সালাম ও অনুমতির বিধি বিধান | ঘরে প্রবেশ করার নিয়ম । ঘরে প্রবেশের আদব

সালাম ও অনুমতির বিধি বিধান:

 

সালাম অনুমতির বিধি বিধান:

সামাজিক শিষ্টাচার (আদব-আখলাক) ও চারিত্রিক উৎকর্ষ অর্জন মুসলিমের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। সেজন্যই ইসলামে সামাজিক আদব-শিষ্টাচারকে এত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং সামাজিক আচার-আচরণের ক্ষেত্রে ইসলামের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। ইসলামের সামাজিক বিধান এতটাই পরিপূর্ণ ও সুবিন্যস্ত যেমানবসভ্যতায় এর নজির বিরল। এখানে আমরা ইসলামের সামাজিক অনন্য দুটি আদব-শিষ্টাচার নিয়ে আলোচনা করব।

সালাম :

এক অতুলনীয় সামাজিক বিধান সমাজে চলতে গেলে একজন মুসলিমের সাথে অন্য মুসলিমের সাক্ষাৎ হয়। তখন একে অন্যের কল্যাণ কামনায় সালাম দিয়ে কথা শুরু করবে। সালাম মুসলিমের স্বতন্ত্র সামাজিক শিষ্টাচার। স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে কারীমে সালামের আদেশ দিয়েছেন এবং এসংক্রান্ত আদব শিখিয়েছেন। আর রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর অগণিত হাদীসে সালামের বিধি-বিধান বর্ণনা করেছেন। যেগুলো জমা করলে স্বতন্ত্র একটি বই হয়ে যাবে।

কারো ঘরে প্রবেশের সময় আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে সালামের নির্দেশ দিয়েছেন

فَاِذَا
دَخَلْتُمْ بُیُوْتًا فَسَلِّمُوْا عَلٰۤی اَنْفُسِكُمْ تَحِیَّةً مِّنْ عِنْدِ
اللّٰهِ مُبٰرَكَةً طَیِّبَةً
.

যখন তোমরা ঘরে ঢুকবে নিজেদের লোকদের সালাম করবে কারণ এটা সাক্ষাতের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে প্রদত্ত বরকতপূর্ণ ও পবিত্র দুআ। সূরা নূর (২৪) : ৬১ আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন

یٰۤاَیُّهَا
الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُیُوْتًا غَیْرَ بُیُوْتِكُمْ حَتّٰی
تَسْتَاْنِسُوْا وَ تُسَلِّمُوْا عَلٰۤی اَهْلِهَا
 .

হে মুমিনগণ! নিজ গৃহ ছাড়া অন্যের গৃহে প্রবেশ করো নাযতক্ষণ না অনুমতি গ্রহণ কর এবং তার বাসিন্দাদের সালাম দাও। সূরা নূর (২৪) : ২৭ আর সালামের জবাব কীভাবে দিতে হবে তাও শেখানো হয়েছে কুরআনে।  সালামের বাক্য থেকে উত্তম বাক্যেবাড়িয়ে উত্তর দেবেনাহলে অন্তত সালামদাতার সমান বাক্যে উত্তর দেবে। যে ব্যক্তি সালাম শুনেছেসালামের জবাব দেয়া তার উপর ওয়াজিব। জবাব দেয়ার ক্ষেত্রে অবহেলা গ্রহণযোগ্য নয়

وَ
اِذَا حُیِّیْتُمْ بِتَحِیَّةٍ فَحَیُّوْا بِاَحْسَنَ مِنْهَاۤ اَوْ رُدُّوْهَا
.

যখন তোমাদেরকে কেউ সালাম দেয়তখন তোমরা (তাকে) তদপেক্ষা উত্তমরূপে সালাম (জবাব) দিয়োকিংবা (অন্ততপক্ষে) সে শব্দেই সালামের জবাব দিয়ো। সূরা নিসা (৪) : ৮৬ একজন সত্যিকারের মুসলিম কখনো সালাম থেকে গাফেল হতে পারে না। সালাম দেওয়ার জন্য শরীয়ত নির্ধারিত বাক্য হল

السّلَامُ عَلَيْكُمْ
وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ
.

