সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও নীতিমালা
আমরা প্রথমে সংগঠন কী? তা জেনে আসি।
সাধারণ অর্থে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য যখন একাধিক ব্যাক্তি একত্রিত বা সমবেত হয় এবং ধারাবাহিক ভাবে সেই লক্ষ অর্জনের কর্মকান্ডে নিযোজিত থাকে তাকেই সংগঠন বলে। কর্মবন্টন সংগঠণের প্রধান বিষয়। সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দকে কে কোন কাজ করবে কার কি দায়িত্ব রয়েছে ইত্যাদি বিষয়সমুহ সংগঠনই বন্টন করে দেয়। সংগঠনের সহিত নেতৃত্বের সম্পর্ক রয়েছে। গিন্সবার্গ ১৯১১ এর মতে : সংগঠন হলো সামাজিক জীবনের সংগঠিত একটি গোষ্ঠী, যারা পরষ্পর সম্পর্কিত কর্মকান্ডে অংশ নেয় এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ অর্জনের জন্য সংগঠিতা হয়।
সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও নীতিমালার এপর্বে আসুন জেনে নেয়া যাক সংগঠনের বৈশিষ্ট:
১। সংগঠনের কিছু সংখ্যক গোষ্ঠীবদ্ধ লোক থাকে ।
২। জনসমষ্টি পরষ্পর সুসংঘবদ্ধ হয়।
৩। জনসমষ্টির আচরণ সুনিয়ন্ত্রিত থাকে।
৪। সংগঠন বিধিবদ্ধ আইন ও নীতিমালা দ্বারা পরিচালিত হয়।
৫। অভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে।
৬। প্রত্যেক সদস্য আইন ও বিধিমালা মেনে চলতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
৭। পরিচালনা পরিষদ দ্বারা পরিচালিত হয়।
৮। প্রয়োজনে আইন ও বিধিমালা পরিবর্তনযোগ্য।
সংগঠনের আবশ্যকীয় শর্তাবলী:
১। সংগঠনের সদস্য বৃন্দ থাকতে হবে।
২। নির্ধারিত আইন ও নীতিমালা থাকতে হবে।
৩। আয়-ব্যয় নির্ধারণ বিধিমালা থাকতে হবে।
৪। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকতে হবে।
৫। কর্মপরিচালনা পরিষদ থাকতে হবে।
সংগঠনের ধারা সমুহ:
নিম্নে উল্লেখিত ধারাগুলো অনুসরণ করে যদি আমরা সংগঠন প্রতিষ্ঠিত করি তাহলে আমাদের সংগঠন সুন্দর এবং স্থায়ী হবে। ইনশাআল্লাহ।
১। সংগঠনের নাম।
২। সংগঠনের ঠিকানা।
৩। কার্যএলাকা অর্থাৎ সংগঠনটি যে এলাকাজুড়ে বিস্তৃত থাকবে সে এলাকার বিবরণ।
৪। অর্থবছর ( মেয়াদকাল)
৫। লক্ষ ও উদ্দেশ্য।
৬। সদস্যদের প্রকারভেদ।
৭। বিভিন্ন সদস্যপদ বাতিলের বিধান।
৮। সদস্যপদ পুনঃবহাল।
৯। কার্যকরী পরিষদের কার্যাবলি। (কেন্দ্রীয় কমিটি)
প্রতিটি সংগঠনের একটি কার্যকরী পরিষদ থাকে, সেই কার্যকরী পরিষদের কাজ ও দায়িত্বসমুহের বর্ণনা থাকবে এই ধারায়।
১০। উপ-কমিটি গঠন।
কমিটিকে সগযোগিতা করার জন্য একটা উপকমিটি গঠন করা।
১১। সাধারণ সদস্যদের অধিকার।
সাধারণ সদস্যরা এই সংগঠণ থেকে কি কি সুবিধা বা অধিকার ভোগ করবে তা
১২। নির্বচন বিধি।
কার্যকরী পরিষদের সদস্য বা যে পদগুলো থাকবে সেগুলো কিভাবে নির্বচিত হবে তা এই ধারায়
১৩। সদস্য ফি, চাঁদা।
বিভিন্ন উন্নয়ন ফি বা সামাজিক কার্যকলাপের জন্য সংগঠনের সদস্যবৃন্দদের কাছ থেকে
১৪। কর্মকর্তা / কর্মচারী নিয়োগ।
১৫। সভা আহবান।
সভা কখন, কিভাবে, কোথায়, করা হবে তা বিস্তারিত এই ধারায় আলোচনা থাকবে।
১৬। আয়-ব্যয়।
