রাসূলুল্লাহ সাঃ এর মুজিজা-পর্ব ০১

রাসূলুল্লাহ সাঃ এর মুজিজা-পর্ব ০১
Rasol%20S%20ar%20Moziza
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বংশধর।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইবনে আবদুল্লাহ্ ইবনে আবদুল মুত্তালিব, ইবনে হাশিম, ইবনে আবদে মানাফ, ইবনে কুসাই, ইবনে কিলাব, ইবনে মুররাহ্, ইবনে কাআব, ইবনে লুয়াই, ইবনে গালিব, ইবনে ফিহির, ইবনে মালিক ইবনে নযর ইবনে কিনানাহ ইবনে খুযাইমাহ ইবনে মুদরিকাহ্, ইবনে ইইয়াস, ইবনে মুযার, ইবনে নাযার, ইবনে মাআদ, ইবনে আদনান। | রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সম্মানিতা মায়ের নাম আমিনা। তাঁর পিতার নাম ওয়াহাব,ওয়াহাবের পিতার নাম-আবদে মানাফ। কিন্তু এ আবদে মানাফ আরেক আবদে মানাফ-রাসূলের পিতৃবংশের আবদে মানাফ নন। দ্বিতীয় অর্থাৎ মাতৃবংশীয় আবদে মানাফের মাতার নাম যােহরা । 

রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর শুভজন্ম:

প্রসিদ্ধ বর্ণনামতে তিনি ১২ই রবীউল আউয়াল এবং সঠিক মতানুযায়ী ৮ অথবা ৯ই রবীউল আউয়াল সােমরাব মােতাবেক ২২শে এপ্রিল ৫৭০/৫৭১ খ্রীষ্টাব্দে ১লা জৈষ্ঠ ৬২৮ বঙাব্দে আসহাবে ফীলের ঘটনার ৫০/৫৫ দিন পর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আপন মাতা তিন/চারদিন তাকে দুধ পান করিয়েছেন। তারপর তার চাচা আবু লাহাবের মুক্তকরা দাসী সুবাইয়া তাকে দুগ্ধ পান করিয়েছেন। সপ্তাহ খানেক পর হালীমা সাদীয়া হাওয়াযিন গােত্রে ৫৭৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছয় বছর প্রতিপালন করেন। এরপর ২ মাস ১০ দিন তাঁর নিজ স্নেহপরায়না মাতার ক্রোড়ে তিনি প্রতিপালিত হন। তার ৬ বছর বয়সে তাঁর আম্মা তাকে সঙ্গে করে তাঁর পিতামহের (নানার) বাড়ী বনী নাজ্জার গােত্রে গেলেন। দীর্ঘ একমাস পর সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনকালে আবৃওয়ানামক স্থানে। এলে নবীজীর স্নেহময়ী মাতা মৃত্যুবরণ করেন। হযরত উম্মে আইমানও ছিলেন তাদের সফর সঙ্গিনী। তিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মক্কায় নিয়ে এলেন এবং তাঁর পিতামহ আব্দুল মুত্তালিবের কাছে সাের্পদ করেন। যেহেতু তাঁর প্রদ্ধাস্পদ পিতা আবদুল্লাহ, তাঁকে আমেনার গর্ভাবস্থায় রেখে ইহকাল ত্যাগ করেছিলেন। মােটকথা মায়ের মৃত্যুর পর আবদুল মুত্তালিব ২ বছর পর্যন্ত তাঁর তত্ত্বাবধান করেন। পিতামহের মৃত্যু হলে তার চাচা আবু তালিব তার লালন পালনের জামিন হলেন। এবং অতি ভালােবেসে সস্নেহে
তাঁর লালন পালন করেন। নয় বা দশ বছর বয়স হলে অর্থৎ ৫৮০ বা ৫৮১ খ্রীষ্টাব্দে তিনি রাখালিও করেন।

