بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
সম্মানিত পাঠক বৃন্দ! আমার লেখনিতে যদি কোন স্থানে ভুল পরিলক্ষিত হয় তাহলে আমাকে কমেন্ট করে অবশ্যই অবগত করবেন । তাহলে আমি সংশোধন করে দিব । ইনশা আল্লাহ তা’য়ালা । আর ৬ নাম্বার বইটি PDF নিতে চাইলে আমাকে কমেন্ট করে জানান যে “ আমার বইটি PDF লাগবে । ” সাথে আপনা মোবাইল নাম্বারটি লেখে দিবেন । ১-২ দিনের মধ্যে আমরা আপনাকে ফোন করে বইটি টেলিগ্রামের মাধ্যমে দিয়ে দিব একদম ফ্রিতে । কোন বিনিময় লাগবে না।
নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লী আলা রাসূলিহিল কারীম । সাহাবায়ে কেরাম রাজিআল্লাহু আনহুমগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ছোহবতে থেকে অনেক গুণে গুণান্বিত ছিলেন। এর থেকে কয়েকটি গুণের উপর মেহনত করে আমল করতে পারলে দ্বীনের উপর চলা অতি সহজ।
গুণ কয়টি হল : (১) কালেমা (২) নামায (৩) ইলম ও যিকির (৪) ইকরামুল মুসলিমীন (৫) ইখলাছে নিয়ত (সহিহ নিয়ত) (৬) দাওয়াত ও তাবলীগ ।
১. কালেমায়ে তাইয়্যেবা
لا اله الا الله محمد رسول الله (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ) অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নাই, হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত রাসূল।
কালেমার উদ্দেশ্য :
আমাদের দুই চোখে যা কিছু দেখি আর না দেখি আল্লাহ ছাড়া সবই মাখলুক। আর মাখলুক কিছুই করতে পারে না আল্লাহর হুকুম ছাড়া । আল্লাহ সবকিছু করতে পারেন মাখলুক ছাড়া । একমাত্র রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নূরানী ত্বরীকায় আমাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে শান্তি ও কামিয়াবী। কালেমার লাভ : যে ব্যক্তি একীন ও এখলাছের সাথে এ কালেমা একবার পাঠ করবে, আল্লাহ্পাক তার পিছনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন । এক হাদিসে আছে যে ব্যক্তি প্রতিদিন ১০০ বার এই কালেমা পড়বে, হাশরের ময়দানে তাঁর চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জল করে উঠাবেন । কালেমা হাসিল করার ত্বরীকা: এই কালেমা আমি বেশী বেশী পড়ব। এবং কালেমার ফযিলত নিজে জেনে অন্যকে দাওয়াত দেব ও দোয়া করব।
২. নামায
নামাযের উদ্দেশ্য : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে নামায পড়তে বলেছেন এবং সাহাবায়ে কেরাম রাজিয়াল্লাহু আনহুম আজমাঈনকে যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, সেভাবে নামায পড়ার যোগ্যতা হাসিল করার চেষ্টা করা ৷
নামাযের ফযীলত : যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায সময়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে গুরুত্ব সহকারে আদায় করবে, আল্লাহপাক তাকে নিজ দায়িত্বে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যে ব্যক্তি নামাযের ব্যাপারে যত্নবান হবেন, আল্লাহপাক তার যিম্মাদারী নিবেন। আর যে ব্যক্তি নামাযের ব্যাপারে যত্নবান হবে না, আল্লাহ তার কোন দায়িত্ব নিবেন না ।
হাদীসে বর্ণিত আছে : পাঁচ ওয়াক্ত নামায গুরুত্বসহ যেই ব্যক্তি আদায় করবে। আল্লাহ তাকে ৫টি পুরষ্কার দিবেন। ১. দুনিয়ার রিযিকের পেরেশানী হটাইয়া দিবেন। ২. কবরের আযাব হঁটাইয়া দিবেন। ৩. ডান হাতে আমলনামা দিবেন। ৪. পুলসিরাত বিদ্যুৎ গতিতে পার করে দিবেন। ৫. বিনা হিসাবে জান্নাত দিবেন ।
নামায হাসিল করার ত্বরীকা: পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামায়াতের সাথে আদায় করি, ওয়াজিব ও সুন্নাত নামাযের প্রতি যত্নবান হই ও কাযা নামাযগুলো খুঁজে খুঁজে আদায় করি। নফল নামায বেশি বেশি পড়ি। নামাযের লাভ জানিয়ে অপর ভাইকে দাওয়াত দেই ও উম্মতে মুহাম্মদির জন্য দোয়া করি ৷
৩. ইলম ও যিকির
মাকসূদ : আল্লাহ তা’আলার কখন কি আদেশ বা নিষেধ তা জেনে হুজুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ত্বরীকা অনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করা।
ফযিলত : যে ব্যক্তি এলেম শিক্ষার উদ্দেশ্যে ঘর হতে বাহির হয়, সমুদ্রের মাছ গর্তের পিপিলিকা তাঁর জন্যে দুআয়ে মাগফেরাত করে। যে ব্যক্তি ইলম শিক্ষা করার জন্য ঘর থেকে বের হয়, আল্লাহ তায়ালা তার পেছনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন ।
৪. একরামুল মুসলিমীন
উদ্দেশ্য : প্রত্যেক মুসলমান ভাইয়ের কিমত (মর্যাদা জেনে কদর করা। মানি সম্মানকরা, প্রত্যেক মাকলুকের প্রতি এহসান করা মানি দয়া করা ।
ফযীলত:
১. যদি কোন ব্যক্তি মুসলমান ভাইয়ের উপকার করার জন্য বের হয়ে চেষ্টা করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে দশ বছর এর ইতেকাফ করার চেয়ে উত্তম সওয়াব দান করবেন ।
২. যদি কেউ মুসলমান ভাইয়ের একটি হাজত পুরা করে, আল্লাহ পাক তার ৭৩ টি হাজত পুরা করে দিবেন, একটি দুনিয়াতে ৭২ টি আখেরাতে দিবেন ।
একরাম হাসিল করার তরীকা:
আমরা আলেমদের তাযীম করি, বড়দের শ্রদ্ধা করি, ছোটদের স্নেহ করি। এর ফযীলত জানিয়ে অপর ভাইকে দাওয়াত দেই । কেননা, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার মধ্যে তিন ধরনের একরাম নাই সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত না ।
৫. তাসহীহে নিয়্যত
মাকসূদ: আমরা যে কোন নেক আমল করব আল্লাহকে রাজি-খুশী করার জন্য করব।
ফযীলত : নিয়্যতকে সহীহ করে সামান্য খুরমা দান করলে আল্লাহ্পাক সেটাকে বাড়িয়ে উহুদ পাহাড় পরিমাণ ছাওয়াব কিয়ামতের দিন দান করবেন । আর যদি নিয়্যত সহীহ না করে পাহাড় পরিমাণও দান করি তাহলে সরিষা পরিমাণ ছাওয়াবও পাওয়া যাবে না ।
ফযীলত : একটি হাদীসে আছে, যে চক্ষু আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে, তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম ।
সহীহ্ নিয়্যত হাসিল করার তরীকা: আমি যে কোন কাজ করব নিয়তকে যাচাই করে করব, কাজের মধ্যে আল্লাহ পাকের হুকুম আছে কি না? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ত্বরীকা আছে কি না? এবং তা আল্লাহকে রাজী করার জন্য করব, কাজের প্রথমে ও শেষে এস্তেগফার করব। এর ফযীলত নিজে জেনে অপর ভাইকে দাওয়াত দেব ও দোয়া করব ।
