শিয়া সম্প্রদায়, শিয়া কারা? শিয়াদের প্রকারভেদ।
শিয়াদের পরিচয়: শিয়া কারা?
শিয়াদের সম্পর্কে নবীজি সাঃ এর ভবিষ্যৎ বাণী:
আহমদ মোস্তাদরাক হাকিম, কানজুল উম্মাল ও মিশকাতুল মাসাবিহ প্রবৃতি হাদিস গ্রন্থে হাসান পর্যায়ের সহি সনদে বর্ণিত আছ যে, আলী রাঃ বলেছেন একদিন রসুল উল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন। তোমার মধ্যে নবী ঈসার সাথে একটা সাদৃশ্য রয়েছে ইহুদীরা ঈসা নবীর সাথে এমন শত্রুতা করেছে যে তার মায়ের উপর ব্যভিচারের অপবাদ দিল। আবার খ্রিস্টানরা তাকে এত ভালোবাসে যে তারা তাকে এমন মর্যাদা দিল যে, তিনি যার অধিকারই নন তারপর আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন আমার বিষয়ে দু ধরনের মানুষ ধ্বংস হবে।
এক আমার মহব্বতে সীমালংঘনকারী দল, যারা আমার এমন বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করবে এবং আমার এমন প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করবে, যা আমার মধ্যে নেই।
দুই আমার সাথে শত্রুতা পোষণকারী দল যারা আমার শত্রুতার কারণে আমার উপর অপবাদ আরোপ করবে উল্লেখ্য শিয়াদের মশুর কিতাব “নাহজুল বালাগাহ্” মিশরের ছাপা প্রথম খন্ড 261 পৃষ্ঠায় আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর এই বাণীটি বর্ণিত আছে।
ভবিষ্যৎবাণীর বহিঃপ্রকাশ:
প্রকাশ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী আলী রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু যে কথা বলেছিলেন তার বহিঃপ্রকাশ আলী রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর খেলাফত আমলেই ঘটেছিল। খাওয়ারিজ নামক একটি গোমরাদল আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুর শত্রুতায় এমন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে তারা তাকে কাফির ও ওয়াজিবুল ক্বতল বলে ফতোয়া দিল। এবং শেষ পর্যায় ৪০ হিজরীতে তাদেরই এক হতভাগা আব্দুর রহমান ইবনে মুলজিম তাকে শহীদ করেছিল ।
ঠিক এর বিপরীত এক শ্রেণীর মানুষ আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর মহব্বতে সীমালংঘন করেছিল এরা হলো শিয়া, শিয়া মানে দল অর্থাৎ আলী ভক্ত দল এশিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা ছিল বিভিন্ন মতের। তারা কেউ বলতো আলী খোদা এরা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কে প্রভুত্বের মর্যাদা দিল (নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক) আবার কেউ বলল আল্লাহ প্রকৃতপক্ষে আলীকে নবী ও রসূল করতে চেয়েছিলেন আর জিব্রাইলকে ওয়াহি দিয়ে আলীর কাছে প্রেরণ করেছিলেন কিন্তু জিবরাঈল ওহী নিয়ে ভুল করে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট পৌঁছে গিয়েছেন।
(নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক)