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও উপরোক্ত বাক্যে সালাম দিতেন এবং মুসলিমদের এভাবে সালাম দিতে শিখিয়েছেন। এক ব্যক্তি এসে নবীজীকে সালাম দিল (এ বাক্যে)

عَلَيْكَ السّلَامُ يَا
رَسُولَ اللهِ
.

তখন নবীজী বললেন

إِنّ عَلَيْكَ السّلَامُ
تَحِيّةُ المَيِّتِ

عَلَيْكَ السَّلَامُ এটা তো মৃতদের অভিবাদন (একথা তিনি তিনবার বললেন)। এরপর বললেন

إِذَا لَقِيَ الرَّجُلُ
أَخَاهُ المُسْلِمَ فَلْيَقُلْ: السّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ
وَبَرَكَاتُهُ
.

যখন কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে তখন যেন বলে

السّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ.

 জামে তিরমিযীহাদীস ২৭২১ সালামের বাক্য স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা নির্বাচন করেছেন। আদম সন্তানদের জন্য এই বাক্যকেই তাহিয়্যাহ তথা অভিবাদন স্বরূপ নির্ধারণ করেছেন। এ বাক্যের ভাব ও ভাষাশব্দ ও সৌন্দর্য তুলনাহীন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনআল্লাহ তাআলা আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টির পর বললেন

اذْهَبْ فَسَلِّمْ عَلَى أُولَئِكَ مِنَ المَلاَئِكَةِ، فَاسْتَمِعْ مَا يُحَيّونَكَ، تَحِيّتُكَ وَتَحِيّةُ ذُرِّيّتِكَ، فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ، فَقَالُوا: السّلاَمُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللهِ، فَزَادُوهُ: وَرَحْمَةُ اللهِ.

যাও! ফিরিশতাদের ওই দলকে  সালাম দাও এবং খেয়াল করে শোনো তারা তোমার সালামের কী জবাব দেয়কারণএটিই হবে তোমার এবং তোমার বংশধরের সালাম অভিবাদন। তখন আদম
আলাইহিস সালাম বললেন

السّلاَمُ عَلَيْكُمْ

ফিরিশতারা জবাবে বললেন

السّلاَمُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللهِ

ফিরিশতারা وَرَحْمَةُ اللهِ বাড়িয়ে
বললেন।
 সহীহ বুখারীহাদীস ৩৩২৬সহীহ মুসলিমহাদীস ২৮৪১

মোটকথাসালামের এ শব্দ-বাক্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই এসেছে।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন

فَاِذَا
دَخَلْتُمْ بُیُوْتًا فَسَلِّمُوْا عَلٰۤی اَنْفُسِكُمْ تَحِیَّةً مِّنْ عِنْدِ
اللّٰهِ مُبٰرَكَةً طَیِّبَةً
 .

যখন তোমরা ঘরে ঢুকবে নিজেদের লোকদের সালাম করবে কারণ এটা সাক্ষাতের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে প্রদত্ত
বরকতপূর্ণ ও পবিত্র দুআ।
 সূরা নূর (২৪) : ৬১

উপরোক্ত বর্ণনায় আমরা দেখলামআদম আলাইহিস সালামের উত্তরে ফিরিশতারা ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বাড়িয়ে বললেন এ আদব আল্লাহ তাআলাই শিখিয়েছেন। যেমনটি আমরা উপরে সূরা
নিসার ৮৬ নং আয়াত থেকে জানতে পারলাম। আর এ বাড়িয়ে বলার ফযীলতও বর্ণিত হয়েছে হাদীস
শরীফে। ইমরান ইবনে হুছাইন রা. বলেন

أَنّ رَجُلًا جَاءَ إِلَى النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَقَالَ: السّلَامُ عَلَيْكُمْ، قَالَ: قَالَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: عَشْرٌ ثُمّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ: السّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ، فَقَالَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: عِشْرُونَ. ثُمّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ: السّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، فَقَالَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: ثَلَاثُونَ.

