জুমার দিনের আদব, সুন্নাত, মুস্তাহাব সমুহ

জুমার দিনের আদব, সুন্নাত, মুস্তাহাব সমুহ

সম্মানিত ইসলাম প্রিয় মুসলিম ভাই সব । মুসলিম জাতীর জন্য সপ্তাহের ৭ দিনের শ্রেষ্ঠ দিন শুক্রবার বা জুমার দিন একটি মর্যাদাপূর্ণ দিন, জুমার দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিন বলা হয়েছে।  । এই দিনের যে কোন দ্বিনী কাজ অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি ফজিলত বলে কোরআন এবং হাদিসে দ্বারা প্রমাণিত এর পাশাপাশি জুমার দিনের এমন কিছু আদব আছে, সুন্নাত আছে, যেগুলোর কিছু অবশ্যই পালনীয়, আবার কিছু আছে সুন্নাত , মুস্তাহাব । চলুন  আমরা  তেমন ৩৮টি আদব সম্পর্কে অবগত হই । 

১। বন্ধুগন জুমার দিনে গোসল করা। যাদের উপর জুমার নামাজ ফরজ তাদের জন্য এ দিনে গোসল করাকে রাসুল (সা.) সুন্নাত করেছেন (বুখারীঃ- ৮৭৭, ৮৭৮, ৮৮০, ৮৯৭, ৮৯৮)। পরিচ্ছন্নতার অংশ হিসাবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি ভাল কাজ বা মুস্তাহাব আমল

২। জুমার সালাতের জন্য আতর বা হালাল সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারীঃ ৮৮০)

৩। গাছের ডাল দিয়ে মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮, বুখারীঃ ৮৮৭, ইঃফাঃ ৮৪৩)

৪। শরীরে তেল ব্যবহার করা। (বুখারীঃ ৮৮৩)

৫। যথাসাধ্য উত্তম পোশাক পরিধান করে জুমা আদায় করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৭)

৬। মসজিদের ভিতরে মুসুল্লীরা ইমামের দিকে মুখ করে বসা। (তিরমিযীঃ ৫০৯, ইবনে মাজাহঃ ১১৩৬)

৭। মনোযোগসহ খুৎবা শোনা ও চুপ থাকা- এটা ওয়াজিব। (বুখারীঃ ৯৩৪, মুসলিমঃ ৮৫৭, আবু দাউদঃ ১১১৩, আহমাদঃ ১/২৩০)

৮। আগে আগে মসজিদে যাওয়া চেষ্টা করা। (বুখারীঃ ৮৮১, মুসলিমঃ ৮৫০)

৯। পায়দল বা পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন করা। (আবু দাউদঃ ৩৪৫)

১০। শুক্রবার দিনে ফজরের নামাজে প্রথম রাকাআতে সূরা সাজদা ( কুরআন শরীফের সূরা নং-৩২) আর দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ইনসান ( দাহর ) (সূরা নং-৭৬)  পড়া। (রেফারেন্স বুখারীঃ ৮৯১, মুসলিমঃ ৮৭৯)

১১। সূরা জুম’আ ও সূরা মুনাফিকুন দিয়ে জুমার সালাত আদায় করা। অথবা সূরা আলা ও সূরা গাশিয়া দিয়ে জুমা আদায় করা। (মুসলিমঃ ৮৭৭, ৮৭৮)

১২। জুমার দিন ও রাত্রে অনেক বেশি দুরুদ শরীফ পাঠ করা। ( রেফারেন্স আবু দাউদঃ ১০৪৭)

১৩। জুমার দিনে বেশি বেশি দোয়া করা। ( রেফা: বুখারীঃ ৯৩৫)

১৪। সামনে বসে থাকা মুসুল্লীদের ডিঙ্গিয়ে বা সরিয়ে মসজিদে সামনের দিকে এগিয়ে না যাওয়া। ( রেফা: বুখারীঃ ৯১০, ৮৮৩)

১৫। মুসুল্লীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে যাওয়ার চেষ্টা না করা। (রেফ: আবু দাউদঃ ৩৪৩, ৩৪৭)

১৬। কোন মুসল্লিদেরকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে না বসা। ( রেফা: বুখারীঃ ৯১১, মুসলিমঃ ২১৭৭, ২১৭৮)

১৭। খুৎবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলে তখনও দুই রাকাআত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা ছাড়া না বসা। (বুখারীঃ ৯৩০)

১৮। জুমার দিন জুমার নামাজের পূর্বে মসজিদে জিকর বা কোনো শিক্ষামূলক হালকা না করা। যেমন ভাগ ভাগ হয়ে, গোল গোল হয়ে না বসা, যদিও এটা কোনো শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হোক না কেন। ( রেফা: আবু দাউদঃ ১০৮৯)

১৯। কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। ( রেফ: নাসায়ী ৭১৪, বুখারীঃ ৯৩৪)

২০। মসজিদে যাওয়ার পূর্বে কাঁচা পেয়াজরসুন না খাওয়া বা এজাতীয় কোন হালাল দ্রব্য না খাওয়া হারাম তো সব সময়ের জন্যই হারাম। ( রেফ: বুখারীঃ ৮৫৩)

