শবে বরাতের ফজিলত, শবে বরাতের গুরুত্ব ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষন

শবে বরাতের ফজিলত

Table of Contents

শবে বরাত

حم – و الكتابِ الْمُبِينِ – إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ ط فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ – أَمْرًا مِّنْ عِنْدِنَا أَنَا كُنَّا مُرْسَلِينَ ط رحْمَةً مِّن رَبَّكَ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ.

হা-মীম। শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের ।
আমি ইহা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারক রাতে । নিশ্চয় আমি সতর্ককারী । এ রাতে প্রজ্ঞাপূর্ণ
সবকিছু স্থিরীকৃত হয় । আমার পক্ষ থেকে আদেশ,  আমিই রাসূল প্রেরণকারী । আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে
রহমত স্বরূপ । তিনি সর্বশ্রোতা
,
সর্বজ্ঞ।

অধিকাংশ তাফসীরবীদ-এর মতে উল্লেখিত
আয়াতসমূহ শবে ক্বদরের ফযীলত বর্ণনার ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে
, যা রমযান মাসের শেষ দশকে হয়। তবে কিছু কিছু তাফসীর কারকদের মতে শবে-বরাতের ফযীলতের
ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে ।

বিশিষ্ট দশজন সাহবী থেকে শবে-বরাতের
ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। উল্লেখ্য
,
কোন কোন হাদীস সনদের দিক থেকে দুর্বল বলে কোন কোন আলেম
বলেন
, এ রাতের ফযীলত ভিত্তিহীন। কিন্তু পর্যালোচনা করলে প্রমাণিত হয়
যে
, উক্ত মতামত সঠিক নয়। কারণ,
মুহাদ্দিসীনের সিদ্ধান্ত এই যে, যদি কোন হাদীস সনদের দিক থেকে দুর্বল হয়, আর অন্যান্য হাদীস তার সমর্থন করে, তবে দুর্বল হাদীসের দুর্বলতা দূর হয়ে যায় । সুতরাং শবে- বরাতের হাদীসগুলোকে ভিত্তিহীন
বলা ঠিক নয় ।

অধিকন্তু মুহাদ্দিসগণের অভিমত হল-
দুর্বল সনদ বিশিষ্ট হাদীসও আমলের উপযুক্ত
। সুতরাং শবে বরাতের ফযীলতের ব্যাপারে আর কোন সংশয় বাকি
থাকে না ।

শবেবরাত ক্ষমার মৌসুম:

আল্লাহ তায়ালা শাবান
মাস ও তার পনের তারিখের রাতকে উম্মতে মাহাম্মাদীর জন্য রহমত ও গুনাহ মাফের মৌসুম বলে
অভিহিত করেন । পুরা বছরই আল্লাহ তা
য়ালা বান্দার গুনাহ মাফ করেন, এতে কোন সন্দেহ নেই । অন্যান্য নবী-রাসূলের উম্মতগণ হাজার-বারশ বছরও হায়াত পেয়েছেন
। তারা এ দীর্ঘ সময় ইবাদত করার কারণে জান্নাতের অধিকারী হবে। কিন্তু উম্মতে মুহাম্মাদী
হায়াত পাবে ষাট থেকে সত্তর বছর। এই অল্প সময়ের ইবাদত যেন দীর্ঘ সময়ের ইবাদতের চেয়েও
মূল্যবান হয়
, এজন্য আল্লাহ তায়ালা বিশেষ কিছু সময়, দিন ও মাস দান করেছেন, যেন বান্দা তাওবার মাধ্যমে আপন গুনাহসমূহ হতে মুক্তি পেতে পারে ও বিশেষ ফযীলত হাসেল
করে অন্যান্য উম্মতের চেয়ে বেশি ইবাদাত নিয়ে পরজগতে গমন করতে পারে। যেমন: লাইলাতুল ক্বদর, শবে বরাত, রমযান মাস ইত্যাদি। 

রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন

إذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ
شُعْبَانَ فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا يَومَهَا فَان الله تَعَالَى يَنزِلُ
فِيهَا لِغُرُوبِ الشَّمسِ إلى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيَقُولُ اَلآمَنْ
مُّسْتَغْفِرِ فَأَغْفَرَ لَةَ الَاَمَسْتَرْزِقٍ فَأَرُزُقَهُ أَلا مُبْتَلَى فَاعَافِيَه
اَلا كَذَا أَلا كَذَا
حَتَّى يَطلَعَ
الْفَجْرُ – رواه البيهقي وابن ماجه _ مشکوۃ ص ١١٥

যখন শাবান মাসের পনের তারিখের রাতের আগমণ ঘটে, তখন তোমরা সে রাতে নফল নামায পড় ও দিনে ‘রোজা রাখ । ‘কেননা আল্লাহ তায়ালা এ রাতে
সুর্যাস্তের সাথে সাথে প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং আওয়াজ দিয়ে বলতে থাকেন- কোন ক্ষমা
প্রার্থনাকারী আছে কি
? যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে, আর আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোন
রিযিক অন্বেষণকারী আছে কি
? যে আমার নিকট রিযিক চাইবে, আর আমি তাকে রিযিক দান করব। কোন
বিপদগ্রস্থ ব্যক্তি আছে কি
?
যে আমার নিকট তা থেকে পরিত্রাণ চাইবে, আর আমি তার বিপদ দুরীভূত করে দেব । এভাবে তিনি সুবহে সাদিক পর্যন্ত ডাকতে থাকেন।

(বাইহাকী শরীফ,
খন্ড- ৩,
পৃষ্ঠা-২৭৯) মিশকাত ১১৫)

বস্তুত আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের
সকল সমস্যার সমাধান দিতে চান । কিন্তু আমরা সেদিকে ভ্রুক্ষেপই করি না। আল্লাহর রহমত
বান্দার দরজায় করাঘাত করে বলে
,
হে গুনাহগার! গুনাহ নিয়ে আস, ক্ষমা করে দেয়া হবে । রিযিক পাওয়ার জন্য আস, রিযিক দেয়া হবে । সন্তান পাওয়ার
জন্য আস
, সন্তান দেয়া হবে। দুনিয়া ও আখেরাতের যে কোন সমস্যার সমাধান
পেতে আস
, সমাধান করে দেয়া হবে । জান্নাত পাওয়ার অভিপ্রায়ে এগিয়ে আস, জান্নাত দেয়া হবে । মজার ব্যাপার হল,
সব কিছুই দেয়া হবে, বিনিময়ে কিছুই নেয়া হবে না ।
সুতরাং হে মানবকুল! আল্লাহর রহমতের দ্বার সদা উন্মুক্ত । যে কোন মুহূর্তে তোমরা বিনামূল্যে
রহমত গ্রহণ করতে পার ।

আমাদের পূর্বপুরুষগণ এ রাতে আল্লাহর
রহমতের সমুদ্রে নিমজ্জিত থাকতেন । রাসূলুল্লাহ সা. নিস্পাপ হওয়া সত্ত্বেও উম্মতের
কল্যাণ ও মুক্তির প্রত্যাশায় অশ্রুর বন্যা বইয়ে দিতেন । হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাযি.
ওমর ফারুক রাযি.
, উসমান রাযি. ও আলী রাযি. প্রমূখ সাহাবগণ এ রাতের পুরা সময়টুকু
অতিবাহিত করতেন রহমত
, মাগফেরাত ও নাজাত অন্বেষণে । যুগে যুগে আল্লাহর ওলীগণ এ রাতে
ইবাদত-বন্দেগীতে মশগুল থাকতেন ।

কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল, বর্তমানে আমরা নিজেদেরকে উম্মতে মুহাম্মাদী, আশেকে রাসূল সা. ও খোদা প্রেমিক
দাবী করি
, কিন্তু রাসূল সা. ও সাহাবায়ে কেরামের পথ ছেড়ে শরীয়তের গন্ডি
হতে দূরে বহু দূরে অবস্থান করি । সুন্নাতের কোন তোয়াক্কা করি না । বেদ
আত ও কুসংস্কারে
লিপ্ত থাকি । খৃষ্টপন্থী ফটকাবাজ ও ফেরেব-বাজদের কবলে পড়ে ঈমান ও ঐতিহ্য হারাতে বসেছি।
আল্লাহ তা
য়ালা আমাদের জন্য এ রাতের বিশাল সুযোগ দান করেছেন । আমরা ফিরে
আসব । আবার ইসলামের ছায়াতলে ফিরে আসব । আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করব । জীবনকে পরিবর্তন করবো। ইনশা আল্লাহ।

শবে বরাতের ফযীলত

ان عَائِشَةَ رض قَالَتْ . قَامَ رَسُولُ
اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِن اللَّيْلِ يُصَلّى فَاطَالَ السُّجُودَ
حَتَّى ظَنَنْتُ أَنهٗ قَدْ قُبِضَ فَلَمَّا رَأَيْتُ ذٰالِكَ قُمْتَ حَتَّى حَرّكْتُ
إِبْهَا مَهٗ فَتَحَرَّكَ فَرَجَعْتُ فَلَمَّا رفع الى راسه من السجودِ وَفَرَغَ
مِنْ صَلاتِهِ قَالَ يَا عَائِشَةُ اَوْ يَا حُمَيْرَاء . أَظْنَنَت أَنَّ
النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ خَانَ بِكَ . قُلْتُ: لا وَالله
يا رسول الله ولكنّى  ظننتُ أَنَّكَ قَبِضْتَ لِطُولِ سُجُودِكَ. فَقَالَ
اتَدْرِينَ أَي لَيْلَةٍ هَذِهِ ؟ قُلْتُ اللَّهُ وَرَسُوْلُهٗ أَعْلَمُ . قَالَ هَذِهِ
لَيْلَةَ النَّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ . إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَطْلُعُ عَلَى عِبَادِهِ فى لَيْلَةِ النَّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ
المُسْتَغْفِرِينَ وَيَرْ حَمُ 
 الْمُسْتَرْحِمِیْنَ وَيُؤَخِّرُ
أَهْلَ الْعِقَدِ كَمَا هُمْ. رواه البيهقى في شعب الإيمان . 

ভাবার্থ : হযরত আয়েশা রাঃ বলেছেন, একদা রাসূল (সাঃ) রাতে উঠে নামায পড়তে লাগলেন । এতদীর্ঘ সিজদা করলেন যে, আমি ভাবলাম তিনি ইনতেকাল করেছেন,
এ অবস্থা দেখে আমি উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম । তাতে
স্পন্দন ছিল
, আমি ফিরে এলাম স্বীয় স্থানে। তিনি সিজদা হতেমাথা উঠালেন, এবং নামায পড়ে বললেন, হে আয়েশা,
কিংবা হে হুমায়রা । তুমি কি ধারণা করেছ, আল্লাহর নবী তোমার হক নষ্ট বা তোমার সাথে খিয়ানত করেছেন?
না,
ইয়া রাসূলুল্লাহ । আল্লাহর কসম আমি ভেবে ছিলাম, এত দীর্ঘ সিজদার কারণে আপনি ইনতেকাল করেছেন, রাসূল (সাঃ) বললেন, তুমি জান এটা কোন রাত্রি,
আমি বললাম,
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন । তিনি বললেন, এটা ১৫ ই শাবানের রাত্রি এরাতে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকান । ক্ষমা প্রার্থীদের ক্ষমা করেন, রহমত প্রত্যাশীদের উপর রহমত করেন,
হিংসুকদের স্বীয় অবস্থায় রাখেন, অন্য এক হাদীসে আরো বিস্তারিত ভাবে উল্লেখ আছে যেমন : এ রাতের ফযীলত সম্পর্কে হযরত
আয়েশা রাযি. বলেন-

قامَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ مِنَ اللَّيْلِ

এক রাতে রাসূল সা. নামায পড়তে দাঁড়ালেন।এরপর হযরত আয়েশা রাযি. বলেন,
তিনি সিজদা এত দীর্ঘ করলেন যে, আমি ভাবলাম তিনি ইন্তেকাল করেছেন । আমি তা দেখে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং হুজুরের বৃদ্ধাঙ্গুলী
নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলী নড়া-চড়া করল। আমি ফিরে আসলাম । আমি শুনতে পেলাম
, তিনি সিজদা অবস্থায় দুআ করছেন- হে আল্লাহ! তোমার ক্ষমার মাধ্যমে তোমার শাস্তি হতে
আশ্রয় চাই । তোমার সন্তুষ্টির দ্বারা তোমার অসন্তুষ্টি থেকে আশ্রয় চাই । তোমার করুণা
দ্বারা আশ্ৰয় চাই তোমার ক্রোধ হতে । আর তোমার দিকে ধাবিত হই । তুমি এমন
, যেমন তুমি তোমার প্রশংসা করেছ নিজেই । এরপর রাসূল সা. যখন সিজদা হতে মাথা উঠালেন
ও নামায থেকে ফারেগ হলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ সা.

বললেন-

 يَا
عَائِشَةُ او يا حُمَيْرَاء ‍‏اَ ظَنَنْتِ إَنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ خَانَ بِكِ؟

হে আয়েশা! তুমি কি ধারণা করেছ যে, নবী সা. তোমার অধিকার হরণ করেছেন ?’
হযরত আয়েশা রাযি. বললেন, “শপথ আল্লাহর, আমি এরূপ ধারণা করিনি । তবে আপনার সিজদা দীর্ঘ হওয়ার কারণে
আমি ধারণা করেছি
, আপনি মারা গেলেন কি না? ’এরপর রাসূলুল্লাহ সা. বললেন- اتدرین ایُّ
لیلۃ ھذہ

হে আয়েশা তুমি কি জান, এটা কোন রাত ?

হযরত আয়েশা রাযি. বললেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা. ভাল জানেন।
হুজুর সা. বললেন, এটা শাবানের পনের তারিখের রাত ।
এ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করা হয়। দয়াপ্রার্থীদের প্রতি দয়া প্রদর্শন
করা হয় । তবে বিদ্বেষ পোষণকারীদের আপন অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয়।
‘(বায়হাকী শরীফ, খন্ড-৩,
পৃষ্ঠা-৩৪৮)

উক্ত হাদীস থেকে কয়েকটা জিনিস
প্রতিয়মান হয় ।

এক. এ রাতে রাসূল সা. বেশি বেশি নফল নামায আদায় করেছেন ।

দুই. সিজদার মাধ্যমে স্বীয় প্রভূকে সন্তুষ্ট করতে চেষ্টা করেছেন ।

তিন. রাসূল সা. আল্লাহর ক্রোধ হতে আশ্রয় চেয়েছেন ।

চার. রাসূল সা. আল্লাহর নিকট দয়া প্রার্থনা করেছেন ।

পাঁচ. এ রাতের যথার্থ মর্যাদা বহাল রেখেছেন ।

তাই এ রাতে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য
নিম্নোক্ত কাজ সমূহ আঞ্জাম দেয়া