একবার এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে সালাম দিল

السّلَامُ عَلَيْكُمْ.

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন

عَشْرٌ.

দশ। অর্থাৎ সে দশ নেকী লাভ করেছে।  আরেক ব্যক্তি এসে সালাম দিলবলল

السّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ.

এবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন

عِشْرُونَ.

বিশ। অর্থাৎ সে বিশ নেকী লাভ করেছে।

আরেক ব্যক্তি এসে সালাম দিলবলল

السّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ.

এবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন

ثَلَاثُونَ.

ত্রিশ। অর্থাৎ সে ত্রিশ নেকী লাভ করেছে। জামে তিরমিযীহাদীস ২৬৮৯ সুতরাং আমরাও যখন সালাম দিব। পূর্ণ সালাম দেওয়ার চেষ্টা করব। এবং ত্রিশ নেকী লাভ করব। তেমনি পরিচিত-অপরিচিত নির্বিশেষে সকলকে সালাম দিব। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. থেকে বর্ণিত আছে যেএক লোক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করল ইসলামের কোন্ আমলটি (আমার জন্য) উত্তমরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন

تُطْعِمُ الطّعَامَ، وَتَقْرَأُ السّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ.

(ক্ষুধার্তকে) খাবার খাওয়াবে এবং পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেবে।  সহীহ বুখারীহাদীস ১২সহীহ মুসলিমহাদীস ৩৯ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের সাতটি অছিয়ত করেছিলেনযেন তাঁরা সামাজিক জীবনে তা আঁকাড়ে থাকেন। তাদের পরে উম্মতে মুসলিমাও যেন তা ধরে রাখে। তার মধ্যে একটি হল সালাম। বারা ইবনে আযেব রা. সেই সাতটি বিষয় বর্ণনা করছেন। তিনি বলেন

أَمَرَنَا رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِسَبْعٍ: بِعِيَادَةِ المَرِيضِ، وَاتِّبَاعِ الجَنَائِزِ، وَتَشْمِيتِ العَاطِسِ، وَنَصْرِ الضّعِيفِ، وَعَوْنِ المَظْلُومِ، وَإِفْشَاءِ السّلاَمِ، وَإِبْرَارِ المُقْسِمِ.

তিনি আমাদেরকে (সাতটি বিষয় পালনের) আদেশ দিয়েছেন রোগীর খোঁজখবর নেওয়াজানাযার পিছনে চলাহাঁচিদাতার জবাব দেওয়ার (يَرْحَمُكَ
اللهُ
  বলা)দুর্বলকে সহযোগিতা করানির্যাতিতকে সাহায্য করাসালামের প্রসার ঘটানোকসমকারীকে (কসম থেকে) মুক্ত করা (জন্য সহয়তা করা)। সহীহ বুখারীহাদীস ৬২৩৫

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সলামের প্রচলনকে
অপরিসীম গুরুত্ব দিয়েছেন। সালাম বাস্তাবায়নে উদ্বুদ্ধ করেছেন। হাদীস ভা
Ðারে একটি বড় অংশ জুড়ে আছে সালামের বিবরণ। সালাম প্রচলনের
ফলে মুমিনদের পরস্পরে ভালবাসা সৃষ্টি হয়। তাদের হৃদয়ের বন্ধন হয় দৃঢ় ও অটুট। তিনি
বলেন

لَا تَدْخُلُونَ الْجَنّةَ حَتّى تُؤْمِنُوا، وَلَا تُؤْمِنُوا حَتّى تَحَابّوا، أَوَلَا أَدُلّكُمْ عَلَى شَيْءٍ إِذَا فَعَلْتُمُوهُ تَحَابَبْتُمْ؟ أَفْشُوا السّلَامَ بَيْنَكُمْ.

তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে নাযতক্ষণ না ঈমান আনবে। আর তোমরা ততক্ষণ পূর্ণ মুমিন হতে
পারবে না
যতক্ষণ না পরস্পরকে মহব্বত করতে পারবেআমি কি তোমাদের এমন কিছুর কথা বলে দিবযার মাধ্যমে
তোমরা পরস্পরকে ভালবাসবে। তোমরা নিজেদের মাঝে সালামের
প্রসার ঘটাও।
 সহীহ মুসলিমহাদীস ৫৪

সালামের আরো কিছু আদব রয়েছে। সামনে আমরা কয়েকটি আদব
নিয়ে আলোচনা করব।

কে কাকে সালাম দেবেছোট বড়কেনাকি বড় ছোটকে। পায়ে হেঁটে চলা ব্যক্তি আরোহীকেনাকি আরোহী পায়ে চলা ব্যক্তিকে। বসা ব্যক্তি পথিককে সালাম
দেবে
নাকি পথিক বসা ব্যক্তিকে। ছোট জামাত বড় জামাতকেনাকি বড় জামাত ছোট জামাতকে ইত্যাদি।

আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত বিভিন্ন হাদীসে এ আদবগুলো
পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন

يُسَلِّمُ الرّاكِبُ عَلَى المَاشِي، وَالمَاشِي عَلَى القَاعِدِ، وَالقَلِيلُ عَلَى الكَثِيرِ.

আরোহী ব্যক্তি সালাম দেবে পায়ে হেঁটে চলা ব্যক্তিকে।
হেঁটে চলা ব্যক্তি সালাম দেবে বসে থাকা ব্যক্তিকে। অল্প মানুষের জামাত সালাম দেবে
বেশি মানুষের জামাতকে।
 সহীহ বুখারীহাদীস ৬২৩২

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিতসহীহ বুখারীর অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে

يُسَلِّمُ الصّغِيرُ عَلَى الكَبِيرِ.

বয়সে ছোটজন সালামা দেবে বড়জনকে। সহীহ বুখারীহাদীস ৬২৩১

তবে বড়দেরও উচিত ছোটদের সালাম দেওয়া। যাতে করে তাদের
মাঝে সালামের অভ্যাস গড়ে ওঠে। নবীজী থেকে এবং আমাদের সালাফ
  থেকে
আমরা এ শিক্ষা লাভ করেছি। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। সাইয়ার বলেন

كُنْتُ أَمْشِي مَعَ ثَابِتٍ الْبُنَانِيِّ، فَمَرّ بِصِبْيَانٍ فَسَلّمَ عَلَيْهِمْ، وَحَدّثَ ثَابِتٌ أَنّهُ كَانَ يَمْشِي مَعَ أَنَسٍ، فَمَرّ بِصِبْيَانٍ فَسَلّمَ عَلَيْهِمْ، وَحَدّثَ أَنَسٌ أَنّهُ كَانَ يَمْشِي مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَمَرّ بِصِبْيَانٍ فَسَلّمَ عَلَيْهِمْ.

আমি ছাবেত আলবুনানী রাহ.-এর সাথে হাঁটছিলাম। তিনি কিছু
শিশুর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদেরকে সালাম দিলেন এবং বললেন
তিনি আনাস রা.-এর সাথে হাঁটছিলেন। তিনি কিছু শিশুর পাশ দিয়ে
যাওয়ার সময় সালাম দিলেন এবং বললেন
তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে
হাঁটছিলেন। তিনি কিছু শিশুর পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাদেরকে সালাম দিয়েছেন।
 সহীহ মুসলিমহাদীস ২১৬৮

ঘরে প্রবেশের সময় সালাম দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামের
শিক্ষা হল
 ঘরে ঢুকে কোমল ও নিচুস্বরে সালাম দেবে। বিশেষ করে অনেক রাতে  যখন
ঘরে ঢুকবে তখন এমন কোমল ও নিচুস্বরে সালাম দেবে
যেন যারা জেগে আছে তারা শুনতে পায় এবং যারা ঘুমিয়ে আছে তারা
জেগে না উঠে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনই করতেন। হাদীস শরীফে এসেছে

فَيَجِيءُ مِنَ اللّيْلِ فَيُسَلِّمُ تَسْلِيمًا لَا يُوقِظُ نَائِمًا، وَيُسْمِعُ الْيَقْظَانَ.