সংগঠনের আয় এবং ব্যয় কিভাবে করবে, কোন খাতে আয় করবে । কোন খাতে ব্যায় করবে।
১৭। হিসাব-নিকাশ।
১৮। সংশোধনী।
সংগঠনের গঠনতন্ত্রের কোন সংশোধন প্রয়োজন হলে, কিভাবে সংশোধন করতে হবে।
১৯। সীমা বদ্ধতা ।
অর্থাৎ এই সংগঠনটি কোন কোন কাজ করতে পারবে না বা কোন কোন কাজ সংগঠনের
২০। বিলুপ্তি।
এই ধারাতে সংগঠনটি যটি কোন কারণে অচল হয়ে যায়, বা ঘটনাক্রমে চালানো সম্ভব না হয় তাহলে
গঠনতন্ত্র রচনা শেষে সমবায় মন্ত্রনালয় অথবা সমাজসেবা অফিসে রেঝিষ্ট্রেশনের জন্য
একটি সংগঠন বা সমিতির বিভন্ন পদের নাম ও তাদের দায়িত্ব।
একটি সংগঠনের অনেক পদ থাকে, এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ১০ টি পদ নিয়ে আমি নিচে
১। সভাপতি:-সভাপতি সংগঠনের প্রধান।তিনি পদাধিকারবলে সকল সভায় সভাপতিত্ব করবেন।
২। সহ-সভাপতি :- তিনি সভাপতির সকল কাজে সহায়াতা করেন। সভাপতির অনুপস্থিতিতে
৩। সাধারণ সম্পাদক:- সাধারণ সম্পাদক সংগঠনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি সভাপতির
দৈনন্দিন কার্যকলাপের জন্যে দায়ি থাকেন। প্রতিটি
পেশ করেন।
৪। সহ-সাধারণ সম্পাদক :- তিনি সাধারণ সম্পাদকের সকল কাজে সহায়তা করেন। সাধারণ
৫। সাংগঠনিক সম্পাদক :- প্রতিষ্ঠানকে সাংগঠনিক ভাবে সুদৃড় করতে সচেষ্ট থাকেন। সংগঠনের
করবেন। তিনি বছরের কার্যবিবরণী প্রস্তুত করবেন এবং তা
সাধারণ সভায় পেশ করবেন।
৭। প্রচার সম্পাদক :- মূলত প্রচার করাই প্রচারসম্পাদকের কাজ। প্রচার সম্পাদক সংযুক্ত প্রতিষ্ঠান
৮। কোষাধক্ষ :- সংগঠনের যাবতীয় অর্থ তার মারফত ব্যাংকে জমা থাকে। তিনি প্রতিষ্ঠানের আয়-
৯। দপ্তর সম্পাদক :- সংগঠনের যাবতীয় জিনিসপত্র দেখাশোনা ও সংরক্ষণ করেন।
১০। সদস্য মন্ডলী :- সংগঠণের কার্যকরী কমিটিতে একাধিক সদস্য থাকেন। তারা কার্যকরী কমিটি
আসুন জেনে নেই কোন কোন পদের উপর সংগঠনের সফলতা নির্ভর করে।
১. সভাপতি:- সভাপতির কার্যকলাপ ও তৎপরতার উপর সবচেয়ে বেশি সংগঠনের সফলতা নির্ভর করে।
২. সাধারণ সম্পাদক :- সাধারণ সম্পাদককে একটি সংগঠনের মেরুদন্ড বলা হয়। সভাপতির পর এই
৩. সাংগঠনিক সম্পাদক :- একটি সংগঠনের সফলতা সাংগঠনিক সম্পাদকের উপরও নির্ভর করে ।
৪। কার্যকরী কমিটি: কার্যকরি কমিটির সদস্যগণ যত বেশি সক্রিয় থাকবেন সংগঠনটি ততো বেশি
১। যে কোন সামাজিক কর্মকান্ডে বায়োজষ্ট উপদেষ্টারা সুপরামর্শ ও উপদেশ দিয়ে থাকেন।
২। সাংগঠনিক যেকোন সংকটে তারা অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করেন।
৩। সংগঠনের অভ্যন্তরীণ যে কোন বিবাদ-বিশৃঙ্খলার সুষ্টু মিমাংসা প্রদান করেন।
উল্লেখ্য যে সংগঠনের যাবতীয় কার্যকলাপের জন্য ও কর্মকান্ডে উপদেষ্টাদের হস্তক্ষেপ বাঞ্চনীয় নয়।
আসুন জেনে নেই সংগঠনের সাফল্যের মূল মন্ত্র।
১। হিংসা বিদ্বেষ ভুলে সবাই মিলে একসাথে সামাজিক কাজ করা।
২। কে কোন পদ পেলো আর কে কোন পদ পেলোনা সেটা না দেখে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ
৩। দুর্নীতিকে মোটেও প্রশ্রয় না দেওয়া।
৪। সামাজিক কর্মকান্ডে সর্বদা নিস্বার্থভাবে তৎপর থাকা।
Thank you for reading the post.