অত্যাবশ্যক ।

এক. আল্লাহর দরবারে ক্রন্দন করা ।

দুই. আল্লাহর অসীম রহমতের পানি দ্বারা নিজের সমস্ত গুনাহ ধুয়ে
মুছে

পরিস্কার করে নেয়া ।

তিন. অতীতের কৃত গুনাহসমূহের উপর লজ্জিত হয়ে কায়মনোবক্যে

আল্লাহর দরবারে তাওবা করা ।

চার. আল্লাহর রহমতের ভান্ডার হতে কিছু অর্জন করা ।

পাঁচ. আল্লাহর শাস্তি হতে মুক্তি পাওয়ার দরখাস্ত বা আবেদন করা ।

ছয়. সালাতুল হাজাত, সালাতুল তাওবা
ও সালাতুত তাসবীহ আদায় করা । 

সাত. বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করা ।

আট. অধিকহারে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা ।

নয়. তাহাজ্জুদ নামায আদায় করা ।

দশ. ইশা ও ফজর নামায জামাতের সাথে আদায় করা ।

সালাতুল হাজাত পড়ার নিয়ম

যদি কারো কোন হাজাত পেশ আসে,
তাহলে সে উত্তমরুপে অযু করে একাগ্রচিত্তে দুরাকআত নামায
আদায় করবে । হাজাতের প্রতি লক্ষ্য করে নফল নামাযের নিয়তে নামায আদায় করবে। নামায
শেষে হামদ
, ছানা,
দরূদ ও সালাম পাঠের পর নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করবে । তবে এই রাত্রে যত ধরনের নফল নামাজ আদায় করার কথা বলা হয়েছে। এই নামাজ গুলো যে এই রাতেই পড়তে হবে বা এরাতের জন্য খাচ তাহা নয়। আপনি যে কোন রাতে বা দিনে পড়তে পারেন। এই রাতের যেহেতু বিশেষ ফজিলতের উল্লেখ আছে তাই এরাতে পড়ার চেষ্টা করবেন। 

لَا اِلٰہَ الَّا الله العليمُ الكَرِيمُ  – سُبْحَانَ اللهِ رَبِّ
الْعَرْشِ العَظيمِ اَلْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ أَسْأَلُكَ مُوجِبَاتِ
رَحْمَتِكَ وَعَزَائِمَ مُغْفِرَتِكَ وَالغَنِيمَة مِنْ كُلِّ بِرِّ وَالْعِصْمَةَ مِنْ
كُلِّ ذَنْبِ وَالسَّلاَمَةَ مِنْ كُلَّ إِثْمِ لَا تَدَعْ لى ذَنْبًا اِلَّاغَفَرَتَهُ
وَلَاهُمًّا إِلَّا فَرَّجْتَهُ وَلا دَيْنًا إِلَّا قَضَيْتَهُ وَلَا حَاجَةً مِّنْ
حَوَائِجِ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ هِيَ لَكَ رِضًى الَّا قَضَيْتَهَا يَا أَرْحَمَ
الرَّاحِمِينَ
.

সালাতুত তাওবা আদায়ের পদ্ধতি

মানুষ ভুল করবে, অন্যায় করবে, অপরাধ করবে, গুনাহ করবে
। আর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপন গুণে স্বীয় বান্দাদের ক্ষমা করে দিবেন। সগীরা গুনাহ
নেক আমলের দ্বারা মাফ হয়ে যায় । কিন্তু কবীরা গুনাহ তাওবা ব্যতীত মাফ হয় না ।

 

তাওবা করার পদ্ধতি : 

যদি কেউ কোন কবীরা গুনাহ করে, তাহলে সে ভালোাভাবে অযু করে শান্তশিষ্টভাবে
মনোযোগ সহকারে দু
রাকআত নামায আদায় করবে । বেশি বেশি ইস্তেগফার করবে। কৃত গুনাহের
জন্য লজ্জিত হবে। ভবিষ্যতে এরূপ আর করবে না

বলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করবে । দুই চার রাকাত সালাতুত তাওবার নামাজ পড়ে দুরূদ ও ইস্তেগফারের আমল করে কেঁদে কেঁদে আল্লাহর নিকট
ক্ষমা চাইবে । আল্লাহ তা
য়ালা অবশ্যই তাকে ক্ষমা করে দিবেন । 

তাওবার আলোচনা বিস্তারিত:

সালাতুত তাসবীহ আদায়ের পদ্ধতি ফযীলত

عَنْ اِبْن عَبَّاسٍ اَنَّ رَسُولُ اللهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِلْعَبَّاس بنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ يَا
عَبَّاسُ يَا عَمَّاهُ اَلَا أُعْطِيكَ الَا آمْنَحُكَ اَلَا أُخْبِرُكَ اَلَا اَفْعَلُ  بِكَ عَشَرَ خِصَالٍ إِذَا أنْتَ فَعَلْتَ ذٰالكَ قَدْ غَفَرًا اللهُ لَكَ ذَنْبَكَ أَوّلَهُ وَأَخرَہٗ  قَديقمَہٗ وَحَدِيثَهٗ خَطَأَهٗ وَعَمَدَه ، صَغِيْرَهُ وَكَبِيرَهٗ . سِرَّہٗ  وَعَلَا نِيْتَهٗ عَشَرَ خِصَالِ أَنْ تُصَلِّيَ أَرْبَعُ  رَكَعَاتٍ
تَقْرَأَفِى كُلِّ رَكَعَةٍ فَاتِحَةَ الْكِتَابِ وَسُورَةً –  فَإِذَا فَرْغْتَ مِنْ
القَرَاءَةِ فِي أَوَّلِ رَكَعَةٍ وَانتَ قَائِمٌ . قُل
 سُبْحَانَ اللهِ وَالحَمدُ للهِ وَلاَ إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَ اللهُ أَكْبَرُ–  خَمْسٌ
عَشَرَةً مَرَّةً ثُمَّ تَرْكَعُ فَتَقُولُهَا وَانْتَ رَاكِعُ عَشْرًا . ثُمَّ
تَرْفَعُ رَأْسَكَ مِن الرُّكوع . فَتَقَولُها عَشْرَا- ثُمَّ تَهوَي سَاجِدًا
فَتَقَولُهَا وَانتَ سَاجِدٌ عَشْرًا . ثم تَرْفَعُ رَأْسَكَ مِنْ السُّجُودِ فَتَقُولُهَا عَشْرًا . ثُمَّ تَرْفَعُ رَأَ سَكَ فَتَقُولُهَا عَشْرًا
فَذَالَك خَمْسٌ وَسَبْعُونَ فِى كُلِّ رَكَعَةٍ – تَفْعَلُ فِي أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ – إِنِ اسْتَطَعْتَ أن  تُصَلِّيَهَا فِى كُلِّ يَوْمَ مَرَّةً  – فَا فْعَلْ-  فَإِنْ لم تَفْعَلْ فَفِى كُلّ جُمُعَةٍ مرَّةً – فَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَفِى كُلَِ شَهْرٍ مَرَّةً- فَإِن لم تَفْعَلُ فَفِى كُلّ سَنَةٍ مُرَّةَ – 
فَإِن
لَّمْ تَفْعَلُ فَفِى عُمَرِكَ مَرَّةً . رواه ابوداود والترمذى –