৬. দাওয়াত ও তাবলীগ
মাকসুদ: আল্লাহর দেওয়া জান-মাল সময় নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে জান-মাল-সময়ের সহিহ ব্যবহার শিক্ষা করা, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূরানী ত্বরীকায় দ্বীন শিক্ষা ও দাওয়াতের মেহনত শিক্ষা ।
ফযীলত: আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে নিজের জন্য এক টাকা খরচ করলে ৭ লক্ষ টাকা সদকা করার সওয়াব আল্লাহ তা’য়ালা দান করবেন। একটি আমল করলে ৪৯ কোটি আমলের সাওয়াব দিবেন। এক ওয়াক্ত নামায পড়লে ৪৯ কোটি ওয়াক্তের সাওয়াব আল্লাহ দান করবেন।
ফযীলত: আল্লাহ্ তাআলার রাস্তায় ধূলাবালি আর জাহান্নামের ধোঁয়া একত্রিত হবে না ।
হাসিল করার তরিকা: এই কাজকে শেখার জন্য প্রথমে তিন চিল্লা (চার মাস) দিয়ে শিখতে হয়। আলহামদুলিল্লাহ! আমি তৈরী। আপনারা তৈরী আছেন তো? এই কাজ শিখার জন্য গায়রে আলেম প্রথমে একাধারে ৪ মাস তিন চিল্লায়। আর ওলামায়ে কেরাম এক সাল আল্লাহর রাস্তায় বের হয়ে তাবলীগের মেহনত শিখব এবং মৃত্যু পর্যন্ত এই কাজ করার জন্য নিয়ত করব। প্রতি বছর এক চিল্লা। মাসে তিন দিন। সপ্তাহে দুই গাশত এবং প্রতিদিন আড়াই ঘন্টা দাওয়াতের মেহনত করব। প্রতিদিন তালিম একটি মসজিদে আর অপরটি নিজের ঘরে। যে কোন এক নামাজের পর পরামর্শ করব। দাওয়াত দিব। দোয়া করব।
ইজতেমায়ী আমল ৮টি:
১. সফর ও মঞ্জিল, ২. মাশওয়ারাহ, ৩. তা’লিম, ৪. গাস্ত ৫. ফরয নামাজ ৬. খানা ৭. ঘুম ৮. উমূমী বয়ান ।
১. সফর ও মঞ্জিল: সফর এর শাব্দিক অর্থ ভ্রমণ করা, পরিভাষায় সফর বলা হয় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্রমণ করা,
মঞ্জিল : মঞ্জিল বলা হয় : আল্লাহর রাস্তায় কোন জামাত বের হয়ে তার গন্তব্য স্থানে পৌঁছার পর মসজিদে উঠার আগে কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে অবস্থান করা ।
২. মাশওয়ারাহ: (মাশওরাহ) ইহা আরবী শব্দ অর্থ : পরামর্শ। পরামর্শ কি? আল্লাহর হুকুম, নবীদের সুন্নত, মুমিনের সিফাত ।
পরামর্শের উদ্দেশ্য :
দ্বীনের ব্যাপারে সকল সাথী ভাইকে ফিকিরবন্দ করা। পরামর্শের বিষয়বস্তু : বিষয়বস্তু ৩টি :
১. কিভাবে এলাকার প্রত্যেক ঘরে একজন বালেগ পুরুষ রেখে বাকিদের আল্লাহর রাস্তায় বের করা যায় তার ফিকির করা।
২. নিজে ও সাথী ভাইয়েরা যেন ঈমানওয়ালা, আমলওয়ালা মুখলেছীন দ্বীনের দায়ী বনে এ জন্য মেহনত করা ।
৩. মসজিদে যদি ৫ কাজ চালু থাকে তাহলে জোড়দার করা । আর যদি চালু না থাকে তাহলে চালু করার চেষ্টা করা।
পরামর্শের লাভ : ১. পরামর্শ করে কাজ করলে খায়ের ও বরকত হয় । ২. পরামর্শ করে কাজ করলে সাথীদের মধ্যে জোড়-মিল, মুহাব্বত- উলফত কায়েম হয় । ৩. পরামর্শ করে কাজ করলে ঝগড়া-ফাসাদ থেকে বাঁচা যায় এবং লজ্জিত হতে হয় না । ৪. পরামর্শ করে কাজ করলে : ওহীর বরকত হয়। ৫. পরামর্শ করে কাজ করলে সমস্ত ক্ষতি থেকে বাঁচা যায় ।
পরামর্শের আদব :
১. পরামর্শের আগে একজন আকলবান বালেগ পুরুষকে জিম্মাদার বানাতে হবে। ২. আমীরের ডান দিক থেকে খেয়াল পেশ করা। ৩. কাহারো খেয়ালকে কেউ ছোট মনে না করা। ৫. দ্বীনের তাকাযাকে সামনে রেখে খেয়াল দেওয়া। ৫. নিজের খেয়াল অনুযায়ী রায়হলে খুশি না হওয়া বরং এস্তেগফার পড়া। ৬. নিজের খেয়াল অনুযায়ী রায় না হলে বেজার না হওয়া, বরং আলহামদুলিল্লাহ পড়া। ৭. পরামর্শের আগে কোন পরামর্শ না করা এবং পরামর্শের পর কোন সমালোচনা না করা। ৮. আমীর সাহেব যেই ফায়সালা দেন তার উপর অটল থাকা। ৯. আমীর ইচ্ছা করলে সকলের রায় মত ফায়সালা দিতে পারেন। আবার নিজের ইচ্ছামতও ফায়সালা দিতে পারেন ।
৩. তালিম
শুনার আদব:
১. দিলের কানে শুনা, ২. আমলের নিয়্যতে শোনা, ৩. অন্যের নিকট পৌঁছানোর নিয়্যতে শোনা। ৪. মুতাকাল্লিমের মুখের দিকে তাকাইয়া শোনা ।
বসার আদব:
১. সবাই মুতাকাল্লিম এর সম্মুখভাগে বসা, ২. গায়ে গায়ে লেগে বসা, ৩. ওযু করে বসা, ৪. সুগন্ধি লাগিয়ে বসা, ৫. গায়ে জামা, মাথায় টুপি রেখে বসা, ৬. সুন্নত তরিকায় বসা ইত্যাদি।
তালিম শুনার হক্ব: ১. আল্লাহ পাকের নাম শুনলে জাল্লাজালালুহু বলা, ২. হুজুর (সা.) এর নাম শুনিলে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলা এবং অন্যান্য নবী ও ফেরেস্তাদের নাম শুনলে আলাইহিস সালাম বলা। ৩. সাহাবীদের নাম শুনলে রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলা এবং মহিলা সাহাবীদের নাম শুনলে রাযিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলা, ৪. বুযুর্গদের নাম শুনলে যদি জিবিত থাকে দামাত বারাকাতুহু বলা, আর যদি মৃত হয়, তাহলে রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলা ।
৪. ফরয নামায
ফরয নামাযকে এই জন্য এস্তেমায়ী আমল বলা হয়েছে : কেননা নামাজ সকলে এক সাথে এক সময়ে পড়ে।
৫. গাশত
রাসূল (সা.) দাওয়াতের কাজ করতেন গাশত এর মাধ্যমে। গাশত কি? ঃ গাত ইহা ফারসি শব্দ যার অর্থ দ্বীনের কাজে ঘোরাফেরা করা ।
গাশত কত প্রকার ও কি কি?
গাশত মোট ৫ প্রকার : ১. খুছুছী ২. উমূমী ৩. তা’লিমী ৪. তাশকিলী ৫. উসূলী ।
খুছুছী : খুছুছী গাশত বলা হয়, জামাত মহল্লায় এসে তিন শ্রেণীর লোকের কাছে দাওয়াত দেওয়া। ১. দুনিয়ার বড় ২. কাজের বড় ৩. দ্বীনের বড়। দুনিয়ার বড় হল এলাকার সম্মানিত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা। অর্থাৎ সর্দার চেয়ারম্যান, মেম্বার ইত্যাদি । তাদের কাছে এভাবে দাওয়াত দিব। প্রথমে সালাম দিব মুসাফাহা করব, তারপরে পরিচয় দিব এবং বলব যে, আপনাদের এলাকায় দ্বীনের মেহনত নিয়ে এক জামাত উপস্থিত। তারপরে যতটুকু পারা যায় তাঁর সম্ভব, তাই এই দাওয়াতের কাজ আমাদেরই মৃত্যু পর্যন্ত করে যেতে হবে। কারণ, আর কোন নবী আসবে না। এই কাজের দায়িত্ব আমাদের উপর দেওয়া হয়েছে । তো ভাই, এই নবীওয়ালা কাজ করতে আমরা সবাই প্রস্তুত আছি তো?
