپ براق پر سوار ہوئے تو بیت المقدس میں آپ  اترے وہاں  آپ کے آنے سے قبل تمام انبیاء کرام علیہم السلام پہلے سے موجود تھے اذان بھی ہوئی اقامت بھی ہوئی اور ایک روایت کے مطابق ملائکہ بھی آسمان سے اترے تو حضور اکرم صلی اللہ علیہ وسلم کی اقتداء میں تمام انبیاء نے اور ملائکہ نے نماز ادا کی ہے یہ نماز فرض نہیں تھی  یہ نماز عشاء کے بعد اور نماز فجر سے قبل تھی اس لئے فرض نماز نہیں تھی وہاں سے حضور اکرم صلی اللہ علیہ وسلم پہلے آسمان پر تشریف لے گے جہاں پہ آپ کی ملاقات حضرت آدم علیہ السلام سے ہوئی ہےاسکے بعد  دوسرے آسمان پر تشریف لے گے جہاں پہ آپ کی ملاقات حضرت عیسٰی اور یحییٰ علیہم السلام سے ہوئی  – اس کے بعد اب تیسرے آسمان پر تشریف لے گے وہ آپ کی ملاقات حضرت یوسف علیہ السلام سے ہوئی پھر آپ چوتھے آسمان پر تشریف لے کے وہ آپ کی ملاقات حضرت ادریس علیہ السلام سے ہو اس کے بعد پانچویں آسمان پر تشریف لے اور وہابی ملاقات حضرت ہارون علیہ السلام سے ہوئی پھر آپ چھٹے آسمان پر تشریف لے گئے اور وہاں پہ آپ کی ملاقات حضرت موسی علیہ السلام سے ہوئی پھر آپ ساتویں آسمان پر تشریف لے گئے اور وہاں پر ملاقات حضرت ابراہیم علیہ السلام سے ہوئی حکیم الامت مجدد الملت مولانا شاہ اشرف علی تھانوی رحمۃ اللہ مرقدہٗ تعریف فرماتے ہیں کہ کس آسمان پر  کس نبی سے ملاقات ہوئی اگر اس کو آسان لفظوں میں یاد رکھنا ہو تو ایک لفظ یاد رکھ
 اَعْیَاھُمَا 
الف اس سے مراد حضرت آدمؑ   پھر عین اس مراد حضرت عیسیٰؑ –  پھر یا اس مراد یوسفؑ –  پھر الف اس سے مراد ادریسؑ – پھر ہا اس پر حضرت ہارون –  پھر میم اس مراد حضرت موسی علیہ السلام  – پھر الف اس سے مراد  حضرت ابراہیم علیہ السلام  اب یہ ترتیب ذھن میں رکھ لیے تو آدمی بھولتا نہیں –  اس کے بعد حضور اکرم صلی اللہ علیہ وسلم  سدرۃ المنتہیٰ پر تشریف لے گئے سدرۃ  عربی زبان میں بیری کو کہتے ہیں اور المنتہی یہ اخیر ہے جس کا مطلب کیا ہے – کہ نیچے سے فرشتے جو جاتے ہیں چیزیں اعمال لے کر وہاں رکتے ہیں اور اوپر سے جو فرشتے آتے ہیں احکام لے کر وہ وباں رکتے ہیں– یہ منتھا ہے نیچلے فرشتوں کی انتہا اور اوپر والوں کے نیچے آنے کی منتہا سدرۃ المنتہیٰ وہاں سے حضور اکرم صلی اللہ علیہ وسلم چلے اور صریف الاقلام پر جا کر ر کے  – صریف اقلام کا معنی اقلام قدرت کے چلنے کی آواز – وہاں وہ  قلم چلتے جسے تقدیر اور احکام لیکھے جاتے ہیں –
اس کے بعد رسول اللہ سلم چلے –  اور آپ عرش معلا پر جا کر وہاں اللہ رب العزت کا دیدار فرمایا اللہ سے ہمکلام ہوئے کچھ تحائف پیش کیے کچھ تحائف اللہ سے وصول کی ہے اور واپس حضور اکرم صلی اللہ علیہ وسلم مکہ مکرمہ تشریف لے آئے
 یہ خلاصہ ہے نبی کریم صلی اللہ علیہ وسلم کے سفر معراج کا –

Thank you for reading the post.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top