সিরিয়ায় প্রথম সফর:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ১৩ বছর বয়সে ৫৮ খ্রীষ্টাব্দে তাঁর চাচা আবু তালিবের সাথে তিনি সিরিয়ায় প্রথম সফর করেন। সেখানকার বুসরা নগরীতে যাওয়ার পর পাদ্রী বুহাইরা তাকে দেখে তার নবুওয়্যতের নিদর্শনাবলী চিহ্নিত করেন এবং তার চাচা আবু তালিবকে ভাতিজা মুহাম্মদ (সাঃ)- এর নিরাপত্তা বিধানের তাগিদ করেন এবং বললেন যে, “ইনি হচ্ছেন নবী। কাজেই তাকে মক্কায় পাঠিয়ে দেয়া হল। বুহাইরা হলেন তাইমা” নামক স্থানের ইয়াহুদী আলিমদের অন্যতম। কারাে মতে তিনি ছিলেন খ্রীষ্টান ধর্মযাজক। ব্যবসায়ের পেশা অবলম্বন তিনি ৫৯১ খ্রীষ্টাব্দ থেকে শুরু করে ৫৯৬ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত ব্যবসায়ের পেশা অবলম্বন করেছিলেন। শুধু তাই নয়, বরং এর মধ্যে তিনি আল আমীন” [বিশ্বাস ভাজন] উপাধি ও পেলেন।

সিরিয়ায় দ্বিতীয় সফর:

 নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ৫৯৫ খ্রীষ্টাব্দে ২৫ বছর বয়সে অংশীদারী কারবার ভিত্তিক হযরত খাদীজা (রাঃ)- এর বাণিজ্য সামগ্রী নিয়ে সিরিয়ায় দ্বিতীয় সফর করেন। তখন ও বুরা নামক জায়গায় পদার্পণ করলে নাস্-তুরানামক পাদ্রী তার মধ্যে নবুওয়্যতের নিদর্শনাবলী দেখতে পেয়ে তাঁর নবুওয়্যতের সাক্ষ্য দিলেন ঠিক যেমনি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন পুর্বোল্লিখিত বুহাইরা নামক পাদ্রী। 

শুভ বিবাহ:

সফর থেকে প্রত্যাবর্তনের দুমাস পর হযরত খাদীজা (রাঃ)- কে বিয়ে করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল ২৫ বছর ২ মাস ১০ দিন। আর হযরত খাদীজা (রাঃ)- এর বয়স ছিল ৪০ বছর।

নবী (সাঃ)-এর স্ত্রীগণের সংখ্যা

তাঁর প্রথম বিয়ে হল হযরত খাদীজা (রাঃ)- এর সাথে । ১১ জন পত্মীর সাথে তার বিয়ের কথা প্রসিদ্ধ হয়ে আছে। তন্মধ্যে ২জন তাঁর জীবদ্দশাতেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। প্রথম জনের নাম হযরত খাদীজা (রাঃ), দ্বিতীয়জন হযরত জয়নাব বিনতে খুযাইমা (রাঃ)। তিনি ৯ জন স্ত্রীকে ধরাধামে রেখে পরলােক গমন করেন।

তারা হলেন:

১। হযরত সাওদা (রাঃ)
২। হযরত আয়েশা (রাঃ) ৩। হযরত সুফিয়্যা (রাঃ) ৪। হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) ৫। হযরত জয়নাব
বিনতে জাহাশ (রাঃ) ৬। হযরত উম্মে হাবীবা (রাঃ) ৭। হযরত জুয়াইরিয়া (রাঃ)
, ৮। হযরত মাইমূনা (রাঃ) ৯। হযরত হাফসা (রাঃ)।