এই কাজের লাভ: প্রতি কদমে সাতশত নেকী পাওয়া যাবে এবং সাতশত গোনাহ মাফ হবে, জান্নাতে সাতশত মর্তবা বৃদ্ধি পাবে, এই কাজে বের হয়ে পাঁয়ে যেই ধুলাবালি লাগবে, সেই স্থানে জাহান্নামের আগুন লাগবে না। প্রতি কথায় এক বছর ইবাদত করার সাওয়াব পাওয়া যায় । দাওয়াতের কাজে বের হয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করা মূলতাজিমে (যাহা কা’বার দরজা ও হাজরে আসওয়াদের মাঝখানের জায়গা) দাঁড়িয়ে ইবাদত করার চেযে উত্তম। তো ভাই এই কাজ করার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি তো? আমরা এখন দাওয়াত নিয়ে মহল্লায় যাব, একজন স্থানীয় রাহবার হলে ভাল হয়, কে রাজী আছি। রাহবারের জন্য আল্লাহর রাসূল, রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করেছেন, যারা যারা গাশতে যাব তারা উঠি, আদব আমরা গেইটে বলব। একজন জিম্মাদার ও একজন মুতাকাল্লিম বানিয়ে পাঠিয়ে দিব। গেইটে গিয়ে জিম্মাদারের কাজ। সাথীদেরকে বলবেন, আমরা নজরকে হেফাজত করব, রাস্তায় নিচের দিকে তাকিয়ে চলব, রাস্তার ডান দিকে চলব মামুররা কেউ সালামও দিব না। উত্তরও নিব না, আর রাহবার ভাই এর কাজ হল, মানুষকে তার প্রশংসা করে দুনিয়াবী কাজ থেকে ফারেগ করে মুতাকাল্লিম ভাই এর হাতে তুলে দেওয়া, আর মুতাকাল্লিম ভাই এর কাজ হল, তিন কথার উপর দাওয়াত দিব, তাওহীদ আখেরাত রেসালাত এবং তাঁকে নগদ মসজিদে নিয়ে আসার চেষ্টা করব। না পারলে হ্যাঁ এর উপর রেখে আসব। আর জিম্মাদার ভাই এর কাজ হল- কোন বেউসুলী বা কোন দরকারে দাঁড় করাতে হলে তাকবীর দিবে জামাতকে গোছিয়ে রাখা এবং দাওয়াত শেষে এস্তেগফার পড়তে পড়তে মসজিদে ফিরে আসা এবং এস্তেমায়ী আমলে জুড়বে।
ঈমান একীনের কথা:
আল্লাহ পাক রিজিকদাতা। সাগরের মধ্যে নীল তিমি মাছ রহিয়াছে, প্রতিটি নীল তিমি প্রতিদিন আড়াই টন বড় চিংড়ি মাছ খায়। এরূপ হাজার হাজার নীল তিমি সাগরে রহিয়াছে। ইহাদের প্রত্যেককে আল্লাহ পাক প্রতিদিন আড়াই টন বড় চিংড়ি মাছ খাওয়াইতেছেন । জংগলে হাতি, বাঘ, ভল্লুক, সিং, হরিণ ইত্যাদি বড় বড় জানোয়ার রহিয়াছে। ইহাদের প্রত্যেকে প্রচুর খাবার খায়। একটা বাঘ প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ তাজা গোশত খায়। হাতি কয়েক মন খাবার খায়। ইহাদের কেহ কোন কাজ করে না। আল্লাহ তা’য়ালা নিজ কুদরতে ইহাদেরকে দৈনিক প্রচুর রিজিক দিতেছেন। মুছা (আ.)-এর সাথে প্রায় ৬ লাখ মুসলমান ছিল। ইহাদেরকে আল্লাহ পাক ৪০ বছর যাবত আসমানী খাবার অর্থাৎ মান্না সালওয়া নামক সুস্বাদু জান্নাতী খাবার খাওয়াইয়াছেন। তাহাদের কোন কাজ কর্ম করিতে হয় নাই । ঐ আল্লাহ পাক এখনও আছেন । তাঁহার রিজিক দেওয়ার ক্ষমতা এখনও আছে। চিরকাল থাকিবে।
আজরাঈল (আ.) একজন ফেরেশতা। আল্লাহ পাক তাঁহাকে সৃষ্টি করিয়াছেন। তিনি মালাকুল মওত । অর্থাৎ আল্লাহ পাকের হুকুমে তিনি মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর জান কবজ করিয়া থাকেন। আজরাঈল (আ.)-এর সামনে সারা পৃথিবী একটা থালা বা প্লেটের মত। তিনি এক জায়গায় বসিয়া সারা পৃথিবীর মানুষের ও অন্যান্য প্রাণিকুলের জান কবজ করেন। এই জন্য তাঁহাকে বিভিন্ন জায়গায় যাইতে হয় না। যে আজরাঈল (আ.)-এর সামনে পৃথিবীটা এত ছোট যে একটা থালার মত। তাহা হইলে আজরাঈল (আ.) কত বড়? তাঁহার শরীরটা কত বড়? যেই আল্লাহ পাক তাঁহাকে সৃষ্টি করিয়াছেন। তিনি কত বড়? সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ পাক কত বড় তাহা আমরা কল্পনাও করিতে পারি না ।
ইস্রাফিল (আ.) একজন ফেরেশতা। তিনি শিঙ্গা নিয়া বসিয়া আছেন। আল্লাহ পাকের হুকুমে তিনি শিঙ্গা ফুঁ দিবেন। যখন তিনি শিঙ্গা ফুঁ দিবেন, তাহার ফুঁ এর শক্তিতে আসমানসমূহ ভাঙ্গিয়া যাইবে জামিন ফাঁটিয়া তুলার মত উড়িতে থাকিবে। অর্থাৎ কিয়ামত ঘটিয়া সমস্ত বিশ্ব জগত ধ্বংস ও নিঃশেষ হইয়া যাইবে। যেই ইস্রাফিল (আ.)-এর ফুঁ এর মধ্যে এত শক্তি, তাঁহার শরীরে কত শক্তি? যে আল্লাহ পাক তাঁহাকে সৃষ্টি করিয়াছেন, তিনি কত বড় মহা শক্তিশালী । সুবহানাল্লাহ!
আল্লাহ পাক অনেক বড়। আল্লাহ পাক জিব্রাঈল আলাইহিস সালামকে পয়দা করিয়াছেন । জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম দাঁড়াইলে পা থাকে জমিনে আর মাথা থাকে আসমানে। পৃথিবীর সব সাগর মহাসাগরের পানি জিব্রাঈল আলাইহিস সালামের মাথায় ঢালিলেও তাঁহার মাথার সব চুল ভিজিবে না । যাঁহার মাথা এত বড় তাহার শরীর কত বড়? যে আল্লাহ পাক তাঁহাকে বানাইলেন তিনি কত বড় প্রতিদিন পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিশু জন্ম নেয়। এই জন্য প্রতিদিন ৭ লাখ চোখ, ৭ লাখ কিডনী, ৭ লাখ হার্ট এর ভাল্ব, ৭ লাখ পা, ৭ লাখ হাত আল্লাহ পাকের খাজানা থেকে আসে ।
৬. খানা
খানা কি? সকল প্রাণীর খানা হল আদত, আর মুসলমানের খানা ইবাদত, আর সুন্নত তরীকা খানা খেলে ইবাদতেই গণ্য হবে।
খানার আদবসমূহ :
১. লেখা ও ছবিবিহীন পরিষ্কার দস্তরখানা বিছানো ।
২. উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করা। কুলি করা ।
৩. যখন খানা সম্মুখে আসে তখন এ দুয়া পড়া ।
اللهم بارك لنا فيما رزقتنا وقنا عذاب النار .
৪. খানার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা যদি শুরুতে ভুলে যায় তাহলে মাঝখানে পড়া বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু।
৫. ডান হাতে খাওয়া।
৬. তিন আঙ্গুলে খাওয়া। প্রয়োজনে অতিরিক্ত আঙ্গুল মিলানো যাবে।
৭. যদি খাবার একধরনের হয় তাহলে নিজের সম্মুখ থেকে খাওয়া।
৮. যদি খাবার পড়ে যায় উঠিয়ে খাওয়া।
৯. হেলান দিয়ে না খাওয়া।
১০. খাওয়ার পর বর্তন ও আঙ্গুল চেটে খাওয়া।
১১. খাবারের দোষ না ধরা।
১২. খাওয়ার পর এ দোয়া পড়া। الحمد لله الذي اطعمنا وسقانا وجعلنا من المسلمين . দাওয়াতি খানার পর এ দু’আ পড়া : اللهم اطعم من اطعمني واسق من سقاتي .