ইবনে জারির তবারি লিখিত ‘তারিখুল উমাম’ ইবনে কাসীর লিখিত ‘আল বিদায়’ শাহরস্তানী সংকলিত আল মিলাল’ প্রভৃতি আরাবী ইতিহাস গ্রহন্থ দ্বারা শিয়া সম্প্রদায়ের জন্ম ইতিহাস সম্পর্কে যা বোঝা যায় তার সারকথা এরূপ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে আরব উপদ্বীপের প্রায় সর্বত্র ইসলামের দখলে এসে গিয়েছিল এবং উপদ্বীপে ইসলাম ও মুসলিমদের বিপরীত মুশরিক কিংবা ইহুদি ও খ্রিস্টানদের কোন শক্তি ছিল না তারপর প্রথম খলিফার যুগে প্রায় শোয়া দু বছরে পরিস্থিতি আরো সুদৃঢ় হল এবং উপদ্বীপের বাইরে ইসলামের সম্প্রসারণ আরম্ভ হয়েছিল অতঃপর দ্বিতীয় খলিফার যুগে ১০ বছর ৬ মাসে ইসলামের দাওয়াত ও ধারাবাহিক বিজয়ের গতিবেগে তদানীন্তন বিশ্বের দুই সুপ্রিম পাওয়ার রোম ও পারস্যের বেশিরভাগ অধিগৃহিত এলাকা ইসলামের দখলে চলে এসেছিল । তারপর তৃতীয় খলিফার যুগে ১২ বছরে ইসলামের দাওয়াত ও বিজয়ের ধারাবাহিকতা প্রায় পূর্বগতিতে অব্যাহত ছিল দ্বিতীয় তৃতীয় খলিফার আমলে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জাতির অগণিত মানুষ নিজেদের পুরাতন ধর্ম ছেড়ে ইসলামে দীক্ষিত হয় এরা সকলে ইসলামকে সত্য ধর্ম জেনে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে খাঁটি মনে ইসলাম গ্রহণ করেছিল কিন্তু এদের মধ্যে কিছু মানুষ এমনও ছিল যারা ইসলাম ও মুসলিম জাতির ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে মুনাফিক রূপে, মুখে কলেমা পড়ে মুসলিমদের সাথে সামিল হয়েছিল এদেরই অন্যতম মুনাফিক শিয়া সম্প্রদায়ের সূচনাকারী আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা ।
শিয়া সম্প্রদায়ের প্রবর্তক আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা:
সে ছিল ইয়ামানের একজন ইয়াহুদী আলিম তৃতীয় খলিফার আমলে মদিনায় এসে স্বয়ং ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে ইসলাম গ্রহণ করেছিল সে মদিনায় সামান্য কিছুদিন অবস্থান করার পর উপলব্ধি করেছিল যে মদিনা মনওয়ারা বিশিষ্ট সাহাবা ও তাবেয়ীনদের কেন্দ্র ভূমি এখানে থেকে মুসলিমদের নাশকতার আন্দোলন চালানো মুশকিল তাই মদিনা থেকে বাচরা ও তারপর সিরিয়া হয়ে পরিশেষে মিশরে গিয়ে আড্ডা গেড়েছিল। ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা মিশরের মুসলিমদের মাঝে সর্বপ্রথম এই কুমন্ত্রণা ছড়িয়ে দিয়েছিল যে আমি ওই সকল মুসলিমদের উপর আশ্চর্যান্বিত যে যারা ঈসা নবীর এই দুনিয়াতে পুনরায় আগমনের বিশ্বাস রাখে কিন্তু সাইয়েদুল আম্বিয়া মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর এভাবে পুনরায় আগমনের আকিদা রাখেনা অথচ মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈসা নবীর চেয়ে অনেক বড়। অতএব নিঃসন্দেহে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনঃরায় দুনিয়াতে আসবেন। বলাবাহুল্য একদল জাহেল ও অপরিপক্ক মানুষ ইবনে সাবার এই কুমন্ত্রণায় ঈমান হারিয়ে ছিল
ইবনে সাবার মূল শয়তানি:
আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা পরিবেশ অনুকূল দেখে এবার নবীজির জামাতা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কে কেন্দ্র করে শয়তানী শুরু করল সে হযরত আলীর প্রতি অসীম ভক্তি ভালবাসা প্রকাশ করে তার বিষয়ে বিভিন্ন রকমের মানুষদেরকে বলল প্রত্যেক নবীর একজন “ওসী” থাকেন নবীর পর তিনি হোন খলিফা মুসা নবীর তাওরাত শরীফে লেখা আছে আলী হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের “ওসী” অতএব নবীজির ইন্তেকালের পর খেলাফতের হকদার ছিলেন আলী মানুষেরা তাকে মাহ্রুম করে আবু বকর ওমর তারপর ওসমানকে সেই খেলাফত দিয়েছে। অথচ এরা কেউই খলিফা হওয়ার যোগ্য নন আর বর্তমান ওসমান ও তার সহযোগীরা এই এই গর্হিত কর্মকান্ড করে চলেছেন অতএব এর প্রতিরোধ করা আমাদের উপর ফরজ বলাবাহুল্য মিশর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার একদল জাহেল ও ফেতনাবাজ মানুষ ইবনে সাবার কুমন্ত্রণায় চরম পর্যায়ে ওসমান বিদ্বেষী হয়ে উঠলো এমনকি এই সাবায়ী দল পরিকল্পিতভাবে মদিনায় ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঘর ঘেরাও করে ৩৫হিজরীর ১৮ জুলহিজ্জাহ শুক্রবার তাকে শহীদ করেছিল। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন ।
ইবনে সাবার পরিণাম:
ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাতের দিন আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু চতুর্থ খলিফা নিযুক্ত হলেন তারপর উম্মত এই শাহাদাতকে কেন্দ্র করে দুই দলে বিভক্ত হলো। ঘটে গেল উষ্ট্র যুদ্ধ ও সিফ্ফীন উভয় যুদ্ধে আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা সদল বলে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর দলভুক্ত ছিল এই সুযোগে সে সৈন্যদলের মধ্যে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে বিভিন্ন ভ্রান্ত আকিদা প্রচার করতে থাকে পরিশেষে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে হত্যা করে পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। শিয়াদের “রিজাল কুশি” নামক রিজাল শাস্ত্রের কিতাবে জাফর সাদিক রাহমাতুল্লাহ আলাইহী থেকে বর্ণিত বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারা প্রতিবাদ হয় যে ইবনে সাবা আলি রাজিয়াল্লাহু আনহুর প্রভু হওয়ার আকিদা পোষণ করত এবং মানুষদেরকে এর দাওয়াত দিত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এ কথা জানতে পেরে তাকে আগুনে পুড়িয়ে খতম করেছিলেন আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহমাতুল্লাহ “মিনহাজুস সুন্নাহ” কিতাবে প্রথম খন্ডে ৭ নম্বর পৃষ্ঠায় একথা লিপিবদ্ধ করেছেন উল্লেখ্য আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু যদিও আব্দুল্লাহ ইবনে সাবাকে হত্যা করে পুড়িয়ে বিলুপ্ত করে দিয়েছিলেন কিন্তু ইবনে সাবার লালিত গোমরাহ দল বিলুপ্ত হয়নি বর্তমান যুগের শিয়া সম্প্রদায়-ই হলো সেই সাবায়ী দলের উত্তরসূরী।
শিয়াদের সাথে বিবাহ বন্ধন:
শিয়াদের বিভিন্ন ফেরকা আছে, তন্মধ্যে যারা কাফের তাদের সাথে বিবাহ করা হারাম আর যারা ফাঁসেক তাদের সাথে মকরুহ তাহরিমী। ফাতাওয়ায়ে সামি দ্বিতীয় খণ্ড ৩৯৮ পৃষ্ঠায় লেখা আছে যে, সিয়া আলী রাঃ কে খোদা হওয়ার আকিদা রাখে কিংবা জিব্রাইল ভুল করে আলীর জায়গায় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওহী দিয়ে গেছেন বলে বিশ্বাস রাখে কিংবা আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাহাবী হওয়ার অস্বীকার করে কিংবা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার উপর ব্যভিচারের অপবাদ দেয় এরূপ শিয়া কাফির আর যে সিয়া আলী রাঃ কে আবু বকর, ওমর, ও উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু এর উপর প্রাধান্য দেয় কিংবা সাহাবাদের গালিগালাজ করে এরূপ সিয়া ফাসিক্ব।
শিয়াদের উৎপত্তি:
শিয়াদের বিশ্বাস:
শিয়াদের ব্যাপারে আমাদের ধারণা কি হবে?
Thank you for reading the post.