নবী (সাঃ)-এর সন্তান সন্ততি

রাসুলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সন্তানবর্গের মধ্যে কন্যা ছিলেন চার জন। ১। সকলের বড় হলেন হযরত যাইনব (রাঃ), তারচেছােট হলেন, ২। হযরত রুকিইয়্যা, তারচেছােট ৩। হযরত উম্মে কুলসূম (রাঃ) এবং সর্বকনিষ্ঠ হলেন, ৪। হযরত ফাতিমা (রাঃ)। এরা সবাই হযরত খাদীজা (রাঃ)এর ঔরসে জন্ম নেন। তার তিন, চার বা পাঁচ জন পৃথক সন্তান ছিলেন। যথা(১) হযরত কাসিম, (২) হযরত আবদুল্লাহ (৩) হযরত তাইয়্যিব এবং (৪) হযরত তাহির-এরাও ছিলেন হযরত খাদীজা (রাঃ)- এর সন্তান। (৫) হযরত ইব্রাহীম-তার দাসী মারিয়া কিবতিয়া (রাঃ)- এর ঔরসে জন্ম গ্রহণ করেন। দুধবয়সেই তার মৃত্যু হয়েছিল মদীনা শরীফে। এভাবে তার ছেলে সন্তান হলেন পাঁচ জন। ( কারাে মতে আবদুল্লার অপর নাম তাইয়্যিব, কাজেই সংখ্যা দাঁড়াল চার — এ। আবার কারাে মতে তাইয়্যিব হল আবদুল্লার অপর নাম এবং তাহির ও তার ভিন্ন আরেকটা নাম। কাজেই সংখ্যা দাড়াল তিন-এ। হযরত আবদুল্লার জন্ম হয় নবুওয়্যতের পরে। তিনি মক্কাতেই পরলােক গমন করেন। অন্যান্য ছেলে-সন্তানরা নবুওয়্যতের পূর্বে ইহলােক ত্যাগ করেন। পয়গাম্বর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর কন্যাদের মধ্য থেকে হযরত যাইনাব (রাঃ)- এর একটি ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করল-যার নাম ছিল আলী। তার কন্যা ছিল একটি তার নাম উমামা। এ দুভাই-বােনের বংশধারা অব্যাহত থাকেনি।নবীকন্যা রুকিইয়্যা (রাঃ)-এর একটি ছেলে সন্তান ছিল-যার নাম- আবদুল্লাহ। ইনিও ছয় বছর পর মৃত্যুবরণ করেন। হযরত উম্মে কুলসুম (রাঃ) এর কোন সন্তান-সন্ততি হয়নি। তবে চতুর্থ কন্যা হযরত ফাতিমা (রাঃ) থেকে ২টি ছেলের হয় শুভ জন্ম। অর্থাৎ হযরত হাসান (রাঃ) ও হুসাইন (রাঃ)। তাঁদের থেকে অনেক সন্তানাদির বিস্তার ঘটে।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অমায়িক ব্যবহার ও সামাজিক সৌজন্যতাবােধ।