১৩. প্রথমে দস্তরখানা উঠানো তারপর নিজে উঠা,
১৪. খাওয়া শেষে আল্লাহ পাকের শুকর আদায় করা।
১৫. তাহকীক করে খানা খাওয়া ।
১৬. একের অধিক সারি বসা। এগুলি সুন্নত (আদবের সাথে খানা খাওয়া) ।
৭. ঘুম
১. ইশার নামাযের পর দ্রুত ঘুমানোর চিন্তা করা অর্থাৎ দুনিয়াবী কথাবার্তা না বলা।
২. ওযুর সাথে ঘুমানো।
৩. প্রথমে তিনবার বিছানা ঝেড়ে নেওয়া।
৪. ঘুমানোর পূর্বে উভয় চোখে তিন তিনবার সুরমা লাগানো।
৫. কালেমায়ে তাইয়্যেবা পড়া।
৬. তাসবীহে ফাতেমী পড়া অর্থাৎ ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ। ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ। ৩৪ বার আল্লাহু আকবার।
৭. চার কূল পড়া- সূরা ফালাক-সূরা নাছ- সূরা ইখলাছ- সূরা কাফিরুন।
৮. সূরা আলিফ লাম-মিম সিজদা ও সূরায়ে মূলক পড়া।
৯. ডান পার্শে কাঁধ হয়ে শোয়া। ডান হাত চেহারার নিচে রেখে শয়ন করা।
১০. দোয়া পড়া ঃ .,اللھم بسمک اموت و احیا
১১. ঘুম না এলে দুরূদ শরীফ পড়া।
১২. খারাপ স্বপ্ন দেখলে এ দুয়াটি পরে বাম দিকে সামান্য থু থু ফেলা। দোয়াটি এই—اعوذ باللہ من الشیطان وشرّ ھذہ الرّؤیا
১৩. ঘুম থেকে উঠে প্রথমে তিনবার আলহামদুলিল্লাহ বলা।
১৪. তারপর কালেমায়ে তাইয়্যেবা পড়া । ১৫. তারপর দুয়া পড়া- الحمد لله الذى احيانا بعدما اماتنا واليه النشور .
৮. উমূমী বয়ান
ভাই ও দোস্ত-বুযুর্গ! আল্লাহ্ পাকের এহছান, ফজল ও করম, আমরা বিভিন্ন গোত্রের লোক একত্রিত হয়ে মাগরিবের ফরজ নামাজ আদায় করেছি এবং তারপর দ্বীনের এক ফিকির নিয়ে বসতে পেরেছি, তার জন্য আমরা আল্লাহ্ শোকর আদায় করি। সকলে বলি আল্হামদুলিল্লাহ । আল্লাহ তা’আলা কুরআন পাকে এরশাদ করেন- لئن شكرتم لازيدنكم ولئن كفرتم ان عذابي لشدید আমার নেয়ামত পেয়ে যে নেয়ামতের শোকরগুজারী করে আমি তার নেয়ামত বাড়াইয়া দেই এবং যে ব্যক্তি নেয়ামতের অস্বীকার করে আমি তাহাকে কঠিন আযাবে গ্রেপ্তার করি।
সমগ্র মানবজাতির সুখ-শান্তি, সফলতা কামিয়াবী আল্লাহ্ তা’আলা একমাত্র দ্বীনের মধ্যে রেখেছেন। দ্বীন জিন্দেগীতে তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন তার জন্য মেহনত করা হবে। সুতরাং যে কেহ খাস নিয়্যতে নিজের জান- মাল, সময় নিয়ে আল্লাহ্র রাস্তায় বের হয়ে ছহীহ্ তরীকায় মেহনত করবে, ইনশাআল্লাহ্ অতি সহজেই তার মধ্যে পুরা দ্বীনের উপর চলার যোগ্যতা পয়দা হবে। দ্বীন আল্লাহ্র নিকট বড়ই মাহবুব। দ্বীন দুনিয়ার বুকে দাওয়াতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দাওয়াত হচ্ছে ঈমানের মেহনত। হযরত ঈসা (আ.)-এর পরে ছয়শত বৎসরের উর্ধ্বে দাওয়াতের কাজ না থাকার কারণে
বাইতুল্লাহ্ তথা আল্লাহ্র ঘরে ৩৬০ টি মূর্তি উঠেছিল। আবার তাহারাই ঈমান আনিবার পর মূর্তিগুলো বের করে দিয়াছিল । আল্লাহ পাক কুরআনে বলেছেন- “দুনিয়াটা আখেরাতের ক্ষেত স্বরূপ।” দুনিয়ার জীবন হইল কামাইয়ের জায়গা, আর আখেরাত হইল ভোগের জায়গা । এখন কামাইয়ের জায়গায় যদি কষ্ট না করে তাহলে বাড়ি ফিরিয়া সে কিছুই ভোগ করিতে পারিবে না। ঠিক তেমনি দুনিয়া হইল মু’মিনের জায়গা । যে দুনিয়াতে কষ্ট করে ঈমান আমল বানাবে, সে মহা আনন্দে আখেরাতের বাড়ি ফিরে মনে যা চায় তাই ভোগ করিবে। আর দুনিয়াতে যে কামাই না করে, কেবল ভোগের চিন্তা করবে, আরাম-আয়েশের চিন্তা করবে, তাকে আসল আখেরাতে খালি হাতে ফিরে কেবল কষ্টই ভোগ করিতে হইবে।
আল্লাহ পাক মানুষ সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য। আর আল্লাহ পাক ১৭,৯৯৯ মাখলুক সৃষ্টি করেছেন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষের খেদমতের জন্য। আর মানুষের ঐশ্বর্য ও সম্পদের মধ্যে শান্তি, কামিয়াবী ও সফলতা রাখেন নাই। শান্তি, কামিয়াবী ও সফলতা রেখেছেন ঈমান ও আমলের মধ্যে। যে ৫টি বস্তুর জন্য মানুষ সব সময় আকাংখিত, সেই ৫টি জিনিস আল্লাহপাকের কুদরতি হাতে, যাহা আল্লাহ পূরণ করবেন কাল কিয়ামতে। মানুষ শত চেষ্টা করলেও তাহা হাছিল করতে পারবে না । এই বস্তু হইল— (১) অনন্ত জীবন (২) অনন্ত যৌবন। (৩) কোমল শয্যা, সুরম্যবিশিষ্ট বাড়ি। (৪) খাদ্য সামগ্রী। (৫) সুন্দর সুন্দর নারী । আল্লাহপাক বলেছেন, যদি আমার হুকুম ও রাসূলের তরিকামতে দুনিয়াতে বসবাস করে ঈমান ও আমল তৈরি করে আস, তাহলে আখেরাতে চাহিদার জিন্দেগী পূর্ণ হবে। না দেখা বস্তুর উপর বিশ্বাস আনার নাম হইল ঈমান। ঈমান দুনিয়ার কোথাও কিনতে পাওয়া যায় না। ইহা হাছিল হবে একমাত্র দাওয়াতের মাধ্যমে। দাওয়াত থাকবে তো দ্বীন থাকবে, দ্বীন থাকবে তো দুনিয়া থাকবে। দাওয়াত থাকবে না, দ্বীনও থাকবে না, দুনিয়াও থাকবে না। আল্লাহ্পাক দুনিয়ার নেজাম ভেঙ্গে দিবেন। আল্লাহ্পাক আমাদেরকে অতি অল্প সময়ের জন্য দুনিয়াতে পাঠাইয়াছেন। এই সামান্য সময়ের মধ্যে ঈমান ও আমল তৈরির জন্য জান- মাল সময় নিয়ে ১চিল্লায়, ৩চিল্লায় আল্লাহ্র রাস্তায় বাহির হওয়ার জন্য কে কে রাজী আছেন, খুশি খুশি বলেন। আলহামদুল্লিাহ!