অর্থঃ রাসূল (সাঃ) একদিন স্বীয়
চাচা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) কে বলেন
, হে আব্বাস । হে আমার সম্মানিত চাচা,
আমি কি আপনার খেদমতে একটি মূল্যবান হাদিয়া ও দামি উপ
টৌকন পেশ কবর
? আমি কি আপনাকে বিশেষ কথা বলব? আমি কি আপনার দশটি কাজ ও দশটি খেদমত
করব
? অর্থাৎ আপনাকে এমন আমল বলে দিব যার দ্বারা দশটি বড় উপকার সাধিত হবে। ইহা এমন আমল
যা করলে আল্লাহ তায়ালা আপনার সকল গুনাহ মাফকরে দিবেন
, আগের পরের নতুন পুরাতন,
জ্ঞাত-অজ্ঞাত,
সগিরা-কবিরা,
গোপন ও প্রকাশ্য সকল গুনাহ । সে আমল হলো সালাতুত তাসবিহ এর আমল ।

সালাতুত তাসবিহ আদায় করার পদ্ধতি

হে চাচা-জান (রাসূল সাঃ আব্বাস রাঃ কে বলেন) আপনি চার রাকাত নামায পড়বেন, প্রত্যেক রাকাতে সুরায়ে ফাতেহাও অন্য সূরা বা কেরাত আদায় করার পর রুকুতে যাওয়ার পূর্বে দাঁড়িয়ে ১৫ (পনের) বার
এই তাসবিহটি পড়বেন।

سُبْحَانَ اللہِ وَالْحَمْدُ لِلّٰہِ ولَا
اِلٰہِ الَّا اللہُ وَ اللہُ اَکْبَرْ –

অতঃপর রুকুতে গিয়ে ১০ দশ বার পড়বেন
। তারপর রুকু থেকে সোজা দাঁড়িয়ে ১০ দশ বার
, ১ম সিজদা গিয়ে ১০ দশবার, ১ম সিজদা হতে বসে ১০ দশবার দ্বিতীয়
সিজদায় ১০ দশবার
, দ্বিতীয় সিজাদ হতে বসে দাঁড়ানোর পূর্বে ১০ দশবার করে এই তাসবিহ পড়ুন, এভাবে চারো রাকাতে তাসবিহ পড়বেন, এ হিসাবে এক রাকাতে তাসবিহ ৭৫ বার পড়া হবে, (চার রাকাতে মোট ৩০০ তিনশত বার পড়বেন)
হে আমার চাচা সম্ভব হলে প্রতিদিন এ নামাজ পড়বেন
, যদি সম্ভব না হয়, তবে প্রতি শুক্রবারে পড়বেন,
তা ও সম্ভব না হলে প্রতি বৎসর এক বার পড়বেন এটাও সম্ভব
না হলে পুরা জীবনে একবার হলেও তা পড়বেন।

(তিরমিযী ১/১০৬-আবু দাউদ ১/১৮৩ ইবনে মাজাহ
১০০ )

সহজে বুঝার জন্য নিচের টেবলটি দেখুন

দোয়াটি কখন পড়বে কতবার পড়বেন:

·
প্রথম
রাকাতে সুরা ফাতিহা ও অন্য সূরা
 মিলানের পর দাড়ানো অবস্থায়  = ১৫
বার।

·
রুকুতে
গিয়ে রুকুর তাসবীহ পাঠ করারপর =
 ১০ বার।

·
রুকু
থেকে উঠে রাব্বানা লাকাল হামদু বলার পর
সোজা হয়ে
দাড়িয়ে = ১০ বার।

·
প্রথম
সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবিহ পাঠকরার পর =
 ১০ বার।

·
প্রথম
সিজদা হতে উঠার পর বসা অবস্থায় =
 ১০ বার।

·
দ্বিতীয়
সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবিহ পাঠ করার পর =
 ১০ বার।

·
দ্বিতীয়
সিজদা হতে উঠে বসাবস্থায় অর্থাৎ দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাড়ানোর আগে ১০ বার
। এভাবে
প্রতি রাকাতে সর্বমোট ৭৫ বার
হবে।

এ নামায আদায়ের উত্তম তরীকা হল
‘মুসাব্বিহাত’ সূরা (যে সব সূরার প্রথমে
سُبْحَان – تسبیح – یسبح রয়েছে)  সে সূরা সমূহ  হতে যে কোন চারটি সূরা পাঠ করা । মুসাব্বিহাত সূরা
সাতটি ।

  • এক.
    সূরায়ে বনী ইসরাঈল ।
  •  দুই.
    সূরায়ে হাদীদ।
  •  তিন.
    সূরায়ে হাশর।
  •  চার.
    সূরায়ে সফ।
  •  পাঁচ.
    সূরায়ে জুম
    আ ।
  • ছয়.
    সূরায়ে তাগাবুন ।
  • সাত.
    সূরায়ে আলা ।

তবে যে কোন সূরা দ্বারাও এ নামায
আদায় করা যাবে ।

শবে বরাতেও যাদের ক্ষমা করা হয় না:

কৃষক-শ্রমিক, ধনী-দরিদ্র, যুবক-বৃদ্ধ,
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল মুসলমানকেই আল্লাহ তায়ালা এ রাতে
ক্ষমা করে থাকেন । কিন্তু কতিপয় দুর্ভাগা
,
কপালপোড়া এমনও আছে যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা এ রাতেও
ক্ষমা করবেন না । ইহা দুই কারনে হতে পারে ।

এক. তার ভাগ্য খারাপ হওয়ার দরূণ ।

দুই. তার কৃতকর্মের ফলে আল্লাহর অসন্তুষ্টির দরূণ ।

ছয় ব্যক্তিকে রাতে ক্ষমা করা হবে না:

হযরত আয়েশা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন-

اتاني جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ
فَقَالَ هَذِهِ لَيْلَةٌ النِصْفِ مِنْ شَعْبَانَ ، وَلِلَّهِ فيهَا عُتَقَاءُ مِنَ
النَّارِ بِعَدَدِشَعْرِ غَنَمٍ كَلْبِ ، وَلا يَنظُرُ إِلَى مُشْرِكٍ  وَلاَ إِلى
مُسْبِلٍ 
وَلَا إلَى عَاقٍّ لِوَالِدَيْهِ وَلَا إلَى
مُدْ مِنِ خَمْرٍ وَلا إلى مُشَاحِنٍ وَلَا إِلٰى قَاطِعِ رِحْمٍ 
 .

আমার নিকট হযরত জিবরাঈল আ. এসে বললেন, ইহা পনের-ই  শাবানের রাত । এ রাতে আল্লাহ তায়ালা কালব
গোত্রের বকরীর পালের চুল

পরিমাণ দোজখ থেকে অসংখ্য বান্দাকে মুক্তি দান করেন ।
তবে ছয় ব্যক্তিকে আল্লাহ তা
য়ালা ক্ষমা করেন না ।

  • এক. মুশরিক (আল্লাহর সাথে শরীককারী)
  • দুই. দম্ভ ও অহংকারবশত লুঙ্গি বা পায়জামা টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে পরিধানকারী ।
  • তিন. মাতা পিতার অবাধ্য সন্তান।
  • চার. মাদকদ্রব্য পানে অভ্যস্ত ব্যক্তি।
  • পাঁচ. বিদ্বেষ পোষণকারী ।
  • ছয়. আত্মীয়তার বন্ধন বিনষ্টকারী ।
    (
    বাইহাকী শরীফ,
    খন্ড-৩,
    পৃষ্ঠা ৩৮৭)

উল্লেখিত ছয় প্রকারের লোক শবে
বরাতের রাতেও আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত থাকবে। এর মধ্যে সর্বাধিক ঘৃণিত হল
মুশরিক । আল্লাহ তা
য়ালা কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেন- তবে নিরাশ হওয়া যাবে না, মুশরিক যদি ইসলাম কবূল করে শিরক ছেড়ে তাওহিদের উপর ইমান আনে। আল্লাহ তা’য়ালার উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ্ তা’য়ালা তাকে ক্ষমা করে দিবেন। অনুরূপ ভাবে বাকি পাঁচজনও যদি ভালো ভাবে তাওবাহ  ইস্তেগফার করে মনের সকল কালিমা মুচন করে আল্লাহ তা’য়ালার নিকট ক্ষমা চেয়ে আসতে পারে তাহলে আশা করা যায় মুক্তি পাওয়া যাবে।