হুযুর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন অত্যন্ত দানশীল। কোন ভিক্ষুককে তিনি ফিরিয়ে দেননি। কোন প্রার্থী তার কাছে কিছু চেয়ে নৈরাশ হয়নি। যদি এমন হতাে তাহলে তিনি কোমলস্বরে বারণ করতেন এবং বুঝিয়ে দিতেন। অন্য সময় দিতে ওয়াদা করতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সত্যবাদী। তিনি কখনও মিথ্যা বলতেন না। তার স্বভাব ছিল অতি কোমল। সকল কথাও কাজে ছিল তার সাবলীলতা ও স্বাচ্ছন্দ্য। তার কাছের লােকজন যেন কোন ক্ষতির সম্মুখীন না হন, সে বিষয়ে তিনি সবিশেষ লক্ষ্য রাখতেন। এমনকি, তিনি রাত্রে। যখন কোথাও বেরুতেন তখন পাদুকাটি ও পরতেন খুব ধীরে ধীরে। আস্তে আস্তে দরােজা খুলতেন। মন্থরগতিতে চলতেন। ঘরে প্রবেশ করতঃ গৃহবাসীকে শায়িত দেখেও তাঁদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে এই ভেবে চুপিসারে নিজের কাজে লেগে যেতেন। তাঁর দৃষ্টি সকল সময় ভূপৃষ্ঠের দিকে থাকতাে অবনমিত । অনেক লােকের সাথে হাঁটলে থাকতেন সবার পেছনে। তাঁর সামনে কেউ এলে তাকে। পূর্বেই সালাম করতেন। তিনি উপবিষ্ট হলে নম্রতার সাথে বসতেন। পানাহার করার সময় ও গরিবী হালে বসে বসে খেতেন। উদর পূর্তি করে কখনাে খেতেন না। তিনি তাঁর গৃহে চাপাতি কখনাে খাননি । তেমনি কৃত্রিম প্লেট বা তশতরীতে ও খাননি। খােদাতাআলার চিন্তায় সর্বদা চিন্তামগ্ন থাকতেন। সব সময় এই ভাবনাতেই লেগে থাকতেন এ ধ্যান-মগ্নতার ফলে কোনও পার্শ্ব পরিবর্তনে তার স্থিরতা আসতাে না। তিনি প্রায়শঃ নীরব থাকতেন, নিষ্প্রয়ােজনে কথা বলতেন না। যখন বলতেন, তখন এমনিভাবে বলতেন যে, শ্রোতাব্যক্তি সব কথা পুরােপুরি বুঝে নিতে পারতেন। তাঁর কথা এত দীর্ঘায়িত হতাে না যে, প্রয়ােজনের অতিরিক্ত হতাে, আবার এমন সংক্ষিপ্ত ও হতাে না যে, যার অর্থ উদ্ঘাটন করা হত দুরূহ। তাঁর ব্যবহারে কঠিনতা ছিল না, ছিলনা তার ভাষা ও সম্ভাষণে । তাঁর কাছে আগতদের তিনি সম্মান করতেন। কারাে আত্মসম্মানে আঘাত হানতেন না। কারাে কথায় বিঘ্ন সৃষ্টি করতেন
না। তবে শরীয়তের
পরিপন্থী হলে অবশ্যই সেখানে ভেটো দিতেন। অন্যথায় সেখান থেকেই তিনি প্রস্থান করতেন। তিনি আল্লাহ, তায়ালার নেয়ামতকেই বড়ত্ব দান করতেন। আকারে সেটা যত ক্ষুদ্রই হােক না কেন। সেখানে কোন দোষ বের করতেন না। পার্থিব ব্যাপারে কখনাে তার রাগ উৎপন্ন হতাে না। কারাে দ্বারা কোন ক্ষতি হলে বা কোন কাজ বিগড়ে গেলেও গােস্বা হতেন না। এমনকি হযরত আনাস (রাঃ) বলেন যে, আমি দশ বছর পর্যন্ত তার খিদমত করেছি-এর মধ্যে কোন কৃতকাজে একথা বলেন নি যে,
এভাবে কেন করলে ? আবার না করা কাজে কখনাে এ : প্রশ্নটি করেননি যে, একাজটি কেন করােনি ? মুহাদ্দিস আবদুর রাজ্জাকের সনদে কোন বর্ণনায় এও এসেছে যে, হযরত আনাস (রাঃ) বলেন গিন্নিদের কেউ কখনাে আমাকে কোন কিছু বললে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে নিষেধ করতেন। তিনি বলতেন, তাকদীরে যা ছিল তাই ঘটে গেল তাতে কি হলাে ? তবে যদি দ্বীনের পরিপন্থী কোনটা পরিলক্ষিত হতাে, তাতে তখন তার রাগের আর অন্ত থাকতাে না। অথচ তিনি তার ব্যক্তিগত ব্যাপারে কখনাে রাগ করতেন না। মােটকথা, কারাে উপর তিনি অসন্তুষ্ট হলে মুখ ফিরিয়ে নিতেন। অর্থাৎ মুখে কোন কটু কথা বলতেন না। কোনও ব্যাপারে সন্তুষ্ট হলে দৃষ্টি রাখতেন অবনমিত।