ফজর বাদ বয়ান
আলহামদুলিল্লাহ! সমস্ত প্রশংসাই আল্লাহ পাকের, যিনি আমাদেরকে অর্ধমৃত অবস্থা থেকে জাগাইয়া আল্লাহ্পাকের মহান হুকুম ফজরের দুই রাকআত ফরজ নামায মসজিদে এসে জামায়াতে তাকবীরে উলার সহিত আদায় করার তৌফীক দান করেছেন। এশার নামাজ বাদ আমরা কয়েক দলে বিভক্ত হয়ে গিয়াছিলাম। একদল রাত্রিকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করিয়া সারা রাত্রি ইবাদতে মশগুল ছিলেন। আর এক দল রাত্রিকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করিয়া সারা রাত্রি জেনা, চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি ও দস্যুবৃত্তি করে কাটিয়ে দিয়েছেন। কাহারো নিদ্রা চিরনিদ্রায় পরিণত হয়েছে। কেহ হাসপাতালে সারা রাত্রি অশান্তিতে কাঁটিয়ে দিয়েছেন। কোন ব্যক্তি ফজরের আযান শুনিয়া উত্তমরূপে অজু করিয়া মসজিদের দিকে রওয়ানা হয়। কেমন যেন এহরাম বেঁধে হজ্জের দিকে রওয়ানা হইল। তার প্রতি কদমে একটি করে নেকী লেখা হয় ও একটি করে গুনাহ মাফ হয়ে যায়। মসজিদে যত সময় নামাজের জন্য দেরি করবে তত সময় নামাজেরই ছাওয়াব পাইতে থাকিবে ।
নামাজি ব্যক্তি যত সময় নামাজে থাকিবে তত সময় আল্লাহর রহমত বৃষ্টির মত পড়িতে থাকিবে। দাঁড়াইয়া নামাজ আদায় করিলে কেরাআতের প্রতি হরফে ১০০ করিয়া নেকী পাইবে। বসিয়া পড়িলে ৫০ নেকী করিয়া পাইবে। প্রথম তাকবীরে শরীক হওয়া দুনিয়ায় যত নেক আমল আছে তার চেয়ে উত্তম। নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ জেহাদ। নামাজি যখন রুকুতে যায়, তখন তাহার নিজের ওজন বরাবর স্বর্ণ আল্লাহ্র রাস্তায় দান করার ছাওয়াব তার আমলনামায় লেখা হয়। নামাজি যখন আত্তাহিয়্যাতু পড়ার জন্য বসে তখন সে হযরত আইউব (আ.) ও হযরত ইয়াকূব (আ.)-এর মত দুইজন ছাওয়াব অর্জনকারীর ছাওয়াব পায়। যে পর্যন্ত হুজুর পাক (সা.)-এর উপর দুরূদ পাঠ করা না হয়, তত সময় দোয়া আসমান ও যমীনের মাঝে ঝুলিতে থাকে। ডান দিকে ছালাম ফেরালে বেহেশতের ৮টি দরজা খোলা হয়ে যায়। আর বাম দিকে ছালাম ফেরালে দোযখের ৭টি দরজা বন্ধ হয়ে যায়। নামাজ বাদে যদি কেহ যিকিরকারীর পাশে বসে থাকে, তাহলে সে ৪জন গোলাম আজাদ করার ছাওয়াব পাইবে। ১টি গোলামের মূল্য ১২ হাজার টাকা, ৪টির মূল্য ৪৮ হাজার টাকা দান করার ছাওয়াব পাইবে। তার পর দুই রাকআত এশরাক নামাজ সূর্য উদয়ের ২২/২৩ মিনিট পরে পড়ে তবে একটি উমরা হজ্জ ও একটি কবুল কৃত হজ্জের ছাওয়াব পাইবে। আরও দুই রাকআত নামাজ আদায় করলে আল্লাহ্ পাক তাহার সারাদিনের জিম্মাদার হয়ে যাইবেন। কীতি গাঁথা
সূরা হাশরের শেষ আয়াত পাঠ করিলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০ হাজার ফেরেশতা তার জন্য মাগফেরাত কামনা করিবেন। মাগরিবের নামাজের পর পড়িলে সারা রাত্রি মাগফেরাতের দোয়া করিতে থাকেন। ১০০ বার ছুবহানাল্লাহ পাঠ করিলে ১০০ গোলাম আজাদ করার ছাওয়াব পাইবে । ১০০ বার আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করিলে যুদ্ধের ময়দানে ছামানাসহ ১০০ ঘোড়া দান করার ছাওয়াব পাইবে। ১০০ বার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু পাঠ করিলে আসমান যমীনের ফাঁকা জায়গা নেকীতে ভর্তি হয়ে যাবে। যে ব্যক্তি لا اله الا الله وحده لا شريك له احد اصمد الم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا احد –
(“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা-লাহু আহাদান সামাদান লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়ালাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আহাদ”) পাঠ করিবে। সে বিশ লক্ষ নেকী পাইবে । হুজুর পাক (সা.)-এর হাদীসে আছে- من تمسك بسنتى عند فساد امتی فله اجر مأة شهيد.
(মান তামাচ্ছাকা বিসুন্নতী ইনদা ফাছাদি উম্মাতি ফালাহু আজরু মিয়াতি সাহীদিন) যে ব্যক্তি ফেতনা-ফাসাদের যামানায় আমার একটি সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরে সে ১০০ শহীদের ছাওয়াব লাভ করিবে। এক ওয়াক্ত নামাজ যে আদায় করিল সে ৩,৩৫,৫৪,৪৩২ নেকী পাইল। আর যে ঐ নামায ছাড়িয়া দিল সে ৮০ হোকবা শাস্তি ভোগ করিবে। কাজা আদায় করিলে ৭৯ হোকবা মাফ অর্থাৎ ১ হোকবা ২ কোটি ৮৮ লক্ষ বৎসর শাস্তি ভোগ করিবে । যারা নামাজে আসে নাই তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেল। তাদের ডাকার জিম্মাদারী হুজুর পাক (সা.) আমাদের উপর রেখে গেছেন। আল্লাহ ভুলা বান্দাকে ডেকে নামাজে দাঁড় করাইয়া দিলে ককূলকৃত নামাজের ছাওয়াব পাওয়া যাইবে। ভাই দাওয়াতের জন্য কে কে রাজী আছেন, খুশি খুশি বলুন, ও আমাদের নিয়ে চলুন ।
পহেলা মজলিশ বা তা’আরুফি বয়ান
আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ পাকের বহুত বড় এহছান আর ফজল ও করম, তিনি নিজ দয়ায়, নিজ মায়ায় আমাদের সকলকে মসজিদে আসিবার তৌফিক দান করেছেন, আল্লাহ পাক যাদের পছন্দ করেন, তাদেরই মসজিদে আসার তৌফিক দান করেন, তারপরে দ্বীনের এক ফিকির নিয়ে বসার সুযোগ দিয়েছেন, ভাই, দ্বীন আল্লাহ তায়ালার নিকট অতি প্রিয় ও অতি মাহবুব। এই দ্বীনকে দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এক লক্ষ বা ২ লক্ষ ২৪ হাজার পয়গম্বর একত্র দাওয়াত দিয়েছেন কোরআনের ঘোষণা এই যে— “হে দুনিয়ার মানুষ! তোমরা আল্লাহকে এক বলে স্বীকর করে নাও, তোমরা কামিয়াব হয়ে যাবে, অর্থাৎ সকলে জান্নাতী হয়ে যাবে, দ্বীনকে দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সমস্ত নবী ও পয়গাম্বর কষ্ট ও মোজাহাদা সহ্য করেছেন, হযরত ইব্রাহীম (আ.) নমরূদের আগুনে প্রবেশ করেছেন, হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেটে গিয়েছিলেন, হযরত নূহ (আ.)-কে তাঁর কওম এর লোকেরা দাওয়াত এর কাজ করতে গেলে অনেক পাথর নিক্ষেপ, তিনি তার নিচে চাপা পড়ে যেতেন। তবুও তাঁর দাওয়াতের কাজ করেছেন, ছাড়েন নাই, হযরত ঈসা (আ.)-এর পর থেকে আমাদের নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) আসার আগ পর্যন্ত দাওয়াতের কাজ না থাকায় কাবা ঘরে ৩৬০টি মূর্তি রাখা হয়েছিল, মানুষ পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছিল, যিনা ব্যভিচার তারা প্রকাশ্যভাবে করা শুরু করল, সকল গুনাহ তারা ব্যাপকভাবে করতে লাগল, ঠিক সেই সময় আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন শান্তির দূত, প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) কে মানুষ এর মাঝে প্রেরণ করেন, তিনি এসে মানুষ দাওয়াতের দ্বারা আবার ইসলামের ছায়াতলে নিয়ে আসলেন, পরবর্তীতে মক্কার কাফেরদের জুলুম সহ্য করতে না পেরে আল্লাহ্র হুকুমে তিনি মদিনায় হিজরত করলেন এবং মদিনাবাসীরা তাঁকে জান-মাল সময় নুছরত করেন, তারা হিজরত করেছিলেন তাদেরকে মুহাজির আর যারা নুছরত করেছেন তাদেরকে আনছার বলা হয়। যখন হুজুর (সা.)-এর সাথে মুহাজির এবং আনছারগণ মিলে মেহনত করলেন, আল্লাহ তায়ালা তখন দ্বীনকে চমকে দিলেন, সেই দ্বীন এর আলো আজ পুরা দুনিয়ায় ছড়িয়ে আছে, পুরা দুনিয়ার বুকে ইসলাম এর আলো পৌঁছেছে এই দাওয়াতের মেহনত দ্বারা। তো, ভাই আমরা হিজরত করে আপনাদের এলাকায় এসেছি, আপনারা যদি আনছার হয়ে আমাদেরকে সময় দিয়ে নুছরত করেন, তাহলেই এই মহল্লায় দাওয়াতের কাজ করা সহজ হবে, এই জামাত আপনাদের মসজিদে ৩ দিন থাকবে, কোন কোন ভাই আমাদেরকে নুছরত করার জন্য তৈরী আছেন?