… তিনি রাতে ঘরে এসে এমনভাবে সালাম দিতেনযাতে ঘুমন্ত ব্যক্তিরা জেগে না যায় এবং জাগ্রতরা শুনতে পায়। সহীহ মুসলিমহাদীস ২০৫৫

যাইহোকইসলামে সালাম এতটাই গুরুত্বের দাবি রাখে যেসালামের আদবসালামের জবাব দেওয়ার আদব কুরআনে কারীমে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা
শিখিয়েছেন। এ থেকেও আমরা মুসলিমের জীবনে সালামের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি।
সুতরাং কোনো মুসলিমের জন্য সম্ভব নয়
ইসলামের সালাম থেকে গাফেল হয়ে শুভ সকাল বা গুড মর্নিং’ কালচারকে গ্রহণ করে।

অন্যের ঘরে প্রবেশ :

অনুমতি প্রার্থনার আদবের প্রতি যতœবান হই আমাদের প্রয়োজনেই আমাদেরকে অন্যের কাছে যেতে হয়অন্যের ঘরে প্রবেশ করতে হয়। সেক্ষেত্রেও ইসলামের অনন্য আদব-শিষ্টাচার রয়েছে। এবং এ আদব এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যেস্বয়ং আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে এ বিষয়ে মুুমিনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। একজন আদর্শ মুসলিম কখনো অন্যের ঘরে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে পারে না। এ তো আল্লাহ তাআলারই নিদের্শ। আল্লাহ তাআলা বলেছেন

یٰۤاَیُّهَا
الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُیُوْتًا غَیْرَ بُیُوْتِكُمْ حَتّٰی
تَسْتَاْنِسُوْا وَ تُسَلِّمُوْا عَلٰۤی اَهْلِهَا، ذٰلِكُمْ خَیْرٌ لَّكُمْ
لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ. فَاِنْ لَّمْ تَجِدُوْا فِیْهَاۤ اَحَدًا فَلَا
تَدْخُلُوْهَا حَتّٰی یُؤْذَنَ لَكُمْ، وَ اِنْ قِیْلَ لَكُمُ ارْجِعُوْا
فَارْجِعُوْا هُوَ اَزْكٰی لَكُمْ ،  وَ اللّٰهُ بِمَا تَعْمَلُوْنَ عَلِیْمٌ
.

হে মুমিনগণ! নিজের ঘর ছাড়া অন্যের ঘরে প্রবেশ করো নাযতক্ষণ না অনুমতি গ্রহণ কর ও তার বাসিন্দাদের সালাম দাও। এ পন্থাই তোমাদের জন্য উত্তম। আশা করা যায় তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে। তোমরা যদি তাতে কাউকে না পাওতবুও যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদেরকে অনুমতি দেওয়া না হয়তাতে প্রবেশ করো না। তোমাদেরকে যদি বলা হয় ফিরে যাওতবে ফিরে যেও। এটাই তোমাদের পক্ষে শুদ্ধতর। তোমরা যা কিছুই করআল্লাহ সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞাত। সূরা নূর (২৪) : ২৭-২৮ কারো ঘরে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করলে অনাকাক্সিক্ষত দৃশ্যের অবতারণা হতে পারে। তেমনি খÐিত কোনো দৃশ্যের কারণে মনে জন্ম নিতে পারে কুধারণা। কিংবা কোনো ঘটনার পূর্বাপর না জানার কারণে সংশয়-সন্দেহ সৃষ্টি হতে পারে।  তেমনি অনুমতি ছাড়া অনাকাক্সিক্ষত প্রবেশের কারণে মানুষের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারে। তাই এতসব সন্দেহ-সংশয়ের বেড়াজাল থেকে মুক্ত থাকতে এবং অপ্রীতিকর দৃশ্য বা ঘটনার অবতারণা এড়াতে ইসলাম অনুমতি গ্রহণের কিছু আদব বর্ণনা করেছে। এখানে আমরা অনুমতি প্রার্থনার গুরুত্বপূর্ণ কিছু আদব আছে যাহা নিয়ে আলোচনা করছি :