লজ্জা-লাজুকতায় তিনি ছিলেন কুমারী মেয়ের লজ্জাশীলতার উর্ধে। কোনও কারণে তার হাসি এলে তিনি মুচকে হাসতেন। সাজোরে তিনি হাসতেন না। সবার সাথে থাকতেন মিলেমিশে । কখনাে আবার কাউকে খুশী করার নিমিত্তে কিছু রসিকতা ও করতেন; কিন্তু এতেও সে কথাই বলতেন যা হতাে সত্য। মিথ্যা বা প্রতারণার লেশমাত্র ও থাকতাে না তাতে। তিনি নফল-নামায এত বেশি পড়তেন যে, তাঁর পা মােবারক ফুলে যেতাে। তিনি পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতকালে খােদার ভয় ও ভালােবাসাতে দুনয়নে কাঁদতেন। তার স্বভাবে এতই সরলতা ছিল যে, যদি কোন অভাবী দরিদ্র লােক এসে একথা বলতাে যে, আপনার সাথে আমার সেপারেট কিছু কথা আছে, তখন তিনি তৎক্ষণাৎ তাকে কথা বলার সুযােগ দিতেন। এমনকি তার সাথে পথের উপর বসেও আলাপরত হতেন, সেই বেচারা যেখানে বসতাে তিনিও সেখানে বসে পড়তেন। তিনি রুগ্নদের সেবা-শশ্রুষা করতেন তারা ধনী হােক বা গরীব, সকলের খোজ-খবর নিতেন। তিনি সবার জানাযায় নির্দ্বিধায় উপস্থিত হতেন। কোন ক্রীতদাস ও যদি তাঁকে নিমন্ত্রণ করতেন, তিনি নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতেন। যদি কেউ যবের রুটি এবং বিস্বাদ চর্বি আপ্যায়নের দাওয়াত করতেন তবুও তিনি নিষেধ করতেন না। তাঁর মুখ থেকে কক্ষণাে অনর্থক কোন কথা বেরুত না। তিনি সকলের মন জয় করতেন। তিনি এমন কোন ব্যবহার করতেন না যদ্দরুন মন ঘাবড়ে যেতাে। তবে যারা জালিম ও অনিষ্টকারী তাদের থেকে নিজেকে
সুকৌশলে মুক্ত করে নিতেন। তবু তাদের সাথে হাস্যোজ্জ্বল মুখ ও সদ্ব্যবহার প্রদর্শন করে যেতেন। যারা তাঁর কাছে প্রায়ই আসা-যাওয়া করতেন
, তাদের কেউ কোনদিন অনুপস্থিত থাকলে তার খোঁজ নিতেন তার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। প্রতিটি কাজ করতেন নিয়ম মত। এরূপ নয় যে, কখনাে এমনি, কখনাে ও তেমনি করে করতেন দায়সারা গােছের। তিনি উঠতে বসতে সব সময় আল্লাহকে স্মরণ করতেন। তিনি কোনও মজলিসে গেলে মানুষের সাথে। কাছাকাছি বসতেন এক কর্ণারে। সবার মাঝে ঠেলাঠেলি করে বা পথ সৃষ্টি করে সম্মুখ পানে গিয়ে বসতেন না মােটেও। তিনি একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলার সময় প্রত্যেকের মুখােমুখি হয়ে কথা বলতেন। এরূপ করতেন না যে একদিকে পুরাে সময় তাকাতেন এবং অন্য দিকে মােটেও তাকাতেন না। প্রতিটি ব্যক্তির সাথেই এমন ব্যবহার দেখাতেন যে, সবাই মনে করতেন যে, প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মনে হয় যেন আমাকেই বেশি ভালােবাসেন। কেউ তার কাছে এসে কথা শুরু করলে তিনি তার কথা খুব মনােযােগ সহকারে শুনতেন। তার সাথে উপস্থিত সৌজন্যতাবােধ অবশ্যই দেখাতেন সে উঠে গেলে তিনি। উঠে যেতেন। তাঁর নীতি বা চরিত্র ছিল সবাকার সাথে সর্বব্যাপক। তিনি গৃহাভ্যন্তরে যেয়ে আরাম করার জন্য মসনদে হেলান দিয়ে বসতেন। নিজ ঘরের অনেক কাজ করতেন নিজের হাতেই।
কখনাে দোহন করতেন ছাগলের দুধ
, কখনাে কাচতেন আপন পােষাক আপন হাতেই। মােট কথা, নিজের কাজ নিজের হাতেই তিনি করতেন।