এলান
প্রথম এলান : আলহামদুলিল্লাহ! দ্বীনের মোবারক মেহনত নিয়ে এক জামাত আপনাদের মহল্লার মসজিদে উপস্থিত, বাকি নামাজ বাদ মহল্লার সাথীদের সাথে জরুরী পরামর্শ হবে, বা বয়ান হবে, আমরা সবাই বসি ।
আছর বাদ এলান:
(মোনাজাতের আগে) ইনশাআল্লাহ! দোয়া বাদ জামাত মহল্লায় গাশতে যাবে এবং মসজিদে ঈমান এক্কিনের জরুরী আলোচনা হবে আমরা সকলেই বসি, বহুত ফায়দা হবে।
মাগরিব বাদ এলান :
ইনশাআল্লাহ! বাকি নামাজ বাদ ঈমান আমলের মেহনত সম্পর্কে জরুরী বয়ান হবে, আমরা সকলেই বসব, বহুত ফায়দা হবে ।
বিঃ দ্রঃ প্রত্যেক আমলের শেষে পরবর্তী আমলের এলান ঘোষণা করে দেওয়া, যেমন : বাদ জোহর কিতাব পড়ে তা’লিম এর সময় বলে দেওয়া, সে ওমক সময় থেকে তালিম হবে। সবাই আসবেন ।
চার কাজ বেশি বেশি করব:
১. দাওয়াত ২. তা’লিম ৩. নামাজ ৪. যিকির ।
চার কাজ কম কম করব:
১. খাওয়াতে কম সময় লাগাব ২. ঘুমে কম সময় লাগাব ৩. দুনিয়াবী কথা কম বলব ৪. মসজিদের বাহিরে কম সময় লাগাব ।
চার কাজ মোটেই করব না:
১. সওয়াল করিব না, ২. সওয়ালের ভান করিব না ৩. বিনা অনুমতিতে কাহারো কিছু ব্যবহার করব না, ৪. প্রয়োজনের অতিরিক্ত খরচ করব না ।
চার কাজে সর্বদা জুড়ে থাকব
১. এজতেমায়ি আমালে জুড়ে থাকব। ২. সাথীদের খেদমতে জুড়ে থাকব । ৩. আমিরের এতাআতে জুড়ে থাকব ৪. সর্বদা আমলে জুড়ে থাকব ।
চার কাজ থেকে আমরা পৃথক থাকব:
১. সাথীদের দোষ ধরা থেকে পৃথক থাকব ।
২. মসজিদে রাজনীতি করা ও রাজনীতির কথা বলা থেকে পৃথক থাকবো ।
৩. ইমাম মুয়াজ্জিনের হক নষ্ট করব না।
৪. মসজিদের কোন জিনিস নষ্ট করব না ।
মসজিদওয়ার জামাতের মোযাকারা মসজিদওয়ার জামাতের ৫ কাজ
মসজিদওয়ার জামাতের ৫ কাজ কি?
১. প্রতি মাসে ৩ দিন করে আল্লাহর রাস্তায় লাগানো। ২. সাপ্তাহিক দু’টি গাশত, একটি নিজ মহল্লার মসজিদে অপরটি পার্শ্ববর্তী মহল্লার মসজিদে, ৩. প্রতিদিন দুটি তালিম একটি নিজ ঘরে অপরটি মসজিদে ৪. রোজানা আড়াই ঘন্টা থেকে ৮ ঘন্টা পর্যন্ত দাওয়াতি মেহনত করা, ৫. প্রতিদিন অল্প সময়ের জন্য পরামর্শ করা ৷
মসজিদওয়ার জামাতে সাথী কারা?
যে মসজিদে যেই সমস্ত মুসল্লী একাধিক ওয়াক্তের নামাজ পড়ে সেই সমস্ত মুসল্লী সেই মসজিদওয়ার জামাতের সাথী অথবা যেই মুসল্লী ফজর ও এশার যেই মসজিদে পড়ে সে সেই মসজিদে মসজিদওয়ার জামাতের সাথী। শুধু যারা (তাবলীগী) আমলে জুড়ে তারাই মসজিদওয়ার জামাতের সাথী এমন মনে করা ঠিক নয় ।
১. প্রতি মাসে তিন দিন আল্লাহর রাস্তায় লাগানো :
প্রতি মাসে সপ্তাহ নির্ধারণ করে ৩ দিনের জন্য আল্লাহর রাস্তায় লাগানো। এমন নয় যে এক মাস লাগালাম, আরেক মাসে লাগালাম না, বরং প্রতি মাসে একই সপ্তাহে লাগানো, যদি প্রথম সপ্তাহে লাগাই, তাহলে পরবর্তী মাসগুলোতে ও প্রথম সপ্তাহে লাগাব, যদি দ্বিতীয় সপ্তাহে লাগাই তাহলে পরবর্তী মাসগুলোতেও দ্বিতীয় সপ্তাহে লাগাব, তবে চাঁদের মাস হিসাবে লাগালে ভাল হয় ৷
২. সপ্তাহে দুটি গাশ্ত: একটি মহল্লার মসজিদে। নিজেদের এলাকার মাকামী কাজকে শক্তিশালী করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো মাকামী গাশত, এটা হলো দাওয়াতী কাজের মেরুদণ্ড মাকামী গাশত সাধারণত ছুটির দিন অথবা যেদিন মহল্লায় বা গ্রামে লোকজন বেশি থাকে সে দিন হলেই ভাল হয়। যে এলাকার লোক যত বেশি মজবুতির সাথে মাকামী গাশত করবে সে এলাকায় ততবেশী দ্বীনের পরিবেশ চালু হবে, দ্বীনদার বাড়বে, নামাজী বাড়বে, পুরা সাপ্তাহ মাকামী কাজের জন্য এমনভাবে চেষ্টা ফিকির করবে, যাতে প্রতি সপ্তাহিক গাশতের থেকে তিন দিনের জামাত বের হতে পারে, সাপ্তাহিক গাশতের দিনকে খুশির দিন ফসল কাটার দিন মনে করা, পুরা সপ্তাহে দাওয়াতী মেহনতের ফসল কাটা
হয়, মাকামী গাশতের দিনে। মহল্লায় মেহনত করে মাকামী গাশতে সাথী বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করা, যাদেরকে সারা সপ্তাহ দাওয়াত দেওয়া হলো, তাদেরকে মাকামী গাশতে অবশ্যই জুড়ানো। যদি না জুড়ে পরবর্তী সপ্তাহে আবার তার পিছনে মেহনত করতে হবে। এভাবে মাকামী গাশতের মাধ্যমে এলাকার মধ্যে মহল্লার মধ্যে গ্রামের মধ্যে দ্বীনি পরিবেশ কায়েম করার জন্য মেহনত করা, আর এভাবে মেহনত চালু থাকলে আল্লাহর রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হতে থাকবে। আর বদদ্বীনি পরিবেশ দূর হতে থাকবে। আল্লাহ তায়ালার আজাব গজব ফেত্না-ফাসাদ উঠিয়ে নিবেন। তবে হ্যাঁ এর জন্য শর্ত হলো, দিন ও ওয়াক্ত নির্ধারণ করে নেওয়া! এমন নয় যে, এক সপ্তাহে রবিবার আছরের পর গাশত করলাম আরেক সপ্তাহে বুধবারে করলাম, এভাবে করলে লোকই পাওয়া যাবে না ৷
দ্বিতীয় গাস্তটি পাশের মহল্লায় করা :