এক. অনুমতি চাওয়ার সময় দরজার মুখোমুখি দাঁড়াবে না। বরং দরজার ডান বা বাম পাশে দাঁড়াবে। যাতে দরজা খুললে ভেতরে দৃষ্টি না পড়ে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটিই করতেন। আলআদাবুল মুফরাদে আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর রা. থেকে বর্ণিততিনি বলেন

أَنّ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِذَا أُتِيَ بَابًا يُرِيدُ أَنْ يَسْتَأْذِنَ لَمْ يَسْتَقْبِلْهُ جَاءَ يَمِينًا وَشِمَالًا فَإِنْ أُذِنَ لَهُ وإلا انصرف.

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কারো দরজায় যেতেন তখন অনুমতি চাওয়ার জন্য দরজার মুখোমুখি নয়বরং ডানে বা বামেই থাকতেন। যদি তাঁকে অনুমতি দেয়া হত; (তাহলে প্রবেশ করতেন) অন্যথায় ফিরে আসতেন। আলআদাবুল মুফরাদহাদীস ১০৭৮

অনুমতি গ্রহণের একটি মৌলিক ফায়দা হলদৃষ্টির হেফাজত। সাহ্ল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিতরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

إِنّمَا جُعِلَ الِاسْتِئْذَانُ مِنْ أَجْلِ البَصَرِ.

অনুমতি গ্রহণের বিধান দেওয়াই হয়েছে (অনাকাঙ্খিত) দৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য। সহীহ বুখারীহাদীস ৬২৪১

দুই. প্রথমেই সালাম দেবে। আর সালাম দেওয়ার অর্থই হল অনুমতি চাওয়া। সালাম দেওয়ার আগে অনুমতি চাওয়া সঠিক পদ্ধিত নয়।

তিন. যখন ভেতর থেকে পরিচয় জানতে চাওয়া হবেতখন স্পষ্ট করে নিজের নাম বলবেযে নামে সবাই তাকে চেনে-জানে। অস্পষ্ট কোনো শব্দে-পরিচয় দেবে না। যেন তাকে সহজেই চেনা যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবাদের এটি শিখিয়েছেন। জাবের রা. বলেনএকবার আমি আবার বাবার ঋণ পরিশোধের বিষয়ে কথা বলতে নবীজীর কাছে গেলাম। দরজায় আওয়াজ দিলে নবীজী জিজ্ঞেস করলেন কেবললাম, ‘আমিতখন
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন

أَنَا أَنَا

আমিআমি। (এটা আবার কী!) এভাবে আমি’ বলে পরিচয় দেওয়াটা নবীজী অপছন্দ করলেন। সহীহ বুখারীহাদীস ৬২৫০ অর্থাৎ তোমার পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে তো তোমার নাম বলোস্পষ্টভাবে পরিচয় দাও। তা না করে আমি’ বলার দ্বারা কী ফায়েদা। এর দ্বারা তো বোঝা যাবে না দরজায় কে। সুতরাং স্পষ্ট করে নাম বলতে হবে।

চার. যখন ফিরে যেতে বলা হবেতখন ফিরে যাবে। এমনকি অন্তরে এর জন্য কোন সংকীর্ণতা অনুভব করবে না। কেননাকুরআন-হাদীসে স্পষ্ট ভাষায় ফিরে যেতে বলা হয়েছে। হতে পারে তার এমন ওজর রয়েছে যা সে তোমার কাছে বলতে পারছে না। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে ইসলামী আদাব
মেনে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন।

Thank you for reading the post.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top