ان الشرك لظلم عظيم

নিশ্চয়ই শিরক বড় গুনাহ।‘(সূরা লোকমান, আয়াত-১৩)

অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ
করেন-

إن الله لا يغفرُ أَن
يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَالِكَ لِمَنْ يَشَاءُ

নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা মুশরিকদের ক্ষমা করবেন না । এছাড়া
অন্য সকল গুনাহগারদের মধ্য হতে যাকে ইচ্ছা তাকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন ।
‘(সূরা নিসা, আয়াত-৪৮)

পবিত্র কুরাআনের অন্যত্র উল্লেখ
রয়েছে –
اِنَّمَا
الْمُشْرِکُونَ نَجِسٌ

নিশ্চয়ই মুশরিকরা নাপাক‘ (সূরায়ে তাওবা, আয়াত-২৭)

শাবান মাসে রাসূল সা. এর আমল:

আইয়ামে বীয তথা প্রতি মাসে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রাসূলুল্লাহ সা. রোজা রাখতেন । শাবান মাসে রাসূলুল্লাহ
সা.-এর আমল সম্পর্কে হযরত আয়েশা রাযি. ইরশাদ করেন-

مَا رَأَيْتُ النبي صلى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّم
يصوم شهرين
مُتَتَابَعَيْنِ الأَشَعْبَانَ وَرَمَضَان شَهْرَيْنِ

আমি রাসূলুল্লাহ সা.কে শাবান ও রমযান
মাস ব্যতীত অন্য কোন মাসে ধারাবাহিক রোজা রাখতে দেখিনি । হযরত উসামা বিন যায়েদ বলেন
, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনাকে রমযান ছাড়া এ পরিমাণ রোযা রাখতে অন্য কোন মাসে দেখিনি, যে পরিমাণ শাবান মাসে রাখেন । রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, ইহা রজব ও রমজানের মধ্যবর্তী একটি মাস। যে মাসের ফযীলত থেকে মানুষ বঞ্চিত থাকে
। অথচ এই মাসে মানুষের আমল আল্লাহর দারবারে পেশ করা হয় । রোযা অবস্থায় আমার আমল পেশ
করাকে আমি পছন্দ করি । তাই আমি রোযা রাখছি । (নাছায়ী শরীফ)

উল্লেখিত হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান
হয় যে
, রাসূলুল্লাহ সা. এ মাসে বেশি বেশি রোযা রাখতেন । তাঁর উম্মত
হয়ে আমাদেরও এই মাসে বেশি বেশি
রোযা রাখা দরকার। এছাড়াও এমন আমল করা জরুরী, যা আখেরাতের পুঞ্জি হয়ে থাকবে
। এ সম্পর্কে হযরত মুফতী ফয়জুল্লাহ রহ. বলেন- ‘দুনিয়ার জীবন ইবাদতের জন্য
, সুতরাং তুমি ইবাদত কর। ইবাদত বিহীন জীবন খুবই লজ্জাজনক । এরূপ জীবপ যাপন থেকে মরে
যাওয়াই শ্রেয় । যখন দুনিয়াতে ইবাদত বন্ধ হয়ে যাবে
, তখন কিয়ামত চলে আসবে । হে যুবক! ইবাদতের মধ্যে তুমি নিজের লাভ দেখ, এর মাঝে আল্লাহর কোন লাভ নেই ৷’

বর্তমান উদযাপিত শবে বরাত:

হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান
হয় যে
, রাসূলুল্লাহ সা. এ মাসে অধিকহারে রোযা রাখতেন। তাঁর অনুসারী
সাহাবায়ে কেরাম রাযি.-এর আমলও এর ব্যতিক্রম ছিল না। কেননা এ মাসে বান্দার আমল আল্লাহর
দরাবারে পেশ করা হয় । রাসূলুল্লাহ সা.-এর আমল দ্বারা ১৫ই শা
বান দিনে রোযা
ও রাতে অধিকহারে নফল ইবাদত করা সুন্নত প্রমাণিত হল । সুতরাং সবার জন্য জরুরী যে
, রাসূলুল্লাহ সা.-এর প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করে ইহকাল ও পরকালের সুফল অর্জন করা ।

কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়
হল
, ইবাদত-বন্দেগী তো দূরের কথা,
অশালীন কার্যকলাপের মধ্য দিয়েই এ রাত অনেকের অতিবাহিত
হয় । বাজি ফুটানোর ধুম পড়ে যায় এ রাতে। আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ফটকার আওয়াজে
। কেউ ইবাদত করতে চাইলেও তাদের একাগ্রতা নষ্ট হয়ে যায় । যুবকেরা বিভিন্ন স্থানে অশ্লীল
আড্ডায় লিপ্ত থাকে । অন্যের গাছের নারকেল
,
খেজুরের রস ইত্যাদি চুরি করে খির পাকিয়ে উৎসব করে থাকে
। অথচ এ রাতে ফেরেশতাগণ আল্লাহর রহমত নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন। মানুষের কৃতকর্মের
ফলে অনেক সময় তারা রহমতের পরিবর্তে আযাব নিয়ে আসেন । (নাউযুবিল্লাহ) সুতরাং হে বন্ধুগণ!
আমরা যদি এ রাতে ইবাদত-বন্দেগী বা কোন কল্যাণকর কাজ করতে না পারি
, তাহলে অন্তত মন্দ ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকি যেমন কবি বলেছেন।

قوت نیکی نداری بد مکن #۔ 

بر وجود خود ستم بے حد مکن 

বাজি ফুটানোর কুফল

সত্যিকারে যদি আমরা বাজি ফুটানোর
কুফল খতিয়ে দেখি
, তাহলে আমরা বুঝতে পারব যে, এ কারণে লক্ষ লক্ষ টাকার অপচয়
হচ্ছে । বাজি ফুটানোর কারণে কয়েকটি ক্ষতি হয় ।

এক. দেশের ক্ষতি ।

দুই. অর্থ ও ধন-সম্পদের ক্ষতি ।

তিন. নিজের ক্ষতি ।

চার. জনগণের ক্ষতি ।

পাঁচ. যারা বাজি ফুটায় তারা সমাজের
ঘৃণ্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়।

ছয়. সবচেয়ে বড় ক্ষতি ধর্মীয়
ক্ষতি । বাজি ফুটানো হিন্দু ধর্মের প্রথা । সুতরাং মুসলমানের ছেলেরা তাদের প্রথা পালন
করা অত্যন্ত লজ্জাকর বিষয়। অন্য ধর্মাবলম্বীরা কিন্তু মুসলমানদের প্রথা পালন করে না
। তাহলে আমরা তাদের প্রথা পালন করব কেন
?
দ্বীনের জন্য রাসূলুল্লাহ সা.-এর দান্দান মোবারক শহীদ
হয়েছে । সাহাবায়ে কেরাম অকাতরে জান বিলিয়ে দিয়েছেন। তাঁরা মাতৃভূমি ত্যাগ করেছেন
। বিবি-বাচ্চা
, ধন-সম্পদ ছেড়েছেন । সামান্য কিছু সাহাবীর কবর মক্কা-মদীনায়
পাওয়া যায় । বাঁকীরা পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছেন । শুধু এই দ্বীনের জন্য
। আর আমরা যদি সেই দ্বীনকে কলূষিত করি
,
তাহলে আমাদের পরিণতি কি হবে, তা একটু উপলদ্ধি করুন ।

রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন—

 من تشبه بقوم فهو منهم  – رواه ابو داود

যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুসরণ করবে, সে তাদের মধ্য থেকেই হবে।
(
আবু দাউদ শরীফ,
পৃষ্ঠা-৩৭৫)

অর্থাৎ কেয়ামতের ভয়াবহ দিবসে
তার হাশর উক্ত সম্প্রদায়ের সাথেই হবে । এ হাদীস দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে
, ফটকা ও বাজি ফুটাবে যারা,
তাদের হাশর-নাশর হিন্দু-খৃষ্টান সম্প্রদায়ের সাথে হবে
। মুসলমান হিসেবে আমাদেরকে এসব অপসংস্কৃতি থেকে বেঁচে থাকা একান্ত জরুরী

নফল নামায ঘরে আদায় করা উত্তম

শবে বরাত ও শবে কদরে জামাতের সাথে
নামায পড়ার নিয়ম প্রচলিত আছে । ইহা কোন অবস্থাতেই ঠিক নয় । কারণ রাসূলুল্লাহ সা.
থেকে ফরজ নামায
, সূর্য গ্রহণ,
তারাবীহ ও এস্তেখারার নামায ছাড়া অন্য কোন নামাযে জামাতে
পড়া প্রমাণিত নেই । শুধু ফরজ নামাযের বৈশিষ্ট হল
, তা মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে আদায়
করা সুন্নাতে মুয়াকাদ্দাহ । হানাফী মাযহাবে নফল নামায জামাতের সাথে আদায় করা মাকরুহে
তাহরীমী । নেকী তো হবেই না
,
উল্টা গুনাহ হবে । সুতরাং বুঝা গেল, নফল নামায একাকী পড়া ও ঘরে পড়া উত্তম

কবর যিয়ারতের ফযীলত নিয়ম পদ্ধতি

রাতে কবর যিয়ারত করা একটা আমল। চির
অন্ধকার কবরে শায়িত মা-বাবা
,
দাদা-দাদীসহ সকলের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সূরা ইখলাছসহ
অন্যান্য সূরা পড়ে তাদের জন্য দু
আ করা উত্তম কাজ । কবরস্থানে গিয়ে সূরা ইয়াছিন পড়ে কবরবাসীদের
কবরে পাঠালে আল্লাহ তা
য়ালা কবরবাসীদের কবর আযাব হালকা করে দেন ও তিলাওয়াতকারীকে
মৃত ব্যক্তিদের সংখ্যানুযায়ী সাওয়াব দান করেন । এ রাতে হুজুর সা. জীবনে একবার কবরস্থানে
গেছেন। হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে
,
এ রাতে তিনি জীবনে একবার জান্নাতুল বাকীতে গেছেন । কবর
যিয়ারত দ্বারা মৃত্যু ও আখেরাতের কথা স্মরণ হয়। যার দরূণ গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে
থাকা সহজ হয়ে যায় । কবর যিয়ারত শুধু পুরুষদের জন্য জায়েয । মহিলাদের জন্য জায়েয
নেই । (ফয়জুল কালাম ৩৩৪ ) কবরে মোমবাতি জ্বালানো
, পুস্পস্তক অর্পণ ইত্যাদি সম্পূর্ণ
ভিত্তিহীন ও বেদআত । যা পরিহার করা সকল মুসলমানের জন্য জরুরী । কবরপূজা করা
, ছেলে-সন্তান ও ধন-সম্পদ পাওয়ার লক্ষ্যে পীর বাবার কবরে মাথা নত করা ইত্যাদি সম্পূর্ণ
হারাম। কবর পূজারীদের প্রতি আল্লাহর রাসূল সা. লানত করে গেছেন । (নাউযুবিল্লাহ) কবর
যিয়ারত শেষে হাত না উঠিয়ে দোয়া করা উত্তম । আর হাত উঠিয়ে দোয়া করতে হলে কবরস্থান
সামনে না রেখে পিছনে বা সাইটে রেখে দু
আ করবে ।

নফল ইবাদত নির্জনে হওয়া চাই

একটি হাদীসে বর্ণিত আছে, হযরত আবু বকর রাযি. নির্জনে বসে নীরবে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করছিলেন । হুজুর সা.
তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন
, আস্তে আস্তে কুরআন তিলাওয়াতের কারণ কি ? উত্তরে হযরত আবু বকর রাযি. বললেন –

اَسْمَعْتُ مَن نَاجَيْتُ

আমি ঐ সত্তাকে কুরআন শুনাচ্ছি, যার কাছে আমি প্রার্থনা করছি ।

বস্তুতঃ দুনিয়াতে দেখা যায়,
প্রেমিকাকে পেতে খুবই নির্জনতা অবলম্বন করে । তৃতীয়
ব্যক্তির অজ্ঞাতসারে বিভিন্ন হাদিয়া-তোহফা আদান প্রদান করে । তেমনি বান্দাহ আল্লাহর
সান্নিধ্য পেতে হলে নির্জনতা অবলম্বন করা চাই । পৃথিবীর নীতি অনুসারে সাধারণত বাদশাহদের
দুটি দরবার হয়ে থাকে । একটি আম (সাধারণ) ও অপরটি খাছ (বিশেষ) । খাছ দরবারে সবার যাওয়ার
অনুমতি থাকে না । বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গই সেখানে যেতে পারে । তেমনি
জামাতে নামায আদায় করা আল্লাহর আম দরবার। আর নফল ইবাদত আল্লাহর
খাছ দরবার । আল্লাহ তা
য়ালা বলেন- হে মানুষ! তোমরা আমার খাছ দরবারে এসে খাছভাবে আমার
সাথে সম্পর্ক গড়ে নাও । আমার নিকট দু
আ কর,
তা কবুল করা হবে । তোমরা যা চাবে, তাই তোমাদের দেয়া হবে।

তাক্বওয়া ইখলাছই আমলের মূল উদ্দেশ্য

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ
করেন-

لَن يَنَالَ اللهُ
لُحُومُهَا وَلَا دِمَائُهَا وَ لكِن يَنَالُهُ التَّقوى مِنْكُ

আল্লাহর নিকট গোশত ও রক্ত কখনো পৌছে না । তাঁর কাছে কেবল তোমাদের
তাক্বওয়া ও পরহেজগারীই পৌঁছে ।

(
সূরা হজ্ব- আয়াত-৩৭)

উল্লেখিত আয়াতে এ কথা বুঝানো উদ্দেশ্য
যে
, কুরবানী একটি মহান
ইবাদত । কিন্তু আল্লাহর কাছে এর গোশত ও রক্ত কিছুই পৌঁছে
না এবং কুরবানী দ্বারা ইহা উদ্দেশ্যও নয়। বরং আসল উদ্দেশ্য জন্তুর উপর আল্লাহর নাম
উচ্চারণ করা এবং পূর্ণ আন্তরিকতা সহকারে তাঁর আদেশ পালন করা । অন্যান্য সব ইবাদতের
মূল উদ্দেশ্যও তাই । নামাযে উঠা-বসা করা
,
রোযায় ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকা উদ্দেশ্য নয় । বরং
আল্লাহর আদেশ পালন করাই আসল উদ্দেশ্য। আন্তরিকতা ও মুহাব্বত বর্জিত ইবাদত প্রাণহীন
দেহতুল্য।
ইবাদত করতে হলে শরীয়ত সম্মত নিয়ম পদ্ধতি জানা জরুরী । কারণ
, আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁর আদেশ পালনের জন্য এই পদ্ধতি নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে

আনুগত্যের নামই হলো দ্বীন

পবিত্র কুরআন ও হাদীস এবং সাহাবী-তাবেয়ীগণের
আমল দ্বারা যা প্রমাণিত নয়
,
তা বেদআত । মনমত একটি পথ বের করে তার ওপর চলার নাম দ্বীন
নয়। দ্বীন হলো আনুগত্যের নাম। কার আনুগত্য করা হবে
? রাসূলুল্লাহ সা., সাহাবায়ে কেরাম,
তাবেয়ী,
তাবেতাবেয়ী,
আইম্মায়ে মুজাতাহিদীন ও বুযুর্গানে দ্বীনের আনুগত্য
করতে হবে । মনের চাহিদা আর জ্ঞানের যুক্তির নাম ইসলাম নয় । বরং আল্লাহ তা
য়ালা ও রাসূলের
এত্তেবার নাম দ্বীন । মসজিদে কয় ঘন্টা থাকলেন
, তা জিজ্ঞাসা করা হবে না । এখলাছ
আছে কি না
, তাই দেখা হবে । কিছু সময় এখলাছের সাথে আল্লাহর সান্বিধ্য অর্জন
নাজাতের কারণ হতে পারে । আর ঘন্টার পর ঘন্টা ইবাদত করলেন
,কিন্তু সুন্নাত
মত হল না
, তাহলে কিছুই অর্জন হবে না। কারণ, আল্লাহর কাছে আমলের সংখ্যা গণনা করা হয় না। বরং আমলের ওজনই আসল । সুতরাং সংখ্যায়
অনেক ইবাদত করা হলো
, কিন্তু ওজন হলো না,
তাহলে কোন লাভ হবে না। এজন্য ইবাদত করতে করতে ঘুম আসলে
ঘুমানো উচিত । আল্লাহ তা
য়ালা তাওফীক দিলে আবার উঠে ইবাদত করা উচিত । তবে মনে রাখতে
হবে
, যেন সুন্নাতের বিপরীত না হয়। নফল ইবাদত একাকী করলে আল্লাহ তায়ালা বেশি
পছন্দ করেন । মসজিদে সকলে মিলে মিলাদ মাহফিল ও মিষ্টি বিতরণ করা থেকে নির্জনে একাকী
নামায পড়া উত্তম হবে । মিলাদ মাহফিল ও মিষ্টি বিতরণের ব্যাপারে শরীয়ত সম্মত কোন ভিত্তি
বা প্রমাণ পাওয়া যায় না। আর প্রমাণহীন ইবাদত বেদআত । বেদআতযুক্ত হাজারো আমলের চেয়ে
দু
রাকআত নামাযই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য শ্রেয় ।

শবে বরাতে তাওবার দরজা উন্মুক্ত

কুরআনে কারীমে বর্ণিত আছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُوا تُوبُوا
إِلَى اللهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَسٰى رَبِّكُمُ أَنْ يَغْفرَ عَنكُمْ سَيَأْتِكُمْ
وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّتٍ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا الأَنْهَارُ

হে ঈমানদার বান্দাগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর তাওবায়ে
নাসূহা বা খাঁটি তাওবা। নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভূ তোমাদের গুনাহ সমুহ মার্জনা করে দিবেন
এবং তোমাদের এমন এক জান্নাতে প্রবেশ করাবেন
,
যার তলদেশ
থেকে নহর প্রবাহিত হবে ।
‘ (সূরা তাহরীম,
আয়াত-৮)

মানুষ গুনাহ করে । গুনাহ হয়ে যাওয়া
অস্বাভাবিক কিছু নয় । তবে নবীগণ গুনাহ হতে পবিত্র। গুনাহ প্রকাশ পাওয়া তাঁদের থেকে
অসম্ভব । অন্যান্য মানুষ থেকে গুনাহ পাওয়া আশ্চার্যের বিষয় নয়। গুনাহের উপর অটল
থাকা আশ্চর্যের বিষয়। গুনাহের সম্পর্ক বান্দার সাথে
, আর বান্দার সম্পর্ক আল্লাহর সাথে। তাই আল্লাহ বান্দাকে লক্ষ্য করে বলেন- হে বান্দাহ!
তোমর গুনাহ প্রকাশ পাওয়ার পর যদি তুমি এর উপর আন্তরিকভাবে লজ্জিত হও তাহলে তোমার চিন্তার
কোন কারণ নেই। পাহাড় পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার দরবারে হাজির হও । ক্ষমা চাওয়া তোমার
কাজ, আর ক্ষমা করা আমার কাজ । ভবিষ্যতে এরূপ অন্যায় না করার অঙ্গীকার করলে শুধু বর্তমান
গুনাহ নয় বরং অতীতের সমস্ত গুনাহও ক্ষমা করে দেওয়া হবে । আল্লাহ তা
য়ালা বান্দার
গুনাহ মার্জনার মাধ্যমেই নিজেকে গাফুর ও তাওয়াব
, ক্ষমাশীল ও তাওবা কবুলকারী হিসেবে
প্রকাশ ঘটিয়ে থাকেন ।

গুনাহগার! আল্লাহর দরবারে হাজির
হও:

দুনিয়াতে যদি কেউ কারো সাথে অন্যায়
করে
, অপরাধ করে, তাহলে সে সব সময় সেই অপরাধীকে খুঁজতে থাকে । থানায় কেস করে,
আইনের আশ্রয় নেয় । যে কোনভাবে তাকে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করে ।
কিন্তু আল্লাহ তা
য়ালা দয়ালু ও মেহেরবান । স্বীয় অপরাধী বান্দাদের ডেকে বলছেন, হে অপরাধীরা! ভীত হয়ো না । আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিব । মানুষ নিজের অপরাধীদের শাস্তি দিয়ে খুশি হয় ।
আর আল্লাহ তা
য়ালা নিজের অপরাধী বান্দাদের ক্ষমা করে আনন্দিত হন ।

আল্লাহ ইরশাদ করেন-

توبوا إلى اللهِ
جَمِيعًا أَيُّهَا المُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর দরবারে
তাওবা কর
, তাহলে তোমরা নাজাত বা মুক্তি পেয়ে যাবে । নৈরাশ হউও না হে গুনাহগার
।’
(সূরা নূর, আয়াত-৩০)

অসংখ্য অপরাধ করে ফেলেছি । নিজের
ধারণা মতে এরূপ অন্যায় ক্ষমার অযোগ্য
,
এরকম অন্যায়কারীকে লক্ষ্য করে আল্লাহ পাক বলেন-

قلْ يَا عِبَادِيَ
الَّذِينَ أَسْرَفُوْا عَلٰی أَنْفُسِهُمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللَّهِ
اِنَّ اللہَ یَغْفِرُ
الذُّنُوْبَ جَمِیْعًا اِنَّہٗ ھُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ – ‍سورۃ الزمر آیت – 53

হে নবী! আপনি আমার ঐসব বান্দাদেরকে বলে দিন, যারা গুনাহ করে নিজেদের আত্মার উপর অত্যাচার করেছে, তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নৈরাশ হইও না। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সমস্ত
গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন । নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
‘ (সূরা যুমার, আয়াত-৫৩ )

উল্লেখিত আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, মানুষ অন্যায় করবে, অপরাধ করবে,
তাই বলে নিরাশ হওয়া যাবে না । আল্লাহর রহমতের দরজা সদা
উন্মুক্ত । যে কোন সময় বান্দা ক্ষমা চাইলে আল্লাহ পাক তাকে ক্ষমা করে দিবেন