যখন নিজের মহল্লায় আল্লাহর রহমত ও বরকত চালু হয়ে যাবে, তখন পার্শ্ববর্তী মহল্লা থেকে বিভিন্ন খারাবী মহল্লায় প্রবেশের চেষ্টা করবে, এসব খারাবী থেকে নিজ মহল্লাকে হেফাজত করার জন্য পার্শ্ববর্তী মহল্লার মানুষকে দ্বীনের উপর উঠানোর জন্য পার্শ্ববর্তী মহল্লায় দ্বিতীয় গাত করা একান্ত জরুরী, যার ২য় গাশত ঠিকমত হবে, তার প্রথম গাশত ঠিকমত করতে পারবে, দ্বিতীয় গাশতের মজবুতির উপর নিজ মহল্লার গাশতের সাথীদের মজবুতি বৃদ্ধি পাবে ঘরে।
৩. প্রতি দিন দুই তা’লিম :
প্রতিদিন ২টি তা’লিম করা, একটি নিজ মহল্লার মসজিদে অপরটি নিজ নিজ মহল্লার মসজিদে : ওয়াক্ত নির্ধারণ করে যে কোন এক নামাযের পর অথবা যেই ওয়াক্তে মুসল্লী বেশি বসতে পারে এমন এক ওয়াক্তে ফাযায়েলে আমল কিতাব থেকে তা’লিম করা, তা’লিম হল মসজিদে নববীর বিশেষ একটি আমল ।
দ্বিতীয় তালিম নিজ ঘরে:
দ্বীন পুরুষের জন্য যেমন জরুরী তেমনি মহিলাদের জন্যও জরুরী, এ কারণেই ঘরের মধ্যে তা’লিমের ব্যবস্থা করা খুবই জরুরী। ঘরের মাহরাম (যাদের সাথে দেখা জায়েয) সবাইকে নিয়ে প্রতিদিন নির্দিষ্ট এক সময় এই তালিম করবেন। এর দ্বারা ঘরের মধ্যে দ্বীনের পরিবেশ কায়েম হবে, স্ত্রী-পুত্র, মেয়ে, মা, বোনদের মধ্যে দ্বীনের জেহেন বসবে, দ্বীনের উপর চলার যোগ্যতা পয়দা হবে, তা’লিমের ব্যবস্থা ঘরে চালু থাকলে অন্য কোন ফেৎনা-ফাসাদ ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না, নিজের ঘরে দাওয়াত চালু রাখা খুবই জরুরী। না হয় অন্য দাওয়াত চালু হয়ে যাবে। যদি ঘরের মধ্যে শিক্ষিত কেউ না থাকে, তাহলে মসজিদ থেকে যাহা শুনেছেন তাহাই ঘরে এসে মা বোন মেয়েদের শুনাইয়া দিতে হবে ।
৪. রোজানা আড়াই ঘন্টা থেকে ৮ ঘন্টা পর্যন্ত দাওয়াতি মেহনত করা প্রতিদিন আড়াই ঘন্টা থেকে ৮ ঘন্টা সময় নিয়ে মহল্লার প্রত্যেক অলিতে গলিতে ঘরে ঘরে, দ্বারে দ্বারে বার বার যাওয়া, কেউ যদি আড়াই ঘন্টা সময় এক সাথে না লাগাইতে পারে তাহলে কয়েকবারে আড়াই ঘন্টা পুরা করা, কেউ যদি কয়েক বারেও আড়াই ঘন্টা পুরা করতে না পারে, তাহলে ২৪ ঘন্টায় যতটুকু সময় লাগাতে পারে ততটুকু সময় লাগাবে, তবে এটা দাওয়াতের সবচেয়ে নিম্ন স্তর ।
আড়াই থেকে আট ঘন্টা কোন কাজে ব্যয় করব?
এ সময় পরামর্শ করা, পরামর্শের পর পুরাতন সাথীদের সাথে দেখা করা, খোঁজখবর রাখা, নতুন সাথীর সাথে সাক্ষাৎ করা, মহল্লার মসজিদে জামাত আসলে তাদের খোঁজ খবর নেওয়া, মহল্লার কেউ জামাতে বের হলে, তাদের খবর নেওয়া, মাকামে গাশত থেকে নগদ জামাত বের করার জন্য চেষ্টা করা।
৫. রোজানা পরামর্শ করা: দৈনিক যে কোন নামাজের পর সমস্ত মুসল্লিদেরকে নিয়ে দ্বীন জিন্দা করার উদ্দেশ্যে দুনিয়া সামনে রাখিয়া বিশেষ করিয়া নিজ দেশ, নিজ এলাকা, নিজ মহল্লা বা নিজ গ্রামকে টার্গেট বানাইয়া চিন্তা ফিকির করা, এটার নামই রোজানা পরামর্শ, অল্প সময়ের জন্য হলেও রোজানা পরামর্শ করা চাই, চাই পরামর্শতে কেউ বসুক বা না বসুক, নিজে বসবই ইনশাল্লাহ। যদি কেহ নাও বসে, নিজে একা একা মসজিদের পিলার/খুঁটিকে সামনে রেখে পরামর্শে বসে যাব, ইনশাল্লাহ! একজনের ফিকিরেই পুরা মহল্লা ফিকিরমন্দ হয়ে যাবে। পুরা মহল্লার সাথীরা পরামর্শ করনেওয়ালা হয়ে যাবে।
বিঃ দ্রঃ মহল্লার সমস্ত ঘর হিসাব করে সাথীরা ভাগ ভাগ করে মেহনত করব, পুরা মহল্লাকে চার ভাগে ভাগ করব, সাথীদের কেউ চার ভাগ করে প্রতি ভাগে বন্টন করে দিব। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুক।
তাবলিগ জামাতের ছয় উসুল দায়ীর ৮টি খাছ সিফাত:
১. উম্মতের মুহাব্বত
২. নিজের সংশোধনের জন্য দাওয়াত দেওয়া,
৩. জান-মাল ও ওয়াক্ত কোরাবানির জযবা,
৪. বাহাদুরি ও বড়াই এর পরিবর্তে আযিযি ও ইনকেছারী পয়দা হওয়া,
৬. লোকেরা না মানলেও নিরাশ না হওয়া,
৭. অন্যের কষ্ট দেওয়ায় সবর করা,
৮. প্রত্যেক নেক আমলের পরে এস্তেগফার করা ।
দায়ীর সাতটি বিশেষ গুণ:
১. পাহাড়ের মত অটল
২. আকাশের মত উদার,
৩. মাটির মত নরম,
৪. সূর্যের মত দাতা,
৫. উটের মত ধৈর্যশীল,
৬. ব্যবসায়ীদের মত হেকমত,
৭. কৃষক এর মত হিম্মত।
তিন কাজে আল্লাহর সাহায্য আসে
১. আমীরের অনুসরণ করা, ২. মসজিদের পরিবেশে থাকা, ৩. সাথীদের সাথে জোড় মিল থাকা ।
আব্দুল ওহাব সাহেবের ৫ কথা:
আব্দুল ওহাব সাহেবের ৫ কথা যা মেনে চললে কখনো সাথীদের কষ্ট হবে না; ১. সাথীর সংশোধনের ফিকিরে পড়ো না। ২. সাথীকে উছুলের উপর আনার ফিকিরে পড়ো না । ৩. সাথীর খেদমত করো, ৪. একরাম করো, ৫. নিজের উসূলের উপর জমে থাক ।
৫টি হেকমতওয়ালা কথা যাতে দিল জুড়ে:
১. সালাম করা, ২. একরাম করা, ৩. হাদিয়া দেয়া। ৪. নাম নিয়ে দোয়া করা, ৫. অসাক্ষাতে তারিফ করা ।
এস্তেকামাতের ১৭টি উপায় সম্পর্কে হযরত মাওঃ সাঈদ আহমদ খান সাঃ বলেন:
১, যে কেহ দিলের একীনের সাথে এ কাজ করবে সে জমবে।
২. যে রোজানা দাওয়াত দিতে থাকবে তার জযবা বনতে থাকবে, যে রোযানা দাওয়াত দিবে না, তার জযবা কমতে থাকবে।
৩. যে পরিবেশের মধ্যে থাকবে সে জমবে, যে পরিবেশ হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে সে কেটে পড়বে,