২১। ঘুমের অনুভূতি বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে স্থান বদল করে বসা। (আবু দাউদঃ ১১১৯)

২২। ইমামের খুৎবা দেওয়ার সময় দুই হাঁটু উঠিয়ে না বসা। নামাজের সূরতে বসা ( রেফা: আবু দাউদঃ ১১১০, ইবনে মাজাহঃ ১১৩৪)

২৩। খুৎবার সময় যথা সম্ভব ইমামের কাছাকাছি বসা। জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হলেও ইমাম থেকে দূরে উপবেশনকারীরা বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ( রেফা: আবু দাউদঃ ১১০৮)

২৪। জুমার দিন সূরা কাহফ পড়া। এতে পাঠকের জন্য আল্লাহ তায়ালা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত করে দেন এবং সূরা কাহফ তিলাওয়াতকারী দাজ্জালের ফিতনাহ্ থেকে মুক্তি পাবে। ( রেফা: হাকেমঃ ২/৩৬৮, বায়হাকীঃ ৩/২৪৯)

২৫। খুৎবার পূর্বে জুমার আযান দেওয়া। (বুখারীঃ ৯১২)

২৬। জুমার ফরজ নামাজ আদায়ের পর মসজিদে চার রাকাআত বা’দাল জুমা সুন্নাত সালাত আদায় করা। ( রেফা: বুখারীঃ ১৮২, মুসলিমঃ ৮৮১, আবু দাউদঃ ১১৩০)

২৭। উযর ব্যাতিত একই গ্রাম ও একই মহল্লায় একাধিক জুমা চালু না করা। এখন  প্রশ্ন জাগে উযর কি? উযর হলো এলাকাটি খুব বড় হওয়া, বা প্রচুর জনবসতি থাকা, বা মসজিদ দূরে হওয়া, বা মসজিদে জায়গা না পাওয়া, বা কোনো ফিতনা ফাসাদের ভয় থাকা। (রেফা: মুগনি লিবনি কুদামাঃ ৩/২১২, ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহঃ ২৪/২০৮)

২৮। ওজু নষ্ট হয়ে গেলে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া। অতঃপর আবার নতুন ওজু করে মসজিদে প্রবেশ করা। ( রেফা: আবু দাউদঃ ১১১৪)

২৯। একান্ত উযর না থাকলে দুই পিলারের মধ্যবর্তী খালি জায়গায় নামাজ আদায় না করা। ( রেফা: হাকেমঃ ১/১২৮)

৩০। কোনো একটা জায়গাকে নামাজের জন্য নির্দিষ্ট না করা, যখন যেখানে জায়গা পাওয়া তখন সেখানেই নামাজ আদায় করা ( রেফা: আবু দাউদঃ৮৬২)। আরেকটু বুঝিয়ে বলি, পূর্ব থেকেই নামাজের বিছানা বিছিয়ে জায়গা দখল করে না রাখা বরঞ্চ যে আগে আসবে সেই আগে বসবে।

৩১। কোনো নামাজীর সামনে দিয়ে না হাঁটা অর্থাৎ মুসুল্লী ও সুতরার মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে না হাঁটা। (বুখারীঃ৫১০)

৩২। এই পরিমাণ আওয়াজ করে কোনো কিছু না পড়া, যে পরিমাণ আওয়াজে অন্যের সালাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে। (রেফা: আবু দাউদঃ ১৩৩২)

৩৩। পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার চেষ্টা করা কারণ এর ফজিলত অনেক বেশি। মসজিদ যদি দূরে হয় তাহলে তো বাহনের ব্যবস্থা করতে হবে ।

৩৪। রাস্তায় চলার আদব মেনে মসজিদে গমন করা।

৩৫। খুৎবার সময় খতীবের কোনো কথার সাড়া দেওয়া বা তার প্রশ্নের জবাব দানে শরীক হওয়া জায়েজ। এবং মনোঙোগ সহকারে আলোচনা শুনা ।  (বুখারীঃ ১০২৯, মুসলিমঃ ৮৯৭)

৩৬। হানাফী আলেমগণ বলেছেন যে, ভিড় প্রচণ্ড হলে সামনের মুসুল্লীর পিঠের উপর সিজদা দেওয়া জায়েজ (আহমাদঃ১/৩২)। দরকার হলে পায়ের উপরও দিতে পারে (আর রাউদুল মুরবী)

৩৭। যে স্থানে  জুমার ফরজ আদায় করেছেন, উত্তম হলো একই স্থানে সুন্নাত না পড়া। অথবা কোনো কথা না বলে এখান থেকে গিয়ে পরবর্তী সুন্নাত সালাত আদায় করা। (রেফা: মুসলিমঃ ৭১০, বুখারীঃ ৮৪৮)

৩৮। ইমাম সাহেব মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাসবীহ-তাহলীল, তাওবা- ইস্তিগফার ও কুরআন তিলাওয়াতে এবাদত বন্দেগিতে রত থাকা।

হে আল্লাহ!  সবাইকে শেখা, বোঝা এবং পালন করার তৌফিক দান করু (আমীন)।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top