এক তাওবাকারীর ঘটনা

রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন- বনি
ইসরাঈলের এক ব্যক্তি নিরানব্বইটি হত্যা করেছিল । এ বিপুল পরিমাণ হত্যাযজ্ঞ চালানোর
পর তার
অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভয়ের উদ্রেক
হয় । তাই সে লোকদের জিজ্ঞেস করলো
,
এমন কোন লোক আছে কি, যার নিকট আমি আমার তাওবার উপায়
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবো
? লোকেরা তাকে একজন আলেমের সন্ধান দিল । সে উক্ত আলেমের নিকট গিয়ে
স্বীয় হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা দিয়ে জিজ্ঞেস করল
, এখন আমার তাওবা করার কোন পথ বাঁকী
আছে কি
? আলেম বললেন,
না তোমার জন্য তাওবা করার কোন উপায় নেই । তৎক্ষনাৎ হত্যাকারী
উক্ত আলেমকেও হত্যা করে ফেলল । এখন হত্যার সংখ্যা একশতে পূর্ণ হল । হত্যাকারী পূনরায়
লোকদের জিজ্ঞেস করতে লাগল
, আর কেউ আছে কি?
যার নিকট আমি তাওবা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবো । লোকজন পূনরায়
তাকে অন্য এক আলেমের সন্ধান দিল । সে তার কাছে গিয়ে বলল
, আমি একশত হত্যা করেছি । এখন আমার তাওবা করার কোন উপায় আছে কি? আলেম বললেন হ্যাঁ আপনার তাওবা কবুল হতে পারে । এই বলে তিনি তাকে এক গ্রামে যেতে
বললেন ।

কারণ-

فَاِنَّ بِھَا
اُنَاسًا یَعْبُدُوْنَ اللہَ بِھَا فَاعْبُدِ اللہَ تَعَالٰی مَعَھُمْ-

( ‘সেই গ্রামে কতিপয় লোক এমন আছে, যারা আল্লাহর ইবাদত করছে । তুমিও ঐ গ্রামে গিয়ে তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদত কর ।
তোমার তাওবা আল্লাহ কবুল করবেন। আলেম ব্যক্তির কথা অনুযায়ী লোকটি চলতে লাগল উক্ত গ্রামের
উদ্দেশ্যে। পথিমধ্যে সে মৃত্যুবরণ করে । এরপর রহমতের ফেরেশতা ও আযাবের ফেরেশতা তার
জান নিয়ে ঝগড়া শুরু করে । রহমতের ফেরেশতা বলে
, এ লোক আমাদের, তাকে আমরা নিয়ে যাবো। আর আযাবের ফেরেশতা বলে, এ লোক আমাদের, তাকে আমরা নেব । আল্লাহ তায়ালা অপর এক ফেরেশতাকে বললেন, তুমি এই দুদল ফেরেশতাকে এভাবে ফয়সালা করতে বল যে, যেখান থেকে এ ব্যক্তি এসেছে এবং যে গ্রামে যাবে উভয় স্থানের পথকে মেপে দেখতে।
যদি তাওবার উদ্দেশ্যে গমণকৃত স্থানের পথ বেশি হয়
, তাহলে রহমতের ফেরেশতা তাকে নিয়ে
যাবে। আর যদি গমনকৃত স্থানের পথ কম হয়
,
তাহলে আযাবের ফেরেশতা তাকে নিয়ে যাবে । অতঃপর ফয়সালা
অনুযায়ী জমিন মাপা শুরু হল । এদিকে আল্লাহ তা
য়ালা জমিনকে হুকুম করলেন, হে জমিন! তুমি এই পাপী ব্যক্তির নিজ গ্রামের দিকে বেড়ে যাও এবং কাংখিত বস্তির
নিকটবর্তী হয়ে যাও। পরিশেষে যখন মাপা হয়
,
ফেরেশতাগণ তাকে কাংখিত বস্তির নিকটবর্তী পেল । তখন তাকে
রহমতের ফেরেশতাগণ জান্নাতের দিকে নিয়ে গেল । (বোখারী
, মুসলিম, মিশকাত-২০৩)

প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তায়ালা বান্দার
কোন এক উসিলাকে কেন্দ্র করেই ক্ষমা করে দেন । অন্য এক গুনাহগার ব্যক্তির ব্যাপারে রাসূল
সা. ইরশাদ করেন— এক গুনাহগার ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে সন্তানদেরকে অসিয়ত করল
, আমি এ পরিমাণ গুনাহ করেছি যে,
আমার ক্ষমা পাওয়ার আশা নেই । সুতরাং আমার মৃত্যুর পর
তোমরা আমাকে জ্বালিয়ে ছাইগুলো নদী ও জঙ্গলে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় ফেলে এসো। যাতে আমাকে
শাস্তি দেওয়া সম্ভব না হয়। মৃত্যুর পর তার হয়। অসিয়ত অনুযায়ী কাজ করা হল । আল্লাহ
তা
য়ালা নদী ও জঙ্গলকে হুকুম করে ছাইগুলো একত্রিত করালেন ও তাকে জীবিত করে জিজ্ঞেস
করলেন- “তুমি এরূপ কেন করলে
?
সে উত্তর করল,
হে আল্লাহ! আপনার ভয়ে আমি এমনটি করেছি । তখন আল্লাহ
তা
য়ালা তাকে ক্ষমা করে দিলেন । (মিশকাত ২০৭)এতে বুঝা গেল, কেউ কোন উসিলাকে কেন্দ্র করে কৃত গুনাহের উপর লজ্জিত হয়ে ক্ষমা চাইলেই আল্লাহ
তা
য়ালা তাকে ক্ষমা করে দিবেন,
ইনশাআল্লাহ ।

شعر اشعار کی مناجات

گناہوں مین ساری عمر گزاری
اے میرے مولی اےمیرے باری
دستگیری کیجےء میرے خدا
تانہ ہون مین تجھسے اکدم جدا
جسگھرْی نکلے بدنسےمری جان
کلمہ توحید ہو ورد زبان
هرگهرْی‌مین‌دینے‌کیلۓ‌تو‌تیارهے
جونه مانگے اس‌سے‌تو‌بیزار‌هے
ےےےےےےےےےےےے
مرے دل سے پرده هتٌادے خدایا
ترے در سے ہم کو لگا دے خدایا
دیکهادے یاالهی وه مدینه کیسے بستی هین
جهان پر رات دن مولی تیری رحمت برستی هین
#######################
جگھ جی لگانےکیلے دنیا نهین‌‌‌هین‌
یه‌عبرت کی‌جا‌هین‌‌تماشه‌نهین‌هین‌
اے‌خدا‌این‌بنده‌را‌رسوا‌مکن‌
گربدم‌من‌سرّمن‌پیدا‌مکن‌
ےےے ےےےےےےےےےےےےےےے

#############################

بتا ہم کو تیری راہ کس طرف ہے
تیری راہ پر چلا ہم کو خدا یا
ہر طرف سے ہو کہ ہم خوار و تباہ
 آپڑی اب تیرے در پر یا الہی
ہےتوہی حاجت رواےدو جہاں
ہم تیرا در چھوڑ کر جائے کہاں
اےخدا اے خالق کون و مکاں
دستگیری کن مکن مارا زیاں
گر نباشد لطف تو فریادرس
باشم اندر بحر عصیاں مثل خس
نورعرفاں کن عطا اے ذوالجلال
از شراب عشق تو کن مست حال

Thank you for reading the post.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top