৪. যে এ কাজে বাধা সৃষ্টি করবে সে কেটে পড়বে।
৫. যে ব্যক্তি আমীরের অনুগত ও পরামর্শের পাবন্দ করবে সে ব্যক্তি জমবে।
৬. যে কারো দোষ দেখবে সে কেটে পড়বে, যে ভালাই দেখবে সে জমবে।
৭. যে তাওয়াজু এখতিয়ার করবে সে জমবে, তাকাব্বুরের সহিত চলনেওয়ালা জমতে পারবে না।
৮. কোন কোন গুনাহের কারণে কাজ হতে মাহরূম হয়ে যায়, (গিবত, অপরের দোষ তালাশ করা, বদনজরী (শাহওয়াত)
৯. যে নাদামাত, তওবা ও এস্তে গফারের সহিত চলবে সে জমবে।
১০. যে অন্যের ত্রুটি নিজের উপর নিবে সে জমবে। যে ত্রুটি অন্যের উপর চালাবে সে জমতে পারবে না।
১১. হুজুর (সা.)-এর সাথে মুনাফেক চলেছে কিন্তু ফায়দা হয় নাই। ঈমানও নছিব হয় নাই।
১২. যে অন্যের দোষকে ভালো দিকে ব্যাখ্যা করে সে জমবে, আর যে করে না সে জমবে না।
১৩. যে লোক আল্লাহকে ভয় করেও আল্লাহর কাছে চাইতে থাকে, সে জমবে, জমার জন্য আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। নতুবা পড়ে যাবে।
১৪. যে এখলাছের সাথে কোরবানী দিবে; আল্লাহ তাকে হার হালাতে মজবুত রাখবেন এবং ঐ সব অবস্থায়ও উঁচু মর্যাদা নছীব করবেন, যখন লোকদের কদম নড়ে যাবে,
১৫. যে বলবে আমার উছিলায় কাম হচ্ছে, সে বঞ্চিত হবে, যার সম্পর্কে মানুষ মনে করবে তার উছিলায় কাম হচ্ছে, আল্লাহ তাকে উঠিয়ে নিবেন।
১৬. হযরতজী (রহ.) বলতেন, যে নকলের উপর আছাড় খায় সে আসলের উপর কি করে জমবে? আমরা তো নকল করনেওয়ালা।
১৭. যে পুরা উম্মতের ব্যথা নিয়ে চলবে তার দিলের আছর আল্লাহ তায়ালা পুরা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিবেন।
মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ছাহেব রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন:
যে ব্যাক্তি এই চার কাজ করবে সে তাবলীগ করতে পারবে-
১. কথা বলবে নিজের জন্য। ২. কথা শুনবে নিজের জন্য, ৩. আল্লাহ যে নেক আমলের তৌফিক দিয়েছেন তাহার জন্য শোকর করা। ৪. রাত্রে একা অবস্থায় শোয়ার সময় আল্লাহর কুদরতের চিন্তা করা।
হযরত খিজির আলাইহিস সালাম-এর লেখা সাতটি উপদেশ:
১. আমি আশ্চর্যবোধ করি ঐ ব্যক্তির উপর যে মউতকে নিশ্চিতভাবে জানিয়াও কেমন করিয়া হাসে ।
২. আমার আশ্চর্য লাগে ঐ ব্যক্তির উপর যে উহা জানে যে, এই দুনিয়া একদিন শেষ হয়ে যাবে, তবুও কেমন করিয়া দুনিয়ার দিকে আকৃষ্ট হয় ৷
৩. আমার আশ্চর্য লাগে ঐ ব্যক্তির উপর যে উহা জানে যে, সবকিছু আল্লাহর তরফ হইতে নির্দিষ্ট হয়ে আছে (অর্থাৎ তকদীর বিশ্বাস করে) তবুও তাহার কোন জিনিস হাসিল না হলে কেন আফসোস করে ।
৪. আমার আশ্চর্য লাগে ঐ ব্যক্তির উপর যার আখেরাতে হিসাব দেওয়ার পূর্ণ বিশ্বাস আছে, তবুও সে ধন-সম্পদ জমা করে।
৫. আমি আশ্চর্যবোধ করি ঐ ব্যক্তির উপর যে জাহান্নামের আগুন বিশ্বাস করে তবুও সে কেমন করিয়া গুনাহ করে ।
৭. আমার আশ্চর্য লাগে ঐ ব্যক্তির উপর যে বেহেশতের সুখ-শান্তির কথা জানে, তবুও সে কি করিয়া দুনিয়ার কোন জিনিসের দ্বারা শান্তি পায় ৷
বড়দের বাণী
তৃতীয় হযরতজী হযরত মাওলানা এনামুল হাসান সাহেব (রহ.) বলতেন— জাহিরের খেলাফ আল্লাহর ওয়াদার উপর এক্কিন করা নাম হল ঈমানের শক্তি । তবিয়তের খেলাফ আল্লাহর হুকুম মানার নাম হল আমলি শক্তি আর এই দুই শক্তি যদি মানুষের জিন্দেগীতে আসিয়া যায়। আল্লাহর শক্তি তার পক্ষে আসিয়া যাইবে আর যার পিছনে আল্লাহর শক্তি আসবে তখন তার সাথে দুনিয়ার কোন শক্তি মোকাবেলা করতে পারবে না । কেননা তার সাথে আল্লাহর শক্তি আছে।
- ইমাম গাজ্জালি (রহ.) বলেছেন, যার দ্বীন গোলাপ তার কথা দ্বারা খুশব বের হবেই হবে। আর যার দ্বীন গোলাপ না তার কথা দ্বারা কোন খোশব বের হবে না । ওমর সাহেব (রহ.) বলেছেন, শরীয়তের খেলাফ মনের চাহিদাকে নস বলে । দাওয়াত দ্বারা অন্তরের শিরক দূর হয়। ঈমান বাড়ে এবং তালিমের দ্বারা মূর্খতা দূর হয় । ঈমানের দ্বারা আমল সুন্দর হয়। সুন্দর আমলের দ্বারা দোয়া কবুল হয়, আর যখন দোয়া কবুল হয় তখন আল্লাহর কাছে যা চাইব আল্লাহ তাই দিবেন । নিজের খাহেশাতকে কুরবানী করে অন্যের জরুরতকে পুরা করে দিব। নিজের জরুরতকে কুরবানী করে অন্যের খাহেশাতকে পুরা করে দিব । দাওয়াত ছাড়া ঈমান বনবে না ।
সম্মানিত বন্ধুগন আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা যদি আপনার সামন্যতম উপকারে আসে তাহলে একটি কমেন্ট করে যাবেন এবং সদকায়ে জারিয়ার নিয়্যতে ফেসবুকে শিয়ার করে দিবেন। ধন্যবাদ ।
Pingback: তাওবার গুরুত্বপূর্ণ আলোচা | সাহাবীদের তাওবাহ্ কবূলের ঘটনা | - Educational Tips & Tricks.
যাজাকাল্লাহ খাইরান ভাইজান অনেক উপকারে এসেছে।এইটা আমি আরো মডিফাই করে সাথীদের শিট করে দেয়ার নিয়্যাত করেছি।
ধন্যবাদ
কিভাবে শিট আকারে বের করবো
আমাকে মেইল করেন: nasirbasir06@gmail.com
কিভাবে শিট আকারে বের করতে পারবো
তাবলীগ জামাতের 6 নাম্বার বয়ান সব