যত খারাপ লােকই তাঁর কাছে আসতাে, তিনি তার সাথে দয়াদ্রচিত্তে মিলিত হতেন। তার মনে আঘাত দিতেন না, মােদ্দাকথা তিনি সর্ব শ্রেণীর মানুষের সাথেই সদ্ব্যবহার করতেন। কারাে কাছ থেকে কোন অপ্রিয় কথা বেরুলে তিনি তাকে সরাসরি কিছু বলতেন না। তার স্বভাবে না ছিল রুঢ়তা এবং না ছিল নিজ চেহারাটাকে কঠিনরুপে প্রদর্শন করার কোন ইচ্ছা। যেমন কারাে এমন অভ্যাসও আছে যে, কাউকে ভয় প্রদর্শন বা ধমকানাের উদ্দেশ্যে মিছামিছি রাগের অবয়ব ধারণ করতঃ বিকটরূপে কথা বলা শুরু করে দেয়। চেঁচামেচি করা তাঁর অভ্যাস ছিল না। কেউ তার সাথে দুর্ব্যবহার প্রদর্শন করলে তিনি তাঁর সাথে দুর্ব্যবহার করতেন না। বরং ক্ষমা করে দিতেন। তিনি নিজ হাতে কখনাে কোন ক্রীতদাস, চাকর ও মহিলাকে প্রহার করেননি; এমন কি কোন জীব-জন্তুকেও তিনি মারেননি। তবে ইসলামী শরীয়তের সূত্রানুসারে শাস্তি দেয়াটা হল ভিন্ন কথা। কেউ তার ওপর কোন বাড়াবাড়ি করলে তিনি তার প্রতিশােধ নিতেন না। তিনি সব সময় থাকতেন হাস্যোজ্জ্বল। মলিন মুখী হয়ে থাকতেন না। তবে এ অর্থে নয় যে, তিনি নির্ভাবনা ও নিঃশঙ্ক থাকতেন। কেননা, পূর্বেই উল্লেখিত হয়েছে যে, তিনি সব সময় চিন্তাভাবনায় জড়িয়ে থাকতেন। তিনি থাকতেন সর্বদা খােদার ধ্যানমগ্ন রত। তাঁর স্বভাব ছিল কোমল প্রকৃতির। কথায় কর্কশতা ছিলাে না মােটেই । কথাবার্তায় কারাে দোষচর্চা ও তিনি করতেন না। কাউকে কোন জিনিস দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করতেন না। মুখে এমন কথাই উচ্চারণ করতেন যাতে আছে পুণ্য নিহিত। বাইরের কোন পড়শী এসে কথাবার্তায় অসৌজন্য প্রদর্শন করলে তিনি এতে কোন মাইণ্ড করতেন না, বরং তা সহ্য করে যেতেন। কাউকে সামনাসামনি প্রশংসা করতে দিতেন না। বস্তুতঃ আর কতটুকু বর্ণনা করবাে এ পর্যন্ত যা । বর্ণনা করা হলাে সেটার
ওপর আমল করাটাই আমাদের কাম্য।
সালিশ বা হাকিম নিযুক্ত হলেন রাসূলে আকরাম (সাঃ) তাঁর ৩৫ বছর বয়সে ৬০৫ খ্রিস্টাব্দে কুরাইশরা কাবা ঘরকে নতুন করে নির্মাণ করলে হাজরে আসওয়াদ আপনস্থানে কে স্থাপন করবে, এ নিয়ে মতানৈক্য দেখা দিল, এমনকি তরবারির ধারাল ভাগ চমকে উঠলাে তাদের মাঝে। রাসূলে আকরাম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক বিশেষ কৌশলে হাজরে আসওয়াদটি যথাস্থানে স্থাপন করে একটা বড় ধরণের বিবাদের সুরাহা করে দিলেন। 

নির্জনতা অবলম্বন:

৬০৬ খ্রীস্টাব্দ থেকে ৬০৯ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত একাগ্রতা গ্রহণ করে হেরা গুহায় গিয়ে ইবাদত উপাসনা ও ধ্যান মগ্ন থেকে সময় কাটাতেন। জাতিকে মূর্খতা থেকে বাঁচাবার কৌশল উদ্ভাবনে নিরত থাকতেন। ৬০৯ খ্রীস্টাব্দে অধিক হারে সত্য স্বপ্নসমূহ দৃষ্টিগােচর হতে লাগলাে । নবুওয়্যাত প্রাপ্তি তার ৪০ বছর বয়সে সােমবার ৯ই রবীউল আউয়াল ৪১ জনসনে মােতাবেক ১২ই ফেব্রুয়ারি ৬১০ খ্রীস্টাব্দে হেরা গুহায় “ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাযী খালাক” দ্বারা কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সূচনা ঘটে। তৎসঙ্গে ওজু, ফজর ও আসরের নামায ও ফরয হয়েছিল। 

Thank you for reading the post.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top